বাপের বাড়িতে ইতু পুজোয় আনন্দের মুহূর্ত

in hive-120823 •  2 years ago 

20221216_130516.jpg

প্রিয় বন্ধুরা,

আশাকরি আপনারা সবাই সুস্থ ও ভালো আছেন।আজকে আমি কোনো রান্না,আঁকা নিয়ে লিখবো না।আজকে আমি আমার বাপের বাড়িতে একটা পুজোর সমন্ধে আপনাদের কে জানাবো।

কিন্তু এই পুজো আমার বাবার বাড়িতে ও নেই।এই পুজো আমার মায়ের বাপের বাড়িতে হয়।মা এই পুজোটা করতে খুব ভালোবাসে।

আর আমার মা মন থেকে বিশ্বাস করে এই পুজো করলে সংসারের ভালো হবে।তাই আমার মায়ের বিয়ের সময় আমার বাবাকে এই কথাটা
জানিয়েছিলো।

বাবা বলেছিলো করতে পারবে।তাই এই পুজো বিয়ের পর থেকেই মা করে আসছে।আর মায়ের দেখাদেখি আমি ও করছি ছোটোবেলা থেকে।কিন্তু বিয়ের পর আমি এই বছর প্রথম করলাম।

আপনারা সবাই জানেন যে মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলো তাকে শশুর বাড়ির নিয়ম মেনে যা যা পুজো হয় তাই করতে হয়।কিন্তু বাপের বাড়ির কোনো নিয়ম বা পুজো তারা মানতে পারবে না‌।

কিন্তু আমি তা মন থেকে মানি না।কারণ আমি যেখানে ছোটো থেকে বড়ো হলাও,যাদের রক্ত আমার শরীরে ব‌ইছে আমি তাদের সব কিছু ভুলে যাবো,কোনোদিনই না।

তাই আজ সকাল বেলায় উঠে সংসারের সব কাজ সেরে আমি স্নান করে জামাকাপড় পড়ে তৈরি হয়ে গেলাম।আমার স্বামী আমাকে স্কুটি করে বিরাটি স্টেশনে ছেড়ে দিলো।

IMG_20221212_122107_692.jpg

আমি টিকিট কাটতে কাটতে স্টেশনে ট্রেন ঢুকে গেলো।আমি তারপরে ট্রেনে উঠে গেলাম।শিয়ালদহে ট্রেন ঢুকে দাঁড়াতেই আমি ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম।

তারপরে হেঁটে এই দিকে এসে দেখলাম বারুইপুর লোকাল দাঁড়িয়ে আছে।আমি সঙ্গে সঙ্গে বারুইপুর লোকালে উঠে পড়লাম।

উঠে বসার জায়গা না পাওয়ার কারণে আমি একটা পাশে দাঁড়ালাম।তারপরে সোনারপুর স্টেশন আসতে আমি নেমে গেলাম।

ট্রেন চলে যেতে আমি স্টেশন পার করে বারেন্দ্রপাড়ার অটোতে উঠে বসলাম।কিছুক্ষণ পরে আমাকে অটো বারেন্দ্র পাড়ার মুখে নামিয়ে দিলো।

আমি তারপরে দু মিনিট হেঁটে আমার ঘরে ঢুকলাম।তারপরে আমি আরেকবার স্নান করে ঘরে ঢুকলাম।মা বললো রিয়া তুই এই দিকে সব কিছু সাজা আমি স্নান করে আসছি।মা স্নান করতে চলে গেলো।

আজ আমি কীভাবে ইতু পুজো করলাম তা আপনাদের কে বলবো।

অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তির দিন এই পুজো হয়।

আমি তখন একটা বড়ো পাএের মধ্যে মাটিটা নরম করে ভালো ভাবে চারিদিকটা সমান করে নিলাম।মাটির ওপর ছোটো ছোটো সরা দুটো বসিয়ে দিলাম।

তারপরে দুটো ঘটের গায়ে সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকলাম।ঘট দুটি ওই সরার ওপর বসিয়ে দিলাম।একটা বড়ো গাঁদা ফুলের মালা নিয়ে পাএের চারিদিকটা দিয়ে দিলাম।

ঘটের মধ্যে সামান্য জল দিয়ে তার মধ্যে ধান,হলুদ,মান ও কচু,মটর,সরষে,শুষনী,কলমী,পাঁচটা ছোটো বটের ডাল দিয়ে দিলাম।তারপরে একটা থালায় নতুন গুড়ের মোয়া,বাদাম পাটালী, নতুন গুড়ের মিষ্টি ,আপেল,পেয়ারা দিয়ে সাজিয়ে দিলাম।

