সেকাল vs একাল

in hive-120823 •  4 days ago  (edited)

নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন ?আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি ।আজকে আবারো চলে এসেছি নতুন একটা অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আশা করছি সকলের ভালো লাগবে।

ঐতিহ্যমন্ডিত শহর কৃষ্ণনগরের বুকে বহু বছর ধরেই একটি সিনেমা হল বিরাজ করছে। সেটি হল ' সঙ্গীতা সিনেমা হল'। মায়ের কাছে শুনেছি কৃষ্ণনগরে নাকি আরো একটি সিনেমা হল ছিল সেটি হল 'মিমি সিনেমা হল'। যদিও আমার খুব একটা মনে পড়ে না। মা বলে মিমি সিনেমা হলেও নাকি আমরা সিনেমা দেখতে গিয়েছি। তখন আমি ছোটো ছিলাম তাই সেভাবে আমার কিছুই মনে নেই। বর্তমানে কৃষ্ণনগরে মিমি সিনেমা হল টি আর নেই সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাই বড়ো হয়ে সেই সিনেমা হলটি দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি।

তবে এই সিনেমা হলের সাথে আমাদের কিন্তু বহু বছরের একটা সম্পর্ক রয়েছে। সংসারে অভাব অনটন থাকলেও নতুন কোন সিনেমা, সিনেমা হলে এলে সেটা দেখতে যাওয়ার বিলাসিতা আমার বাবার ছিল। তাই ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের সাথে অনেক সিনেমায় সিনেমা হলে গিয়ে দেখেছি। সব সিনেমার নাম আমার এই মুহূর্তে মনে নেই ।তবে বেশ কিছু সিনেমার নাম আমি এখনো মনে করতে পারি, যেমন- এম.এল এ ফাটাকেষ্ট, শুভদৃষ্টি ,সাথীহারা ইত্যাদি। মিঠুন এবং জিৎ ছিল আমার বাবার প্রিয় নায়ক , তাই এই অভিনেতাদের কোনো সিনেমা সিনেমা হলে এলে সেটা আমার বাবা দেখতে যাবেই।আমি আর দাদা কান্না জুড়তাম আমরাও সঙ্গে যাবো বলে। তাই সপরিবারেই সিনেমা দেখতে যাওয়া হতো। যদিও ছোটবেলায় সিনেমা হলে গেলেই আমি অর্ধেক সিনেমা দেখে ঘুমিয়ে পড়তাম তবুও বাবা মায়ের সাথে সিনেমা দেখতে যেতে বেশ ভালো লাগতো। সেই সময়কার সিনেমা হল গুলোতে নতুন কোন সিনেমা এলে হলের চত্বর লোকে লোকারণ্য হয়ে থাকত। কখনো কখনো তো টিকিটও পাওয়া যেত না এতটাই ভালো চলতো এই সিনেমা হল গুলো। বাবা মারা যাবার পর আমার আর কখনোই সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখাই হয়নি। সংসারে অভাব অনটন নিয়ে বাবার মত সিনেমা দেখার বিলাসিতা করার মতো সাহস আমাদের কারোরই হয়ে ওঠেনি।

এইসব সিনেমা দেখার রীতি তো এখন অতীত, কারণ আধুনিক যুগে বাড়িতে বসেই আমরা মোবাইলেই সিনেমা দেখে নিতেপারি ।আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে একই রকম ব্যাপার। আমি সিনেমা দেখতে তেমন একটা ভালোবাসি না। কারণ একটানা দুই আড়াই ঘন্টা বসে একটা সিনেমা দেখার মতো ধৈর্য সত্যিই আমার থাকে না। আমি মোবাইলে যখন কোন সিনেমা দেখি একটা সিনেমা দুদিন ধরে দেখি। আর তাছাড়া এখন বিভিন্ন কাজের চাপে সিনেমা খুব একটা দেখাই হয় না। মাঝে সাঝে কোনো সিনেমার ট্রেলার দেখে ভালো লাগলে কোনো কোনো সিনেমা মোবাইলে দেখি। আর বাড়িতেও যেহেতু কেউ এখন টিভিতে সিনেমা, সিরিয়াল কিছুই দেখেনা সেজন্য বাড়িতে যে দুটো টিভি ছিল সেই টিভি দুটো মা বিক্রি করে দিয়েছে। তাই আপাতত এন্টারটেইনমেন্ট বলতে এই মোবাইলটাই। আর তাতে সিরিয়াল বা সিনেমার থেকে বেশি facebook , instagram এগুলোই স্ক্রল করা হয় বেশি।

