একটি ভিন্ন রকম ভ্রমণ

in hive-120823 •  5 days ago 

আসসালামু আলাইকুম
প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। গতকাল আমাদের বিবাহ বার্ষিকী ছিল কিন্তু কিছু ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে আমরা কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনি। তবে আজকে দিনটাকে একটু বিশেষ করতে চেয়েছিলাম। আমার ননদ ও তার ছেলে আমাদের বাসায় এসেছে তাই ভাবলাম ঢাকার ঐতিহ্যবাহী একটি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে নিয়ে যাব। চিন্তা ভাবনার পর ঠিক করলাম, আহসান মঞ্জিল যাব। ছোটবেলায় বইয়ে পড়েছি ছবিতে দেখেছি কিন্তু সামনে থেকে দেখা হয়নি। আমার ননদের ছেলের জন্য এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা হবে। সকাল থেকেই উত্তেজনা কাজ করছিল।

IMG_20250216_234122.jpg

আবহাওয়াটা ছিল দারুণ নীল আকাশের মাঝে তুলোর মত মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছিল। ননদের ছেলে ছিল দারুণ উচ্ছ্বসিত তার চোখে কৌতুহল স্পষ্ট। গাড়িতে উঠেই মনটা ভালো হয়ে গেল আমরা চলে গেলাম আহসান মঞ্জিল। আমরা যখন আহসান মঞ্জিলের সামনে পৌঁছালাম তখন দেখি বড় লোহার গেট বন্ধ। একটু অবাক হলাম ভেতরে ঢোকার জন্য যখন টিকিট কাউন্টারের দিকে গেলাম তখন নিরাপত্তা জানালেন আজ পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় আহসান মঞ্জিল বন্ধ। শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। এত কষ্ট করে এসে দেখি দর্শনীয় জায়গাটাই বন্ধ। আমার ননদ একটু হতাশ ছিল আমি হেসে বললাম কোন সমস্যা নেই বাইরে থেকেই দেখেন। এ অবস্থায় এই সান্তনা দেওয়া ছাড়া আসলে কোন উপায় ছিল না।

IMG_20250216_234136.jpg

আমার নিজেরও ভালো লাগতেছে না গেটটা বন্ধ থাকার কারণে। যাইহোক আমরা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সেই দৃষ্টিনন্দনপ্রার্থী দেখতে লাগলাম। গোলাপি রঙের বিল্ডিংটা সূর্যের আলোয় যেন সোনালী আভা ছড়াচ্ছে। আমার ননদের ছেলে ও ভীষণ হতাশ ছিল প্রত্যেকেই ভীষণ হতাশ ছিলাম।আমার মেয়ে তো বারবার বলছিল আম্মু ভিতরে আম্মু ভিতরে বলে কান্না করছিল, আমি আমার মেয়েকে সান্ত্বনা দিলাম আম্মু আর একদিন আসবো । আমার ননদের ছেলেটা বলছিল মামি এই বাড়িটা কার ছিল?আমি গল্পের ঢঙ্গে বলা শুরু করলাম এটা একসময় ছিল ঢাকা নবাবদের প্রাসাদ। একসময় এখানে নাচ গান সবার নৌকার ভ্রমণ হতো। নবাবরা এখান থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুনে আমার ভাগনে চোখ বড় বড় করে বলল তাহলে এখানে রাজারানীরা থাকতো? আমি হাসলাম,আর বললাম তেমনি বলা যায়। নবাবদের জীবনযাত্রা ছিল অনেক রাজকীয়।

IMG_20250216_234049.jpg

আমাদের কথোপকথনের মাঝেই গেটের বাইরে আরো কয়েকজন পর্যটন এলেন। তারাও আমাদের মত হতাশ হলেন,কারণ তারা ঢাকার বাইরে থেকে ঘুরতে এসেছেন। আমরা সবাই মিলে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে গল্প করতে লাগলাম যেন এক অদ্ভুত মিল আমাদের এক করল। আহসান মঞ্জিরা ঢোকা হচ্ছে না তাহলে কাছেই বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে একটু হাঁটা যাক। নদীর বাতাস বেশ ঠান্ডা ছিল আর সন্ধ্যার আলো আঁধারীতে শহরের দৃশ্য একেবারে স্বপ্নের মত লাগছিল। ছোট ছোট নৌকা ভেসে চলছিল আর দূরে দেখা যাচ্ছিল আলো ঝলমলে ব্রিজ।আমাদের ছোট্ট ভ্রমণ পরিকল্পনা বদলে গেলেও মন্দ লাগছিল না।আমরা নদীর ধারে বসে গল্প করছিলাম। আমার ননদের ছেলে এবং আমার মেয়ে অনেক বেশি খুশি। ওদের আনন্দ দেখে মনে হলো পরিকল্পনার বাইরে অনেক আনন্দ লুকিয়ে থাকে। এই অপরিকল্পিত পরিবর্তনটাও মন্দ লাগলো । আসলে জীবনের আনন্দ কেবল নির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্যেই থাকে না বরং হঠাৎ ঘটে যাওয়া ছোট ছোট অভিজ্ঞতায় হয়ে
আলহামদুলিল্লাহ, দিনশেষে উপলব্ধি করলাম যেখানেই যাই না কেন, ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গে থাকাটাই আসল আনন্দ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Loading...

অসাধারণ অভিজ্ঞতা, জীবনের ছোট - ছোট মুহূর্তগুলোই আসলে আমাদের সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয়। আশা করি একদিন আহসান মঞ্জিলের ভিতরে ঘুরে দেখতে পারবো।
আপনার পোস্টটা সত্যিই মন ছুঁয়ে গেল। কখনো কখনো আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু না হলেও সেই মুহূর্তের মধ্যে এক আলাদা সুখ থাকে, যা কখনো চিন্তা করা যায় না। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি বিষয় বুঝতে নিয়ে আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

আহসান মঞ্জিল এটা একটা দর্শনীয় স্থান এটা আমরা সবাই জানি তবে এখনো পর্যন্ত যাওয়া হয়নি আজকে আপনার বিবরণ দেখতে পেয়ে বেশ ভালো লাগলো আসলে এখানে পর্যটকরা ঘুরতে যায় আমাদের দেশের অনেক মানুষ এটা ঘুরে দেখার চিন্তা করে তবে আমিও যাওয়ার চিন্তা আছে ইনশাল্লাহ একদিন যাবো ধন্যবাদ ভ্রমন করার মুহূর্তগুলো আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য ভালো থাকবেন এভাবেই নিজেকে চিন্তা মুক্ত রাখতে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করার চেষ্টা করুন মন ভালো থাকবে এবং সঠিকভাবে জীবনে বেঁচে থাকতে পারবেন।