শৈশবের রোজার মধুর স্মৃতি

in hive-120823 •  9 months ago 

Yellow and Brown Illustration Kid Channel Youtube Banner.png
edited by canva

দেখতে দেখতে জীবনের প্রায় ২৫টি বছর পার করতে চলেছি। পিছনের সময়গুলোর দিকে তাকালেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয় নিজের মাঝেই। মনে পড়ে কাটিয়ে আসা সোনালী অতিত, যেখানে সুখ,দু:খ হাসি তামাশা সব কিছু ছিল ভরপুর। মানুষ খুবই অদ্ভুত, বয়স যখন কম থাকে তখন স্বপ্ন দেখে বড় হবার, অনেক কিছু করবার। অথচ সময়ের পরিক্রমায় যখন বড় হয়ে ওঠে, পৃথিবীর রুক্ষ আর পাষাণ রুপ দেখে তখন পুণরায় আফসোস করতে থাকে, ফিরে যেতে চায় পুনরায় সে সময়টাতে, যখন তার নিজস্ব পৃথিবীটা ছিল শুধুমাত্র তার নিজ পরিবার আর আশেপাশের অল্প একটু পরিধি নিয়ে।

বায়তুল_মোকাররম_এ_নামাজ_(৩).jpg
source

আমার ব্যাপারটাও ঠিক তেমন, যখনই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে তখনই আবেগপ্রবন হয়ে পরি। অনেক মজার ঘটনায় আছে শৈশবের, তবে আজ বলব রমজানের সময়গুলো নিয়ে।
আমি যখন স্কুলে পরি তখন থেকেই রোজা রাখা শুরু করি। আমার স্পষ্ট মনে আছে, একদিন শুক্রবারে হাফ প্যান্ট পরে খেলছিলাম, আমার বন্ধুরা জুম্মা পড়তে যাচ্ছিল দল বেধে। আমাকে পথে দেখে তাদের সাথে যাবার অনুরোধ করলে আমি হাফ প্যান্ট পরেই উৎফুল্ল মনে চলে যাই। তখন আমি জানতাম না মসজিদে গেলে হাফ প্যান্ট পরে যাওয়া লাগে। তখন দেখলাম সবাই রোজা রাখছে, আমারও মন চাইলো রোজা রাখার জন্য। বাসা থেকে হাসাহাসি করছিল যখন বলেছিলাম আমিও রোজা রাখতে চাই। সেহরীতে প্রথমে ডাক দেয়নি পরিবারের লোক, তাতে পরের দিন ভীষণ রাগান্বিত হইছিলাম, তারা কেন আমায় ডাক দিল নাহ তা ভেবে। আমার আগ্রহ দেখে পরবর্তী দিন অবশ্য ডাক দিয়েছিল, আমিও পরম আগ্রহে সেহরী খাই রোজার উদ্দেশ্যে। তবে দুপুর হবার আগেই আমার অবস্থা হয় নাজুক, কি করব বুঝে উঠছিলাম নাহ। মা বলল আজ দুপুরে খেয়ে নে তাহলে অর্ধেক রোজা হবে, আবার আগামীকাল অর্ধেক করবি এভাবে রোজা রাললেও হবে। আমি আর কি করব? পেটের মধ্যে তখন ছুচো দেীড় ঝাপ দিচ্ছিল, সরল মনে খেয়ে নিলাম। 😂
এছাড়াও ছোটবেলা রোজা নিয়ে আরও একটা গুঞ্জন ছিল, সেটা হচ্ছে ১ম রোজা, মধ্যের রোজা আর শেষ রোজা রাখলেই নাকি সব রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়, সে বিশ্বাসেও বিশ্বাসী ছিলাম কয়েকবছর।

রোজার সময় দিনের সময়টা একটু কষ্টে কাটলেও সন্ধ্যা পরবর্তী সময় ছিল সবচেয়ে উপভোগের। মজাদার ইফতারি করে অপেক্ষা করতাম তারাবীহর জন্য। তারাবীহ মানেই বন্ধু বান্ধবের সাথে বাদড়ামী করা। মসজিদের বারান্দায় সবাই নামাজের সময় অনেক মজা করতাম, কেউ নামাজে থাকাকালীন অবস্থায় প্যান্ট খুলে দেয়া, পানি ছিটা দেয়া, পিঠে কিল ঘুষির মত ঘটনাও ঘটত প্রচুর। মাঝে মাঝে অবশ্য বয়োজেষ্ঠ্য অনেকে শাসন ও করত, তখন সবাই চুপ হয়ে ভদ্রভাবে নামাজ পড়া শুরু করে দিত। ২০ রোজা পার হতেই হুজুক পরে যেত ইদ কেনাকাটা করার, বন্ধুদের মাঝে আলাপচারিতা হত কে কি কেনাকাটা করেছে, কবে করবে এইসব বিষয়ে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে কেউ ই তার ইদের পোষাক কাউকে ইদের আগে কোনভাবেই দেখতে দিতে চাইত নাহ, সবার ভাষ্য ছিল ইদের পোষাক আগে দেখালে নাকি ইদ নষ্ট হয়ে যাবে।

Iftar_2.jpg
source

এছাড়াও মাঝে মাঝেই ফজর নামাজ পড়ে আমরা হাটতে যেতাম, কিছুদূরে বাজারে একটা বিশাল বেলি ফুলের গাছ ছিল। সকাল বেলা গেলে ফুল কুড়ানো যেত, অনেকে মিলে হেটে চলে যেতাম, ফুল কুড়িয়ে আমার ফিরে আসতাম।
তখন হাতে ছিল না স্মার্ট ফোন, না ছিল ডিশ। রাত ১০টার মাঝে যেহেতু ঘুমিয়ে যেতাম তাই সকালে এতটা বেশি ‍ঘুমেরও প্রয়োজন হত নাহ। এখন তো ইন্টারনেট আর ডিভাইসের নেশায় বিভোর আমরা , রাতের ঘুম যেন অমাবস্যার চাঁদ ।
সত্যিই দুর্দান্ত ছিল শৈশবে কাটানো দিনগুলি, বেশ ইচ্ছে করে সোনালী সময়গুলো পুনরায় ফিরে পেত।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

রোজার সময়ের শৈশবের স্মৃতি অনেক বেশি সুন্দর। কেন না ওই সময়টা আমরা খুব সুন্দর ভাবেই পার করেছি। কত আনন্দ করেছি সবাই মিলে বসে গল্প করেছি। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা মোবাইল এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে, নিজেদের সময়টা কিভাবে পার করে ফেলছি। নিজেরা বুঝতেও পারছি না। ধন্যবাদ শৈশবে রোজা রাখার স্মৃতি নিয়ে এত সুন্দর একটা বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। ভালো থাকবেন।

শৈশবে রমজান বলেন আর আমাদের পূজো বলেন সেই সময় গুলো আমাদের অনেক আনন্দের ছিলো তার পাশাপাশি সেই সময় গুলাতে আমারা নিজে থেকে অনেক উৎসাহিত পেতাম ৷

ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷

এই পোস্টে আপনি শৈশবের রোজার স্মৃতিচারণা করেছেন। বর্তমানে মোবাইল ও ইন্টারনেটের যুগে আগের মত জীবন যাপন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আধুনিকতার নেশায় আমরা সবাই মগ্ন হয়ে গিয়েছি। চাইলেও এই মোহ মায়ায় অন্তর্জাল ভেদ করে আসা সম্ভব না।