আমার বাগানের পেয়ারা গাছ @papiahaider

in hive-120823 •  last year 

আসসালামু আলাইকুম.

কেমন আছেন সবাই. আল্লাহর অশেষ রহমতে নিশ্চয়ই অনেক ভাল আছেন. আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি. আমার স্টিমিট ব্যবহারকারী নাম @papiahaiderআজ আমি আপনাদের মাঝে আমাদের প্রিয় একটি ফল পেয়ারা সম্পর্কে আপনাদের মাঝে তুলে ধরব

পেয়ারা(Guava) বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল। পেয়ারা Psidium গণের অন্তর্ভূক্ত। এ গণের প্রায় ১৫০টি প্রজাতি রয়েছে। তবে আমাদের দেশে Psidium guajava প্রজাতিটি বেশি জন্মাতে দেখা যায়।
20230509_172815.jpg

আমেরিকার নিরক্ষীয় অঞ্চল পেয়ারার আদি জন্মস্থান। পেরু থেকে মেক্সিকো পর্যন্ত এলাকায় দ্রুত এর বিস্তার ঘটে। ভারত, মেক্সিকো, ব্রাজিল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, বার্মা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, হাওয়াই, ফিলিপাইন, ফ্লোরিডা প্রভৃতি দেশে ব্যাপকভাবে পেয়ারার চাষ হয়। পেয়ারা গাছের জন্য সর্বোত্তম তাপমাত্রা হচ্ছে ২৩-২৮° সে.। তবে পরিণত গাছ ৪৫° সে. তাপমাত্রায়ও বেঁচে থাকতে পারে।
পেয়ারা ভিটামিন-সি এবং পেকটিনের অন্যতম উৎস। পেয়ারায় ৮০-৮৩% পানি, ২.৪৫% অম্ল, ৩.৫০-৪.৪৫% বিজারিত চিনি, ৩.৯৭-৫.২৩% অবিজারিত চিনি, ৯.৭৩% দ্রবনীয় শুষ্ক পদার্থ, ০.৪৮% পটাশিয়াম, ২৬০ মি. গ্রাম/১০০ গ্রাম ভিটামিন-সি থাকে। মৌসুম, পরিপক্কতা ও জাতভেদে এর তারতম্য হয়ে থাকে। পেয়ারা পরিণত হলে কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। টাটকা অবস্থায় পরিপক্ক ফল থেকে সালাদ, পুডিং এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সুস্বাদু জেলী, শরবত, পাউডার, আচার ও আইসক্রীম তৈরি করা হয়।
20230509_172725.jpg

পেয়ারা গাছ ছোট থেকে মাঝারি (২.৩-১০ মি) আকারের হয়ে থাকে। শিকড় মাটির বেশি গভীরে প্রবেশ করে না। পাতার কক্ষ থেকে পুস্পমুকুল এককভাবে অথবা পুষ্পমঞ্জুরীতে ২-৩টি ফল একত্রে উৎপন্ন হয়। উৎপাদন মৌসুমে ২৫-৪৫ দিন ধরে ফুল ফোটে। ফুল উভয়লিঙ্গী এবং বায়ুপ্রবাহ ও কীটপতঙ্গ দ্বারা পরাগায়ন সম্পন্ন হয়। উৎপাদিত ফুলের প্রায় ৮০-৮৬% ফলে পরিণত হয়। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে ফল ঝরে পড়ায় মাত্র ৫০-৬০% ফল পরিপক্ক হয়। কাঁচা অবস্থায় ফল সবুজ থাকে কিন্তু পাকতে শুরু হলে হালকা সবুজ বা হলুদাভ রং ধারণ করে।
পেয়ারার ফুল ধারণে তাপমাত্রার সরাসরি প্রভাব রয়েছে। অধিক তাপমাত্রায় ফুল ও ফল ঝরে যায়। ফুল ধরার মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। হালকা রোদ ও ছায়াযুক্ত কিংবা আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে পেয়ারা ভাল জন্মে। পেয়ারা গাছে গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎ এ তিন ঋতুতে ফুল ফোটে। তবে পরিমিত সার ও সেচ দিলে অমৌসুমে (জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত) প্রচুর ফল ফলানো সারা বছর বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০০ সেমি পেয়ারার ফলনের অনুকূল। প্রায় সব ধরনের মাটিতে পেয়ারার চাষ করা যায়, তবে সুনিষ্কাশিত ও প্রচুর জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ এটেল দোঁয়াশ হতে বেলে দোঁয়াশ মাটিতে পেয়ারার চাষ ভাল হয়।
20230509_172937.jpg

পেয়ারার জাত পৃথিবীতে পেয়ারার অসংখ্য জাত রয়েছে। আমাদের দেশেও ছোট বড়, গোলাকার, উপবৃত্তাকার, নাশপাতি আকার, সাদা ও লাল শাঁসবিশিষ্ট বিভিন্ন জাতের পেয়ারা দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
কাজী পেয়ারা আশির দশকে থাইল্যান্ড থেকে আনা এ জাতটি বাংলাদেশে কাজী পেয়ারা নামে পরিচিতি লাভ করে। ফলের আকার অনেকটা উপবৃত্তাকার, শাঁস মচমচে অম্লমধুর ও মুখরোচক। বহুল ও শক্ত বীজ সমৃদ্ধ। ফল আকারে বেশ বড়, গড় ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম। কাজী পেয়ারা গাছ দ্রুত বর্ধনশীল এবং এর উচ্চতা ৫-৭ মিটার হয়ে থাকে।
বাউ পেয়ারা-১ (মিষ্টি) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হতে সংগৃহীত নিয়মিত ফল ধারণকারী মাঝারী বামন জাতের মৌসুমী পেয়ারা গাছ। ফল গোলাকার, চকচকে ও মিষ্টি, বীজ নরম। এই জাতে কোন মারাত্নক রোগ বালাই লক্ষ্য করা যায় নি।
20230509_172753.jpg

