নিজের "মানবিকতা" বাঁচিয়ে রাখা, আমাদের মানসিক শান্তি প্রাপ্তির অন্যতম উপায়

in hive-120823 •  2 years ago 
IMG_20230613_235158.jpg

Hello,

Everyone,

আশা করি আপনারা সকলে ভালো আছেন সুস্থ আছেন এবং আপনাদের সকলের আজকের দিনটি অনেক ভালো কেটেছে।

বর্তমান সময়ে আমরা যে পৃথিবীতে বাস করছি সেখান থেকে একাধিক জিনিস রয়েছে যেগুলো বিলুপ্ত হলে আমাদের‌ জীবনযাপন আরও বেশি সুন্দর হতে পারে।

সমাজের বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ আছে ‌যারা অন্যকে নিজেদের মতন করে বাঁচার চেষ্টা পর্যন্ত করতে দিতে চায় না। আমার বিশ্বাস এই ধরনের মানুষ পৃথিবীর সর্বত্র বিরাজমান।

তাদের মধ্যে যে এই ধরনের মানসিকতা শুধুমাত্র অজ্ঞতার কারণে তৈরি হয়েছে এমন নয়। কারণ আমার নিজের দেখায় এরকম অনেক শিক্ষিত মানুষ আছে, যাদেরকে শিক্ষিত বললে শিক্ষার অপমান করা হয়। কারন তাদের ব্যবহার অশিক্ষিত‌ মানুষের থেকেও অনেক বেশি নিম্ন।

আমার নিজের জীবনে‌ আমার সবথেকে কাছের মানুষ ছিলেন আমার মা, যার কোনো পুঁথিগত বিদ্যা ছিল না। কিন্তু আজকের দিনে দাড়িয়ে বলতে পারি, তার থেকে ভালো মা হয়তো আমি অন্য কাউকে পেতাম না, তার থেকে ভালো শিক্ষা আমাকে কোনো বই, কোনো স্কুল দিতে পারতো না।

আমি গর্ববোধ করি আমার মায়ের পুথিগত বিদ্যা ছিলো না। কিন্তু জীবনের শিক্ষায় তিনি আমাদের অনেকের থেকে অনেক বেশি শিক্ষিত ছিলেন। তাই আমাদেরকে যে শিক্ষায় বড় করেছেন, সেই শিক্ষা নিয়ে ‌‌‌‌‌আমি গর্ব করি।

কিছু না হোক তিনি অন্তত আমাদেরকে মানুষের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয়, সেটুকু খুব ভালোভাবেই শিখিয়েছেন। আর তার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষার ভিত্তিতে জীবনে অনেক মানুষের অনেক খারাপ ব্যবহার সহ্য করার ক্ষমতা আমার ভিতরে তৈরি হয়েছে।

জীবন সম্পর্কে যতটুকু অভিজ্ঞতা হয়েছে,বাস্তব জীবনে ততটুকু লড়াই ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌করেছি, তাতে পুঁথিগত বিদ্যা এতটুকুও কাজে লাগেনি। তার থেকে অনেক বেশি কাজে লেগেছে, মায়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে অর্জিত জীবনের শিক্ষা।

ছোটবেলা থেকে একটি স্বপ্নের দুনিয়াতে আমরা প্রত্যকে বড় হতে থাকি। জীবনটাকে স্বপ্নের মতন সাজাবো এই চিন্তা ভাবনা আমাদের মধ্যে তৈরি হয়। কিন্তু যখন ধীরে ধীরে আমরা বাস্তব জীবনে চলতে শুরু করি, তখন বুঝতে পারি জীবন আসলে রূপকথার থেকে একদমই উল্টো। যেখানে বাস্তবতা ছাড়া আর কোন কিছুই সত্যি নয়।

তবে হ্যাঁ আমি আমার জীবনে আমার আশেপাশে এমন অনেক মানুষ দেখি, যারা শিক্ষিত মানুষ হওয়ার আড়ালে এমন ব্যবহার করে, যেখানে তারা শুধু পুথিগত শিক্ষার অপমান করে এমন নয়, বরং তাদের পারিবারিক শিক্ষা সম্পর্কেও আমার যথেষ্ট সন্দেহ হয়।

