আমার স্মৃতিতে ঘূর্ণী স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠ

in hive-120823 •  8 days ago  (edited)

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। আমিও খুব ভালো আছি।। আজকে আমি আমার স্কুল জীবনের কিছু স্মৃতি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। আশা করছি আপনাদের সকলের খুব ভালো লাগবে।

'ঘূর্ণি স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়'-- এই বিদ্যালয়টি আমার জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রাচীন ঐতিহ্যমন্ডিত শহর রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শহর, কৃষ্ণনগর। এরই এক প্রান্তে অবস্থিত ঘূর্ণী ।১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে সামান্য কয়েকজন ছাত্রী নিয়ে শ্রী অনাদি কৃষ্ণদেব ঘূর্ণীতে স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । তারপর আস্তে আস্তে একটু একটু করে এই বিদ্যালয় আজ অনেক বড়ো জায়গা দখল করে নিয়েছে কৃষ্ণনগর শহরের বুকে।

1000091311.jpg

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে ২০০৯ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে এই বিদ্যালয়ে আমি ভর্তি হই। যেহেতু আমাদের প্রাইমারি বিদ্যালয়ের অনেকেই এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল তাই সকলেই অপরিচিত ছিল এমনটা নয় তবে পরিবেশটা ছিল আমার কাছে অনেকটাই নতুন। আর তার সাথে অন্যান্য পরিচিত বান্ধবীদের সাথে দেখা হওয়ার সুযোগও যায় কমে কারণ আমার সেকশন হয়ে যায় D। প্রথম প্রথম তো খুবই ভয়ে ভয়ে থাকতাম। স্কুলের টিচারদের এমনকি সহপাঠীদেরও ভয় পেতাম। তারপর ধীরে ধীরে সহপাঠীদের সাহচর্য ও শিক্ষিকাদের ভালোবাসায় ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম।

1000091315.jpg

পঞ্চম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত আমি এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলাম। এই ছটা বছর সত্যিই আমার কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সংসারে অভাব অনটনের জন্য পড়াশোনাটা চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবুও এই বিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষিকাদের সহযোগিতা এবং ভালোবাসায় আমি সেই সময় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছিলাম। বই কেনার টাকা থেকে শুরু করে সাইকেল সারানোর টাকা দিয়েও এই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা আমাকে সাহায্য করত।

আমাদের বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্তই মিড ডে মিলের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু আমাদের ক্লাস টিচার আমার জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন যাতে আমি ক্লাস টেন পর্যন্ত মি মিড্ ডে মিল খেতে পারি। এটা একদিকে সত্যিই আমার জন্য ভীষণ উপকারী ছিল । কিন্তু ম্যাম আমাকে বলেছিলেন আমি যেন কাউকে না বলি যে আমাকে মিড ডে মিল দেওয়া হয় কারণ প্রত্যেক ছাত্রীদের মিড্ ডে মিল খাওয়ানো সম্ভব ছিল না। তাই আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে টিফিনের সময় খেতে যেতে হতো। যে কারণে আমি ভীষণ পরিমাণে হীনমন্যতাতেও ভুগতাম। কারণ বন্ধুদের কাছে আমাকে কৈফিয়ত দিতে হতো টিফিন এর সময় আমি কোথায় যাই ,কেন যাই ইত্যাদি।

এত অভাব অনটনের মধ্যেও আমি যেহেতু প্রতি বছর রেজাল্ট ভালো করার চেষ্টা করতাম তাই বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা শিক্ষিকায় আমাকে ভীষণ ভালোবাসতো এবং যতটা পারতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত। এই সকল ছাত্রী দরদী শিক্ষিকারা সকলে বিদ্যালয়ের এক একজন সম্পদ। বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাগণ খুব ভালো এবং ন্যায়পরায়ণ।
তাই বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষিকার কাছে আমি ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ সেই সময় আমাকে এতটা সাহায্য করার জন্য। এই সাহায্যটা না পেলে আমি হয়তো এখনো পর্যন্ত পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারতাম না।

1000091317.jpg

আমি যে বিভিন্ন কারণে হীনমান্যতাই ভুগি তা বুঝতে পেরে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিক্ষিকারা আমাকে অংশগ্রহণ করার জন্য উৎসাহ দিতেন। এমনও হয়েছে বিদ্যালয়ের ড্রিলে অংশগ্রহণ করেছি অথচ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার সামর্থ্য তখন আমার ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ে শিক্ষিকারা আমাকে সেই জিনিসপত্র কিনতে সাহায্য করত।

1000091313.jpg

২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমি এই বিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত ছিলাম। এই বিদ্যালয় আমার স্মৃতিতে চির জ্বলজ্বল করবে। বিদ্যালয় এর সকলে আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল। এখানে প্রায় ১৫০০ জন ছাত্রী পড়াশোনা করে ।ছাত্রীদের সারল্য হলো এই বিদ্যালয়ের বড় সম্পদ। বর্তমানে বিদ্যালয়ে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতে এই বিদ্যালয় তার স্বমহিমায় আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

ধন্যবাদ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

You made me feel nostalgic. You are true, we learn many values and skills in our school. And when the teacher is supportive then it is icing on the cake.

Yes, you are absolutely right.

আপনার পোস্টের মাধ্যমে আমি আমার স্কুলকে অনেকদিন পর দর্শন করতে পারলাম। আমিও একই স্কুলের স্টুডেন্ট ছিলাম। তবে আপনি ঠিকই বলেছেন আমাদের স্কুলের শিক্ষিকারা সত্যিই অন্যরকম। আপনার মত অনেককেই এভাবে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। তবে একেক জনের সাহায্য এক এক রকমের। আমাকেও স্কুলের প্রত্যেকটা শিক্ষিকা খুব ভালবাসতেন। কিন্তু আমাকে ও অনেক সাহায্য করেছেন। আপনার পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। এই ভাবেই জীবনে এগিয়ে যান।

বাঃ! আপনিও ঐ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন জেনে ভালো লাগলো। তাহলে তো আপনি খুব ভালো উপলব্ধি করতে পেরেছেন আমার লেখা পড়ে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।