ভোর বেলা ঘুম ভেঙে বারান্দায় গিয়েছিলাম। যেয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম চারপাশ সাদা হয়ে আছে কুয়াশায়। অবশ্য গত দুইদিন থেকে দেশে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে যার কারনে শীত ও কুয়াশা দুটোই বেড়েছে। তবে ছোটবেলায় যেমন ঠান্ডা পরতে দেখতাম এখন আর তেমনটা দেখি না। এখনো চোখে ভাসে আমরা রোদের মাঝে দাঁড়িয়ে গরম চা খাচ্ছি।
এই সময়টাতে আমাদের এলাকার সব ছেলেবুড়ো সবাই ঘুড়ি উৎসবে মেতে উঠতো।গাছে গাছে ঘুড়ির সুতোয় মান্জা দিয়ে শুকাতে দিতো আশপাশে দিয়ে আমরা বাচচারা খেলা করার সময় সবাই সতর্ক করতো যাতে সুতোয় হাত না লাগাই।এতে হাত কেটে যাওয়ার সাথে সাথে সুতোর ধার কমে যাওয়ার ভয় থাকতো।
আকাশ ভরে থাকতো লাল, নীল হলুদ ঘুড়িতে। আমাদের এলাকার ছাদে ছাদে সাউণ্ড সিষ্টেমে গান বাজতো আর বাবা-ছেলে সবাই ঘুড়ি উড়াতো।কোথায় হারিয়ে গেল সেইসব দিনগুলো।আমি মারাত্মক ভাবে মিস করি সেই সময়টাকে। সময়ের সাথে সাথে ঘুড়ির মতোই হারিয়ে গেছে মানুষের মাঝে সেই বই পড়ার নেশা।
কুয়াশার দিকে তাকিয়ে এসবই ভাবছিলাম।কিন্তু রুমের ভেতর থেকে হাবির ডাকে বাস্তবে ফেরত আসতে হলো। কারন আমি দরজা খুলে রেখে বারান্দায় গিয়েছি যার কারনে রুমে বাতাস ঢুকছে।
দরজা বন্ধ করে আমি আবারও লেপের নিচে ঢুকে পরলাম। এরপর বুয়ার কলিং বেল এর শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙেছে।
ঘুম থেকে উঠার পর বড়ো ছেলেকে দেখতে না পেয়ে ওর বাবাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ও ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়েছে। খেলা শেষ করে স্টার কাবাবে নাস্তা করে একবারে বাসায় আসবে।
ছেলেকে কল দিয়ে বাসার জন্যও নাস্তা নিয়ে আসতে বললাম।
গতকাল বিকেলে আমার ভাসুর কল দিয়ে আমাদের নারায়নগঞ্জের বাড়িতে যেতে বলেছিলেন। সেখানে আমাদের ফ্ল্যাটে কাজ চলছে সেটা দেখার জন্য। আমার অবশ্য খুব একটা যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না দুটো কারনে।
এক, ছোট ছেলেটাকে বাসায় রেখে যেতে হবে আর দুই নাম্বার কারন হলো, আজকে ভাই আসবে সিঙ্গাপুর থেকে। ওর লাগেজ আনার জন্য আমাদের গাড়ি এয়ারপোর্টে যাওয়ার কথা। এয়ারপোর্টে টাইমলি পৌঁছাতে না পারলে ঝামেলা। ভাইয়ের ঢাকায় আসার কথা সন্ধা ছয়টায়। আমার হাসবেন্ড আর ছেলে দুজনেই বললো সমস্যা হবে না। বিকেল চাররটার মাঝে বের হয়ে যাবে ঢাকার উদ্দেশ্যে। আমি অবশ্য দুজনের কথায় খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারলাম না।
নারায়নগঞ্জ পৌঁছে দেখি ভাবি ভেজানো পিঠা বানিয়েছে। আমার বড়ো জা আমার দেখা সবচেয়ে ভালো রাঁধুনিদের একজন। সে রান্না করতে ও খাওয়াতে দুটোই খুব পছন্দ করে। অবশ্য শুধু রান্নাই না বিভিন্নরকম হাতের কাজেও খুবই পারদর্শী। একএথায় গুনী একজন মানুষ।
