নমস্কার বন্ধুরা, তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করছি তোমরা সকলে সুস্থ আছো, ভালো আছো। আমিও খুব ভালো আছি। তোমাদের সাথে মনের কথা শেয়ার করতে পেরে বেশ ভালো লাগে, তাই আজকে চলে এলাম এই বছরে আমার দুর্গা পুজোর ষষ্ঠীর দিনের কিছু গল্প নিয়ে।
দুর্গাপূজোর মানেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব হলেও আমার কাছে দুর্গাপুজোটা বড্ড বোরিং লাগে ,কারণ বাড়ির আশেপাশে তেমন কোথাও দুর্গাপূজা হয় না। আর পুজোর সময় কানে যদি মাইকের গান শুনতে না পাই তাহলে সেটা কি পুজো বলে মনে হয় আপনারাই বলেন ? তাই প্রতি বছরই দুর্গাপূজাটা আমার মন খারাপ করেই কেটে যায়। ওই অষ্টমী কিংবা নবমীর দিন একটু বেরোনো হয় বন্ধু-বান্ধবদের সাথে তাছাড়া দুর্গাপূজা আমার কাছে তেমন বিশেষ কিছু নয়।
আর দুর্গাপূজা কৃষ্ণনগরে তেমন প্রসিদ্ধ নয় তাই মানুষজন কল্যাণী, কলকাতা, মাজদিয়া এই দিকগুলোতেই ঘুরতে যেতে ভালোবাসে। যদিও আমি খুব একটা ভিড় পছন্দ করি না তাই আমার কৃষ্ণনগরের বাইরে গিয়ে ঠাকুর দেখা বিশেষ হয়ে ওঠে না। ভিড় ভালোবাসি না বলা ভুল আসলে ভিড়ের মধ্যে আমার ভীষণ সাফোকেশন হয়।
তবে এ বছর কিন্তু দুর্গাপূজাটা একটু অন্যরকম ভাবেই কাটছে। মহালয়ার দিন থেকেই কেমন যেন পুজো পুজো গন্ধ নাকে আসতে শুরু করেছে। আর এই আমেজটা কিন্তু এখনো রয়েছে। যদিও ষষ্ঠীর দিন তেমন ঘুরতে যাওয়ার কোন প্ল্যানিং ছিল না আগে থেকে এবং ভেবেছিলাম প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও হয়তো খুব বোরিং ভাবেই ষষ্ঠী টা কেটে যাবে । সারাদিনটা প্রতি বছরের মতোই একই রকম গতিতে কাটছিল। হঠাৎ করে ষষ্ঠীর দিন রাত আটটার সময় আমার এক বন্ধু প্রস্তাব দেয় ঘুরতে যাওয়ার জন্য। সুতরাং ঘুরতে যাওয়ার জন্য রেডি হতে হতে বেজে গেল রাত ন'টা। তারপর দুজন মিলে বেড়িয়ে পড়লাম কৃষ্ণনগর শহরে যে গোটা কয়েক পুজো হয় সেগুলোই ঘুরে দেখতে।
অপরিকল্পিতভাবে বেরোলেও প্রথমেই আমরা চলে গিয়েছিলাম কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যমন্ডিত রাজবাড়ির দুর্গাপুজো দেখতে। এই রাজবাড়ির ভিতরে প্রবেশের গেট বারোদোলের মেলা এবং দুর্গাপূজা এই দুই সময়েই জনসাধারণের জন্য খোলা হয়। সত্যি কথা বলতে গেলে রাজবাড়ি বা পুরনো কোনো বড়ো বাড়ি দেখলে আমার সেই রাজাদের সময়ে ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়। সেই সময় মানুষজন কেমন ছিল , তখনকার পরিবেশ কেমন ছিল , তখন মানুষ কিভাবে তাদের জীবন যাপন করতো, বিদ্যুৎ-টেলিভিশন -মোবাইল এই সমস্ত আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াও তারা কিভাবে সেই দিনগুলোতে সময় কাটাতো এগুলো নিজের চোখে দেখতে খুব ইচ্ছে হয়। রাজবাড়িতে গিয়ে প্রথমেই আমরা দর্শন করে নিয়েছিলাম রাজবাড়ির দুর্গা প্রতিমাকে। তারপর রাজবাড়ির ভিতরেই এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করছিলাম।
তারপর ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়লো আলমারির মধ্যে রাখা সেই সময়কার রাজাদের ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসপত্র । আমরা একে একে সব জিনিস গুলো ভালোভাবে দর্শন করতে লাগলাম । সেখানে বিভিন্ন রকমের জিনিসপত্র ছিল যেমন সেই সময়কার ব্যবহৃত ক্যামেরা, রাজাদের ব্যবহৃত জুতো , তালা- চাবি , সৌখিন জিনিসপত্র, নকশি কাঁথা , টেলিফোন আরো নানারকম জিনিসপত্র। এই সমস্ত কিছু জিনিস দেখে কেমন যেন পুরোনো দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছা করছিল। পুরোনো দিন বলতে রাজাদের সময়ের কথা বলতে চাইছি। ইতিহাস বইতে যখন পুরোনো দিনের কথা পড়তাম তখন ও পড়তে পড়তে যেন মনে হতো আমি যদি সেই সময় ফিরে যেতে পারতাম তাহলে হয়তো বেশ মজা হত।
