"ভাঁপা পিঠার রেসিপি"

in hive-120823 •  2 months ago 
Ivory Beige Pet Pictures Photo Collage _20240925_023602_0000.png
"Edited by Canva"

Hello,

Everyone,

আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের সকলেরই আজকের দিনটি খুব ভালো কেটেছে।

আমরা প্রত্যেকেই জানি পিঠে খাওয়ার সব থেকে উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল। কারণ সেই সময় খেজুরের গুড় পাওয়া যায়। তবে আমাদের ইচ্ছে গুলো বড্ড বেশি অবাধ্য হয়,বিশেষ করে খাবারের ক্ষেত্রে অন্তত খুব একটা যুক্তি মানতে চায় না। তবে যারা নিজস্ব ডায়েট ফলো করেন, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা।

এতগুলো কথা এ কারণেই বলছি কারণ আজ আমি এমন একটা রেসিপি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, যেটা সাধারণত আমরা শীতকালে খেয়ে থাকি। কিন্তু আমার শ্বশুর মশাইয়ের কয়েক দিন যাবৎ পিঠা খেতে ইচ্ছা করছিলো।

নানান রকম শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওনার খাওয়া-দাওয়ায় বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে ইচ্ছে পূরন না হলে, আজকাল বাচ্চাদের মতন বড্ড বেশি অভিমান করেন।

আজ যে পিঠার রেসিপি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, সেটি সম্পর্কে আপনারা অনেকেই কমবেশি জানেন। তবে আমাদের বাড়িতে কিভাবে পিঠে তৈরি করা হয়েছিলো, আজ সেই রেসিপি শেয়ার করবো।

1672344690977_010726.jpg

প্রথমে জেনে নিই পিঠে তৈরি করতে কি কি উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছিল, -

"ভাঁপা পিঠে তৈরীতে ব্যবহৃত উপকরণ"

উপকরণপরিমাণ
১. সেদ্ধ চাল২৫০ গ্ৰাম
২. আতপ চাল২৫০ গ্ৰাম
৩. নারকেলঅর্ধেক
৪. খেজুরের গুড়২ কাপ
৫. দুধ১ কাপ
৬. ছোট স্টিলের বাটি২ টি
৭. সুতির কাপড়ের টুকরোসাদা‌‌ রঙের অন্য রঙের‌ হলে‌ পিঠের রঙ পরিবর্তন ‌হয়ে‌ যেতে ‌পারে

1672344690977_010726.jpg

"ভাঁপা পিঠে তৈরীর পদ্ধতি"

এবার আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব এই পিঠা তৈরি করার পদ্ধতি।

IMG_20240924_235023.jpg
"ভিজিয়ে রাখা‌ সেদ্ধ চাল"

প্রথমে সিদ্ধ চাল, আতপ চাল গুলোকে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা মতন ভিজিয়ে রাখতে হবে। আতপ চাল একটু কম সময় ভেজালেও হবে, তবে সিদ্ধ চাল একটু বেশি সময়ের জন্য ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর চালগুলোকে ঝুড়ির মধ্যে দিয়ে জল ঝরিয়ে নিতে হবে।

1672344690977_010726.jpg

IMG_20240924_235039.jpg
"ভিজিয়ে রাখা আতপ চাল"

এবার এক এক করে দুই ধরনের চালের গুঁড়ো তৈরি করে নিতে হবে। আগেরকার দিনে ঢেঁকি দিয়েই চাল গুড়ো করা হতো ঠিকই, তবে বর্তমানে ঢেঁকি খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। এই কারণে আমরা প্রত্যেকেই বাড়িতে হয় শিলনোড়া অথবা মিক্সি মেশিনের সাহায্যে এই চালের গুড়ো তৈরি করে থাকি।

1672344690977_010726.jpg

IMG_20240924_235130.jpg
"চালের‌‌ গুঁড়ো ঝুড়ি‌ দিয়ে চেলে নেওয়ার ‌মুহুর্ত"

দুই রকম চালের গুঁড়ো তৈরি করা হয়ে গেলে, দুই ধরনের গুঁড়ো একসাথে সামান্য লবণ ও অল্প দুধ দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। দুধ এমন পরিমাণে মেশাতে হবে যাতে,চালের গুঁড়ো মুঠোর মধ্যে নিলে একসাথে থাকে, আবার সামান্য চাপ দিলেই যাতে গুঁড়ো হয়ে যায়। ঠিক যেভাবে আমরা লুচি বানানোর সময় ময়দা ময়ান দিয়ে থাকি।‌এরপর‌ ঐ‌ গুঁড়ো‌গুলো‌ একটা ঝুড়ির‌ সাহায্যে চেলে নিতে হবে, যাতে‌ কোথাও দলা‌ পাকিয়ে না‌ থাকে।

