অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরে সুফলা উদযাপন।

in hive-120823 •  2 months ago 
PhotoCollage_1735584978690.jpg

Hello Friends,
গতকাল ও খাওয়া দাওয়ার চাপে পোস্ট করা হয়নি। এমনকি আজও ইতিমধ্যে রাত বারোটা, তাই লেখাটা শুরুই করলাম। বিকেলে ও লেখা শুরু করতে গিয়েছিলাম তবে কিছু বিষয় যেনো নিজেকে আহত করছিল।

আচ্ছা বলুনতো এই যে আইন বা নিয়ম এগুলো কি সত্যি আমরা বাস্তবে পালন করতে পারি। কিছু বিষয় যেটা আমার কাছে খারাপই লাগলো। তবে ইদানিং চেষ্টা করছি রাগ হলে মোবাইল বা পি সি থেকে দূরে থাকার জন্য। নচেৎ আমার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশটা অন্যদেরকে সরাসরি আঘাত করে। এই তো এখন কাজ করছি, কাজ করতে করতেই জানাশোনা। হয়তো একটা সময় যে যার মতোই থাকতে হবে।

যাইহোক, আপনারা ইতিমধ্যে আমার শুক্রবারের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পরে এগারো দিন পর্যন্ত বংশীয় সকলেই আমরা নিরামিষ গ্রহণ করি। পাশাপাশি, একাদশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরে নিমতন্ন অর্থাৎ খাবারের আয়োজন করি। সাধারণত ঐ দিন মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে আপনজন ও গ্রামবাসীদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো এবং আশীর্বাদ নেওয়ার পরেই মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা আমিষ খাবার খায়।

যেহেতু, আমারই এক ঠাকুরদা মারা গিয়েছিলেন তাই আমরাও এই কয়েকদিন নিরামিষ ভোজীই ছিলাম। ঐ দিন সকলকে খাওয়ানোর পরে শরীরটা আর নিচ্ছিল না। তবে ঐ দিনে কিন্তু আমিষ পদে শুধু মাছই থাকে যেটা পূর্ব থেকেই প্রচলিত। পাশাপাশি, আমাদের এখানে কেউ মারা গেলে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সকল কাজে সামাজিক হিসেবে গ্রামবাসীরাই সহযোগিতা করেন। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ হলে বংশের বাইরের কেউ একজন ঐ পরিবারের বড় সন্তানের গলায় দড়ি বেঁধে দেন এবং ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় সামাজিক।

অন্যদিকে কাঠ কাঁটা থেকে শুরু করে রান্না এবং ঐ দিনে সকলকে খাবার সার্ভ করার দায়িত্বটা ও থাকে গ্রামবাসীদের ওপরে। যে কারণে ঐ দিনে পরিশ্রম করা মানুষ গুলো খেতে পর্যন্ত পারে না। এই জন্য নিমতন্নের পরের দিন সুফলা নামক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে আবহাওয়া ও বিভিন্ন কারণে পরের দিন অর্থাৎ শনিবার করা হয়নি।

যাইহোক, রবিবার সকাল থেকেই দৌড়াদৌড়ি, কারণ সুফলার আয়োজনটা সম্পূর্ণই বাড়ির লোকজন মিলেমিশে করতে হয়। তাই শনিবার রাত থেকেই তালিকা থেকে শুরু করে নিমন্ত্রণ পর্ব সব কিছু করতে করতে রাত প্রায় শেষ। এই কাজের জন্য সকালে আর ঘুম থেকে উঠতে পারিনি। আমার ঘুম থেকে উঠতে উঠতেই দুপুর হয়ে আসছিল।

IMG20241229163420.jpg
IMG20241229163405.jpg
IMG20241229163353.jpg

বিকেল বেলা ও যেন শরীরটা কেমন নিস্তেজ মনে হচ্ছিল, কেমন যেন এনার্জি পাচ্ছিলাম না। ঐ দাদুর বাড়িতে চাঁদের হাট অর্থাৎ অনেক আত্মীয় স্বজনদের আগমন। ঐ বাড়ি থেকে আবার জামাইবাবু ও মাসিমণি কয়েকজন ডাকতে এসেছে ঘুরতে যাবে। কিন্তু আমার ঐ মুহুর্তে কোনো Noise ই ভালো লাগছিল না।