সবার সাথে দুপুরের খাবার শেষ করার পরে জমিয়ে আড্ডায় মেতে উঠলো সবাই।
আমি যে ভয় করেছিলাম সেটাই হলো।আমাদের বের হতে হতে প্রায় পৌনে পাঁচটা বেজে গেল। আমরা যতটা সম্ভব দ্রুত ঢাকায় আসার চেষ্টা করলাম।তবে ছুটির দিন হওয়ার কারনেই হয়তোবা জ্যাম কিছুটা কম পেলাম।
আমরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আসার পরে ভাই কল দিয়ে জানালো যে, ও পৌঁছে গেছে। আমরা ওকে জানালাম যে, আমরাও মিনিট বিশেকের মাঝেই এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাবো।
তবে ।
ওর ইমিগ্রেশন শেষ করে বের হতে খানিকটা সময় লেগে যাবে। আমরা এয়ারপোর্টে পৌঁছে বেশ কিছুক্ষন পার্কিং এ বসে রইলাম। আমাদের আগেই তে বললো ওদের ড্রাইভারও পৌঁছে গিয়েছিলো। ওদেরকে নিয়ে আমরা বাসায় আসলাম প্রায় সাড়ে নয়টার দিকে। আমার হাবি ওদেরকে আমাদের বাসায় আসতে বললো খাওয়ার জন্য।
গ্রিল আর পরোটা অর্ডার দিলাম ওদের জন্য বাসায় এসে। ওরা কিছুক্ষনের মাঝেই বাসায় চলে আসলো। গল্প আর খাওয়া শেষ করে ওরা বাসা থেকে বের হলো বারোটার দিকে। আর এভাবেই এই দিনটাও কেটে গেলো।
Camera | iPhone 14 |
---|---|
Photographer | @sayeedasultana |
Location | Dhaka,Bangladesh |
এখন বেশিরভাগই ঘড়ি উৎসব হয়ে থাকে পুরান ঢাকা ! আমাদের এইখানেও আগে সবাই শীতকালে ঘুড়ি উড়াইতো, আপনার পোস্টটিতে আপনি যখন বলছিলেন, সুতাতে মাঞ্জা দেওয়া ইত্যাদি-ইত্যাদি। তখন আমার পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল। ওই সময় আমরা সবাই সুতাই মাঞ্জা দিয়ে ঘুড়ি উড়াইতাম ঘুড়ি কাটাকাটি করার জন্য। একটা ঘুড়ি যদি কেটে যেত পাড়ার যত ছেলেরা ছিল সবাই এই ঘুড়ির পিছে ছুটতে থাকত। আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন ,আল্লাহ হাফেজ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে ঘুড়ি উড়ানোর এই স্মৃতিগুলো আমাদের অনেকর ছোটবেলার সাথেই জড়িয়ে আছে। যার কারনে একজন বললে বা লিখলে মিলে যায় অনেকের সাথেই।তবে নতুন প্রজন্ম এসব জিনিস জানেই না বলতে গেলে। ওরা ডুবে থাকে ডিভাইস এর ভেতরে। এটাই খারাপ লাগে।তবে সময় পাল্টাবে এটাই স্বাভাবিক।
আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন সবসময়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সকালবেলা ঠান্ডার পরিমাণটা বর্তমান সময়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে আসলে কুয়াশা যতটুকু রয়েছে তার চাইতে বাতাসের পরিমাণটা অনেক বেশি যেহেতু আপনার ভাই আসবে তাই আগে থেকেই সবকিছু ঠিক করে রেখেছেন এর মাঝে আবার আপনাদের ফ্ল্যাটের কাজ নারায়ণগঞ্জে চলতেছে সেখানে গিয়ে সেটাও দেখে এসেছেন ধন্যবাদ এত ব্যস্ততার মাঝেও আপনার একটা দিনের কার্যক্রম উপস্থাপন করার জন্য ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit