আসক্তি। যখন আমরা কোন কিছুর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে তখন আমরা হিতাহিত সকল কিছু ভুলে যাই এবং তার পিছনে ধেয়ে ছুটি
লিংক লোকেশন
আমাদের সকল বুদ্ধি তখন আর কাজ করে না । মন যেন এক কিসের নেশায় মাতাল হয়ে ওঠে এবং তার কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ থাকে না শুধুমাত্র সেই আসক্ত বিষয় ছাড়া।
কি বিষয়ে বলছি ভাবছেন। বিষয়টি অনেক কিছুই হতে পারে। শৈশবে যখন আমরা টিভির প্রতি আসক্ত ছিলাম তখন সবকিছু বাদ দিয়ে হলেও টিভিতে বিভিন্ন ধারাবাহিক যেমন রামায়ণ, মহাভারত, হাতিম, শক্তিমান দেখার জন্য ঠিক বাবা মার চোখ এড়িয়ে পালিয়ে যেতাম।
যেহেতু বাড়িতে টিভি ছিল না তাই প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে আমাদের এই টিভি দেখার নেশা মেটাতে হতো।
আবার ধরা যাক ফুল তোলার নেশা। ভোরের আলো না ফুটতেই সকলে মিলে বেরিয়ে পড়তাম ফুল তুলতে। বাইরে থেকে মা দরজা বন্ধ করে রাখলেও ঠিক আস্তে আস্তে কাঠি দিয়ে সেই দরজা খুলে নিয়ে ভোরবেলা ফুল তুলতে যাওয়ার নেশা ছিল অন্যরকম।
আবার স্কুল থেকে এসেই ব্যাগ রেখে মাঠে খেলতে যাওয়ার যে নেশা। তা আবার অন্যরকম। বিকেলবেলা পড়া থাকলেও পেটে ব্যথার বাহানা করে হলেও সেই খেলতে যাওয়া যেন আমাদের কাছে এক অন্যরকম আনন্দের বিষয় ছিল। কিন্তু এখন আর আমাদের ছেলেমেয়েরা এইসব নেশা বা আসক্তিতে আসক্ত নয়।
তাদের কাছে যেন বর্তমানে ফোন এবং কম্পিউটার এই দুটির আসক্তি এমন বড় হয়ে উঠেছে যে এই দুটি জিনিসের মধ্যে একটি ছাড়া তারা এক মুহূর্ত চলতে পারে না। বাড়িতে প্রতিমুহূর্তে বড়রা তাদের সাবধান করলেও তাদের এই আসক্তি কোনভাবেই কমানো যাচ্ছে না।
সারাক্ষণ মোবাইলে চোখ গুঁজে রেখে আজ শিশুদের মানসিক বিকাশ লোপ পাচ্ছে। তারা মাঠে খেলতে যাওয়া টিভি দেখা বা ফুল তোলার আনন্দ থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছে। সেজন্যই তো তারা এখন আর সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতেও শিখছে না।
শিশুদের শৈশব এখন যেন মোবাইল ও কম্পিউটারের স্ক্রিনে বাধা পড়ে গেছে। তারা হাসতে, খেলতে ভুলে গেছে। এ যেন এক অদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে শিশুদের শৈশব সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা শৈশবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শুধু শিশুরা নয় বড়রাও এই আসক্তির বাইরে নয়। তারাও নিজেদের পরিবারকে সময় দেওয়ার পরিবর্তে তাদের মোবাইল ফোনটিতে বেশি সময় দেয়।
আজ এই মোবাইল শুধুমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম নেই এ যেন এক সবার কাছে অপরিহার্য বিষয় হয়ে উঠেছে। মানুষ যেন আজ এক মুহূর্ত মোবাইল ছাড়া চলতে পারছে না। ফলে তাদের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন যেন তাদেরকে সমাজ থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
আপনার লেখাটি অত্যন্ত গভীর এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার পরিচায়ক। আসক্তির এই বিষয়টি আসলেই আমাদের সমাজে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে। আপনার শৈশবে ফিরে যাওয়া, টিভির প্রতি আসক্তি, ফুল তোলার আনন্দ এগুলো যেন শৈশবের মিষ্টি স্মৃতি হয়ে উঠেছে। তবে এখন যে মোবাইল আর কম্পিউটারের আসক্তি নতুন প্রজন্মের জীবনে স্থান করে নিয়েছে, তা সত্যিই চিন্তার বিষয়।
বর্তমানে শিশুদের শৈশব অনেকটাই ডিজিটাল পর্দার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, যেখানে তারা খেলা বা শৈশবের সাধারণ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ছাড়া বড়রা, যারা নিজেদের সময় মোবাইলে কাটাচ্ছেন, তাদেরও পরিবারের প্রতি মনোযোগ কমে যাচ্ছে, যা একে একে আমাদের সামাজিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে।
আপনার লেখাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের উচিত প্রযুক্তির প্রতি নির্ভরশীলতার মাঝেও মানবিক সম্পর্কগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া। আমাদের শৈশবের খেলাধুলা, সান্নিধ্য আর প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কের যে আনন্দ ছিল, তা যেন নতুন প্রজন্মের জীবনেও ফিরে আসে।ধন্যবাদ আপনাকে, এমন বাস্তব কথা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit