ইচ্ছাপূরণের গল্প- গঙ্গাসাগর দর্শন(শেষ পর্ব)

in hive-120823 •  last month 
IMG_20241223_133114.jpg
"কিছু অমলিন স্মৃতি"

Hello,

Everyone,

আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো গঙ্গাসাগরের মেলার কথা শুনে থাকবেন। আসলে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে এই গঙ্গাসাগরের মেলা অনুষ্ঠিত হয় সাগরদ্বীপে। গঙ্গাসাগর আসলে গঙ্গা এবং বঙ্গোপসাগরের মিলন স্থান।

IMG-20231222-WA0084.jpg
"গঙ্গাসাগর"
IMG-20231222-WA0023.jpg
"সমুদ্র পাড়ে দাড়িয়ে"

এটিকে আসলে একটি পুণ্যভূমি। যেখানে কপিল মুনির আশ্রম রয়েছে এবং বহু ঋষি মনীষীদের কাছে এটি কিন্তু শ্রেষ্ঠ তীর্থস্থান। বাংলায় প্রচলিত একটা কথা আছে, সব তীর্থ বার বার, গঙ্গাসাগর একবার। অর্থাৎ অনেকেই এটা মানেই বা বিশ্বাস করেন যে, গোটা ভারতবর্ষ তথা বিশ্বে যত পুণ্যভূমি আছে, সব জায়গাতে বারবার যাওয়া এবং এই গঙ্গাসাগরে একবার যাওয়ার সমান।

আপনারা জানেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের জন্য কুম্ভ মেলা সবথকে বড়। তবে কুম্ভ মেলার পরের স্থান রয়েছে এই গঙ্গাসাগরের মেলা। মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তের দিনে এই মেলাতে সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষের ভিড় হয়, কারণ সকলেই এই দিনে সমুদ্রস্নান করে পুণ্য অর্জন করেন।

তবে সেই সময় এতো মানুষের ভিড়ে গঙ্গাসাগরের মন্দির হোক বা তার আশেপাশের দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা সম্ভব হয় না। তবে হ্যাঁ ওই মেলার সময়কার সৌন্দর্য্য অবশ্য অন্যরকম হয়। কিন্তু শাশুড়ি মায়েরা ভীরের কারণে মূলত ওই সময় যেতে চাননি। তবে শশুর মশাই বেশ কয়েক বছর আগে একবার এই গঙ্গাসাগরের মেলাতে অর্থাৎ এই পৌষ সংক্রান্তির সময় গিয়েছিলেন।

IMG-20231222-WA0024.jpg
"সমুদ্রে ঢেউ নেই বললেই চলে"
IMG-20231222-WA0077.jpg
"মামা,মামীর সাথে শাশুড়ি মা ও মাসি শাশুড়ি"

যাইহোক আপনারা যারা দীঘা বা পুরি গিয়েছেন সেখানকার সমুদ্র ঢেউ দেখেছেন, তাদের কাছে এই গঙ্গা সাগরের ঢেউ কিছুই না। সেখানে কোনো ঢেউ নেই বললেই চলে। সেখানকার মন্দিরের প্রধান পুজিত দেবতা হলেন- কপিলমুনি, মা গঙ্গা এবং রাজা সাগর।

IMG-20231222-WA0070.jpg
"মূল মন্দিরে পুজিত দেবতারা"

মূর্তিগুলো দেখতে অন্যান্য মন্দিরের মধ্যে থেকে বেশ কিছুটা ভিন্ন। তবে সমুদ্রে পারে স্নান করার পরে সেখানেই পোশাক পরিবর্তন করার আলাদা জায়গা করা রয়েছে, বলেই শাশুড়ির মায়ের কাছে শুনেছিলাম। ঢেউ না থাকলেও সমুদ্রে সৌন্দর্য্য তুমি কোনো অংশে কম নয়। বেশ অনেকটা হেঁটে গেলে তবে আপনি সমুদ্রের জলের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবেন, বিশেষ করে ভাটার সময়।

IMG-20231222-WA0052.jpg
"আয়লা ঝড়ে কবলিত এলাকা"
IMG-20231222-WA0028.jpg
"মহাদেবের মন্দির"
IMG-20231222-WA0054.jpg
"মনসা দেবীর মন্দির"
IMG-20231222-WA0021.jpg
"ঝাউবন"

পরদিন ওখানে খুব সকালে উঠে ওনরা মন্দির দর্শন করেছিলেন। তার পাশে পার্শ্ববর্তী এলাকা দর্শনেও গিয়েছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে আয়রা ঝড়ে এই সকল এলাকা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। তবে সেই সমস্ত এলাকা আবার নতুন করে পুনঃনির্মাণের কাজ চলছে।

