আগে ছেলেদের স্কুলে বেশ অনেকটা সময় কাটাতে হতো। আমার বাসা স্কুলের কাছাকাছি হবার সুবাদে যদিও অন্য মায়েদের মতো লেগে থাকতে হতো না কিন্তু তারপরও ছোট ছেলের ছুটি হয়ে যাওয়ার পরে অপেক্ষা করতে হতো বড়ো ছেলের জন্য। এই সময়টাতে স্কুলের ভাবীদের সাথে নানা ধরণের কথা-বার্তা হতো।
এই রকম একটা সময় এক ভাবি তার ছেলের কথা বলতে গিয়ে প্রায়ই বলতো যে তার ছোট ছেলের কথা শিখতে সময় লাগতেছে। কিন্তু তার বড়ো মেয়ে অনেক দ্রুত কথা শিখে ফেলেছিলো।
এরপর একদিন এসে জানিয়েছিল যে ,ছেলেকে নিয়ে সে একজন চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলো। তিনি তাকে বলেছেন যে ,কিছুদিন যেন সে তার ছেলেকে সব ধরণের ডিভাইস থেকে দূরে রাখে। এটা শুনে আমি কিছুটা অবাক হয়ে বলেছিলাম যে ,এ কেমন কথা। কথা বলতে দেরি হবার সাথে ডিভাইসের কি সম্পর্ক।
আমার প্রশ্নের উত্তরে ভাবি আমাকে বুঝিয়ে বলেছিলেন যে ,চিকিৎসক তাকে বলেছেন যে ,সব বাচ্চা তো আর একরকম হয় না। আপনার বাচ্চার কথা বলতে সময় লাগার পেছনে হয়তোবা বাসায় থাকা টিভি ,কম্পিউটার কিংবা মোবাইল অনেকাংশেই দায়ী। বাচ্চারা তাদের আশেপাশের মানুষদের যে ভাষায় কথা বলতে শুনে সেটাই শিখে।
কিন্তু এই বাচ্চাটা এই সব ডিভাইসে একেক সময় একেক ধরণের ভাষা শুনতে পাচ্ছে যার কারণে ও ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না যে ও কি বলবে। তাই তিনি কিছুদিন ভাবীকে এই সব থেকে দূরে রাখতে বলেছেন।
আমি কিছুটা সন্দিহান ছিলাম এই ধরণের কথায়। কিন্তু ভাবি অল্পদিনের মাঝেই আমাদের সুসংবাদ দিয়েছিলেন যে এতে উপকার হচ্ছে এবং তার ছেলে অনেক কথাই এখন বলতে শিখছে।
এরপর এই বিষয়টা আমি পুরোপুরিই ভুলে গিয়েছিলাম কিন্তু হঠাৎ করেই সোশ্যাল মিডিয়াতে এ নিয়ে একটা লেখা পরে নতুন করে মনে পরে গেলো। তাই এটা নিয়ে আজকে আবার ইন্টারনেটে কিছুটা সময় ঘাটাঘাটি করলাম। কি জেনেছি সেটাই সংক্ষিপ্ত করে জানাতে চেষ্টা করছি আপনাদের।
আমরা সবাই জানি যে ,বিভিন্ন ধরণের ডিভাইস বিশেষ করে স্মার্টফোন ব্যবহারে আসক্তি বাড়ছে শিশুদের। আর এর অতিরিক্ত ব্যবহারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশ। সাথে এতে স্মার্টফোনের বিকিরণ শিশুদের মস্তিষ্ক ও চোখের ক্ষতিসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করছে।
শিশুদের ওপর পরিচালিত ইউনিসেফের গবেষণা বলছে ,
শিশুর ৬ মাস থেকে ২ বছর হতেই বাবা-মা শিশুকে স্মার্টফোন ও টেলিভিশনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, যা শিশুর ভাষা বিকাশে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
আমরা যখন বাচ্চাদের হাতে স্মার্টফোন কিংবা এধরণের কোন জিনিস তুলে দেই তখন তার সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকে এদিকে। যার কারণে তার আশেপাশে খুব একটা খেয়াল করে না সে। এতে করে তার ভাষার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে থাকে এবং ক্রমশ সমস্যা ধীরে ধীরে প্রকট হতে থাকে।
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশু স্মার্টফোন বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কথা বলা বা প্রকাশে দেরিতে ভোগে; যাকে ‘স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ ডিলে’ বলা হয়। অন্যদিকে যারা এসব ব্যবহার করছে না, তারা স্বাভাবিক বিকাশের মাধ্যমেই বেড়ে উঠছে।
