কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পূজার একটি বিশেষ অংশ

in hive-120823 •  8 days ago 

নমস্কার বন্ধুরা আপনারা কেমন আছেন ? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের সঙ্গে কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো একটি বিশেষ দিক তুলে ধরব।

IMG-20241110-WA0128.jpg

মা জগদ্ধাত্রী পূজা বিধি বর্ণিত আছে পুরানে। এটি প্রচলিত কোন পূজা নয়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় স্বপ্না দেশ পেয়ে এই পূজার প্রারম্ভ করেন এবং প্রচার করেন ।তার নির্দেশেই কৃষ্ণনগরের মালোপাড়া বারোয়ারিতে মা জলেশ্বরীর পূজা আরম্ভ হয়। এটি মালো জাতির পূজা । মালো জাতি বলতে জেলে জাতি কে বোঝানো হয়। এই মালোপাড়া বারোয়ারির পূজাটি হলো কৃষ্ণনগরের প্রথম বারোয়ারীর জগদ্ধাত্রী পূজা। কৃষ্ণচন্দ্র রায়েরদেওয়া ১৫ টাকা অনুদানে এই পূজা আরম্ভ হয়।যে রীতি এখনো প্রচলিত। মা জলেশ্বরীর বাহন সিংহের লেগে আজও শোভা পায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের দেওয়া সোনার মোহর দিয়ে তৈরী হার। দুর্গাপুজোর পরে যে শুক্ল নবমী তিথি হয় সেই তিথিতে মায়ের চারটি পর্বে পূজা হয়। ষষ্ঠী ,সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের বাড়ি রাজবাড়িতে মা জগদ্ধাত্রী রাজরাজেশ্বরী নামে খ্যাত। এবং মালোপাড়া বারোয়ারি মা জগদ্ধাত্রী জলেশ্বরী নামে খ্যাত।

এ কথা প্রচলিত যে জেলেপাড়ায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় মায়ের প্রতিমা দেখতে এসে মাছের গন্ধে বিরক্ত হতেন তাই মাছের গন্ধ দূর করার জন্য ধুনো পোড়ানো পদ্ধতিটির প্রচলন হয় ,যা আজও হয়ে আসছে।নবমী তিথির প্রথম পর্বে বলিদান প্রথা অর্থাৎ আখ ,কলা ও চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। এরপর মায়ের ধুনোর আরতি হয়, যা ধুনো পুরানো নামে প্রচলিত। এখানে সবাই মনস্কামনা পুরন হলে তারা মায়ের সামনে ধুনো পুড়িয়ে থাকে।

IMG-20241110-WA0132.jpg

মা জগদ্ধাত্রী মা দুর্গার আরেকটি রূপ। মা দুর্গা যেমন ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমী নবমী, এই চারদিন ধরে পূজা হয় তেমনি মা জগধাত্রী পূজা কৃষ্ণনগরে একদিনে চারটি পর্বে হয়। এবং মাকে কৃষ্ণনগর বাসি নিজেদের ঘরের মেয়ে মনে করে খুব যত্নে আদরে তার আরাধনা করে থাকে।

মা জলেশ্বরী আমাদের খুব আদরের । আমরা সবাই সারা বছর ধরে তার আগমনের আশায় অপেক্ষা করে থাকি। এবং এই অপেক্ষা মায়ের আগমনে আমাদের খুশির বাঁধ ভেঙে যায়। যেহেতু মালোপাড়া বারোয়ারিটি খুব বড় জায়গা জুড়ে নয় তাই এখানে প্যান্ডেলের বাহার থাকে না কিন্তু থাকে মায়ের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ,স্নেহ এবং নির্ভরশীলতা।

মালো পাড়ার প্রতিটি ঘরের মেয়েরা মায়ের আরাধনায় মেতে ওঠে। পূজার দুদিন আগে থেকে তাদের নিজেদের ঘরের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। মায়ের আগমনীতে মায়ের বেদি পরিষ্কার মায়ের মন্দির পরিষ্কার এবং মায়ের আগমনীর ব্যবস্থা করার জন্য।

আজ সারাদিন ব্যাপী মায়ের পূজায় সকলে ব্যস্ত। আমি নিজেও সাতটা নাগাদ বাড়ি এসেছি। যেহেতু একদিনের পূজা তাই নবমী পূজা শেষ হলেই আমাদের মনের মধ্যে বেজে ওঠে বিদায় বেদনার সুর। কিন্তু সেই সঙ্গেই আমরা আগামী দিনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করি আগামী বছর মায়ের আগমনীতে কিভাবে নিজেদেরকে সাজিয়ে তুলব ,কিভাবে মাকে আহ্বান জানাবো সে প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু হয়ে যায়।

আপনাদের কাছে আমাদের মা জলশ্বরীর গল্প করে আজ আমার মনটাও বেশ আনন্দে ভরে গেল। কারণ আমাদের মায়ের কথা হয়তো আপনাদের কেউ কেউ জানে আবার অনেকেই জানেনা।
আজও আমাদের কৃষ্ণনগর রাজবাড়ী থেকে আমাদের রানী মা অমৃতা দেবী মা জলেশ্বরীর আরাধনার জন্য পনেরো টাকা অনুদান দিয়ে যান। এবং আমরাও এর জন্য গর্ববোধ করি যে আমাদের পূজাটি স্বয়ং রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়া অনুদানের শুরু হয়েছিল।

IMG-20241110-WA0134.jpg

মা রাজরাজেশ্বরী এবং মা জলেশ্বরীর নিরঞ্জন মালোপাড়ার জেলেরাই করে থাকতেন কিন্তু সময়ের সঙ্গে সে নিয়ম পরিবর্তন হয়ে গেলেও কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির সাথে মালোপাড়া বারোয়ারী এক গভীর সম্পর্ক রয়ে গেছে। মালোপাড়ার মা জলেশ্বরী নিরঞ্জনের সময় তার সামনে থাকে কার বাড়িতে জালানো দুটি প্রদীপের শিখা । এই আলোক শিখায় মা যেন অপরূপা হয়ে ওঠেন।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

আজকে জগদ্ধাত্রী পূজা সম্পর্কে আপনার লেখা পরিদর্শনের আগেও আমি একটা লেখা পরিদর্শন করেছি। সেখান থেকে কিছু অজানা তথ্য জেনেছিলাম। এই মুহূর্তে আপনার লেখার মাধ্যমে আরো বিস্তারিত জানতে পারলাম। বিশেষ করে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র যেভাবে শুরু করেছিলেন।

কারণ আমাদের মায়ের কথা হয়তো আপনাদের কেউ কেউ জানে আবার অনেকেই জানেনা।

একদমই সঠিক বলেছেন, আমিই জানতাম না। আমার দৌড় জগদ্ধাত্রী মায়ের পূজো পর্যন্তই ছিল। বাকিটা আর না ই বা বললাম। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জগদ্ধাত্রী পুজো সম্পর্কে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।