1672344690977_010726.jpg

IMG_20240924_235149.jpg
"নারকেল ‌কোরা ও‌ খেজুরের ‌গুড়"

অন্যদিকে পরিমাণমতো নারকেল কুড়িয়ে নিতে হবে, তার পাশাপাশি খেজুর গুড়ের পাটালি থেকে গুড় কেটে নিতে হবে, যাতে পিঠেতে সহজে ব্যবহার করা যায়।

আপনাদের হয়তো আগেও বলেছি, আমার শাশুড়ি মায়ের ছোট্ট উনুন রয়েছে, যে উনুনে তিনি আমাদের বাড়ির বিভিন্ন পুজোতে ঠাকুরের নাড়ু,মোয়া,ও ভোগ তৈরি করেন। আর শীতকালে ব্যবহার করেন স্নানের জন্য জল গরম করার পাশাপাশি, পিঠে তৈরির কাজে।

যাইহোক এরপর উনুন জ্বালিয়ে নিতে হবে এবং একটা হাঁড়ির মধ্যে বেশ কিছুটা জল দিয়ে জলটাকে খুব ভালোভাবে ফুটতে দিতে হবে। কারণ এই জলের ভাঁপেই তৈরি হবে ভাঁপা পিঠা।

1672344690977_010726.jpg

IMG_20240924_235234.jpg
"উনুনে জল‌‌ গরম বসানো ‌হয়েছে"

জলটা ফোটার সময় ঢাকনা ব্যবহার করলেও, পিঠে তৈরি করার সময় হাড়ির মুখে এমন একটা পাত্র বসাতে হবে যার মাঝখানটা যেন ছিদ্র থাকে। আমাদের বাড়িতে একটা অ্যালুমিনিয়ামের সরা ব্যবহার করা হয়, যার মাঝখানটা শাশুড়ি মা ছিদ্র করে নিয়েছেন,যেমনটা আপনারা ছবিতে দেখতে পারছেন। আপনারা চাইলে এখানে স্টিলের ছিদ্রযুক্ত পাত্রও ব্যবহার করতে পারেন।

1672344690977_010726.jpg

IMG_20240924_235251.jpg
"পিঠে তৈরীর প্রথম ‌ধাপ-স্টিলের বাটিতে কাপড়ের ‌উপরে চালের গুঁড়া ‌দেওয়ার সময়"

এবারই হচ্ছে আসল কাজ সেটা হলো ভাঁপ দেওয়ার জন্য পিঠে তৈরির কাজ। প্রথমে যে স্টিলের ছোট বাটি গুলো নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর উপরে সুতির কাপড়ের টুকরা নিয়ে, তার উপরে প্রথমে বেশ কিছুটা চালের গুঁড়ো দিয়ে দিতে হবে।

1672344690977_010726.jpg

IMG_20240924_235308.jpg
"গুঁড় ও‌‌ নারকেল"
IMG_20240924_235326.jpg
"আমার পিঠেটায় গুড়‌ একটু‌ বেশি‌ দিয়েছি"
IMG_20240924_235413.jpg
"কাপড়টা দিয়ে এইভাবে ‌ঢেকে দিতে হবে"
IMG_20240924_235345.jpg
"উপর‌‌ থেকে চালের গুঁড়া‌ দিতে‌ হবে"

তারপর গুড়ের উপরেই নারকেল কোরা ও কেটে নেওয়া খেজুরের গুড় ছড়িয়ে দিয়ে, উপর থেকে আবার চালের গুঁড়ো দিয়ে নারকেল ও গুড়‌ গুলো ঢেকে দিতে হবে।

1672344690977_010726.jpg

IMG_20240924_235437.jpg
"পিঠেটা ভাঁপে‌ দেওয়ার‌ সময়"
IMG_20240924_235502.jpg
"স্টিলের ‌বাটিটি‌‌ সরিয়ে দিতে হবে"

এরপর কাপড়ের টুকরোটি একটা জায়গায় গুটিয়ে নিয়ে, এমনভাবে ছিদ্রযুক্ত সরার মুখে বসাতে হবে যাতে ফুটন্ত জলের ভাঁপে পিঠাটা সিদ্ধ হতে পারে। এরপর ‌স্টিলের বাটিটি‌ সরিয়ে নিতে হবে।

1672344690977_010726.jpg

IMG_20240924_235518.jpg
"কাপড়টা ‌একজায়গায় করে ‌আরেকটা‌ বাটি‌ দিয়ে ঢাকা দিয়ে হবে"

এরপর সুতির কাপড়টা এক জায়গায় এনে, ‌অন্য একটা ‌বাটি‌ দিয়ে ঢাকা দিয়ে দিতে হবে। যাতে ভাঁপটা বেড়িয়ে না‌‌ যায়। একটি পিঠে তৈরি হতে হতে অন্য একটা বাটিতে আরেকটা পিঠে ভাঁপে দেওয়ার জন্য তৈরি করে নিতে হবে।