এই সমস্ত কিছু উপভোগ করতে করতে আমরা আস্তে আস্তে রাজবাড়ি থেকে বেড়োতে লাগলাম । বেড়োনোর মুখেই আরও একটা জিনিস রয়েছে যেটা না বললেই নয়, সেটা হল নার্সারি। রাজবাড়ির ভিতরেই রয়েছে একটি নার্সারি , যেখানে বিভিন্ন ধরনের চারা গাছ পাওয়া যায় ।সেই সমস্ত কিছু আমরা ঘুরে ফিরে দেখলাম। তারপর দেখলাম রাজবাড়ির গেটের বাইরেই কিছু খাবারের স্টল বসেছে সেখান থেকে কিছু খাবার খেলাম এবং তারপর আবার বেড়িয়ে পড়লাম শহরের আনাচে কানাচে কিছু ঠাকুর পরিদর্শন করতে।
এরপর আমরা গেলাম চ্যালেঞ্জের মোড় , সেখানে একটি পুজো হয় সেটি পরিদর্শন করলাম তারপর গেলাম গোলা পট্টিতে , সেখানেও বেশ ভালোই প্রতিমা দর্শন করলাম। এরপর আমরা আইসক্রিম খাওয়ার জন্য আইসক্রিম পার্লারে গেলাম এবং সেখান থেকে আমাদের পছন্দমত দুটো ফ্লেভারের আইসক্রিম খেলাম।
এরপর আমরা গেলাম ঘূর্ণী। ঘূর্ণী তরুণ সংঘতেও বেশ ভালো পুজো হয়। কৃষ্ণনগরে হওয়া দুর্গাপুজোর মধ্যে এটি অন্যতম। যেখানে গিয়ে দেখলাম সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। বাচ্চাদের নৃত্য প্রদর্শন, গান, আবৃত্তি এইরকম নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সেখানে ষষ্ঠী উদযাপিত হচ্ছে । আমরা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের নাচ দেখলাম। তারপর প্রতিমা দর্শন করলাম। সত্যিই এখানকার প্রতিমাটা আমার মন কেড়ে নিয়েছে। সেই সাথে ঝাড়বাতিটাও কিন্তু অসাধারণ ছিল।
তারপর ঘড়ির কাটায় এগারোটা বেজে গেল। এবং যেহেতু দুজনের বাড়ির দূরত্ব বেশ খানিকটা তাই আমরা বাড়ি আসতে বাধ্য হলাম। খুব অল্প সময় ঘুরলেও আমরা কিন্তু বেশ মজা করে ঘুরেছি। আপনারা দুর্গা পুজো কেমন ভাবে কাটাচ্ছেন? জানাবেন কিন্তু।
ধন্যবাদ।
ঠিকই বলেছেন আমাদের কৃষ্ণনগরে তেমন ভালো পুজোয় হয় না। আপনার মত আমিও তরুণ সংঘ আর রাজবাড়ি ঠাকুর দর্শন করতে গিয়েছিলাম তবে রাজবাড়ীতে গিয়ে আপনার মত আমারও চোখে পড়েছে আগেকার বিভিন্ন জিনিসপত্র। তবে ওই জিনিসপত্রগুলো অনেকদিন ধরেই ওইভাবে সাজিয়ে রাখা আছে এর আগে বারো দলের মেলা দেখতে গিয়েও চোখে পড়েছিল। ষষ্ঠীর দিন ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন। আপনার পুজো খুব ভালোভাবে কাটুক এই কামনাই করি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাঃ! আপনার সাথে তো আমার পুজোর অভিজ্ঞতার অনেক মিল পাচ্ছি। আসলে একই শহরের মানুষ তো তাই হয়তো এত মিল। যাইহোক আপনার পুজোও খুব ভালো ভাবে কাটুক এই কামনা করি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার লেখা পড়ে খুব ভালো লাগলো! রাজাদের সময়ের জিনিসপত্র দেখতে পাওয়া যেন ইতিহাসের পাতা থেকে সরাসরি কিছু মুহূর্ত ছুঁয়ে দেখার মতো। মনে হয় খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়েছে আপনার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিমার বর্ণনাও অনেক ভালো লাগলো। ভিড় পছন্দ না করলেও, বন্ধুদের সাথে সময় কাটিয়ে, ঘুরে ঘুরে পুজো দেখা অন্যরকম আনন্দের। ধন্যবাদ আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য!
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit