বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জনের লড়াই ।

in hive-120823 •  20 days ago 

IMG_9113.jpeg

রাতের বেলা আমি আর আমার ছেলে বিড়ালের বাচচাকে বাসায় নিয়ে এসেছিলাম ঠিকই কিন্তু তাকে পোষ মানাতে গিয়ে আমাদের ঘাম ছুটে গেছে। কারন ও মারাত্মক রকমের আ্যগ্রেসিভ।কাছে গেলেই দাঁত -মুখ খিচিয়ে খ্যাশখ্যাশ শব্দ করে একই সঙ্গে আঁচড় ও কামড়াতে আসে।

এ নিয়ে আমার দুই ছেলে রীতিমতো গবেষণা শুরু করে দিয়েছে। গুগল মামা থাকার কারনে পৃথিবীতে সবকিছুই অনেক সহজ হয়ে গেছে। প্রথম কয়েকদিন ওদের সাথে দেখা হলেই নতুন নতুন তথ্য নিয়ে হাজির হতো।

ওদের কাছ থেকেই জানতে পারলাম যে, এই বিড়ালের এতো বেশি এগ্রেসিভ হবার কারন হলো এই জাতের বিড়াল আমাদের দেশ ও সমস্ত বিশ্বজুড়েই দেখা গেলেও ওদের পূর্ব পুরুষ আসলে ওয়াইল্ড ক্যাট।

IMG_9221.jpeg

এদের পূর্বপুরুষ হলো আ্যফ্রিকান ওয়াইল্ড, ইউরোপীয়ান ওয়াইল্ড ক্যাট ও এশিয়ান ওয়াইল্ড ক্যাট। আর এই তিন ধরনের বিড়ালের সাথে যোগ হয়েছে পোষা বিড়াল। এদের চেনার আর একটা সহজ উপায় হলো এদের মাথায় 'M' আকৃতির চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায় । এছাড়াও আরো কয়েক ধরনের চিহ্ন দেখা যায়। ট্যাবির মাঝে অরেঞ্জ ট্যাবি প্রাচীন মিশরীয়দের কাছে খুব সন্মানের ছিলো।

ফারাওদের সাথে সাথে প্রচুর বিড়ালের মমি পাওয়া গিয়েছে মিশরে।এর মাঝে এই ট্যাবি ক্যাটই বেশি ছিলো। এতো বেশি বিড়ালের মমি পাওয়া গিয়েছে যে, রাখার জায়গা না পেয়ে এগুলোকে সার হিসেবে ব্যবহার করেছে একসময় মিশর সরকার।

আমার বিড়ালটা অবশ্য অরেঞ্জ ট্যাবি না ও জিনজার ট্যাবি। কিন্তু পরে ওর মাকে খুঁজে পেয়েছি। ওর মা হলো অরেঞ্জ ট্যাবি। এই জিনজার ক্যাটগুলো খুব বেশি এগ্রেসিভ হয় অন্য ট্যাবিগুলোর তুলনায়।

IMG_9097.jpeg

ওয়াইল্ড ক্যাট শোনার পরে কিছুটা আশাহতই হয়েছিলাম পোষ মানবে না ভেবে। কয়েকটি দিন আমাদেরকে পাগল করে রেখেছিলো।সারাদিন চিৎকার করতো আর আমরা ওর পরিবার খুঁজে বের করার চেষ্টা করতাম। এরই মাঝে একদিন নিয়ে গেলাম ভেট এর কাছে।না খেয়ে খেয়ে দূর্বল হয়ে গিয়েছিলো খুুব।ভেট এর কাছে নেয়াটাও আরেকটা যুদ্ধের মতোই।

একটা বাস্কেটে ঢুকিয়ে আমার দুই ছেলে ও ভাইয়ের ছেলেদের নিয়ে ভেট কাছে গিয়েছিলাম। পুরোটা রাস্তা নতুন নতুন জিনিস দেখেই হয়তোবা চিৎকার করতে করতে গিয়েছে আর সেখানে পৌঁছেও চিৎকার করেছে এবং বাসায়ও এসেছে একইভাবে।

মূলত আমরা ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম ভ্যাকসিন দিতে ও ওর শরীরে থাকা ছোট ছোট পোকা মারার জন্য পেস্টিসাইড করার জন্য।

IMG_9209.jpeg

কিন্তু ওর বয়স কম হওয়ার জন্য কোনটাই করা সম্ভব হয় নাই।ওর বয়স ৩ মাস না হলে ওর শরীর নিতে পারবে না। তবে ঠান্ডার জন্য ঔষুধ ও ভিটামিন দিয়েছিলো সাথে।

এগুলো নিয়ে বাসার গ্যারেজে ঢুকে আমরা হতভম্ব হয়ে গেলাম কারন দেখলাম ওরই মতো দেখতে আরেকটা বিড়াল ছানা যেন কোথায় থেকে দৌড়ে আসলো ওর চিৎকার শুনে। অথচ কদিন ধরে ওর পরিবার খুঁজে বেরিয়েছি আমরা।

ছেলেদের বললাম ওকে ছেড়ে দিয়ে আসতে। যদিও জানতাম ওরা রাজী হবে না।আমি যা ভেবেছিলাম সেটাই হলো।ওরা জানালো যে, ওর ওষুধ খাওয়া শেষ হলে দিয়ে আসবে।

এর মাঝে ও নিজেও আস্তে আস্তে কিছুটা পোষ মানা শুরু করে দিলো।আমার হাসবেন্ড এর খুব ইচ্ছে ছিল ওর ভাইকেই ওর সঙ্গী হিসেবে নিয়ে আসতে। আমি অবশ্য এতে একদমই রাজি ছিলাম না।কিন্তু সে দারোয়ানদের বলে রেখেছিলো ওর ভাইকে যেন ধরে ওপরে নিয়ে আসে।

কিন্তু দিন দুয়েক পরে আমার হাবি খবর নিয়ে আসলো, যে ওর ভাইকে আর দেখা যায় নাই।হয়তো কেউ নিয়ে গিয়েছে।
এরপর আস্তে আস্তে ও এখন প্রায় পুরোপুরিই পোষ মেনে গিয়েছে।যদিও অন্য বিড়ালের তুলনায় অনেক বেশি এগ্রেসিভ।

তারপরও বলা যায় এখন ও আমাদেরকে বিশ্বাস করে আর সাথে হয়তো-বা কিছুটা ভালোওবেসে ফেলেছে ।এখন ও আমাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে উঠেছে।



Thank You So Much For Reading My Blog

3KyYabPY3g77mhATvBAAUF5zNR1CtqkeWauN9MRyWDCSJJeN9WZVXxTFs1osy6uhZisoaiFyWVDNasfkuL6TCt1ktBsbpzwrjDQjD5Whfk...ZaM9uuYHaeW4UUPGGgs2cmDJiTjepqhtQSaepYYFHTcDDjyKwJFNySU1pqwEMpSESQC3Gn7hqBvLRjSYsY6BdDKRgFVbQR2Yp7VjXiG9Wvs5d8nxs9LuoDTwMx.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

পোস্টটি পড়ে মনে হলো, একটি প্রাণীর ভালোবাসা ও বিশ্বাস অর্জন কতটা ধৈর্য ও সহানুভূতির বিষয়। আল্লাহর সৃষ্টি প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই এক অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর আপনারা যে ধৈর্য ও মমতা দিয়ে এই বিড়ালটিকে আপন করে নিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। পশুদের প্রতি দয়া দেখানো ইসলামের অন্যতম শিক্ষা, আর আপনার গল্পে সেটারই সুন্দর প্রতিফলন দেখা গেল। আল্লাহ আপনাদের সহানুভূতি ও দয়ার বদলা দান করুন।