আসসালামু আলাইকুম/আদাব,
কেমন আছেন বন্ধুরা? নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি এসে নতুন আরেকটি প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে পেরে বেশ ভালই লাগছে। এই সময়টায় আমাদের দেশে শীতের আবির্ভাব হয়। শীতকাল আমার খুব পছন্দের একটি ঋতু। বিশেষ করে খুব ভোরে শিশির ভেজা ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটতে বেশ ভালই লাগে। আপনাদের কেমন লাগে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
যাইহোক এবার প্রতিযোগীতার বিষয়ে আসি। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমাদের ইনক্রিটিবল ইন্ডিয়া কমিউনিটির শ্রদ্ধাভাজন দিদি (এ্যাডমিন) @sduttaskitchen কে অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ তিনি দ্বিতীয় সপ্তাহের এই প্রতিযোগীতার জন্য চমৎকার একটি বিষয় নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
বিষয়টি হলো পরিবার কেন্দ্রিক। আমরা যেহেতু কোন না কোন পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত তাই প্রত্যেকের লিখাগুলো দারুণ হবে বলে আমার বিশ্বাস। তারই ধারাবাহিকতায় আমিও আমার লিখা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-
সুখী পরিবারের প্রধান সঙ্গাই হলো একে অপরের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস। অর্থ্যাৎ পরিবারের সকল সদস্যরা একে অপরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখবে, সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে থাকবে, ছোটদের ভালোবাসবে এবং বড়দের সম্মান করবে। যে পরিবারে এই তিনটি বিষয় বিদ্যমান সেই পরিবারকে আমরা সুখী পরিবার বলতে পারি।
আমাদের দেশে মূলত দুই ধরনের পরিবার দেখা যায়। একটি হলো একক পরিবার আরেকটি যৌথ পরিবার। তবে কালের পরিক্রমায় যৌথ পরিবার এখন হাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। শহুরে সমাজে এখন আর যৌথ পরিবার দেখা যায় না। গ্রামীন সমাজে এর অস্তিত্ব কিছুটা হলেও এখনো প্রত্যক্ষমান।
প্রতিনিয়ত যৌথ পরিবার ভেঙ্গে অনেকগুলো একক পরিবার গঠিত হচ্ছে। এর ভালো এবং মন্দ উভয় দিকই রয়েছে।
পরিবার সুখী করতে হলে সর্বপ্রথম আস্থা ও বিশ্বাস অত্যন্ত জরুরী। আমরা যদি পরিবারের অন্য সদস্যদের বিশ্বাস স্থাপন করতে না পারি এবং সন্দেহপ্রবণতা দূর করতে না পারি তাহলে সেই পরিবার কখনই সুখী হবে না।
আর পরিবার সুখী না হলে পার্থিব জীবনে এবং চলার পথে এর প্রভার কোন না কোন ভাবে পরবেই। তাই জীবন সুখী করতে হলে পরিবার সুখী করা প্রয়োজন।
পরিবার সুখী তো আপনি আমি সবাই সুখী। আমি ব্যক্তিগতভাবে এর ভুক্তভোগী। সারাদিন কাজ শেষে যখন ক্লান্ত শরীল নিয়ে বাসায় ফিরে পরিবারের সকল সদস্যদের মুখে হাসি দেখলে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। আবার প্রতিদিন কাজে বের হওয়ার সময় সবার হাসি মুখ দেখে বের হলে সত্যি সেদিন অনেক সুন্দরভাবে কেটে যায়।
আমরা এই পরিবার থেকেই কাজ করার স্পৃহা ও শক্তি পাই। পরিবারের সকল সদস্যদের হাসিমাখা মুখ দেখলে সব দুঃখ কষ্ট এক নিমিষেই দূর হয়ে যায়। আর এর উল্টোটা হলে কী হয়? নাইবা বললাম। তবে এতটুকু বলবো পরিবারে সুখ না থাকলে কোথাও সুখ থাকে না।
নারীদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়াঃ একটি পরিবারে কিন্তু নারী পুরুষ উভয় বিদ্যমান। পরিবার চালাতে দুজনের ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের সমাজে পুরুষরা পরিবারের প্রধান হলেও পরিবার গঠনে নারীদের ভূমিকা কিন্তু অপরিসীম। তাই পরিবারের যেকোন সিদ্ধান্তে নারীদের মতামত গ্রহন একান্ত জরুরী। তাছাড়াও পরিবার সুখী করতে নারীরা ব্যপক ভূমিকা রাখে। আর এর যদি ব্যত্যয় হয় তাহলে অনেকসময় পরিবারে অশান্তি দেখা দেয়।
পারস্পারিক শ্রদ্ধা, মমতা ও সহানুভূতিশীল হওয়াঃ একটি সুখী পরিবারের প্রধান শর্ত হলো পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, মমতা সহানুভূতিশীল হওয়া। এর বিকল্প কিছু হতে পারে না। যে পরিবারের এগুলোর একটিরও অভাব রয়েছে সেই পরিবারে কখনো সুখ থাকতে পারে না।
পরিবারের সদস্যদের কখনো বোঝা মনে করা যাবে নাঃ যৌথ পরিবারগুলোতে এরকম প্রায়শই দেখা যায় যে পরিবারের কোন সদস্য যদি অসুস্থ কিংবা বয়স্ক হয় তখন তাদের বোঝা মনে করা হয়। এক্ষেত্রে বৃদ্ধ বাবা মা তার জলন্ত উদাহরণ। একটি সুখী পরিবার গঠনে কখনই তাদের বোঝা মনে করা উচিত নয়। হয়তো চলার পথে একটু কষ্ট হবে কিন্তু তাদের মুখে যদি একটু হাসি ফোটাতে পারি তাহলে তা হবে আমাদের কাছে সবথেকে বড় অর্জন।
অর্থনৈতিক বিষয়াদি সম্পর্কে সু-স্পষ্ট ধারণা থাকাঃ পরিবারের দায়িত্বে যে থাকবেন অর্থ্যাৎ পরিবার কর্তা যে হবেন তাকে অবশ্যই পরিবারের পেছনে যতটুকু অর্থ ব্যয় করা দরকার সে ব্যপারে সু-স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে এবং সবার চাহিদার পরিমানকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে। পরিবারে কিন্তু আপনা আপনি সুখ আসে না। পরিবার সুখী করতে হলে সবার চাহিদা সমান ভাবেই পূরণ করতে হবে। চাহিদা এবং আয়-ব্যায়ের হিসাব করেই পরিবারের জন্য আমাদের অর্থ খরচ করা উচিত। এতে পরিবারে কোন অশান্তি হবে না।
ছোট খাটো কিংবা তুচ্ছ বিষয় এড়িয়ে চলাঃ পরিবারকে সুখী করতে হলে বিভিন্ন ছোট খাটো এবং তুচ্ছ বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। মন সবসময় পরিস্কার রাখতে হবে। পরিবারের সদস্যদের ছোট খাটো অনেক ভূল ত্রুটি থাকতে পারে। সেগুলো ধীরে ধীরে তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে। বড় কোন ভূল না করলে ছোটদের শাসন করা যাবে না, বরং আদর বা স্নেহের মাধ্যমে তাদের বিষয়গুলি বলতে হবে। তাহলে অবশ্যই একটি পরিবার ধীরে ধীরে সুখি পরিবারে পরিণত হবে।
যার যার ধর্ম মেনে সেই ধর্মের আলোয় পরিবারকে আলোকিত করাঃ প্রতিটি ধর্মের ধর্মগ্রন্থে পরিবার গঠন এবং পরিবার পরিচালনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়া আছে। একটি পরিবার কিভাবে চালাতে হবে, কিসে পরিবারের ভালো হয় কিসে মন্দ হয় তার সব ধারণাই দেয়া আছে প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে। কাজেই সেই অনু্যায়ী যদি আমরা পরিবার পরিচালনা করি তাহলে আমাদের পরিবার অবশ্যই একটি সুখী পরিবার হিসেবে গড়ে উঠবে।
অবশ্যই পেশাগত সম্পর্ক পরিবারের একটি অংশ হতে পারে। আমি এই কথার সাথে পুরোপুরি একমত। কারণ আমাদের কর্মস্থলকে যদি আমরা একটি পরিবারই মনে না করি তাহলে সেখানে কাজ করে কখনই ফল পাবো না।
পারতপক্ষে মনের শান্তিই কিন্তু সবথেকে বড় শান্তি। হয়তো স্বার্থ হাছিল হবে কিন্তু নিজের বিবেককে একবার প্রশ্ন করলে বিবেক মনে হয় এর উত্তর দিয়ে দেবে।
যেমন আমরা স্টিমিট প্লাটফর্মে ইনক্রিটিবল ইন্ডিয়া কমিউনিটিতে কাজ করছি। এই কমিউনিটিতে আমরা যারা কাজ করি, প্রত্যেককে নিয়ে কিন্তু আমরা একটা পরিবার। আমরা একে অপরকে সাহায্য করি, কেউ একজন কিছু না বুজলে তাকে বুঝিয়ে দেই।
পরিবারের মতো একে অন্যের পাশে দাড়াই। একটি পেশাগত সম্পর্ককে যদি পরিবারে রুপ দেয়া যায় তাহলে কাজের স্পৃহা আরো বেড়ে যায়। যে কাজ করতে আগে একদিন সময় লাগতো সেই কাজ দু ঘন্টায় হয়ে যায়। কারণ আমরা তখন এটিকে একটি পরিবার মনে করি। একে অন্যকে সাহায্য করি। নিজের স্বার্থ ভূলে গিয়ে কাজের সার্থকে বেশি প্রাধান্য দেই।
এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণের জন্য আমি @sakibhossain2554 @bayezid#3224 @Happy mondal#7662 @biplob25 @mamun011 কে আমন্ত্রন জানাচ্ছি।
আজ আর নয় বন্ধুরা, ভালো থাকবেন সবাই।
আপনার সম্পূর্ণ লেখা পড়েই বেশ ভালো লেগেছে। তবে সুখী পরিবার গড়তে যে বিষয়গুলি দিকে নজর দেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন,তার মধ্যে থেকে নারীর মতামতকে প্রাধান্য দেওয়ার যে বিষয়টি আপনি উল্লেখ করেছেন, সেটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।
আসলে পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে সকল পুরুষেরা মনে করেন, নারীদের মতামতের কোন মূল্য নেই। কিন্তু তারা ভুলে যায় নারী ছাড়া কখনোই কোনো পরিবার সুখী হতে পারে না। তাই পরিবারকে কিভাবে সুখী করতে হবে, সেই বিষয়ে অবশ্যই নারীদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। অসংখ্য ধন্যবাদ এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে, নিজের মতামতগুলিকে এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার পোস্টটি পড়ে সুখী পরিবার কিভাবে গড়তে হবে সে বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম।। আপনি প্রতিটি প্রশ্নের একদম সঠিকভাবে উত্তর দিয়েছেন এবং অনেক বাস্তব কিছু কথা বলেছেন নারী সম্পর্ক যেটি আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
শুরুতেই জানাচ্ছি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনি এই সুন্দর প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করার জন্য ৷ তারপর আপনি বেশ সুন্দর ভাবে এই চ্যালেঞ্জের সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর গুলো অনেক সুন্দর ভাবে সাজিয়ে আমাদের মাঝে উপাস্থাপন করেছেন ৷
যাই হোক আপনার বিজয়ী কামনা করি ৷ ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আর আপনি এই প্রতিযোগিতায় প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর খুব ভালোভাবে দিয়েছেন।
একটি বিষয় আপনি উল্লেখ করেছেন এটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে আসলে পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে সকল পুরুষেরা মনে করেন, নারীদের মতামতের কোন মূল্য নেই। কিন্তু একটি পরিবার সুখের আনতে হলে অবশ্যই উভয়ের মতামত খুবই জরুরী।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit