বিজয়ার মিষ্টি মুখ

in hive-120823 •  2 days ago  (edited)

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন । আমিও খুব ভালো আছি। আশা করছি আপনাদের সকলের দুর্গা পুজো খুব ভালো কেটেছে । বড়োদের বিজয়ার প্রণাম জানাই এবং ছোটদের জানাই ভালোবাসা। বিজয়া দশমীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে আমি আজকে আমার বিজয়া দশমীর অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি।

1000096127.jpg

ছবির লিংক

সকলকে বিজয়া দশমীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা

এক বছরের অপেক্ষা কয়েক দিনের মধ্যেই পেড়িয়ে গেল। দেখতে দেখতে পুজো কেটে গেল। আপামর বাঙালির আবারও এক বছরের অপেক্ষার দিন গোনা শুরু হলো। মা উমা আবার একটি বছর পর সপরিবারে গৃহে প্রবেশ করবেন। পুজোর দিনগুলো কেমন যেন হই হই করে দ্রুতই কেটে গেল। দশমীতে মাকে বরণ করে বিদায় জানানোর পর থেকেই বিজয়ার শুভেচ্ছা বার্তা আমরা একে অপরকে জ্ঞাপন করে থাকি। ছোটোরা বড়োদের প্রণাম করার মাধ্যমে আশীর্বাদ নিয়ে থাকে এবং বড়োরা ছোটোদের আশীর্বাদ করার মধ্যে দিয়ে শুভেচ্ছা বার্তা জ্ঞাপন করে। আর সেই সাথে মিষ্টি মুখ করার রীতিও বাঙ্গালীদের মধ্যে প্রচলিত আছে।

প্রতিবছর মাকে বিদায় জানানোর পর সবাই সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়ে এই দিনটিকে উদযাপন করে থাকে। আর বিজয়া দশমীর প্রণাম করতে সকলের বাড়ি যেতে আমার বেশ ভালো লাগে। প্রণাম করে বড়োদের কাছ থেকে শুধু আশীর্বাদই পাওয়া যায় এমন নয়।আশীর্বাদ এর পাশাপাশি প্লেট ভরে আসে নাড়ু, মিষ্টি, নিমকি ইত্যাদি । এটা আশা করি সকলেই ভালোবাসে।

এই বছরে বিজয়া দশমীতে আমার পেট পুজো বেশ ভালোই হয়েছে। এখন যেহেতু পড়ানোর জন্য অনেকের বাড়িতে যেতে হয় তাই এই পাওনাটা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেছে । তাহলে শুরু করা যাক আমার দশমীর ভুঁড়ি ভোজের গল্প। দশমীর পরের দিনই চলে গিয়েছিলাম আমার হবু শ্বশুর বাড়ি সকলকে প্রণাম জানানোর জন্য। প্রণাম জানানোর পর্ব শেষ করতেই আমার হবু শাশুড়ি মা প্লেট ভরে নিয়ে আসেন নিমকি, বিস্কুট, মিষ্টি , নাড়ু ইত্যাদি। তার সাথে ছিল আইসক্রিম।

1000096059.jpg

1000096128.jpg

শাশুড়ি মায়ের ভালোবাসা

এত দিন পড়ানো ছুটি দেওয়ার পর আবার শুরু হলো আগের রুটিন। সকালে পড়াতে গিয়েই প্রথমেই স্টুডেন্টরা বিজয়া দশমীর প্রণাম করল। আমি ওদের চকলেট খাইলাম আর তারপর আমিও তাদের বাবা-মা কে দশমীর প্রণাম জানালাম। ওনারাও আমাকে প্লেট সাজিয়ে সকালের ব্রেকফাস্ট করিয়ে তারপর ছাড়লো। সত্যি কথা বলতে গেলে এই কাকিমার বাড়িতে আমি বহুদিন পড়াচ্ছি। প্রায় পাঁচ বছর। এই পাঁচ বছরে উনি আমাকে এতটা ভালোবেসে ফেলেছেন সত্যিই আমি ভাবতে পারি না। আমিও খুব ভালোবাসি। আগে যেহেতু আমার পরপর দুই তিনটে পড়ানো থাকতো তাই কাকিমা আমাকে পড়ানোর শেষে প্রত্যেকদিন ব্রেকফাস্ট করিয়ে তারপর ছাড়তো। এখন অবশ্য কলেজ যেতে হয় সেই জন্য সকালে একটাই পড়ানো থাকে। কিন্তু কাকিমা এখনো পর্যন্ত আমাকে সকালের ব্রেকফাস্ট করিয়ে তারপরেই যেতে দেয়। সত্যিই আমি ভীষণই আপ্লুত এইরকম মানুষজনের সান্নিধ্যে আসতে পেরে।

1000096060.jpg

পড়ানো বাড়ির কাকিমার আদর

যাইহোক, বিকেলে আবারও পড়ানো ছিল। এখানেও একই রকম বাচ্চাটিকে মিষ্টিমুখ করালাম তারপর তার মাও প্লেট ভরে মিষ্টি নিয়ে এলো। যদিও সেই মুহূর্তে আমার মিষ্টি খাওয়ার একেবারেই ইচ্ছা ছিল না তবুও এক প্রকার আমাকে জোর করেই খাওয়ানো হলো।

