নমস্কার বন্ধুরা। আজকে আবারো চলে এসেছি আপনাদের সঙ্গে নতুন কিছু গল্প শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
কিছুদিন আগেই, মানে নভেম্বর মাসে আমার জন্মদিন গেল। এই বছরে আমি আমার জন্মদিন কিভাবে কাটিয়েছিলাম সেই বিষয়ে আমি আমার পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব আমি আমার কুড়ি বছরের জন্মদিন কিভাবে উদযাপন করেছিলাম সেই বিষয়ে।
জন্মদিন সকলের কাছেই একটা বিশেষ দিন। এই দিনটাতে আমার মনে হয় সকলেই একটু অ্যাটেনশন চাই। অনেকের কাছে এটা অন্যান্য সাধারণ দিনের মতোই একটা দিন বলে মনে হতে পারে। তবে আমার মনে হয় জন্মদিনের দিনটিতে কেউ 'হ্যাপি বার্থডে' উইশ টুকু করলেও মন থেকে খুব খুশি খুশি লাগে। আর তার সাথে যদি গিফট পাওয়া যায় তাহলে তো কোন কথাই হবে না। আনন্দ আরব দ্বিগুন বেড়ে যায়। আর তার সাথে তো রয়েছি মায়ের রান্না পায়েস এবং অনেক অনেক ভালোবাসা। সব মিলিয়ে জন্মদিনের দিনটিতে সকলেই নিজেকে একটু স্পেশাল ফিল করাতে চাই।
তবে আমার ক্ষেত্রে কিন্তু ছোট থেকে জন্মদিনটা প্রতিবছরই খুব আনন্দময় ছিল না। এমনকি সত্যি কথা বলতে গেলে ১৮বছরের আগে আমার কিংবা আমার দাদার কারোরই কিন্তু কোনদিন জন্মদিন পালন হয়নি। মানে এই দিনে স্পেশাল কোনো খাবার রান্না করা বা পায়েরটুকুও রান্না হয়নি। ২০১০ সালে আমার বাবা মারা যায়।সেই সময় সংসারে আর্নিং মেম্বার বলতে মা একা। তাও খুব সামান্য বেতন পেত। আমি ২ টো টিউশন পড়াতাম তবে মাইনে পেতাম খুব কম। তাতে আমি আমার ২ টো স্যারের মাইনে দিতাম । দাদাও পড়াশোনার ফাঁকে টুকটাক কাজকর্ম করত তবে তা দিয়ে বিলাসিতা করা যেত না। তখন মাথার ওপর ছাদটুকুও ছিল না। ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। সারা মাসের সংসার চালানো, বাড়ি ভাড়া দেওয়া, দুটো ছেলে মেয়েকে মানুষ করার পর জন্মদিন পালন করার মতো সামর্থ্য মায়ের ছিল না। আমরাও কিন্তু সমস্ত সিচুয়েশন বুঝে কখনো সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে কোন কিছু করার জন্য আবদার করতাম না। এই ভাবেই কেটেছে জীবনের আঠারোটা বছর।
যে ভাড়া বাড়িটিতে আমরা থাকতাম তার কাছেই একটি বাড়িতে আমার মা রান্নার কাজ করতো। সেই বাড়িতে আমার বয়সী একটি মেয়ে ছিল। আমি আর ও একই স্কুলে পড়তাম। পরে জানতে পেরেছিলাম কোইন্সিডেন্টালি ওর জন্মদিন আর আমার জন্মদিন একই দিনে। প্রতিবছর ওর জন্মদিন খুব ধুমধাম করে করা হতো। রাতে সেলিব্রেট করতো। নিমন্ত্রণও করত। তবে গিফ্ট দিতে পারবো না বলে আর যেতাম না। তাই সকালে আমার জন্যেও কিছু খাবার পাঠাতো। জন্মদিনে না হোক এইভাবেই জন্মদিনের পরের দিন কিছু ভালো খাবার খেতে পারতাম।
তারপর ধীরে ধীরে কিছু বছর কাটলো। টিউশন বাড়ালাম। মাও কাজ বাড়ালো। দাদা কিছু কাজ শিখলো। পরিবারের সবাই মিলে ইনকাম করলে সিচুয়েশন খানিকটা হলেও পরিবর্তন হয় সেটা বুঝলাম। ধীরে ধীরে মাথার ওপর একটা ছাদের ব্যবস্থা করতে পারলাম। যে দৈন্যদশা দেখে বড়ো হয়েছি তার থেকে খানিকটা অবস্থার পরিবর্তন হলো। এভাবেই অনেক পরিশ্রম করে আমাদের জীবনের চাকা ঘুরতে থাকলো। বড়োলোক হয়ে যাইনি ঠিকই তবে জন্মদিনে একটু আনন্দ করার মতো সামর্থ্য হলো। প্রথমবার আমার জন্মদিন পালন হয়েছিল আমার ১৮ বছরে। তারপর থেকে প্রতি বছর বন্ধুবান্ধবদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হোক বা না হোক অন্তত আমার জন্য কিছু ব্যবস্থা করা হয়। সেই টুকুতেই আমি অনেক খুশি।
আজ আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব আমার কুড়ি বছরের জন্মদিনের কিছু গল্প। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই দেখেছিলাম কাছের বন্ধু বান্ধবের জন্মদিনে নিমন্ত্রণ করে বাড়িতে খাওয়াতো। সবার জন্মদিনে খেয়ে আসতাম আর মাকে এসে গল্প বলতাম। তখনও কোন বন্ধু-বান্ধবকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে কখনো খাওয়ানো হয়নি। তাই মায়ের তৎপরতায় ঠিক করা হলো আমার কুড়ি বছরের জন্মদিনে আমার কাছের কিছু বন্ধুবান্ধবদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হবে। সেইমতো ছোটখাটো একটা আয়োজন করা হলো।