দুঃখের বিষয় সেই সকল মানুষের সাথেই আমাদের বসবাস। কারন যদি হিসাব করি তাহলে, সমাজের বেশিরভাগ মানুষ এই মানসিকতার। আর আপনি আমি চাইলেও তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারবো না।

যদিও জানি ব্যর্থ চেষ্টা, তবুও আমি সেই সকল মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন করতে চাই, যারা যেকোনো পরিস্থিতিতে মানুষকে নিচু দেখাতে পছন্দ করে। যারা নিজেরা সাফল্য অর্জন করে নিয়েছে বলে, অন্যের সফলতা অর্জনের চেষ্টাকে হেয় করে, যারা নিজের জীবনের সফলতাকে সর্বোচ্চ ভেবে, অন্যের সফলতাকে ছোটো করে দেখে।

আমি সব সময় বিশ্বাস করি মানুষ হয়ে যদি মানুষের উপকার করতে না পারি, তাহলে তার ক্ষতির কারণ হওয়া আমাদের একদমই উচিত নয়। কারণ একটা প্রচলিত কথা আছে "যেমন কর্ম তেমন ফল"। তাই কর্ম আমাদের তেমন করা উচিৎ যার ফল ভোগ করার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে।

কিন্তু এই বিষয়টা আমরা সকলে মনে রাখি না। এই কারণেই আমরা প্রতিনিয়ত অন্যায় করি, আবার অনেকেই আছে যারা অন্যায় করে চলা ব্যক্তিকে প্রতিনিয়ত সাপোর্ট করি। হিসেব করলে দেখা যায় বেশিরভাগ শিক্ষিত মানুষেরা এই মানুষের দলে পরে।

অথচ যে সকল মানুষের পুথিগত বিদ্যা কম থাকে তাদের মধ্যে মানবিকতা এখনো বিদ্যমান। তাই তারা কোনো অমানবিক কাজ করার আগে,তার ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা করেন।

শিক্ষার ক্ষেত্রে পৃথিবী এগিয়ে গেলেও মানবিকতার ক্ষেত্রে আমরা সকলেই পিছিয়ে পড়ছি। আর একটা সময় যখন এই মানবিকতা সকল মানুষের মধ্যে থেকে হারিয়ে যাবে, সেই সময় বোধহয় পৃথিবী ধ্বংস হবে।

যাইহোক আপনারা আমার এই সকল কথার সাথে কতটা সম্মান পোষণ করবেন আমি ঠিক জানি না, তবে আজকের লেখা প্রতিটি কথা আমি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে লিখলাম।

আর কিছুই না হোক নিজের মানবিকতাকে বাঁচিয়ে রাখবেন, দেখবেন তার ফল হিসাবে আর কিছু পান বা নাই পান, মানসিক শান্তি অবশ্যই পাবেন। সকলে ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

একটি মানুষের মানসিকতা বদলাতে পারে, সে নিজেই। কেউ চাইলেও তার নিজের মানসিকতা বদলাতে পারে না। সে কেমন চিন্তা-ভাবনা করছে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে তার ওপর।

এটা একেবারেই সঠিক যদি উপকারে না আসতে পারি, তাহলে ক্ষতি করব কেন। আমাদের কি প্রয়োজন আছে।

আর এটি একেবারেই সঠিক কথা বলেছেন,আমাদের আশেপাশে আমরা অনেক মানুষ দেখি যারা অনেক উচ্চ শিক্ষিত কিন্তু তাদের আচার ব্যবহার শুনলে মনে হয় তারা গণ্ডমূর্খ।

আপনি আপনার মায়ের পুঁথিগত শিক্ষা নিয়ে যে কথাটি বললেন আসলে আমার আম্মু ঠিক একই পর্যায়ে। কোনদিন স্কুলের বারান্দায় যায়নি, কিন্তু তার কাছ থেকে ছোটবেলা থেকে যে সকল কথাগুলো শিখেছি। মানুষের সাথে কিভাবে চলতে হয়, মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়। সমাজে মানুষের কাছ থেকে ভালো কিছু পাওয়া যায়,সেগুলো খুব সহজেই তিনি বুঝিয়ে দিতেন আমাদের।

অনেক ভালো লাগলো দিদি আপনার পুরো বিষয়বস্তু পড়ে ধন্যবাদ আপনাকে।

প্রথমেই আপনার মায়ের প্রতি আমি খুবই শ্রদ্ধাবোধ করি! কারণ উনি এই পৃথিবীতে নেই! কিন্তু উনার কথাগুলো এখনও আপনি আপনার জীবনে মেনে চলছেন! যার কিনা কোনো পুঁথিগত বিদ্যা ছিল না! কিন্তু তার অভিজ্ঞতা থেকে,,, তিনি আপনাদেরকে অনেক শিক্ষা দিয়েছেন।

আসলে আপনার পোস্ট পড়তে গিয়ে,,, বাস্তবতা যেন চোখের সামনে ভেসে উঠলো! আপনি ঠিকই বলেছেন,, কিছু মানুষ যখন জীবনে সফলতা অর্জন করে! তখন অন্য কেউ যদি সফলতা অর্জন করার চেষ্টা করে! তাহলে তাকে সব সময় হেয় করা হয়! এ মানুষগুলো বেশিরভাগ,, শিক্ষিত মানুষের মধ্য থেকেই হয়ে থাকে।

আপনার লেখা প্রত্যেকটা ওয়ার্ড কে আমি সম্মান করি! কেননা আপনি বাস্তবতাটা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন! এবং বাস্তবতায় মানুষের সাথে কিভাবে চলতে হয়! নিজের মানবিকতা কিভাবে বজায় রাখতে হয়! সে বিষয়টি আপনি আমাদের সাথে তুলে ধরেছেন।

পরিশেষে একটা কথাই বলবো,, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে,,, বাস্তবতা নিয়ে এত সুন্দর একটা পোস্ট ফুটিয়ে তোলার জন্য! তার সাথে আপনার মায়ের প্রতি আবারো শ্রদ্ধাবোধ করি! সৃষ্টিকর্তা ওনাকে জান্নাতবাসী করুক! ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন,আল্লাহ হাফেজ।

আমি গর্ববোধ করি আমার মায়ের পুথিগত বিদ্যা ছিলো না। কিন্তু জীবনের শিক্ষায় তিনি আমাদের অনেকের থেকে অনেক বেশি শিক্ষিত ছিলেন। তাই আমাদেরকে যে শিক্ষায় বড় করেছেন, সেই শিক্ষা নিয়ে ‌‌‌‌‌আমি গর্ব করি।

আমাদের জীবনের সর্বপ্রথম শিক্ষক এবং সর্বচেষ্ঠ শিক্ষক হলেন আমাদের পিতা মাত্রা, আমরা তাদের কাছ থেকে সব ধরনের শিক্ষা পেয়ে থাকি।

আমাদের এই শিক্ষা আমাদের সামগ্রিক জীবন চলার পদ তৈরী করে দেয়। তাদের শিক্ষা নিয়ে গর্ব করা করা যায়।

আমাদের আশেপাশে অনেক শিক্ষিত মানুষ আছে,, যারা নামে শিক্ষিত কিন্তু তাদের দারা একটি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

শিক্ষা আমাদের অন্ধকার হতে আলোর পদ দেখায় কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আছে যারা শুধু নামে শিক্ষিত কাজে নয়।

ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

Congratulations! This post has been upvoted through -steemcurator07. We support quality posts, and good comments anywhere, with any tags.
PicsArt_05-29-09.43.25.jpg
Curated by :@radjasalman

হুম দিদি আপনি ঠিক বলেছেন "মানবিকতা" বাচিয়ে রাখলে মনসিক শান্তি তৃপ্তি যেটাই বলি না কেন আমরা উপলদ্ধি করতে পারি ৷ আজকাল শিক্ষিত হয়ে কোন লাভ নেই যদি শিক্ষার মাঝে কোন ধরনের মানবিকতা না থাকে ৷ যেখানে কোন মানবিকতা থাকে না সেখানে ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই না ৷ সবচেয়ে শিক্ষা হলো যেটা পরিবারের মা বাবার কাছ থেকে পেয়ে থাকি ৷ সেটাই মূলত আসল শিক্ষা যেখান মানবিকতা কাকে বলে সেটা সেই শিক্ষার মাঝে আমরা উপলদ্ধি করতে পারি ৷

যাই হোক দিদি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি শিক্ষনিয় পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ৷ ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