1000096069.jpg

আরও এক পড়ানোর বাড়ির মিষ্টি মুখ

বাঙ্গালীদের এই বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা বার্তা জানানোর পর্ব বেশ কিছুদিন ধরে চলে। সুতরাং তারপরের দিন আবার মিষ্টি নিয়ে চলে যাই এক কাকিমার বাড়িতে। এই কাকিমার সঙ্গে অনেক ছোটো থেকেই পরিচয়। এক সময় যখন আমরা ভাড়া বাড়িতে থাকতাম তখন এই কাকিমারাও সেই একই বাড়িতে ভাড়া থাকতো তখন থেকে আমাদের পরিচয়। তাই প্রত্যেক বছরই বিজয়া দশমীর প্রণাম জানাতে আমি চলে যাই। প্রণাম জানানোর পর একটু গল্প গুজব করে কাকিমা মিষ্টি খেতে বলে। কিন্তু এই কদিন এত মিষ্টি খেয়েছি যে মিষ্টি খাওয়ার একদম ইচ্ছে হচ্ছিল না তাই কাকিমা বলল----"ঠিক আছে একটু বস । আমি লুচি আর মাংস করছি।" তারপর আর কি লুচি , মাংস খেয়ে , একটু বিশ্রাম নিয়ে বাড়ি এলাম।

1000095660.jpg

কাকিমার বানানো লুচি, মাংস

সেই দিনই কিছু কারণে আমার এক বান্ধবী কাম বোন ঈশার বাড়িতে যেতে হয়েছিল ‌। প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেরে ঈশা প্লেটে মিষ্টি, সন্দেশ দিয়ে "পিংকি দি তোমাকে খেতেই হবে" ---বলে জেদ ধরলো। অগত্যা আমাকে খেতেই হল। শুধু মিষ্টি আর সন্দেশ খেতে দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হলেন না , বাটি ভরে নিয়ে এলেন নাড়ু । তারপর বলল " পিংকি দি এই দেখো নাড়ুর বাটি , তোমার ইচ্ছে মতো তুলে নাও।" মিষ্টি সন্দেশ খাবার পর আবারও মিষ্টি জিনিস খাওয়ার একদমই ইচ্ছে হচ্ছিল না তবুও এত জোরাজুরিতে একটা নাড়ু খেলাম। নাড়ুটা কিন্তু ভীষণ টেস্টি ছিল।

1000095570.jpg

1000096070.jpg

ঈশার সোহাগ

কাল বিকেলে আমার বাড়িতে পড়ানো ছিল। বাড়িতে পড়তে আসা সবাই বিজয় দশমীর প্রণাম করলো আমাকে। আমারও একটা দায়িত্ব আছে, তাই আমিও প্লেট সাজিয়ে সবাইকে মিষ্টিমুখ করালাম।

1000096058.jpg

স্টুডেন্টদের প্রতি আমার ভালোবাসা

রাতের বেলা আমার এক প্রাক্তন স্টুডেন্টদের বাড়ি যেতে হয়েছিল তাকে প্রোজেক্ট- এর কিছু সাহায্য করার জন্য। সেখানে গিয়েও কিন্তু বিজয়ার ভুঁড়িভোজ মিস হয়নি। কাকিমা আমাদের কাজের মাঝেই দুজনকে প্লেট সাজিয়ে খাবার দিয়ে যাই ‌।

1000096057.jpg

বান্ধবীর বাড়ির ভুঁড়ি ভোজ

আজ সকালে আবারো একটা পড়ানো ছিল। পুজোর পর এই প্রথম পড়াতে যাওয়া। পড়ানোর মাঝেই বৌদি এসে বিজয়া দশমীর মিষ্টি মুখ করানোর জন্য প্লেটে নানা রকমের জিনিস সাজিয়ে নিয়ে চলে এল। পড়াতে পড়াতেই সেটা খাওয়া হলো।

1000096061.jpg

বৌদির দেওয়া

এইভাবেই আমার বিজয়া দশমীর ভুঁড়িভোজ বেশ ভালোই হলো। আপনাদের বিজয়া কেমন কাটলো অবশ্যই জানাবেন। আজ এখানেই শেষ করছি ।আশা করছি আগামী অন্য কোনো পোস্টে আবারও অন্য কোন গল্প নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব।

ভালো থাকবেন , সুস্থ থাকবেন।

ধন্যবাদ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

তোমাকে জানাই বিজয় দশমী অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ বছরে তো দেখে মনে হচ্ছে দশমীর খাবার খেয়ে আর সাত দিন তোমাকে কিছু খেতেই হবে না। এত খাবার একা একা খেয়ে নিলে। আমাদের তো একটু দিতে পারতে। যাইহোক দশমীর পরে এরকম খাবার খেতে খুবই ভালো লাগে। প্রত্যেক বছরই দশমীর পরের দিনকে এইরকম খাবার খাওয়ার আশায় আমরা বসে থাকি।

হ্যাঁ, ঠিকই বলেছো। এত মিষ্টি খেয়েছি যে মিষ্টি খাওয়ায় প্রতি ভালোবাসা খানিক কমেই গেছে। আর বিজয়ার মিষ্টি মুখ করতে হলে আমাদের বাড়ি আসতে হবে। 🤭🤭🤭