বেশ কিছু বছর হলো কৃষ্ণনগরে মাল্টিপ্লেক্স তৈরি হয়েছে। যার ফলে সঙ্গীতা সিনেমা হলের বাজার গেছে অনেক কমে। এখন প্রায়ই দেখতে পাই সিনেমা হলের চত্বর পুরো ফাঁকা। খুব সামান্য মানুষই এখন সেই সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখে ।আসলে আমরা সবাই এখন সিনেমা দেখার থেকেও কোথায় গিয়ে সিনেমা দেখছি সেইটা দেখাতেই বেশি ভালোবাসি ।তাই মানুষজন এখন সিনেমা হলের থেকে মাল্টিপ্লেক্সে গিয়ে সিনেমা দেখতে একটু বেশি ভালোবাসে। এখানে টিকিটের দর যেমন বেশি সেরকম আরামদায়কও বটে। বন্ধু-বান্ধবেরা অনেকবার প্রস্তাব দিয়েছিল সেখানে গিয়ে সিনেমা দেখার জন্য কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক আমার আর কখনোই সিনেমা হলে যাওয়া হয়নি।

গতকাল হঠাৎ করেই কোনো আগাম পরিকল্পনা ছাড়াই আমার হবু বর কাম বন্ধু বলে বসলো ---

" চল আজ দুজনে সিনেমা দেখে আসি।"

1000094392.jpg

1000094391.jpg

এই প্রস্তাব আগে আসেনি এমন নয় তবে প্রত্যেকবারই আমি নিজেই নাকচ করে দিয়েছি কিন্তু এইবার আমার নিজেরও একটু মাল্টিপ্লেক্স থেকে ঘুরে আসতে ইচ্ছে হলো কারণ এত বছরে সিনেমা হলের ভিতরটা কেমন হয় সেই স্মৃতিটাই আবছা হয়ে গিয়েছিল। তাই স্মৃতি পুনরুত্থান করতে, আমি আর না করলাম না। এরপর শুরু হলো কোন সিনেমাটা দেখব সেই নিয়ে একটা দীর্ঘ আলোচনা । বিকেলের দিকে দুটো সিনেমা ছিল একটা হলো 'টেক্কা' আর একটা হল 'শাস্ত্রী'। শাস্ত্রীর ট্রেইলার আমি আগেই দেখেছিলাম এবং আমার বেশ ভালোই লেগেছিল, আর আমার বন্ধু দেখেছিল টেক্কা -র ট্রেইলার। তার ইচ্ছে ছিল টেক্কা দেখার। তারপর সে আমার উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে বলল--" তুই একবার টেক্কা -র ট্রেইলার দেখে বল কোন সিনেমাটা দেখবি, তুই যেটা বলবি সেই অনুযায়ী আমি টিকিট কেটে নেব।" আমি তৎক্ষণাৎ ইউটিউব চালিয়ে টেক্কা-র ট্রেলার টা দেখে নিলাম। আমার খুব একটা পছন্দ হলো না । তাই আমরা ঠিক করলাম আমরা শাস্ত্রী দেখবো।প্রস্তাব এলো দেড়টার সময় আর শো টাইম ছিল ৩ঃ১৫ তে। সুতরাং সময় অপচয় করার মত একটুও টাইম হাতে ছিল না। চট জলদি রেডি হয়ে আমরা দুজনেই বেরিয়ে পড়লাম সিনেমা দেখার উদ্দেশ্যে।

প্রথমবার মাল্টিপ্লেক্সে যাওয়ার অভিজ্ঞতা এবং সিনেমাটা দেখার পর কেমন লাগলো , আমরা আর কোথায় কোথায় গেলাম সেইসব আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব পরবর্তী পোস্টে। আশা করছি আপনাদের ভালো লেগেছে।

ধন্যবাদ ‌।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

cc01ab456aeaff68ede60ae0d6128461.jpg