তাদের এই সমস্যার পেছনে অভিভাবকদের ভূমিকা অনেক বেশি। শিশুরা অনুকরণ করতে পছন্দ করে তাই পিতা-মাতার অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারও শিশুর ভাষা বিকাশ ও আচরণগত সমস্যার কারণ হতে পারে।
সাধারণত মায়েরা, বাবাদের থেকে বেশি ফোন ব্যবহার করে। তারা খাওয়ানোর সময়, ঘুম পাড়ানোর সময়, এমনকি শিশুর হাতে স্মার্টফোন দিয়ে পরিবারের বিভিন্ন কাজ করে থাকে । অন্যদিকে বাবা কিংবা অন্য সদসদেরকেও স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখে , যা দেখে তারাও অনুকরণ করতে থাকে। অনেক সময় শিশু কথা বলার মানুষ পায় না যার কারণেও কথা শিখতে বিলম্ব করে।
অনেকেই ভাবে যে , তারা সন্তান হয়তো কিছুটা দেরিতে কথা বলা শিখতেছে । কিন্তু তাদের এই চিন্তা পরবর্তী সময়ে শিশুর জীবনে অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আমার আশেপাশে অনেক অভিভাবককেই এই ভেবে খুশি হতে দেখেছি যে ,তাদের সন্তান স্মার্টফোনের ফাংশন খুব ভালো বুঝতে পারছে, ইউটিউব ও গেমস খেলতে পারছে। সত্যি বলতে এই অজ্ঞতা এক সময় আমার মাঝেও ছিল। আমি শুধু জানতাম যে চোখ নষ্ট হয়।
কিন্তু সব সময় এটি সব শিশুর জন্য ভালো হবে এমনও না ।বাচ্চাদেরকে স্মার্টফোন, টিভি, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করতে দিতে হবে কিন্তু সেটা একটি নির্দিষ্ট বয়সে ও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।
যদি কোনো বাচ্চার এই সমস্যা প্রকট হয় এবং কথা না বুঝে কিংবা প্রকাশ না করে, সেক্ষেত্রে দেরি না করে অবিলম্বে একজন প্রফেশনাল ‘স্পিস অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
তিনি শিশুর সমস্যা নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রদান করে শিশুর ভাষা বিকাশকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবেন।
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে আজকে আপনি আমাদের সাথে আলোচনা করেছেন আমার মনে হয় ছোট বাচ্চাদের কাছ থেকে এই ডিভাইস গুলো দূরে রাখাটা অনেক বেশি প্রয়োজন কারণ আমরা আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিজেদেরকে এতটাই ডুবিয়ে ফেলেছি ছোট বাচ্চাদের হাতে আমরা বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস দিয়ে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করি।
আজকে আপনার পোস্ট করে ধর্ষণ করার পর আমি যতটুকু বুঝলাম একটা বাচ্চার জন্য সবচাইতে ক্ষতিকর বিষয় হচ্ছে এই ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভাষার মানুষ বিভিন্ন ধরনের কথা বলে থাকে এটা স্বাভাবিক ছোট বাচ্চারা যেটা দেখে সেটা শিখতে অনেক বেশি পছন্দ করে তবে এর কাছ থেকে দূরে রেখে যদি আপনার বাচ্চার কিছু উপকার হয় তাহলে সেটা আমাদের সবারই মাথায় রাখা অনেক বেশি প্রয়োজন অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
দিদি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা বিষয় আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। আমি মনে করি আপনি ঠিক কথাই বলেছেন বর্তমানে সন্তানদের দেরী করে কথা বলার জন্য একমাত্র দায়ী হলো আমাদের হাতের ইলেকট্রনিক ডিভাইস গুলো। কারণ বর্তমানে ছোট বেলা থেকেই কান্না বা খেতে না চাইলে সন্তানদের তাদের পিতা মাতা মোবাইলে কার্টুন দিয়ে শান্ত বা ভাত খাওয়া। এর কারণেই হয়তো তারা দেরিতে কথা বলে।
ভালো লাগলো দিদি আপনার পোস্টটা পড়ে। ভালো থাকবেন দিদি আপনি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit