বন্ধু বিয়োগ।

in hive-120823 •  4 days ago 
PhotoCollage_1731593469754.jpg

নমস্কার বন্ধুরা,
মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে ২/৩ দিন ধরে এবং এরই মধ্যে যে ঘটনাটা হলো সেটা দেখেই যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের উপক্রম হলো। আবারো বাংলার এক রত্ন দক্ষিণ কোরিয়াতে গিয়ে চিরতরে হারিয়ে গেল। তিনি আর কেউ না বরং আমার এবং আমাদের এক প্রিয় সহপাঠী যার সাথে দীর্ঘ ৬/৭ বছর পথ চলা।

এইতো ১২ই নভেম্বর সন্ধ্যায় আমাদের বন্ধু মহলের একটা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে একটা ছবিসহ লিংক। যেটা মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠতেই খোলা মাত্র যেন চারপাশটা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসছিল। ঐ যে বন্ধু মানেই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ সেই কারণেই অব্যক্ত একটা চাপা কষ্ট অনুভব হচ্ছিল। যেটা আমি খানিকটা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি তো চোখে জল দিয়ে আবারো সেইটা দেখার প্রচেষ্টা।

ঐ মুহুর্তে আমি আমাদের সদর দরজার সিঁড়িতে বসেছিলাম। কিছুক্ষণ আমার যেন একটা অচেতন অবস্থা হয়েছিল। মায়ের ডাকে সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে শুধুমাত্র বলেছিলাম আমি ব্যস্ত আছি।

IMG_20241114_202949.jpg

বন্ধু, সুরঞ্জনকে অনলাইনে দেখেই স্ক্রিনশট দিয়েছিলাম, কারণ আমার এটা বিশ্বাস হচ্ছিল না।

বন্ধু:- যেটা বললো সেইটা আপনারাও ছবিতে দেখছেন।

এরপরৈ ভয়েস কলে এটা নিয়ে কথোপকথন। বন্ধু:- উজ্জ্বল যে কিনা মজার ছলে আমাদের সকলের দাদা ছিল। কারণ ইউনিভার্সিটির নবীণ বরণ (২০১২-২০১৩) এর স্নাতক ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা সকলে প্রথম একত্রিত হয়েছিলাম। ঐ দিনই আমাদের সকলের নতুন একটা যাত্রা শুরু হয়েছিল। যদিও ক্লাস ফাঁকি আমরা কেউই দিতাম না কিন্তু সুযোগ পেলেই ক্যাসেল আষাঢ়ে প্রায়শই দুপুরে লাঞ্চ করতে যেতাম।

স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হওয়ার পরে সকলেই আমার বিচ্ছিন্ন এবং যে যার কর্মস্থল খুঁজতে ব্যস্ত তবে অবসর সময়ে আড্ডা ঠিকই দিতাম। অনলাইনে আমার যুক্ত হওয়ার পরে আমিই সময় কম দিতাম কিন্তু যোগাযোগ ছিল সকলের সাথেই। অবশেষে বন্ধুর সুযোগ হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়াতে একটা নামকরা কোম্পানিতে।

উজ্জ্বল পাল, খুলনা ডুমুরিয়ার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের তৃতীয় এবং ছোট সন্তান। অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে মাত্র দু'বছর হলো এবং ফর্ক লিফট দূর্ঘটনায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হলো। শেষ বারের মতো মুখটাও আমরা কেউই দেখতে পারিনি। বন্ধুরা দলবেঁধে বাগেরহাট অর্থাৎ আমার জেলাতে কি কি যে করি নাই সেটা হয়তো বলা যেতে পারে।

এইতো দুইদিনের পৃথিবী, কার কখন ডাক আসবে আমরা কেউই জানিনা। জেলার অলিগলি ছিল পদতলে এবং স্থানীয় বন্ধুদের বাড়িতে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সকলের এক সাথে অংশগ্রহণ। সেই মূহুর্ত গুলো যেন স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠছিল। ক্রমশ সবকিছু প্রকাশ্য হচ্ছিল।

জীবন চলার পথে অনেক সম্পর্ক তৈরি হয়। তবে অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে বাকি নিঃস্বার্থ বন্ধু অধ্যয়নকালীন সময়েই পাওয়া যায়। যাঁদের সাথে আমৃত্যু সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব। হয়তো দূরত্ব বেড়ে যায় কিন্তু সম্পর্কটা ঠিকই থাকে।

এইতো বিগত বছর আমি একবার ভোলাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানকার উপজেলাতে আমারই এক সহপাঠী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যেটা আমি জানতাম না। সি সি ক্যামেরাতে দেখেই বাইরে এসে যখন কাঁধে হাতটা রেখেছিল তখন যেন অন্যরকম একটা আনন্দ কাজ করছি। বন্ধু তো বন্ধুই হয়। এই সম্পর্কটা অনেক মূল্যবান যেটা কোনো কিছুর বিনিময়ে পাওয়া সম্ভব না।

ঈশ্বর চাইলে সব কিছু সম্ভব। তবে এটাই প্রার্থনা করি আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গুলো যেন ঈশ্বর বাঁচিয়ে রাখেন আমৃত্যু। সবাই নিজের বন্ধুদের খোঁজ খবর নিবেন না হলে হয়তো এই শব্দটার অবহেলা করা হবে।

আমার আজকের লেখাটি এখানেই সমাপ্ত করছি। সকলে ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

1000432635.gif

@memamun , thank you so much for your comment ❤️