আমার খুব একটা বড়সড়ো ফ্রেন্ড সার্কেল ছিল না। আমার কাছের বন্ধুবান্ধব বলতে পাঁচজন ছিল। সেই পাঁচজন বন্ধুকে নিমন্ত্রণ করেছিলাম আর তার সাথে আমার কিছু স্টুডেন্টদের ও নিমন্ত্রণ করেছিলাম। সব মিলিয়ে খুব ছোট্ট একটা আয়োজন করা হয়েছিল। তবে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। তখন দাদা কাজ শেখার জন্য লোন নিয়ে একটা নতুন ক্যামেরা কিনেছিল। তাই সেই ক্যামেরায় আমাদের ফটো তোলার কত ধুম ছিল।
এ সময় মনজিনিস কিংবা মিও আমোরের মতো ব্র্যান্ডেড কেক শপের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিল না। তাই নর্মাল কেক শপগুলোতে যেরকম কেক পাওয়া যেত সেখান থেকে কিনে আনা হয়েছিল। কেক ব্র্যান্ডেড না হলেও আনন্দ করে কেক কাটা হয়েছিল। কেক কাটার পর বাচ্চাগুলোকে কেক খাইয়ে দিয়েছিলাম। সবাই খুব খুশি হয়েছিল।
তারপর আমরা সবাই মিলে অনেক অনেক ফটো তুলেছিলাম। এই সময় ক্যামেরায় ফটো তোলার প্রতি ভীষণ আকর্ষণ ছিল। তার ওপরে নিজের দাদার ক্যামেরা। আমার বন্ধু বান্ধবেরাও ভীষণ এক্সাইটেড ছিল ফটো তোলার জন্য।
এরপর আমরা খাওয়া-দাওয়া সেরে নিয়েছিলাম। যেহেতু অল্প জনের আয়োজন ছিল তাই খাওয়া-দাওয়া বেশ ভালোই হয়েছিল। সবার বাড়িতে যেরকম এতদিন খেয়ে এসেছি সেই রকম ভাবে সবাই কে খাওয়াতে পেরে বেশ সন্তুষ্টি পেয়েছিলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে আমরা একটু বিশ্রাম নিয়ে চলে গিয়েছিলাম আমাদের বাড়ির থেকে খানিকটা দূরত্বেই তৈরি হওয়া একটি সুন্দর পার্কে।
সেখানে বাচ্চারা মন ভরে খেলা করছিল। সবথেকে বেশি খুশি তো ওরাই হয়েছিল। এই বাচ্চাগুলো আমার স্টুডেন্ট ছিল। ওদের বাড়িতে বাবা মায়ের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে আমি ওদেরকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলাম। দু একটা ফটো ক্যামেরায় তোলা ছিল। সেটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
এরপর আমরা কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব মিলে বেশ অনেক ফটো তুলেছিলাম। খুব সুন্দর ভাবে দিনটা কাটিয়েছিলাম। কুড়ি বছরের এটাই হয়তো আমার সবথেকে বেস্ট বার্থডে ছিল।
*আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আপনাদের সকলের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। আগামীকাল আবার অন্য কোন গল্প নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
আপনার পোস্টটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। জীবনের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আপনার প্রথম জন্মদিন উদযাপনের গল্প জানতে পারলাম। বিশেষ করে পরিবারের সকলের পরিশ্রম ও আপনার মায়ের উদ্যোগ যে আপনাদের জীবনে পরিবর্তন এনেছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। আশা করি, ভবিষ্যতেও এভাবেই আপনার জন্মদিন আরও আনন্দময় হয়ে উঠবে। শুভকামনা রইলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যিই দিদি সব মানুষ সত্য কথা বলতে পারে না, কিছু মানুষ অতীত ভুলে যায়। অতীতের কথা সব সময় মনে করা উচিত আমাদের সবার। আপনি এক সাহসী মেয়ে, আমি আপনার পোস্টটি পড়েছি। আপনার পোস্টটির মধ্যে দুঃখ আনন্দ মুহূর্ত সব কিছু ছিল। আমি আপনার জন্য দুয়া করি,সৃষ্টিকর্তা যেনো আপনাকে অনেক বড় করে। হ্যাপি বার্থডে দিদি , ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ার জন্য । আপনিও ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
তোমার মত আমারও ছোট থেকে কোনদিনই সেভাবে জন্মদিন পালন করা হয়নি। আমিও বড় হওয়ার পর জন্মদিন পালন করা শুরু হয়েছে। ছোটবেলার এই সব দিনগুলোর কথা ভাবলে খুবই আনন্দ হয়। তোমার মত আমারও এইরকম ছোট ছোট জন্মদিনের অনেক স্মৃতি রয়েছে। যাই হোক তোমার পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে আমার পোস্টটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit