আমদের ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতা

in hive-120823 •  2 years ago 
IMG_20230218_010214.jpg

Hello,

Everyone,

আশা করি আপনারা সকলে ভালো আছেন এবং আপনাদের সকলের আজকের দিনটি বেশ ভালো করে কেটেছে।

আজ সারাদিন আমার খুবই ব্যস্ততার মধ্য কেটেছে।কারণ আজকে আমি আমার ঠাকুরমাকে দেখতে আমি আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম।

সেখানে গিয়ে আমার নিজস্ব কিছু কাজ ছিল। যেটা মেটানোর জন্য আমাকে আবার আমাদের ওখানকার ব্যাংকে যেতে হয়েছিল। যে কারণে মোটামুটি সারাদিন বেশ ব্যস্ততায় কেটেছে।

ব্যাঙ্ক থেকে ফিরে ঠাকুরমাকে খাইয়ে দিয়ে আমি ঘরের মোটামুটি কাজ গুছিয়ে,সন্ধার পরে বাড়িতে ফিরেছি। ঠাকুমার শারীরিক অবস্থা তেমন কোন উন্নতি চোখে পরলো না, বরং দিনে দিনে সেটা খারাপ হচ্ছে বলেই আমার ধারণা।

যাই হোক আজ আর এই সকল কথা বলবো না। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব, পিকলুকে নিয়ে আমাদের ট্রেন ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতার কথা। তিন বছরের মধ্যে এই প্রথমবার আমরা পিকলুকে নিয়ে ট্রেনে উঠেছিলাম।

বেশিরভাগ সময় ও আমাদের সাথে গাড়িতে অথবা বাইকে করে ঘুরতে বেরিয়েছে কিন্তু আমার দিদির মেয়ে অর্থাৎ তিতলি এত পরিমানে বিরক্ত করছিল যে, পিকলুকে নিয়ে ওদের বাড়িতে না গেলেই নয়।

সেই কারণে বেশ কিছুদিন আগে আমি এবং শুভ (আমার হাজব্যন্ড) ঠিক করি রাতের একটি ফাঁকা ট্রেনে আমরা পিকলুকে নিয়ে আমার দিদির ফ্ল্যাটে যাব। আবার পরদিন রাতের দিকেরই কোন ফাঁকা ট্রেন ধরে আমরা বাড়িতে ফিরব।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। আমরা নিজেরা তৈরি হলাম পাশাপাশি পিকলুকে তৈরি করে নিয়ে, সন্ধ্যার পর স্টেশনের এর উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। পিকলু প্রথমে ভীষন আনন্দে ছিল ঘুরতে যাওয়ার জন্য।

এরপরও আমাদের দুজনের সাথে খুব ভালোভাবে গাড়িতে করে স্টেশন পর্যন্ত গেল। কিন্তু যখন ওকে আমরা ট্রেনের ভেতরে বসলাম, তখন থেকেই ও বোধ হয় ভয় পেতে শুরু করল না।

IMG_20230218_010144.jpg

সেই কারণেই, না ও ট্রেনের সিটে বসতে চাইছিল, আর না আমাদের কোলে থাকতে চাইছিল। তার ভিতরে আমাদের সব থেকে বড় ভুল ছিল আমরা একদম first compartment উঠেছিলাম।যেখানে ইঞ্জিন এর আওয়াজ অনেক বেশি শোনা যায়।

যেটা পিকলুর জন্য অনেকটা অস্বস্তিকর ছিল। কারণ পিকলু বাজির শব্দ বা বেশি জোরে কোন শব্দ শুনলে ভয় পায়। ওর হার্ট বিট বেড়ে যায়। পাশাপাশি ওর ভয়ের কারণে জ্বর চলে আসে। কিছুক্ষণ বাদে ট্রেন চলতে শুরু করলে পিকলু নড়াচড়া শুরু করতে থাকে।

পরের স্টেশন থেকে যখন আরও বেশি লোক ওঠে আমাদের কম্পার্টমেন্টে, তখন ওর নড়াচড়া আরো বৃদ্ধি পায়। বোধহয় ও এত মানুষের ভিড় দেখে অনেকটা অস্বস্থি লাগছিল।

ট্রেন যত এগোলো মোটামুটি মানুষের ভিড় বাড়তে থাকলো। এত ভিড় যদিও হওয়ার কথা ছিল না, কিন্তু পরে বুঝলাম সেদিন বিয়ে বা বৌভাতের কোন অনুষ্ঠান ছিল, যেই কারণে মানুষের ভিড় অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেকটাই বেশি ছিল।

আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বসবাস করে এটা আমরা সকলেই জানি। তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো কুকুর বিড়াল পছন্দ করেন, আবার অনেকেই করেন না।

তবে পিকলুকে নিয়ে যাওয়ার দিন এরকমই অভিজ্ঞতা সম্মুখীন হলাম আমি। একজন মহিলার ট্রেনে উঠেছিলেন এবং তিনি যখন দেখলেন পিকলুগুলো আমার কোলে বসে আছে, তার মুখের বিকৃতি দেখে মনে হলো, আমরা যেন অন্য গ্রহের মানুষ এবং পিকলুকে নিয়ে বসে থাকাতে যেন আমাদের আশেপাশটা নোংরায় ভরে গেছে।

এমনকি আমার পাশের সিটটা ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও তিনি আমার পাশের সিটে বসেননি। শুধুমাত্র আমার কোলে পিকলু ছিল তাই। থ্যাংক গড তিনি আমাদের পাশে বসেননি কারণ, তার মতন একজন নিম্ন মানসিকতার মানুষের পাশে বসাটাও নিজের জন্য লজ্জার মনে হয়েছিল।

যাইহোক কিছু মানুষ পিকলুকে অনেক আদর করেছেন। অনেকে তার সম্পর্কে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করেছেন। মোটামুটি ভালো-মন্দ সব অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা সময় পৌঁছে গেলাম দিদির ফ্ল্যাটে। সেখানে প্রত্যেকেই পিকলুকে খুব ভালোবাসা দিয়ে স্বাগতম জানিয়েছিলো।

IMG_20230218_010255.jpg

তিতলি তো সারাদিন পিকলুকে নিয়েই মেতে ছিল। তবে হ্যাঁ তাতান একটু একটু ভয় পাচ্ছিল। বাড়িতে ঢোকার পর পিকলু হাত পা ছড়িয়ে মেঝের ওপর বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে রইলো। কারণ ট্রেন জার্নিটা পিকলু একেবারেই এনজয় করেনি।

আর সেদিনের পর থেকে আমি এবং শুভ দুজনেরই ভেবেছি পিকলুকে নিয়ে আর ট্রেন জার্নি করব না। কারণ পিকলুকে কেউ ভালো চোখে দেখবে না, এটা মেনে নিতে আমাদের দুজনেরই বেশ খারাপ লাগে।

আসলে ভুলে গেলে চলবে না আমাদের আশেপাশে মানুষ রুপি অনেক অমানুষেরা রয়েছে। যারা নিঃস্বার্থভাবে মানুষ তো দূরের কথা, পশুদেরকেও ভালবাসতে পারে না।তাই এদের থেকে দুরত্ব বজায় রাখাটাই শোভনীয় হবে বলে ব্যক্তিগতভাবে আমার বিশ্বাস।

IMG_20230218_010317.jpg

যাইহোক ভীত সন্ত্রস্ত আমার ছোট্ট পিকলুর ছবিগুলি আপনাদের কেমন লাগলো কমেন্টের মাধ্যমে আমাকে অবশ্যই জানাবেন। শেষ করার আগে অবশ্যই একটা কথা আপনাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য আমি বলতে চাই-আমরা মানুষেরা বড্ড বেশি স্বার্থপর। এই পৃথিবীতে একমাত্র নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসতে পারে, পিকলুদের মতন অবলা প্রাণী গুলো।

তাই ওদেরকে কখনোই অন্য নজরে দেখবেন না। আমরা ওদেরকে ভালোবাসা দিতে না পারলেও, **ওরা কিন্তু ভালোবাসা বলুন বা ঘৃনা সবকিছুর বিনিময়ে শুধুমাত্র ভালোবাসাই দিতে জানে। তাই সম্ভব হলে ওদেরকে একটু ভালোবাসা দেবেন।

ভালো থাকবেন শুভরাত্রি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ধন্যবাদ দিদি আপনাকে, আপনার ট্রেন জার্নিটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। প্রথমত আপনার ঠাকুরমার জন্য সৃষ্টি কর্তার নিকট পার্থনা যেন অতি শীগ্রই সুস্থ করে দেন অথবা কষ্ট থেকে দুর হওয়ার জন্য যা করার দরকার করুক। আমিন।

তবে পিকলুকে নিয়ে যাওয়ার দিন এরকমই অভিজ্ঞতা সম্মুখীন হলাম আমি। একজন মহিলার ট্রেনে উঠেছিলেন এবং তিনি যখন দেখলেন পিকলুগুলো আমার কোলে বসে আছে, তার মুখের বিকৃতি দেখে মনে হলো, আমরা যেন অন্য গ্রহের মানুষ এবং পিকলুকে নিয়ে বসে থাকাতে যেন আমাদের আশেপাশটা নোংরায় ভরে গেছে।

  • আসলে সবার মনমানসিকতা তো এক নয়, সবার পছন্দ অপছন্দ আছে অবশ্যই, আপনার কাছে আপনার টিকলু প্রিয়, অন্য কারো কাছে তাকে অপ্রিয় হতেই পারে। আবার অনেকে আছে তাদেরকে ভয়ও পায়। আমি নিজেও কুকুরকে অথবা বিড়ালকে কাছে নিতে ভয় পাই। এরকম অনেক মানুষ আছে যারা এদের থেকে দুরে থাকে। এটা তাদের ব্যাপার। যাইহোক ভালো লাগলো আপনার ট্রেন জার্নি টা। ভালো থাকবেন।

আপনি আপনার ঠাকুরমা কে দেখতে গিয়েছিলেন।এবং সেখানে আপনার কিছু ব্যক্তিগত কাজ ছিল। যার জন্য আপনাকে ব্যাংকে যেতে হয়েছিল।

আপনারা পিকলু কে নিয়ে আপনাদের দিদির বাসায় গিয়েছিলেন। কারণ আপনার বোনের মেয়ে খুব জেদ ধরে ছিল আপনাদের যাওয়ার জন্য। বিষয়টা যেন খুবই ভালো লাগলো। আসলে দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমার কোন বোন নেই। সে কারণে কোথাও তেমন একটা যাওয়া হয় না, শুধু বাপের বাড়ি আর শশুর বাড়ি।

  • আপনি আপনার পোস্ট এ উল্লেখ করেছেন। পিকলু কে যখন আপনি আপনার কোলে বসিয়ে রেখেছিলেন। তখন আপনার পাশে একজন মহিলা ট্রেনে উঠেছিল। এবং তিনি তার মুখের বিকৃতি এমনভাবে ধারণ করেছেন।মনে হচ্ছে আপনারা অন্য গ্রহের মানুষ। আসলে কি দিদি জানেন ওই কিছু মানুষ আছে পশু পাখি পছন্দ করে না। ঠিক আছে ওই মানুষগুলো এমনই করে। আমার বাড়িতে একটা পোষা বিড়াল আছে। সে মাঝে মাঝে এমন করে সে আমার সাথে ঘুমায়। এটা আবার আমাদের পরিবারের অনেকেই মানতে চায় না। সে কারণে আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়।

আসলেই আপনি ঠিক বলেছেন, কিছু মানুষের মন-মানসিকতা এত নিম্ন হয়ে থাকে। যে তাদের সাথে বসা তো দূরের কথা তাদের কাছ দিয়ে হেঁটে যাওয়াটাও, আমাদের জন্য মনে হয় অন্যায়। মানুষগুলো এত নিম্নমানের মন মানসিকতা নিয়ে কিভাবে থাকে। মাঝে মাঝে আমিও এ বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করি।

আসলে অনেকটা জার্নি হয়েছে পিকলুর। সেজন্যই সে ফ্ল্যাটে গিয়েই হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। হয়তোবা তার কাছে গরমও লাগছিল সেজন্য।আর আপনার বেশ ভালোই একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পিকলু কে নিয়ে আর ট্রেনে জার্নি করবেন না। কারণ সবাই এক চোখে দেখে না এটাই স্বাভাবিক।

আসলে আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে যেটা দেখেছি। সেটা হচ্ছে একটা একটা পোষার প্রাণীকে যখন আমরা আমাদের নিজের কাছে রাখি। তখন সে কিন্তু খুব যত্নে থাকে।এবং সেও চায় তার মালিক সর্বদাই যত্নে থাকুক। কিন্তু আমাদের আশেপাশে এমন কিছু মানুষ বসবাস করে। যারা কিনা পশুর চেয়েও অধম, তাদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখাটাই আমাদের সবচাইতে বড় কাম্য।

  • আপনি ঠিকই বলেছেন এই পৃথিবীর মানুষগুলো বড্ড বেশি স্বার্থপর। আমরা যখন কোন পোষা প্রাণী কে আমাদের কাছে যত্নে রাখি। সে পোষা প্রাণী আমাদের জন্য যতটা কেয়ার করে। আমাদের সাথে থাকা মানুষগুলো আমাদেরকে ততটাই ঘৃণা করে।

আপনার লেখা এবং পিকলুর ফটোগ্রাফি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। হয়তোবা আমি আমার লেখার ভাষায় বোঝাতে পারবো না। তবে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আর সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি সৃষ্টিকর্তা যেন, আপনার পিকলু কে অনেক বছর বাঁচিয়ে রাখে।

Loading...

অনেক ধন্যবাদ দিদি আপনি আপনার পিকুর সাথে ঘটে যাওয়া কিছু মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ।

এবং আমাদের আশেপাশে অনেক মানুষ আছে পশু পাখি পছন্দ করে না কিন্তু তারা ভুলে যায় পশু পাখি অবলা জন্তু হলেও মানুষ বেইমানি করে কিন্তু পশুপাখি কখনোই বেইমানি করে না।

পশু পাখিকে ভালোবাসার জন্য সুন্দর একটি মনের প্রয়োজন হয় যেটি আপনার মাঝে আছে।

Piclu is so cute, I'm also thinking of getting a dog.
I wish for your grandma's better health.

Thank you so much for your wishes. Of course if you love, then definitely keep a dog. No one knows how to love us more than them.

সর্বপ্রথম আমি আপনার ঠাকুমার সুস্বাস্থ্য কামনা করব সৃষ্টিকর্তা যেন তাহার সুস্বাস্থ্য ভালো রাখে সেটাই আমরা কামনা করতে পারি খুব তাড়াতাড়ি যেন তিনি সুস্থ হয়ে যায় এটাই আমার কামনা

আপনার কথাগুলো আমার হৃদয়ে স্পর্শ করেছে আসলে পশুপাখি অবলজীব তাদের প্রতি দয়া দেখুন আমাদের নৈতিক দায়িত্বও কর্তব্য আমরা মানব জাতি সৃষ্টির সেরা দায়িত্ব না দেখায় তাহলে তারা কোথায় যাবে এজন্য দয়া রাখা মানুষের কর্তব্য নিন্দুকের কথায় ভয় পেয়ে ঘরে বসে থেকো না কথাটি বাস্তব যে মানুষগুলো আপনাকে দেখে বিকৃতি করেছে তাদের ভয়ে আপনি যে আপনার পোষা প্রাণীটি নিয়ে বসে থাকবেন তা ঠিক হবে না আপনার নিজেরও একটি স্বাধীনতা আছে আপনি আপনার স্বাধীনতা প্রকাশ করেন আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে উপস্থিত করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