ঝাল সুজি ( ছোটোবেলায় মায়ের হাতে তৈরি বেস্ট রেসিপি)

in hive-120823 •  3 days ago 

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলেই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। সকলের সুস্থতা কামনা করে আমি আমার আজকের ব্লগটি শুরু করছি। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে। প্রতিদিন নতুন নতুন গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করে আমারও বেশ ভালো লাগে।

আজ আমি আপনাদের সাথে একটা রেসিপি শেয়ার করবো। সেটি হলো ঝাল সুজি তৈরির রেসিপি। এই রেসিপিটি আমাদের বাড়িতে‌ সকলেই খুব ভালোবাসে। এইটা আমি আমার মায়ের কাছ থেকেই শিখেছি। মায়ের কাছ থেকেই শুনেছি যে ছোট্টবেলায় আমি নাকি সুজি খেতে একদম পছন্দ করতাম না। আর সেই সময় নামিদামি ব্র্যান্ডের জিনিস কিনে খাওয়ানোর মতো আর্থিক অবস্থা আমাদের ছিল না। তাই ভরসা ছিল সুজি কিংবা চাল-ডালের গুঁড়ো। তবে অনেক চেষ্টা করেও আমাকে মা কোনদিনই সুজি খাওয়াতে পারেনি‌ । জোর করে খাওয়ালেই আমি বমি করে ফেলতাম।

বড়ো হবার সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও সুজির প্রতি আমার ভালোবাসা একেবারেই জন্মাইনি। যত ভালো করেই আমাকে মিষ্টি সুজি রান্না করে দেওয়া হোক না কেন আমি মিষ্টি সুজি খেতে একেবারেই ভালোবাসি না। তাই একটু বড় হলে মা আমাদের ঝাল ঝাল করে সুজি রান্না করে দিত। সেই ঝাল ঝাল করে রান্না করা সুজিটা খেতে আমার ভীষণ ভালো লাগে ।আজকে আমি যে রেসিপিটা শেয়ার করছি মা তার থেকে কিছু উপকরণ বাদ দিয়ে ছোটবেলায় আমাদের রান্না করে দিত। সরষে, সস্ ও কারিপাতা বাদ দিয়ে মা আমাদের এই রেসিপিটাই রান্না করে খাওয়াতো। কি অসাধারণ লাগতো খেতে! তাই মিষ্টি সুজির প্রতি ভালোবাসা না জন্মালেও এই ঝাল সুজির প্রতি আমার অনেক ভালোবাসা রয়েছে।

1000118643.jpg

রান্না ব্যাপারটা যেহেতু একেকজনের কাছে একেক রকম তাই এই একই রান্না হয়তো আপনারা অন্যভাবে আপনাদের বাড়িতে বানিয়ে থাকেন। তবে আমি যেভাবে খেতে ভালবাসি আজ সেভাবেই আপনাদের সামনে রান্নাটি উপস্থাপন করব। আর যে আমি রাত্রি বেলায় রান্নাটি করেছি আর লাইটের ও একটু সমস্যা ছিল সেজন্য রান্নার রং খানিকটা আলাদা লাগতে পারে। অনেকে এই রান্নাটাকে উপমাও বলে , তবে তাতে পেঁয়াজ বা হলুদের ব্যবহার হয় না। কিন্তু আমি আমার রান্নায় পেঁয়াজ এবং হলুদ দুটোই ব্যবহার করেছি। আপনারা চাইলে দুটো উপকরণই বাদ দিয়ে করতে পারেন।

চলুন তাহলে জেনে নিই আমি কিভাবে এই ঝাল সুজি বানিয়েছিলাম।

উপকরণ
নংসামগ্রীপরিমাণ
সুজি১৫০ গ্রাম
নুনপরিমাণ মতো
হলুদপরিমাণ মত
কাঁচা লঙ্কা৫টা
সর্ষেসামান্য
রিফাইন তেল৭৫ গ্রাম
জলপরিমান মতো
টম্যাটো সস্সামান্য
কারিপাতাবেশ কয়েকটি পাতা
১০আলুবড়ো সাইজের তিনটি
পদ্ধতি

1000118899.jpg

ধাপ ১ :

প্রথমে আলু গুলো কে ভাজা করার মতো ঝিরি ঝিরি করে কেটে নিয়েছিলাম।

1000118876.jpg

ধাপ ২ :

এরপর পেঁয়াজ ও লঙ্কা গুলোকেও ছোট ছোট করে কেটে নিয়েছিলাম।

1000118583.jpg

ধাপ ৩ :

ওভেনে কড়াই চাপিয়ে, কড়াই গরম হয়ে এলে তাতে সাদা তেল দিয়ে দিয়েছিলাম। তেল গরম হয়ে গেলে তাতে একে একে পেঁয়াজ লঙ্কা গুলো দিয়ে একটু ভেজে নিয়েছিলাম।

1000118878.jpg

ধাপ ৪ :

এরপর হালকা ভেজে নিয়ে কেটে রাখা আলুগুলো তার মধ্যে দিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর সামান্য লবণ দিয়ে আলুগুলোকে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে ঢেকে দিয়েছিলাম।

1000118880.jpg

ধাপ ৫:

এরপর আলুগুলো হালকা ভাজা হয়ে গেলে তার সাথে হলুদ অ্যাড করেছিলাম। আমরা সাধারণত যেকোনো এই ধরনের ভাজা জিনিসের ক্ষেত্রে অর্ধেক ভেজে নেওয়ার পরই হলুদ দিয়ে থাকি , এতে জিনিসটি কড়াই এর সাথে লেগেও যায় না আবার বেশি তেল শুষেও নেয় না। এটা আমি বৌদির কাছ থেকে শিখেছি।

1000118882.jpg

ধাপ ৬:

এরপর আলুটা ভালোভাবে ভাজা হয়ে এলে মাঝে খানিকটা স্পেস তৈরি করব এবং তার মধ্যে সর্ষে এবং কারি পাতা দিয়ে একটু ভেজে নেব।

1000118884.jpg

ধাপ ৭:

কারি পাতা এবং সরষে ভাজা হয়ে গেলে আলুগুলো সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নেব।

1000118886.jpg

ধাপ ৮:

এরপর তার মধ্যে সুজি ঢেলে দেবো। আলুগুলোর সাথে সুজিটাকে ভালোভাবে মিশিয়ে এক মিনিটের জন্য ভেজে নেব।

1000118888.jpg

ধাপ ৯:

এরপর তাদের পরিমাণ মতো জল ঢেলে দেবো যাতে পুরো সুজিটা জল শুষে একটু ফুলে ওঠে। এরপর খুব ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে।

1000118890.jpg

ধাপ ১০:

এইভাবে খুব সুন্দর ভাবে নাড়াচাড়া করে পুরো সুজিটার থেকে জলটা শুকিয়ে নিতে হবে। ভালোভাবে নাড়াচড়া করে জলটা শুকিয়ে নিলে দেখা যাবে সুজিটা অনেকটা ঝরঝরে হয়ে আসবে।

ধাপ ১১:

আমি এরকম ঝরঝরে করেই খেতে ভালবাসি। এরসাথে কিছুটা সস্ অ্যাড করবো। এই স্টেপটা একেবারেই অপশনাল। সস দিলে খাবারের টেস্ট কেমন হয় আপনারা জানেন। যদি সেরকম টেস্ট চান তাহলে সস্ দিতে পারেন নয়তো এটাকে স্ক্রিপ করে যাবেন। এরপর একটু ঝরঝরে হয়ে গেলে আমরা নামিয়ে নেব।

1000118892.jpg

ফাইনাল লুক-----

1000118643.jpg

আমার একরত্তি ভাইপোর এটা খেতে খুব ভালো লেগেছে। যে খাবার ওনার ভালো লাগে সেই খাবারই দ্বিতীয়বার আবার চেয়ে খায়। তাই দ্বিতীয় বার আবার নিয়েছিল। বাচ্চারা খেলেই তো শান্তি লাগে। তাই না?

1000118894.jpg

তাহলে আজকে আমার ব্লগটি আমি এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোন ব্লগ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। আপনারা সকলে ভালো থাকবেন আর অবশ্যই জানাবেন আমার এই রেসিপিটি আপনাদের কেমন লাগলো।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
  ·  2 days ago (edited)

সাধারণত শৈশবে থাকা শিশুরা খাবার সুস্বাদু না হলে খেতেই চায় না। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এই খাবারটি নিশ্চয়ই অনেক সুস্বাদুই হয়েছি যেটা মনে হচ্ছে। আমার বোনের মেয়ে সবে চৌদ্দ মাসে পদার্পণ করেছে এখনই তাঁর পছন্দ আর অপছন্দ আছে। যে কারণেই এতোটা নিশ্চিত হয়ে স্বাদের কথাটা বললাম।

আমার শৈশবে এই রান্না করা খাবারের থেকে অন্য খাবারেই বেশি আগ্রহ ছিল এবং সাথে জড়িয়ে থাকা অনেক স্মৃতি। জন্ম থেকেই আমার গ্রামে বেড়ে ওঠা আর শৈশবে ঋতুকালীন ফলের সমারোহ। যেগুলো এখন ভীষণ মিস করি। শুধু আফসোস হয়, ঈশ! যদি এটা না করে তখন ওটা করতাম। দিন দিন সেই পরিবেশ হারিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ আমি এটাই বলবো যে আপনার লেখাতে উপস্থাপিত খাবারটি কখনো খাওয়ার সুযোগ হয়নি। তবে রন্ধন প্রণালী এরকমই হওয়া উচিত যেটা পরিদর্শনের পরে অন্যের সাহায্য ছাড়া অনায়াসেই প্রস্তুত করা সম্ভব। এই দিক থেকে এটা আমার কাছে খানিকটা শিক্ষণীয় ও মনে হয়েছে। তাছাড়া আরো সুবিধা হয়েছে যারা নতুন নতুন খাবারের পদ রান্না করতে পছন্দ করেন।

wirngo.png

অনেক অনেক ধন্যবাদ দিদি আমার পোস্টটি পড়ে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