সেই জায়গাগুলি টোটোওয়ালা সকলকে ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। তার পাশেই মহাদেবের মন্দিরে ছিলো, যেটাও শাশুড়ি মায়েরা দর্শন করেছিলেন। এমনকি সেখানে মা মনসারও একটি মন্দির ছিলো। যেটা ঝড়ের পরে আবার নতুন করে সেখানকার স্থানীয় মানুষেরা নির্মাণ করেছিলেন।

IMG-20231222-WA0017.jpg
"বিশালাকার শঙ্খ"
IMG-20231222-WA0018.jpg

মন্দিরের সামনে বেশ কিছুটা দূরে একটা বিশাল আকার শঙ্খ তৈরি করা ছিলো, যার ছবি আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। সামনাসামনি শঙ্খটা আকারে কতটা বড়, আশা করছি ছবি দেখে আপনারা কিছুটা হলেও তা আন্দাজ করতে পারবেন। সমুদ্রের পাড়ে ছিলো অনেক ঝাউ গাছও। এগুলো যেন সমুদ্রের সৌন্দর্য্য আরও বাড়িয়ে দেয়।

IMG-20231222-WA0006.jpg
"রাতের আলোয় সজ্জিত মন্দির"
IMG-20231222-WA0007.jpg
"মন্দিরের সামনে মহাদেবের মূর্তি"

রাতের বেলায় মন্দিটির সৌন্দর্য্য আরও অনেকটা বেড়ে যায়। যখন সেখানকার লাইট গুলো জ্বালানো হয়। সন্ধ্যার পর ওনরা একবার বেরিয়েছিলেন, মন্দিরটি এবং তার সামনে মহাদেবের যে মুর্তি করা ছিলো, অন্ধকারে লাইট জ্বালানোর পর সেগুলো দেখতে বেশ সুন্দর লাগছিলো। কম্পিউটারে যখন এই ছবিগুলো দেখছিলাম, তখন আমি সবগুলোই পাঠাতে বলেছিলাম, যাতে আপনাদেরকে শেয়ার করতে পারি।

IMG-20231222-WA0032.jpg
"নাম না জানা ফুল"
IMG-20231222-WA0031.jpg
"রঙটা বেশ পছন্দের"

উপরে যে ফুল দুটো দেখতে পারছেন, যার নাম জানিনা কিন্তু রংটা কি সুন্দর তাই না? এই রংটা আমার শাশুড়ি মায়ের ভীষণ প্রিয়। কিন্তু নিজের গায়ের রং কালো বলে এই রঙের কোনো কিছুই কখনো ব্যবহার করেন না। ও একটা কথা আপনাদের বলা হয়নি।

আমার শাশুড়ি মা কিন্তু চুরিদার পরে একটুও স্বচ্ছন্দ্যবোধ করে না, বেশ খানিকটা লজ্জা বোধই করেন। আসলে কখনো পড়েননি বলেই হয়তো। তবে বয়সের সাথে সাথে মানুষের চলাফেরার সুবিধার্থে সেই পোশাক করা উচিত, যেগুলো পরে তারা স্বচ্ছন্দে ঘোরাফেরা করতে পারবে। বৃন্দাবনে যাওয়ার সময় প্রথম জোর করে ওনাকে চুড়িদার পরানো হয়েছিলো।

IMG-20231222-WA0038.jpg
"শাশুড়ি মা"
IMG-20231222-WA0036.jpg
"মাসি শাশুড়ি"
IMG-20231222-WA0034.jpg
"তিন বান্ধবী"
IMG-20231222-WA0029.jpg
"মামার মেয়ের সাথে সেলফি"

তাই এবার গঙ্গাসাগরের যাওয়ার সময়ে চুড়িদারই দেওয়া হয়েছিলো। ওখানেই কোনো একটা মন্দিরের সামনে ঘুরতে গিয়ে সামনের এই পাতাবাহার গাছ গুলো দেখতে পেয়েছিল। তখন মাসি এবং মা দুজনেই এখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছিল। বেশ ভালই লাগছে কিন্তু ছবি তুলতে উনি বেশ লজ্জা পান। তবে জোর করে ঐ বোনটা কয়েকটা ছবি তুলেছে।

IMG-20231222-WA0047.jpg
"লাইট হাউস"

সেখান থেকে কাছের একটা লাইট হাউসের গিয়েছিলো। সেখানে উপর থেকে এলাকাটা সম্পূর্ণ দেখা যায়। ওই দিনই ওখানে লাস্ট দিন ছিলো, কারণ পরদিন সকালেই ওখান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করেছিলো।

IMG-20231222-WA0043.jpg
"সমুদ্র পথে হাঁটছে সকলে"
IMG-20231222-WA0083.jpg
"সমুদ্র পাড়ের সূর্যাস্ত"

