"কিছু কিছু ঘটনা জীবনের আসল বাস্তবতা বোঝার জন্যে যথেষ্ট"

in hive-120823 •  21 hours ago 
IMG_20250110_200636.jpg

Hello,

Everyone,

গতকাল বৃহস্পতিবার ছিলো, ঘরের কাজ সেরে পূজার কাজ গোছাতে অন্যান্য দিনের তুলনায় এই দিন অনেকটা দেরি হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী ব্রত থাকে, তাই সেদিন পুজোর জোগাড় করা, লক্ষীর ঘট বসানো, পাঁচালী পড়া, সমস্ত কিছু করতে বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়। তার ওপর যেহেতু শীতকালে বেলা কোথা থেকে গড়িয়ে যায় বুঝে ওঠা মুশকিল।

যাইহোক দুপুরের খাবার খেতে খেতে আমারও শাশুড়ি মায়ের প্রায় বিকেল চারটা বাজলো। শশুর মশাইকে আগেই খেতে দিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। যাইহোক সবেমাত্র খেতে বসেছি হঠাৎ করে ফোন আসলো। প্রথমে ভেবেছিলাম বোধহয় আমার দিদি কিংবা আমার বান্ধবী ফোন করেছে। তবে ফোনটা হাতে নিয়েই দেখতে পেলাম পরিচিত একটা বোন (রীতু)কল করেছে। এমন অসময়ে ওর কল একেবারেই আশা করিনি। ফোনটা রিসিভ করার পর যে খবর শুনলাম, সেটা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিলো।

আমার পোস্টে মাঝে মধ্যেই আমি একটা মামার কথা লিখে থাকি, যার ছাদ বাগানের বেশ কিছু ছবিও আমি একটা সময় শেয়ার করেছিলাম আপনাদের সাথে। তিনি গাছ লাগাতে এবং তাদের যত্ন করতে ভীষণ পছন্দ করেন সে কথাও জানিয়েছিলাম। যাদের সাথে শাশুড়ি মা ও মাসি শাশুড়ি গঙ্গাসাগর বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেই পোস্ট ও শেয়ার করেছিলাম আপনাদের সাথে। সেই মামার মেয়ে ফোন করে জানালো মামার স্ট্রোক হয়েছে, নার্সিংহোমের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছে।

IMG_20250110_193847.jpg

"পূর্বেও ছবিটি শেয়ার করেছি, গঙ্গাসাগরে গিয়ে তোলা ছবি"

এরপরে আর খেতে পারলাম না। যতটুকু থালায় ভাত বাকি ছিলো, সেটুকু অনেক কষ্ট খেয়ে উঠে পড়লাম। দুদিন আগেই মানুষটাকে দেখলাম একেবারে সুস্থ। সন্ধ্যা বেলায় আমাদের বাড়িতে এলেন, অনেকক্ষণ গল্প করলেন। আমিও কিছুক্ষণ কথা বলে আমার কমিউনিটির কাজ নিয়ে বসলাম। তিনি শ্বশুর মশাই শাশুড়ি মায়ের সাথে কথা বলে, বাড়ি ফেরার সময় আবার আমার সাথে কথা বলে গেলেন।

করোনার মতো আরও একটা নতুন ভাইরাসের বিষয়ে আজকাল খবরে দেখাচ্ছে, সেই বিষয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললাম আমরা। আমি মামাকে বললাম বেশি মানুষের ভিড়ে যেন মাস্ক ব্যবহার করে, তাতে আর কিছু না হোক অন্তত নিজের শরীরটা সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচবে।

সুগার, প্রেসার এগুলো তো আছেই, তার উপর মামার আবার হার্টের সার্জারিও করা ছিল বেশ কয়েক বছর আগে, তখন তিনি জাপানে থাকতেন। সেখানে অসুস্থ হয়ে যাওয়াতে হার্ট সার্জারি করতে হয়েছিলো, এরপর বিদেশ থেকে চলে আসেন। এখন বাড়িতেই টুকটাক নিজের মতো করে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেন।

ঘটনাটা শুনে অনেকক্ষণ পর্যন্ত স্তম্ভিত ছিলাম। সত্যিই আমাদের জীবন করে অনিশ্চিত। যাইহোক, আজ যেহেতু একাদশী ছিলো, আর আমি একাদশী পালন করবো বলে গতকাল সন্ধ্যাবেলায় ফল কিনতে বাজারে গিয়েছিলাম।

ফেরার পথে হঠাৎ করে আবার ফোন বাজলো, দেখলাম রীতু আবার ফোন করেছে। ও জানালো ওর মা একা বাড়িতে আছে ও এখনো ফেরেনি, মাকে ট্রেনে তুলে দিয়েছে। তাই বাড়িতে এসে ফল গুলো রেখে শাশুড়ি মাকে বলে একটু মামির সাথে দেখা করতে ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম।