  • এই রেসিপিটার কথা বহুবার শুনেছি, এমনকি ইউটিউবেও কয়েকবার দেখেছি। কিন্তু বাড়িতে তৈরি করার সাহস করতে পারিনি, কি জানি খেতে কেমন হবে এটা ভেবে। কারণ ছোটবেলা থেকে সুজি মানেই সেটা দুধ মিষ্টি দিয়ে তৈরি হবে,এমন একটা ধারণা ছিলো।

  • তবে আজ আপনার ভাইপোর খাওয়া দেখে খানিকটা নিশ্চিত হতে পারছি যে, এটা খেতে বেশ ভালোই হবে। এর সাথে সাথে আপনার পোস্ট পড়ে উপকরণ ও তৈরি করার পদ্ধতিও জেনে নিলাম। এবার একদিন অবশ্যই বাড়িতে তৈরি করে টেস্ট করে দেখবো।

  • আসলেই রেসিপিটি খেতে যেমনই হোক তবে খুব স্বাস্থ্যকর এটা জানতাম। আজ থেকে জানলাম রেসিপি স্বাস্থ্যকর এর পাশাপাশি খুব সুস্বাদুও বটে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর একটি সুস্বাদু রেসিপি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।

অনেক অনেক ধন্যবাদ দিদি আমার পোস্টটি পড়ে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

@pinki.chak তুমি দেখছি আমাকে স্কুল জীবন থেকে বেরোতেই দেবে না!

অবাক হবে না, আমার প্রতিটি দাবির পিছনে থাকে একটা না একটা ঘটনা।
এই যে সুজির পদ তুমি আজকে ভাগ করে নিয়েছো, এটা প্রায় প্রতিদিন আমার প্রিয় বান্ধবী কবরীর স্কুলের টিফিন দেখতে পাওয়া যেতো।
লুচি, আলুর দম, ঝাল সুজি, আর চিড়ের পোলাও এইগুলো তালিকার উর্ধ্বে ছিল।
যাইহোক তখন আমার এটা খেতে একদম ভালো লাগতো না, তবে পরবর্তীতে বুঝলাম যেটাকে আমরা সকলে ঝাল সুজি জেনেই বড় হয়েছি, সেটার আলাদা নাম এবং তৈরির খানিক ভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে।

এই পদটির আসল নাম উপমা, ঝাল সুজি বলে আসলে কোনও পদ নেই, এটি শীতকালীন রং বেরঙের সবজি সহযোগে এবং কাজু, কিসমিস দিয়ে আমি তৈরি করি।

এই পদ (আমার ভার্সন) তৈরির পদ্ধতি আমি আগেও দিয়েছি, যেখানে কারিপাতা, ঘী মুল উপাদান। দাড়াও তোমাকে আমার তৈরি ঝাল সুজি ওরফে উপমা আমার হাতে তৈরির একটা ছবি দিচ্ছি।

আমি হলুদ ব্যবহার করি না উপমাতে! আমি আলুর ব্যবহার ও করি না, তোমার মত করে আমি সেই টিফিনে আনতে দেখতাম।

1000001633.jpg

এটা খেতে আমি ভীষণ ভালোবাসি, জানিনা তোমার দেখে পছন্দ হবে কিনা!

Loading...

আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন একটা রেসিপি, সত্যি কথা বলতে এরকম রেসিপি খাওয়া তো দূরের কথা আমি আগে কখনো দেখিইনি,,, তবে আপনার পোস্টটা পড়ে ও দেখে মনে হলো আপনার এই রেসিপিটা খুবই সুস্বাদু হয়েছে খেতে,,
যেহেতু, উপকরণ সহ ধাপে ধাপে উপস্থাপনা করেছেন তাই অবশ্যই একদিন এই নতুন রেসিপিটা আমি বাসায় তৈরি করব।।
ধন্যবাদ নতুন রেসিপি শেয়ার করার জন্য,,,।

TEAM 06
Congratulations!!!
your post has been supported. We support quality posts, good comments anywhere and any tags.
Curated By : @wirngo

আমার কাছে সুজি মানেই মিষ্টি। কখনো ঝাল করে বানাতে দেখি নাই আমাদের বাড়িতে। তবে ইদানীং ইউটিউবে বিভিন্ন রেসেপি দেখি।তবে কেমন লাগবে ভেবে বানাই নাই কখনো।
তবে আপনার রেসেপিটা একবার ট্রাই করে দেখবো। ধন্যবাদ এত সুন্দর করে এই রেসিপিটা শেয়ার করার জন্য।