কিছুক্ষণ বাদে একা হাঁটতে হাঁটতে কালভার্টে গিয়েছিলাম যেখানে খালের দৃশ্যটা সুন্দর ছিল। তাছাড়া গোধূলি লগ্ন ছিল যখন সূর্যাস্তের দৃশ্যটা আরো ভালোই লাগছিল। কিছু সময় বেশ ভালোই অতিবাহিত করলাম। তবে বেশি সময় নিরিবিলি থাকতে পারলাম না। কারণ বাজারের দিন তাই ঐ স্থান থেকে লোকজনের যাতায়াত অনেক বেশি ছিল।

আবার বাড়িতে কাউকে কিছু বলে ও আসিনি। আমি কিন্তু আবার খুব কাছাকাছি গেলেও মা'কে না বলে যাই না। তাই বাড়ি থেকে খোঁজাখুঁজি ও শুরু করেছে। আমার মা আবার মোবাইল ব্যবহারে ও comfortable না, কাকিমার কাছে গিয়ে কল দিয়ে দ্রুত বাড়িতে ফিরে যেতে বললো।

IMG20241229180014.jpg

রান্না করার জায়গায় গিয়ে মাংস থেকে যেন এনার্জি পাচ্ছিলাম কিন্তু চুরি করার কোনো পন্থা পাচ্ছিলাম না। অবশেষে খুঁজে পেলাম আইডিয়া, ওনাদের মধ্যে দেখলাম একজন হন্নে হয়ে কিছু একটা খুঁজতেছে। সুযোগ বুঝে দল কসে এক গামলা মাংস গায়েব করে দিলাম কিন্তু ৬/৭পিচ খাওয়ার পরে তো আর খাওয়ার জায়গাই নেই।

আবার গামলা অন্যহাতে পার করে দিলাম। এভাবেই সুফলায় কিছু সময় আনন্দ করেছিলাম। আমার আজকের লেখাটি এখানেই সমাপ্ত করছি। সকলে ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

আপনার পোস্ট পড়ে মনটাই ভরে গেল! গ্রামের ঐতিহ্য, সামাজিকতা, আর পারস্পরিক সহযোগিতার যে চিত্র তুলে ধরেছেন, তা সত্যিই অনন্য। সুফলার আয়োজন, খালের গোধূলি দৃশ্য, আর চুপিসারে মাংস চুরি করার মজার অংশটা বেশ উপভোগ করলাম। সব মিলিয়ে জীবনের ছোট ছোট আনন্দগুলোই তো আসল সুখ।

গ্রামের ঐতিহ্য আর আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের সামাজিকতা তুলে ধরেছেন ।আপনার পোস্টটি পড়ে ভালই লেগেছে ।এই ধরনের আনন্দ গুলো আমি এখন খুব মিস করি। গ্রামের বাড়িতে কোন অনুষ্ঠান হলে আত্মীয়-স্বজনরা সবাই একসাথে হয় ।ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে সকলের সাথে দিনগুলো খুব আনন্দে কাটে। আপনার সারাদিনের ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে চুপিচুপি মাংস চুরিকরার মজার মুহূর্তটা পড়ে আনন্দ লাগলো। মনে মনে হাসি ওপাচ্ছিল আসলে এই আনন্দগুলো না হৃদয় ছুঁয়ে যায়!এই ছোট ছোট আনন্দ গুলোর মধ্যেই তো জীবনের সুখ খুঁজে পাওয়া ।বিকেলের সূর্য অস্ত যাওয়ার ফটোগ্রাফিটা খুব ভালো লাগলো।সুফলার আয়োজন, বিকেলের সূর্য অস্ত যাওয়ার মুহূর্ত এবং চুপিচুপি মাংস চুরি করার মজার মুহূর্ত গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।