1672344690977_010726.jpg

IMG_20240924_235533.jpg
"ভাঁপানোর ‌শেষে‌‌ কাপড়‌ সমেত‌ পিঠেটা নামিয়ে নেওয়ার পর"
IMG_20240924_235552.jpg
"পিঠে তৈরি করার পর"

এরপর সরা থেকে‌ কাপড়‌ সমেত‌ পিঠেটা নামিয়ে কিছুক্ষণ ঠান্ডা হতে দিতে হবে। গরম অবস্থায় যদি পিঠেটাকে নামানোর চেষ্টা করা হয়, অনেক সময় সেটা ভেঙে যেতে পারে। তাই কিছু সময় বাদে যদি সুতির কাপড়টা থেকে নামিয়ে নিলে সেটি অনায়াসে উঠে আসবে। ঠিক যেমনটা আপনারা ছবিতে দেখতে পারছেন।

1672344690977_010726.jpg

যেদিন আমার শ্বশুরমশাই অসুস্থ হয়েছিলেন, সেদিনের পোস্টে লিখেছিলাম শুভর ছোট মাসি এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে। এইবার পিঠেটা তিনিই তৈরি করেছেন, কারণ শাশুড়ি মা শশুর মশাইয়ের খেয়াল রাখতেই ব্যস্ত ছিলেন।

আমি ওনাকে একটু সাহায্য করেছি, তবে সম্পূর্ণ পিঠে মাসিই তৈরি করেছিলেন। আপনাদের কেমন লাগলো রেসিপিটি সেটা অবশ্যই জানাবেন। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। শুভরাত্রি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

দিদি কতদিন হল ভাবা পিঠা খাই নাই অনেকটাই ভুলতে বসেছি এর স্বাদ ও গন্ধ যদিও ভাবা পিঠা বানানো খুব একটা ঝামেলার কাজ না তবে এটা যে একেবারে সহজ সেটাও বলছি না।

সুস্বাদু এই ভাবা পিঠার রেসিপি‌ আমাদের কাছে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ভালো থাকবেন এবং নতুন নতুন এমন রেসিপি পড়ার সুযোগ করে দেবেন।

ভাঁপা পিঠে তৈরি করা যথেষ্ট ঝামেলার কাজ, তবে যারা খেতে পছন্দ করেন, তারা এইটুকু ঝামেলা করতেই পারেন। যদিও আমার এই পিঠে খুব একটা বেশি পছন্দ নয়, তবে শশুর মশাই খুব ভালোবাসেন। তাই ওনার জন্যেই তৈরি করা হয়েছিলো। ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।

ভাপা পিঠা মূলত শীতের পিঠা হলেও আমার মাকে দেখতাম সারা বছরই বানাতো। শুধু ভাপা পিঠাই না সবধরণের পিঠাই সে সারা বছর বানাতো। আজকে আপনার ভাপা পিঠার রেসিপি শেয়ার করা দেখে তার কথা মনে পরে গেলো।
সরা দিয়ে এই ভাবে পিঠা বানানো প্রথমবার দেখলাম। তবে প্রথমবার দেখলেও বুদ্ধিটা আমার পছন্দ হয়েছে।

সরা দিয়ে পিঠে বানাতে আমার শাশুড়ি মাকে দেখেছি। আমার বাপের বাড়িতে এই ভাঁপা পিঠে কখনো বানাতে দেখি নি। বিয়ের পর প্রথম শশুর বাড়িতে এই পিঠে খেয়েছিলাম। আমাদের মায়েদের ধৈর্য্য ছিলো অনেক, তাই তারা অনেক রকম পিঠে বানাতেন। তবে আমাদের অতো ধৈর্য্য নেই। ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।

দেখে ভালো লাগলো আপনি আপনার শ্বশুরের ইচ্ছা পূরণ করেছেন,,,।
আমি নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে ভাপা পিঠা বেশ পছন্দ করি যদিও নিজে খুব একটা ভালো পিঠা তৈরি করতে জানিনা,
তবে যতটুকু জানি নিজের চলে যায়,, কিন্তুু আজ ভালো লাগলো আপনার খুব সুন্দর একটা রেসিপি পড়তে পেরে,,
আশা রাখছি পরবর্তীতে আপনার রেসিপিটা তৈরি করার চেষ্টা করবো।।ধন্যবাদ খুব সুন্দর একটি রেসিপি শেয়ার করার জন্য।

আমি কোনো পিঠেই তৈরি করতে পারি না। তাই ঐদিন ও পিঠেটা আমি নই, আমার মাসি শাশুড়ি অর্থাৎ শুভর ছোটো মাসি তৈরি করেছিলেন। হ্যাঁ শশুর মশাইয়ের জন্যই তৈরি করা হয়েছিল, কারন ওনার খেতে ইচ্ছা করেছিলো।