সূর্যমুখী নামটা শুনলে বা দেখলে মুগ্ধ হই কিন্তু সানফ্লাওয়ার শব্দটা কানে আসলে কিংবা মনে পরলে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়। সূর্যমুখী ও সানফ্লাওয়ার একই জিনিস কিন্তু দুটো শব্দে আমার অনুভুতি ভিন্ন হয় ।এর পেছনে অবশ্য সোফিয়া লরেন অভিনীত সানফ্লাওয়ার নামের চলচিত্রটি দায়ী।
যেখানে দেখানো হয়েছিল যে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে একজন নারী বিশ্বাস করেন না যে তার স্বামী মারা গেছেন। তাই তিনি তার স্বামীর ছবি নিয়ে রাশিয়া যান এবং তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। সেখানকার সেই দিগন্ত বিস্তৃত সূর্যমুখী ফুলের মাঠ আমার মনে দাগ কেটে গেছে সারা জীবনের জন্য।
ঐরকম দিগন্ত বিস্তৃত সূর্যমুখী ফুলের মাঠ মনে মনে খুঁজে বেড়াই আমি।
ইদানিং আমাদের দেশের অনেক জায়গাতে এই ফুলের চাষ শুরু হলেও আমার চোখে খুব একটা পরে নাই অথবা অনেক সময় চোখে পরলেও সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হয় নাই বিভিন্ন কারণে । কিন্তু চুরাইন বাজার এলাকাতে বিয়ে খেতে গিয়ে চোখে পড়লো এই ফুলের চাষাবাদ হচ্ছে।
আমাদের হাতে খুব একটা সময় ছিল না তারপরও আমি গাড়ি থেকে নেমে সূর্যমুখীর কাছাকাছি
গেলাম যতটা সম্ভব।যদিও খুব একটা সময় কাটাতে পারি নাই গাছের কাছে। রাস্তা থেকেই জুম করে ফুলের কয়েকটা ছবি তুলে আবার গাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
আমার একটা বদঅভ্যাস হলো ,গল্প শুনানো। আমার পরিবারের সদস্যরা হয়তোবা আমার এই অভ্যাসের কারণে বিরক্ত । যদিও কেউ এই বিরক্তি কখনো প্রকাশ করে নাই কিন্তু তারপরও সন্দেহ জাগে নিজের কাছে।
তাই সূর্যমুখী ফুলের মাঠের কাছ থেকে ফিরে আদৈ ওরা শুনতে চায় কিনা সেটা জিজ্ঞেস না করেই শুরু করলাম ছোটবেলায় অনেকবার পড়া গ্রিক পুরাণের সেই গল্প। যেখানে বলা হয়েছে যে ,ক্লাইটি ছিল একজন জলপরী। আর সে সূর্যদেবতা হেলিওসকে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসতো। কিন্তু ক্লাইটি সূর্যদেবতার প্রেমে পাগল হলেও দুর্ভাগ্যবশত হেলিওস ক্লাইটিকে ভালোবাসতো না। বরং সে ভালোবাসতো অর্কামাসের কন্যা লিউকোথিয়াকে। দেবতার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত ক্লাইটি রেগে অর্কামাসকে তার মেয়ের প্রেমের সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেয়। অর্কামাস তার কন্যা লিউকোথিয়ার উপরে প্রচন্ড রেগে গিয়ে তাকে জীবন্ত কবর দিয়ে দেন।
লিউকোথিয়ার মৃত্যুতে ক্লাইটির কোনো লাভই হয় নাই। সে ভেবেছিলো লিউকোথিয়া মারা গেলে সে দেবতার ভালোবাসা পাবে। কিন্তু ক্লাইটির সে আশার গুড়ে বালি ,সূর্যদেবতা হেলিওস তার দিকে ফিরেও তাকায় না ।
শেষ পর্যন্ত ক্লাইটি তার সমস্ত ভালোবাসা নিয়ে নগ্ন হয়ে পাথরের উপর নয় দিন শুয়ে থাকে সূর্যের দিকে তাকিয়ে । আর এই নয় দিন সে কিছুই খাই না ও পানও করে না। ফলশ্রুতিতে নবম দিনে ক্লাইটি মারা যায়। আর কিছুদিন পরে তার মৃতদেহের উপর একটি গাছ জন্মায়। গ্রিক লোককাহিনী অনুযায়ী ক্লাইটিই সূর্যমুখী ফুল গাছে রূপান্তরিত হয়েচে। আর এখনো সে সূর্যের দিকেই তাকিয়ে থাকে।
ছেলেদের এই গল্প বলার সময় অবশ্য ক্লাইটি ও সূর্যদেবতা ছাড়া অন্য নাম মনে ছিল না। লেখার সময় গুগল মামার সাহায্য নিয়েছি।
ওদের এই গল্প বলার মাথায় আসলো কেন এই ফুল সূর্যের দিকে ঝুকে থাকে। তাই বাসায় এসে আবারো গুগল মামার সাহায্য নিয়ে জানতে পারলাম যে ,সূর্যমুখী ফুলের সূর্যের দিকে মুখ করে থাকার পেছনে রয়েছে প্রধানত উদ্ভিদের বৃদ্ধি হরমোন ‘আউক্সিন’।
সূর্যের আলো গাছের যেদিকে কম পরে সেদিকে আউক্সিনের ঘনত্ব বেড়ে যায়।এতে করে ওইদিকের কোষগুলি বেশি বৃদ্ধি পায় এবং ফুলটি সূর্যের দিকে বাঁকা হয়ে যায়। আর ফুলের এই সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘হেলিওট্রপিজম।
গ্রিক কাহিনীতে ক্লাইটি তার প্রেমিকের দিকে তাকিয়ে থাকলেও বাস্তবে এটি সূর্যমুখী ফুলের বৃদ্ধি ও পরিপক্কতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া ।
সূর্যমুখী ফুল গাছের নাম যখন আমরা প্রথম মুখ দিয়ে উচ্চারণ করি তখন আমাদের সূর্য মামার কথা মনে পড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে সূর্য আমাকে দেখার চেষ্টা করি আপনি বলছেন যে সূর্যমুখী বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় চাষ করা হচ্ছে তবে আমাদের এখানে আমি এখনো দেখিনি।
তবে হ্যাঁ এটা চাষ করলে লাভবান হওয়া যায় এমনটা আমি অনেকবার ইউটিউবে শুনেছিলাম তবে আমাদের এখানে এখনো পর্যন্ত কেউ চাষ করছে না জানি না কবে চাষ করা হবে এই ফুল দেখলেই তো এমনিতেই মন ভালো হয়ে যায় অসংখ্য ধন্যবাদ সূর্যমুখী ফুলের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit