শেষ কর্ম দিবস

in hive-120823 •  23 days ago 
IMG_20250109_175619.jpg


হ্যালো বন্ধুরা

চাকরি জীবনে সাধারণ একটা রীতি হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে চাকরি শেষ হয়ে যায় অর্থাৎ চাকরি জীবন থেকে বিদায় নিতে হয়। তেমনি আজ ছিল আমাদের প্রিন্সিপাল ম্যাম এর শেষ কর্ম দিবস। দীর্ঘ ৩২ বছর এই বি ,সি ,আই ,সি পরিবারের সাথে সংযুক্ত ছিল।

IMG20250109133434.jpg

কর্মজীবনে চলার পথে হাজারো স্মৃতি, হয় তো তাকে আজ তারা করছিল তাই মনের অজান্তেই কেঁদে ফেলেছেন জনসম্মুখে। আজ যখন সকালবেলা এসেম্বলি শুরু হল ,তখন ই ওনার মনটা ছিল একদম ভরা ক্লান্ত হৃদয় ।চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছিল তার মন আজকে খুব খারাপ ,সত্যি বলতে কথাই করতে পারছিল না।

হয় তো নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছিল কিন্তু সব জায়গায় নিজেকে লুকিয়ে রাখা যায় না ,আবেগ ধরে রাখা যায় না। সেজন্যই হয়তো ম্যাডাম কথা বলার এক পর্যায়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছিল ‌। আমরা সকল শিক্ষকগন আবেদ আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম।

IMG20250109133852.jpg
IMG20250109134755.jpg

এসেম্বলি মাঠে শত শত স্টুডেন্টের মাঝে ম্যাডাম ও স্টুডেন্ট সবাই মিলে কাঁদছিল। সে এক করুন দৃশ্য। এক দিক দিয়ে করুন হলে ও অন্য দিক দিয়ে এটা আনন্দের। এর কারণ হিসেবে আমি বলতে চাই সবার জীবনে শেষ কর্ম দিবস হয় না বা আসেনা। আমাদের অনেক সহকর্মীরা আছেন যারা তাদের নিজের চাকরি জীবন শেষ করতে পারিনি চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

এদিক দিয়ে ম্যাডাম অনেক ভাগ্যবান ।উনি উনার শেষ কর্ম দিবস পর্যন্ত সুস্থ ভাবে এবং সুন্দরভাবে তার দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন। এবং সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছেন। শুধু শুধু কেউ কারো জন্য কান্না করে না ।অভিনয় করে হাসা যায় কিন্তু অভিনয় করে কান্না করা যায় না এটি একটি চরম সত্য কথা।

IMG20250109130523.jpg
IMG20250109091951.jpg

যেহেতু আজকে ম্যাডামের শেষ কর্ম দিবস ।আজকে উনি উনার কর্ম জীবন থেকে বিদায় নিয়েছেন ,তাই ম্যাডাম আমাদের দুপুরের লাঞ্চ করিয়েছিলেন। দুপুরে লাঞ্চ করার পূর্বে ম্যাডামকে আমরা বিদায় দিয়েছি ‌ প্রীতি উপহার হিসেবে কিছু সামান্য কিছু উপহার আমরা ওনার হাতে তুলে দিয়েছি এবং একটি কেস তৈরি করে দিয়েছে ‌‌।

আমাদের যেহেতু স্কুল এন্ড কলেজ তাই অনেক শিক্ষার্থীর সমাহার অনেক শিক্ষকের সমাহার ‌। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কারো মনে আনন্দ ছিল না। কেউ তো আবার লুকিয়ে লুকিয়ে চোখ মুছছিল। আবেগ ধরে রাখতে পারছে না আবার লোক লজ্জার ভয় দুটোর সংমিশ্রণে এক আবেগঘন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে আজকে আমাদের স্কুল প্রাঙ্গনে।

আমি নিজেও অনেক আবেগ আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের প্রিন্সিপাল এমন একজন মানুষ ,সে অতি সাধারণ থেকে ও সাধারণ। তার কাছে স্কুল শিক্ষক ,কলেজ শিক্ষক ,প্রাইমারি শিক্ষক এর মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। সে সবার সাথে একই রকম ভাবে মিশেন। এটি নিয়ে অনেকে সমালোচনা করার চেষ্টা করেন ।ম্যাডামের জন্য সবাই হাউমাউ করে কাঁদছিল। ওদের কান্না ই প্রমাণ করে দেয় যে ,ওদের জন্য ম্যাডাম নিবেদিত প্রাণ ছিলেন ‌।

ম্যাডাম কখনো পদ পদবী নিয়ে অহংকার করতেন না। তার চালচলন ছিল অতি সাধারণ ‌। এজন্য অনেক সময় ম্যাডামকে কটু কথা ও শুনতে হয়েছিল ।ম্যাডাম ব্যালেন্স রেখে চলেন না । পদ পদবী মেন্টেন করে চলেন না ।এজন্য ওনার সহকর্মীরা ও ম্যাডামকে পছন্দ করতেন না কিন্তু ম্যাডাম অনেক সময় আমাদের সাথে শেয়ার করতে না এই বিষয়টা। যে বলতো আমি সবার সাথে সমানভাবে চলতে চাই ।আমার কাছে প্রিয় সবাই। আমরা সবাই সহকর্মী এই কথাগুলো আসলে আমি ম্যাডামের কাছ থেকেই শিখেছি।

কবিগুরুর সেই বাণী, বিশ্বজুড়ে পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র, নানাভাবে নানান জিনিস শিখছি দিবারাত্র।

পরিশেষে ম্যাডামের কল্যাণ কামনা করি ,ম্যাডাম যেন তার পরিবারের সাথে আমৃত্যু সুখে থাকতে পারেন ।সেই কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি ,আল্লাহ হাফেজ ‌।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

আসলে কিছু মানুষের সাথে পথ চলতে গেলে নিজেদের রক্তের সম্পর্কের চাইতেও অনেক বড় সম্পর্ক তৈরি হয় সেটা আপনাদের শিক্ষকতা বাজে কোন কাজের ক্ষেত্রেই হতে পারে আসলে আমরা আমাদের প্রিয় মানুষগুলোকে অতটা গুরুত্ব দেই না যতটা গুরুত্ব আমাদের কর্মস্থলে থাকা মানুষগুলোকে দিয়ে থাকে।

আরে ম্যাম আজকে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে যেটা এক দিক থেকে খুবই রান্নায় ভেঙে পড়ার মতো একটা মুহূর্ত আবার অন্যদিকে কিছুটা আনন্দের যেটা আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন এটা সত্যি কিছু মানুষ নিজের জীবনের কর্মসংস্থানের শেষ দিন পর্যন্ত সেই জায়গা টিকে থাকতে পারে না তার মৃত্যু চলে আসে।

সেই ক্ষেত্রে আপনাদের ম্যাম অনেক ভাগ্যবান যে কিনা তার নিজের কর্মসংস্থানের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের জায়গাটায় অটুট থাকতে পেরেছে আপনার ম্যাম এর দীর্ঘায়ু কামনা করছি কেননা পরবর্তী জীবন যেন তিনি সঠিকভাবে নিজের পরিবারের সাথে কাটাতে পারেন ধন্যবাদ আপনাকে উপলক্ষে বিষয়ে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।

  • নিঃসন্দেহে আমাদের ম্যাম অত্যন্ত ভাগ্যবান। ৩২ বছর সময় চারটি খানি কথা নয় এত দীর্ঘায়ু পেয়েছেন উনি আলহামদুলিল্লাহ এখনো খুব শক্ত। আমার জন্য দোয়া করি উনি যেন আমি তো এরকম কর্মঠ থাকে।