বেচে থাকুক কাশফুলের সাথে সমাজের দূর্গারাও

in hive-120823 •  2 years ago 

IMG_20221114_203710.jpg

(কাশফুলের মত করে ঘরে ঘরে পূজিত হোক কন্যা রূপি সকল দূর্গা)

প্রিয় বন্ধুরা,
আজ শিশু দিবস উপলক্ষে আজকে আমার লেখার শীর্ষক নির্বাচন করা।

তার আগে সকলকে জানাই সোমবারের শুভেচ্ছা, আশাকরি সপ্তাহের প্রথমদিন সকলের কুশল মঙ্গলেই কেটেছে, এবং সবসময় কুশলেই কাটুক এই কামনা করি।

তবে জীবনের সব সময় এবং দিন সমান যায় না, তার কারণ জীবনে মিলিত মানে অনুভূতি মানে সুখ দুঃখের মধ্যে দিয়ে না গেলে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা যায় না।

আজকের শিশু দিবসে আমার স্নেহ জানাই সমাজের সকল শিশুকেই কিন্তু আজও এই শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে মানসিক তারতম্যের ভিত্তিতেই আমার এই লেখা।

সমাজের এক অংশ আজও পুত্র সন্তানের জন্যে যতটা খুশি হয় কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে সেই উৎফুল্লতা অনেকাংশে চোখে পড়ে না।
যদিও এখন চিকিৎসা ব্যবস্থা বদলেছে এবং পাশাপশি বদলেছে অগ্রিম ভ্রূণ জানাবার আইন।

কারণটা অনেকেরই জানা, আগে ডাক্তার যদি জানিয়ে দিতেন যে, মা কন্যা সন্তানের জন্ম দিতে চলেছে, সেক্ষেত্রে কন্যা ভ্রূণ হত্যার একটা প্রবণতা সমাজের একাংশের ক্ষেত্রে প্রবল ভাবে দেখা যেত।

এখন আইনের কারণে জানতে না পারায় হয়তো হত্যা বন্ধ হয়েছে কিন্তু একই বাড়িতে পুত্র এবং কন্যা শিশুদের বেড়ে ওঠার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়ে গেছে।

যেখানে ভালো বস্ত্র, ভালো খাদ্য এবং ভালো শিক্ষা দেবার চেষ্টা করা হয় পুত্র সন্তানের জন্যে, অপরপক্ষে একটা বয়েস পার করতে না করতে কন্যা সন্তানকে শেখানো হয় ঘরের কাজ।

IMG_20221114_203741.jpg

(পুত্র সন্তানের মতো কন্যাদের কেও সমান সুযোগ দিতে হবে জীবনের সফলতার পথ পাড়ি দিতে)

তার ক্ষেত্রে ইচ্ছের দাম নেই, শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নেই, আছে কেবল পরের ঘরে গিয়ে সংসার কি করে করতে হবে সেই শিক্ষা প্রদানের প্রয়াস।

আমি নিজে একজন কন্যা সন্তানের পিতা, এবং আমার দ্বিতীয় কোনো সন্তান নেই; আমার কন্যা সন্তান হবার পরে কখনোই এটা মনে হয়নি বংশের বাতি জ্বালিয়ে রাখার জন্য পুত্র সন্তানের পুনঃপ্রয়াশ এর প্রয়োজনীয়তা আছে।

হতে পারে আমার বয়েস ষাঠ এবং এই প্রজন্মের কাছে আমি পুরনো ধারণার মানুষ কিন্তু তৎসত্ত্বেও আমার চিন্তাধারা এখনকার অনেক আধুনিক মানুষের চাইতে উন্নত বলে আমি মনে করি।

আর ঠিক সেই কারণে সমাজের কিছু কুসংস্কার আমাকে আজও স্পর্শ করতে পারে নি। তাই বংশের বাতি দিতে পুত্র সন্তানের প্রয়োজনীয়তা কখনো অনুভব করিনি।

এখানে আরও একটি বিষয় শিক্ষিত সম্প্রদায়ের জানা প্রয়োজন এবং সেটা হলো পুত্র সন্তান হবে না কন্যা সন্তান সেটা কিন্তু পুরুষের উপরে নির্ভর করে, একজন নারীর হাতে সেটা থাকে না।

কাজেই কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছেন বলে যাকে দিন রাত অকথ্য কথা শুনতে হচ্ছে বা যারা সেটা শোনাচ্ছেন তাদের জ্ঞাতার্থে আজকে এই তথ্যটি ভাগ করে নিলাম।

যেখানে কন্যা সন্তান দেশের প্রধনমন্ত্রীর আসনে বিরাজ করে দেখিয়েছে, যেখানে কন্যা সন্তান মহাকাশে পাড়ি দিয়ে দেখিয়েছে;

যেখানে নারীকে দেবী হিসেবে পুজো করা হয়, সেখানে সেই নারীর অবমাননা কেবলমাত্র সমগ্র নারীকুল সহ সেই দেবীদের অপমান যাদের আমরা পুজো করে থাকি।

IMG_20221114_203849.jpg

(প্রতিবন্ধকতা নয় সমান সহযোগিতা দাবি করে কন্যা শিশুরাও)

IMG_20221114_203834.jpg

সর্বাগ্রে সন্মান করতে শেখান আপনার পুত্র সন্তানকে এই শিক্ষা দিয়ে যে, আজকে সে পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ পেয়েছে একজন নারীর জন্যই।

পাশাপশি ঘরের বাইরে সমাজের সেই সকল নারীকে সন্মান করা শেখানোর প্রয়োজন যারা কারোর না কারোর সন্তান।

কামনা নয়, সম্মানের দৃষ্টি দিয়ে নারীদের দেখার শিক্ষায় বড়ো করতে হবে পুত্র সন্তানদের। আজও খারাপ লাগে দেখে যখন কন্যারা রাতের আঁধারে সুরক্ষিত ভাবে বাইরে বেরোতে পারে না।

আমার খারাপ লাগা সেই মাতা-পিতার চিন্তাধারার প্রতি যারা কন্যা সন্তানের শিক্ষার পিছনে ব্যয় করবার চাইতে তার বিবাহের জন্য অর্থ সঞ্চয় করা বেশি পছন্দ করেন।

IMG_20221114_203928.jpg

(আজকের শিশু দিবসে আমাদের শপথ নিতে হবে কন্যা ভ্রূণ বন্ধের পাশাপশি তাদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেবার)

IMG_20221114_203815.jpg

পুঁথিগত শিক্ষা একটি মানুষকে সমাজের চোখে শিক্ষিত করে কিন্তু পারিবারিক শিক্ষা একটি মানুষকে নিজের চোখে শিক্ষিত করে।
তাই শিশুদের শিক্ষা দেবার পূর্বে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন আপনি নিজে নিজের চোখে শিক্ষিত কি না!

আপনার নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্যে যথেষ্ট। কাজেই অবশেষে বলবো বেঁচে থাক কাশফুল এবং তার পাশাপশি সমাজের দূর্গরাও।

একটি নারী পারে সমাজে পরিবর্তন আনতে এবং আজকের দিনে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে কন্যা সন্তানের উপস্থিতি নেই।

তাই মেয়েদের সমাজে সন্মানের সাথে বেড়ে উঠতে দিন এবং সমান মর্যাদা দিয়ে গড়ে তুলুন তাদের ভবিষ্যত্।

এখানেই ইতি টেনে, আজকের লেখা সমাপ্ত করলাম, উপরিউক্ত কথাগুলো ভেবে দেখবেন, একটি দিন নয় প্রতিদিন সমান অধিকার দিয়ে শিশুদের বড়ো করে তুলবেন, পাশাপশি সঠিক শিক্ষা দিয়ে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অনেক সুন্দর একটা পোস্ট লিখেছেন ভাইয়া পড়ে অনেক ভালো লাগলো❤️❤️❤️

অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

Loading...

অসাধারণ কিছু বিষয় আপনি আজকের এই শিশু দিবস উপলক্ষে তুলে ধরেছেন, সমাজের কিছু মানুষের চোখ খুলে যাওয়া উচিত আপনার লেখা পড়ে।

খুললেই ভালো, একজন নাগরিক হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পারি, সঠিক পথের দিশা দেখাতে পারি এর বেশি কিছু আমার হাতে নেই।

স্যার মেয়েরা যত যাই করুক না কেন, এক শ্রেণীর মানুষ কোনো দিন মেয়েদেরকে উঁচু জায়গায় দেখতে পারবে না। কারন তারা উচ্চ শিক্ষিত হলেও তাদের মানসিকতা বড্ড নীচু হয়।

আসলে পুঁথিগত শিক্ষাই শিক্ষা নয়, আচরণ এবং পারিবারিক শিক্ষাই একজন মানুষকে প্রকৃত শিক্ষার আলো দেখাতে পারে।