বাউ পেয়ারা-২ (রাঙা) নিয়মিত ফল ধারণকারী বামন জাতের মৌসুমী পেয়ারা গাছ। ফল ঈষৎ গোলাকার থেকে ডিম্বাকার, সবুজাভ হলুদ, অমসৃন, শাঁশ লাল, কচকচে, মিষ্টি, হালকা গন্ধযুক্ত এবং বীজ মাঝারী শক্ত, ওজন ৩০০-৬০০ গ্রাম। শাঁসের বর্ণ লাল বিধায় অতি আকর্ষণীয়। এটি উচ্চ ফলনশীল জাতের পেয়ারা।
বাউ পেয়ারা-৩ (চৌধুরী) এটি একটি দেশিয় জাত। ফল ডিম্বাকার, সবুজাভ হলুদ, মসৃন, শাঁশ রক্তাভ গোলাপী, কচকচে, মিষ্টি, বীজ ছোট ও নরম। এই জাতটি খুবই আকর্ষণীয়, মিষ্টি এবং সুস্বাদু। রোগ বালাই তেমন একটা পরিলক্ষিত হয় না।
বাউ পেয়ারা-৪ (আপেল) ফল ঈষৎ গোলাকার থেকে ডিম্বাকার, উজ্জ্বল সবুজ, মসৃন, নরম, মিষ্টি, হালকা গন্ধযুক্ত, বীজ মাঝারী শক্ত। ফলে মাছি পোকার আক্রমন পরিলক্ষিত হয়। এ জাতটি অধিক ফলনশীল।

এ ছাড়াও বাংলাদেশে পেয়ারার বিভিন্ন জাতের মধ্যে মুকন্দপুরী, আঙ্গুর, ইপসা পেয়ারা, বারি পেয়ারা ২ ও ৩, সৈয়দী, এলাহাবাদ, এল-৪৯, চেরী, কাশি জাতগুলো উল্লেখযোগ্য।
পেয়ারার চাষ অন্যান্য ফলের মতই জমি তৈরি করে বর্ষার পূর্বে ৪-৫ মি অন্তর ০.৭৫-১.০০ ঘন মিটার আকারের গর্ত খনন করে হেক্সাগোনাল রোপণ প্রণালীতে চারা লাগানো উত্তম। রোপণের ৩ সপ্তাহ পূর্বে ২৫-৩০ কেজি জৈব সার মাটির সাথে মিশিয়ে প্রতিটি গর্ত ভরাট করতে হবে। রোপণের ১ সপ্তাহ পূর্বে প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম করে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বর্ষাকাল চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে পলি ব্যাগের চারা সারা বছর লাগানো যায়। চারা রোপণের পর গাছের গোড়ার মাটি একটু উঁচু করে দিতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে। রোপণের পর খুঁটির সাহায্যে গাছকে খাড়া করে বেঁধে দিতে হবে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে প্রতি বছরই সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে।
রোগবালাই ছাতরা পোকা এ দেশের অধিকাংশ পেয়ারা গাছেই ছাতরা পোকা দেখা যায়। আক্রান্ত ডাল বা পাতায় এরা দল বেঁধে অাঁকড়ে থাকে। সাদা রংয়ের এ পোকাগুলিকে দেখতে অনেকটা সাদা ছাতা বা তুলার মত দেখায়। এরা কচি পাতা, বিটপ, প্রশাখা এমনকি ফুল থেকেও রস চুষে খেতে থাকে। ফলে আক্রান্ত অংশ শুকিয়ে যায় এবং ফলন হ্রাস পায়। যদি আক্রমণের মাত্রা কম থাকে তবে আক্রান্ত অংশ কেটে পুড়িয়ে ফেলা ভাল। আক্রান্ত হলে ২০ মিলি ম্যালথিয়ন ৫৭ ইসি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
হোয়াইট ফ্লাই এটিও ছাতরা পোকার মত প্যাঁজা তুলার ন্যায় পাতার নিচে জমে এবং পাতা চুষে খেয়ে মেরে ফেলে। প্রতি লিটার পানিতে ১০ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
20230509_172829.jpg

ফলন পেয়ারা গাছ পূর্ণ ফলবান হতে ৩/৪ বছর সময় লাগে। ফুল আসার ৪-৫ মাসের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা যায়। ফল পাকতে শুরু করলে অতি দ্রুত তাতে পচন ধরে। তাই দূরে চালান দেয়ার জন্য ডাঁসা থাকতেই ফল সংগ্রহ করা উচিত। গাছের বয়স, মৌসুম, জাত, মাটি ও পরিচর্যা অনুযায়ী ফলন বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। একটি পূর্ণ ফলবতী গাছ থেকে বছরে ৪০০-৮০০টি ফল এবং এক হেক্টরে রোপিত গাছ থেকে ২০-৩০ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।

যাই হোক আজ অনেক কথা বললাম .আবারো হাজির হব অন্য কোন পোস্ট নিয়ে .ততক্ষণ সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাক বেন .আল্লাহ হাফেজ.
ভেরিফাইড এচিভমেন্ট লিংক
Achievement -1

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Hello,
@papiahaider

You can't yet mention a specific club in the hashtags below your post. You better do a power-up so you can join club5050. According to the new community rules, except for posting challenges only, you have to set 10% of earners in meraindia account. Keep well.