20221216_130522.jpg

আমি এই গুলো সাজাতে সাজাতে মা স্নান করে চলে এলো।তারপরে দুজনে হাতে ফুল নিলাম।আমি ব্রতকথার বইটা ভালো করে পড়লাম,আর মা পাশে বসে শুনলো।

বই পড়া হয়ে যাওয়ার পরে প্রথমে মা একটা ঘটে জল দিলো,আর আমি তার পাশের ঘটে জল দিলাম।তারপরে দুজনে প্রণাম করলাম।প্রণাম সেরে একটু প্রসাদ,জল খেয়ে উপোস ভাঙলাম।

20221216_130608.jpg

তারপরে মা তাড়াতাড়ি করে সেদ্ধ ভাত করে দিলো আমি তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম।বিকেলবেলায় বাবা,আর আমি গিয়ে ওই দুটো ঘট গুলো নিয়ে পুকুড়ে গেলাম।

পুকুড়ে গিয়ে সব ফুল গুলো ফেলে,ঘটটা ডুবিয়ে জল নিয়ে বাড়িতে চলে এলাম।ওই জলটা ঘরে একটু ছড়িয়ে দিলাম।তারপরে চা খেয়ে বেড়িয়ে আসলাম।

তারপরে সন্ধ্যার মধ্যে বিরাটিতে নামলাম।তারপরে আমার স্বামী স্টেশন থেকে আমায় নিয়ে আসলো।

আজকের দিনটা ভালোই মজাতে গেলো।আজকে আমার পুজোটা আপনাদের কেমন লাগলো তা অবশ্যই জানাবেন কিন্তু।আজকে এখানেই শেষ করলাম।

শুভ রাএি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অনেক ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি, আপনি অনেক সুন্দর আপনাদের ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চলেন,

ধন্যবাদ দিদি ভালো থাকবেন❤️

আপনার যে ভালো লেগেছে তাতে আমি খুব খুশি হয়েছি।অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার।

@sanchita96 আসলে এই ইতু আমার বাপের বাড়িতে ও নেই এবং আমার শ্বশুর বাড়িতে ও নেই। তাই আমি ঠিক ভাবে এই পূজোর নিয়মাবলী জানি না।আর আমি অনেক আগে দেখেছি, কিন্তু খুব একটা মনে নেই।

কিন্তু ধন্যবাদ আপনাকে ইতু পূজো এবং পূজোর নিয়মাবলী ভাগ করে নেওয়ার জন্য।আপানার পোস্টের মাধ্যমে অনেক কিছুই জানতে পারলাম।

ভালো থাকবেন।🙏

আপনার যে ভালো লেগেছে তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

আপনার দায়িত্ব পালন করাটা খুবই ভালো লেগেছে।
আসলে যে যেই ধর্মেই থাকুক না কেন, নিজ নিজ ধর্মের দায়িত্ব পালন করাটা তার জন্য কর্তব্য।

অসাধারণ লেগেছে আপনার কথাগুলো।
এবং দায়িত্ববোধ❤️

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার ভালো লাগার জন্য।

আপনার এমন পূজার যে আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন এবং সম্পূর্ণ ঘটনা আমাদের সাথে উল্লেখ করেছেন এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। ধর্মের প্রতি আপনার এমন বিশ্বাস এটা খুবই ভালো লেগেছে আমার। ট্রেন জার্নি করে হলেও আপনি আপনার ধর্মের প্রতি যে সহানুভূতিশীল দেখিয়েছেন তা আসলেই মুগ্ধকর।

ধর্মের কাছে কোনোকিছু বড়ো না আমার কাছে।অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার।

Loading...

@sanchita96 আমি ইতু পূজো কোনো দিন দেখি নি, কিন্তু আপনার তোলা ছবি গুলি দেখে মনে হচ্ছে অনেক কাছ থেকে আমি পূজো উপভোগ করলাম।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি বিষয় আমাদের সাথে ভাগ করে নেবার জন্য। ভালো থাকবেন।

আপনার যে ভালো লেগেছে তাতে আমি খুব খুশি হয়েছি।ধন্যবাদ দিদি।

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ কেনো বলা হয় সেটা আপনার এই পুজোর কথা পড়ে মনে হলো, বিষয়টি নিয়ম অনেকের থাকে অনেকের থাকে না তবে বিশ্বাসটাই আসল বিষয়।