সমস্ত জায়গায় দর্শন করার পর আরও একবার সমুদ্রের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য তিনজন হাটকে শুরু করেছিলো। সমুদ্র কতটা দূরে, এটা আপনারা উপরের ছবিটা দেখে হয়তো বুঝতে পারছেন। পড়ন্ত বিকেলে সমুদ্রের পায়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত সৌন্দর্য্য উপভোগ করেছিল।

IMG-20231222-WA0082.jpg
"কাঁকড়াদের করিশ্মা"

সমুদ্রের পাড়ে কাঁকড়ারা কিভাবে মাটি তোলে সেটা দেখার জন্য এই ছবিটা আমি নিয়ে এসেছি। দেখে মনে হচ্ছে যেন হাতে ডিজাইন করা। হয়তো না বললে আমরা বুঝতে পারবো না ওটা কাঁকড়াদের দ্বারা তৈরি।

হয়তো একটা দিনের জন্য সকলের সাথে গিয়েছিলেন, তবে অনেক বেশি আনন্দ করে ফিরেছেন। অনেক স্মৃতি জমা হয়েছে মনে। আজও যখন সেই সব দিনের কথা বলেন চোখ মখে আনন্দ ফুটে ওঠে। আসলে এই মানুষগুলোর চাহিদা বড্ড সীমিত।

গঙ্গাসাগরে যাওয়ার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ঘোরা নয়, ওটা আমাদের সকলের জন্য একটা পুন্যভূমি, যেখানে যাওয়াও সৌভাগ্য। সুযোগ যখন এসেছিলো, তখন ওনাকে যেতে দিয়ে আমি ভালোই করেছি, এটা আজ উপলব্ধি করতে পারছি। কারণ দিন দিন বয়স বাড়ছে, এরপর হয়তো আর যেতে পারবেন না।

সবশেষে ছবিগুলো দেখে আমার যে গঙ্গাসাগর যেতে ইচ্ছা করছে না এ কথা বলবো না। গঙ্গাসাগর আগে এতটা উন্নত ছিল না ঠিকই, তবে এখন সেখানে অনেকখানি উন্নতি হয়েছে। তাই এরপর নিশ্চয়ই সময় পেলে আমিও যাওয়ার চেষ্টা করবো।

IMG-20231222-WA0005.jpg
"আনন্দের মুহুর্ত"

যাক আমার শাশুড়ি মা যে সেখানে ঘুরে আনন্দ পেয়েছিলেন, এটা জেনে আমার সত্যিই ভালো লাগছিলো। শ্বশুরমশাই সুস্থ থাকলে হয়তো দুজনকে আরও একবার পাঠাতাম। তবে আর বোধহয় এমনটা সম্ভব হবে না।

যাক গঙ্গাসাগরের ছবিগুলো দেখে গঙ্গাসাগর সম্পর্কে যদি আপনাদের আরও কিছু জানতে ইচ্ছে করে, তাহলে অবশ্যই অনলাইনের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন। আর যদি ঘোরার ইচ্ছা জাগে, অবশ্যই একবার দর্শন করে আসবেন। কারণ এমন পুণ্যভূমি দর্শন করাও কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয়। ভালো থাকুন সকলে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

Commet Formate.png
Curated by: @bossj23

Thank you for your support @bossj23 Sir.

Loading...

it's seems that you had amazing day out with your family...it is written in Bengali language, i can relate about the post with the Pictures...

আপু, আপনার এই পোস্টটি পড়ে মন ভরে গেল। গঙ্গাসাগর সম্পর্কে এত চমৎকার বর্ণনা এবং ছবি দেখে মনে হলো যেন নিজেই ঘুরে এলাম। আপনার লেখার মাধ্যমে এই পুণ্যভূমির গুরুত্ব ও সৌন্দর্য দারুণভাবে ফুটে উঠেছে।

যদিও আমি একজন মুসলিম, তবুও আমি সব ধর্মের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সমান শ্রদ্ধার চোখে দেখি। আপনার এই পোস্টে গঙ্গাসাগরের প্রতি মানুষের বিশ্বাস এবং তার পবিত্রতা আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে।

ধর্ম আলাদা হতে পারে, কিন্তু আল্লাহর প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা সবার মধ্যে এক।
আপনার শাশুড়ি মা এবং পরিবারের আনন্দময় মুহূর্তগুলো দেখে মনে হয়েছে, জীবনের আসল সৌন্দর্য পরিবার ও স্মৃতিতে। আপনার এমন অনুপ্রেরণামূলক এবং হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া লেখা ভবিষ্যতেও পড়তে চাই। ভালো থাকুন আপু সব সময়।