ওকে বাসায় আনার পরে শুধু বুকশেল্ফের উপরে থাকতো |
---|
সকাল থেকেই কয়েকবারই ভেবেছি যে ,লিখবো। কিন্তু লেখার মতো মনের অবস্থা ছিল না । এখন যে আছে এমনও না ,কিন্তু তারপর লিখতে বসলাম। সিম্বার (বিড়াল ছানা) কাছেই ছিলাম সারাক্ষন। শুধু যে আমি ই আছি এমন না। রাতের বেলাও পালা করে সারারাত জেগেছি আমরা। ও এতটাই অসুস্থ যে ওকে একা রাখার মতো অবস্থা না। প্রতিটা দিন যাচ্ছে আর আরো বেশি পরিমানে খারাপ হয়ে যাচ্ছে ওর অবস্থা।
গতকাল ২বার সিজার এট্যাক এসেছিলো ওর কিন্তু আজকে কিছু সময় পরপরই হচ্ছে। সকাল বেলা ভেটের কাছে নিয়ে স্যালাইনের সাথে ওর ওষুধ দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। রাতে আবারো নিয়ে যেতে হবে।
ওর শরীরে এক অজানা ভাইরাস আক্রমন করেছে। আজকে সকাল থেকে ওর ডান পাশটা অবশ হয়ে গেছে। লাংসেও পানি জমে গেছে। ভেটের কাছে নেয়ার পর সে জানিয়েছেন যে ,এই ভাইরাসে কোনো এন্টিবায়োটিক কাজ করতেছে না। গত দুইমাসে তারা মাত্র একটা বিড়ালকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন।
ওর মৃত্যুর ৫ দিন আগের ছবি |
---|
আমার সিম্বাও হতো বাঁচবে না। চোখের সামনে বাচ্চাটার এতো কষ্ট দেখতে হচ্ছে যা সহ্য করার মতো না। মাথাটা একদিকে বাঁকা হয়ে গেছে সাথে এক মিনিটের জন্যও শান্ত হতে পারতেছে না। মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছে।
আমার শাশুড়ি মায়ের লিভার ক্যান্সার হয়েছিলো। তাকে দেখেছি মৃত্যুর দিনতিনেক আগে এমন করতে। তার চোখের দৃষ্টি ছিল অনেকটা উদ্ভ্রান্তের মতো সাথে সারাক্ষন হাত পা আছরাছড়ি করতেন।
আমি বুঝতেছি আমার শুধু এসব লেখা উচিত না কিন্তু আমার ব্রেইন ওর বাইরে কোনোকিছুই চিন্তা করতে পারছে না। দিনতিনেক আগেও লাফিয়েছে সারা বাড়ি। এই সামান্য সময়ের ব্যাবধানে এতো খারাপ অবস্থা মেনে নিতে পারছি না। বাসার সবাই একধরণের বিষাদে ভুগতেছে।
ইফতার বানাতে হবে ,রাতের রান্না করতে হবে কিছুই করতে পারতেছি না। ছেলে বললো কিছু করতে হবে না। বাইরে থেকে কিনে আনলেই হবে আর সেহরির সময় শুধু ডিম্ ভাজা দিয়েই খাবো আমরা।
তারপরও রান্নাঘরে ঢুকে ডাল রান্না করলাম ও ডিম্ সেদ্ধ করে রাখলাম । বাচ্চাটা সকাল থেকে এক মিনিটের জন্যও ঘুমাতে পারে নাই। মাথাটা গতকাল থেকেই বাঁকা হয়ে গেছে একপাশে। সেই সাথে প্রচন্ড রকমের খিঁচুনি। এজন্যই হয়তো বিদেশে এমন হলে এনেস্থেসিয়া দিয়ে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলে কষ্টের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।
বাচ্চাটার মাথা একদিকে বাঁকা হয়ে গিয়েছিলো |
---|
আমার হাসবেন্ড ব্যাংক থেকে বাসায় ফেরার সময় ইফতার কিনে নিয়ে এসেছিলো। ইফতারির সময় আমাদের সবার দোয়া ছিল যেন আল্লাহ ওকে কষ্টের হাত থেকে রেহাই দিয়ে সুস্থ করে তুলে নাহয় যেন ওকে নিয়ে যায়। ইফতারি করার আগমুহূর্তের দোয়া নাকি কবুল হয়।
আজান দিলে আমি সবাই মাত্রই পানি মুখে দিয়েছি সাথে সাথে ওর শব্দ পেয়ে দৌড়ে ওর কাছে গেলাম। আমাদের চোখের সামনে ও চলে গেলো। তখন সময় সন্ধ্যা ৬:৫ মিনিট। হয়তো আমাদের সবার সম্মিলিত দোয়া আল্লাহ কবুল করেছেন। আমি আসলে আর কিছু লিখতে পারতেছি না।
কিছু ছবি হোয়াটস্যাপ থেকে নেয়া |
---|