IMG_20250110_193053.jpg

"এই গাছটি মামা নিজের হাতে আমাদের ছাদে লাগিয়ে দিয়েছিলেন"

IMG_20231020_092529.jpg

"এই ফুলটি আমার পছন্দ হলে মামা চারা তৈরি করে দিয়েছিলেন"

সেখানে গিয়েই সম্পূর্ণ ঘটনা শুনলাম। আসলে ওরা নতুন একটা ফ্ল্যাট কিনেছে, সেটা এখনো সম্পূর্ণভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। এই কারণে সপ্তাহে দুদিন, শনি ও রবিবার ওরা এখানে থাকে। বাকি দিনগুলো ফ্ল্যাটেই থাকছে। তবে মামার ফ্ল্যাটে থাকতে ভালো লাগে না বলে, সারাদিন কাজকর্ম দেখাশোনা করে সন্ধ্যার দিকে ট্রেন ধরে তিনি একা বাড়িতে ফিরে আসেন।

এটা অবশ্য আরও মাসখানেক আগে থেকেই চলছে। কোন কোন দিন একটু আগে এলে মামা আমাদের বাড়িতে বসে একটু গল্প করে, তারপর রাতে বাড়িতে গিয়ে শুয়ে পড়েন। আবার পরের দিন সকালে উঠে তিনি ফ্ল্যাটে যান।

IMG_20231105_193037.jpg

"মামার ছাদের গাছ"

বয়স মোটামুটি ভালোই হয়েছে, কিন্তু মনের জোর তার এতোটাই বেশি যে, নিজেকে বয়স্ক ভাবতে তিনি নারাজ। আর এই নিয়ে বাড়িতে মামীদের সাথে মাঝেমধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তবে তিনি তার মর্জির মালিক।

গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে রীতু ফোন করেছিলো, তখন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন তাই দ্বিতীয়বার ডিস্টার্ব করেনি। ভেবেছিল কিছুক্ষণ বাদে ফোন করে বলবে ওনাকে না যাওয়ার জন্য। কারণ দুপুরের দিকে ঋতু ও মামি বাড়িতেই চলে আসবে। শুক্রবার রীতু ছুটি ছিলো, তাই তিনদিন ওরা এই বাড়িতে থাকবে এমনটাই প্ল্যান করেছে।

IMG_20231105_193019.jpg

"মামার ছাদের স্থল পদ্ম ফুলগাছ"

যাইহোক সে সমস্ত কিছু জানানোর আগেই সাড়ে এগারোটা নাগাদ মামা ফ্ল্যাটে পৌঁছে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে মামীকে এক কাপ চা করতে বলেছিল। মাস্ক পরে গেছে বলে তিনি মামীকে যখন চা করতে বলেছে কথাগুলো স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেনি মামী। তবে তিনি ভেবেছেন যেহেতু অনেকদিন বাদে আবার মাস্ক পরে কথা বলেছেন, সেই কারণেই এমনটা শোনাচ্ছে।

চা করার পরেও তিনি মামাকে বলে মাস্ক পরেই কি চা খাবে নাকি? মাছ খুলে হাত মুখ ধুয়ে নাও। এমন মজা করেই তারা কথাবার্তা বলে বরাবর। তবে মামা যখনই মাস্ক খুলছছে মামি ভয় পেয়ে গিয়েছে মুখ দেখে। মুখের দুই পাশ অনেক ফুলে গেছে।

আমি যখন হা করে দেখাতে বললো, তখন দেখতে পেলে জিভটাও মোটা ও ছোট হয়ে গেছে এবং কথাগুলো অস্পষ্ট আসছে সেই কারণেই। কি হয়েছে জানতে চাইলে মামা বলছে ঠান্ডার থেকে এমন হয়েছে। মামী বিশ্বাস করেননি কারন, যে মানুষ আগের দিন সন্ধ্যা বেলা সম্পূর্ণ সুস্থ গেলো, সেই মানুষটার এক রাতের ভিতরে ঠান্ডা লেগে এমন অবস্থা হতে পারে না।

সেই সময় তিনি রীতুকে ডাকলেন এবং রিতু দেখে আন্দাজ করলো স্ট্রোক হয়েছে। সাথে সাথে একজন ডাক্তারকে খবর দিলো, তিনিও একই কথা জানালেন। কিন্তু মামা তখনও সেই অস্পষ্ট উচ্চারণে একই কথা বলে চলেছেন- আমার ঠান্ডা লেগেছে স্ট্রোক হয়নি, স্ট্রোক হলে কি আমি এতদূর আসতে পারতাম?

IMG_20231105_192824.jpg

"মামার গাছে ফোঁটা কাগজ ফুল"

সত্যি তো তাই। এই ভাবে লোকটা সকালবেলা থেকে ফুল গাছে জল দিয়ে, ঘরের টুকটাক কাজ সেরে, মেয়ের জন্য ডাব কেটে, ডাবের জল একটা বোতলের মধ্যে নিয়ে, তবে রওনা করেছেন ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে। শরীরের মধ্যে অস্বাভাবিকতা তো ছিলো, কিন্তু মনের জোর এতটাই যে সেগুলোকে পাত্তা না দিয়ে তিনি ট্রেন ধরে চলে গেছেন। কথাগুলো শোনার পর আমি তো অবাক, মানুষ এমনও হয়?

যাইহোক তারপরেই রিতু ক্যাব ডেকে ওনাকে নিয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি করলো। সেখানে গতকাল ভর্তি ভর্তি হন করার পর সমস্ত টেস্ট হয়েছে। যতদূর খবর পেয়েছি এখনো পর্যন্ত আইসিইউতে আছে, তবে রাতের দিকে নাকি নরমাল ওয়ার্ডে শিফট করার কথা। টেস্ট গুলো সব হয়ে গেছে তবে কিছু রিপোর্ট আজ রাতে পাবে। কিন্তু আগের থেকে শারীরিক অবস্থা বেশ কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ভাগ্য ভালো যে স্ট্রোকটা তেমন ভাবে হয়নি, তবে হলে কি হতে পারতো সেটা ভেবেই বাড়ির সকলেই ভীত।

মেয়ে ডাবের জল খেতে চেয়েছিলো, সেই কারণে সকালে ওই অবস্থাতেও ডাব কেটে জল নিয়ে গেছে তিনি এবং নার্সিংহোমে যাওয়ার পরেও তিনি একই কথা বলে চলেছেন, আমার ব্যাগে জলের বোতলে ডাবের জল আছে, ওটা আগে রীতুকে খেতে হবে। সব বাবারাই বোধহয় এমনটাই হয়।

সন্তান কিছু খেতে চাইলে সেটা না খাওয়ানোর পর্যন্ত বোধ হয় শান্তি পান না। নিজের শারীরিক অবস্থার কথা না ভাবাটা আদৌ কতটা সঠিক আমি জানিনা, কারন বাবা-মায়েরা নিজেদের শারীরিক অবস্থা লোকানোর চেষ্টা করেন সন্তানের কথা ভেবে, অথচ যখন তারা অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন এই সন্তানদেরই সব থেকে বেশি কষ্ট হয়, এ কথাটা খুবই সাধারণ অথচ বাবা মায়েরা কেন বোঝে না জানি না।

আমার শ্বশুরমশাইকেও দেখেছি, অল্প সমস্যা হলে জানাতে চান না। তবে সমস্যা এতটাই বেড়ে যায় তখন জীবন মরণ টানাটানি হয়, সাথে কষ্ট হয় আমাদের সকলের। যাই হোক এখন মামা অনেকটা ভালো আছে জেনে স্বস্তি পেয়েছি। তবে যখনই ভাবছি তিনি ওই শারীরিক পরিস্থিতিতেও এতো দূর পর্যন্ত একা পৌঁছানোর সাহস দেখিয়েছেন, বারবার ভয়ে কেঁপে উঠছি।

যাইহোক নিজেদের শরীরের সামান্য সমস্যা বুঝলে অবশ্যই সেটা সকলের সাথে শেয়ার করুন। ঠিক হয়ে যাবে, একটু সময় দেখি, দেখা যাক কি হয়, এই ভাবনাগুলো মাথা থেকে বের করতে হবে।।কারণ এই ভাবনাগুলো ভাবতে ভাবতে সময় পেরিয়ে যায়, তখন অনেক কিছুই হাতের বাইরে পৌঁছে যায়। যাইহোক ভালো থাকবেন সকলে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আজকে আপনার পোস্টটি পড়ে মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল! কেননা আপনার মামার স্ট্রোকের কথা শুনে,
আমারও এক আংকেলের কথা মনে পড়ে গেল!
তাঁরও স্ট্রোক হয়েছিল। সে দুইদিন পর বুঝতে পেরেছে তার স্ট্রোক হয়েছে, খুব সাধারণভাবেই সে চলাফেরা করলেও, হঠাৎ করে তার শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। যখন হসপিটালে নিয়ে গেল তখন সবাই বুঝতে পারলো সেই স্ট্রোক করেছে। এইসব মানুষগুলো বুঝতে পারেনা! তাদের শরীর যে কি পরিমান খারাপ অবস্থায় আছে, তাদের মনের জোর টা অনেক বেশি থাকে। দোয়া করি মামার জন্য, সৃষ্টিকর্তা যেন খুব তাড়াতাড়ি ওনাকে সুস্থ করে তোলেন! ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন।

Loading...