পরনির্ভরশীলতা আমাদের বন্ধনে অবদ্ধের পাশাপাশি, কখনো কখনো স্বপ্ন দেখা ভুলিয়ে দেয়।

in hive-120823 •  last year  (edited)
20230827_235539_0000.png

আজকে আমার লেখার শিরোনাম দেখে হয়তো অনেকে আহত হবেন, অনেকে সমালোচনা করবেন আবার একাংশ বলবেন, মোটেই নয়।

ইহজগতে আমরা সকলেই প্রকৃতির সাথে কোনো না কোনো ভাবে আবদ্ধ, কারণ আমরা একে অপরের পরিপূরক।

একদম সঠিক, এরকমটা যারা ভাবছেন। আসলে প্রকৃতি মানুষের মত করে প্রতিবাদ করতে জানে না;
তাই আমরা তাদেরকে আমাদের মত করে পরিচালনা করি, আর সহ্যের সীমা অতিক্রম হয়ে গেলে আসে প্রাকৃতিক দূর্যোগ।

পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্পর্কেও তার প্রভাব দেখা যায়।

অনেকের বুঝতে হয়তো অসুবিধা হচ্ছে, কিছু উদাহরণ দ্বারা হয়তো,
আমার শিরোনামের যথার্থতা বুঝতে পারবেন।

জানিনা আজ লেখা শেষ করতে পারবো কিনা! শরীর আর মন দুটোই বেশ ক্লান্ত;
সৌজন্যতা বজায় রাখার কারণে অনেক সময় ভালো থাকার ভান করি।
তবে প্রকৃত অর্থে আমাকে, শারিরীক, মানসিক এবং আর্থিক সংঘর্ষের সাথে একাই লড়াই করতে হয়।

আর এই লড়াইটা করতে গিয়ে শুরুতে বেশ কিছু পরিচিত এবং অপরিচিত মানুষের উপরে বিশ্বাস আর আস্থা রেখে, পরিবর্তে প্রতারণা ছাড়া কিছুই পায়নি, আর তাই শূন্যতা ব্যাতি আজও বিশেষ কিছুই অবশিষ্ট নেই!

আজকে কেনো পরনির্ভরশীলতা নিয়ে কথা বলছি, কারণ এই সভ্য সমাজ, আধুনিক প্রযুক্তির সময় দাড়িয়ে, সর্বশিক্ষা অভিযান চালিয়ে, মানসিকতা কি আমাদের আদেও উন্নত করতে পেরেছি?

এখনও অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারে কি রান্না হবে থেকে শুরু করে, যেকোনো সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার অনেকেই পান না।

পড়াশুনার প্রয়োজনীয়তা মেয়েদের ক্ষেত্রে আজও সীমাবদ্ধ!

এমনকি আমি দেখেছি, আমরা যাদের বিশ্বাস করে মনের কথা ভাগ করে নিয়েছি, তারাই সেগুলো নিয়ে পরবর্তীতে আমাদের দোষী সাব্যস্ত করেছে নিজেরা ভালোমানুষ সেজে!

ভালোবাসার কথা যদি বলি, তাহলে আমি সব সম্পর্ক হারিয়ে বুঝেছি, সেই সম্পর্কগুলোর পরিপূরক আর কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়;
বরঞ্চ একটু বিশ্বাস আর সাহারা পাবার আশায় যখনই ছুটে গেছি;
বিনিময়, লেনদেনের প্রস্তাব ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় নি!

যতক্ষন দিতে পারবেন আপনি ভালো, আর এই দেওয়া মানে আমি আর্থিক সহায়তার কথা বলছি।
তবে, যেদিন থেকে আপনার আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন পড়বে, তখন নিজের অর্থ ফেরত তো দূরের কথা, ব্যবহারের তারতম্য দেখার মত হয়!

একজন নারী হয়ে আমার সকল নারীর কাছে আবেদন, ভালোবাসুন, বিশ্বাস করুন কিন্তু সবটা উজার করে নয়।
খেয়াল রাখুন কিন্তু নিজের অযত্ন করে নয়, সাহায্য করুন কিন্তু নিজে কপর্দক শূন্য হয়ে নয়!

সম্পর্ক গড়লে তাতে কম বেশি চাহিদা থাকবেই, কারণ আমরা তাদের কাছ থেকেই আশাকরি যাদের নিজের মনে করি, বিশ্বাস করি এবং যাদের দেখানো পথে চোখ বন্ধ করে হাঁটি।

আমি মানসিকভাবে বড়ো ক্লান্ত, আর ঠিক সেই কারণেই সুযোগ পেলেই হয়তো আবার ফিরে যাবো শিলিগুড়িতে।

আচ্ছা, যারা নিজের সুবিধা, নিজের ইচ্ছে, নিজের জীবনের সমস্ত আনন্দ অব্যাহত রেখে অন্যদের ক্ষেত্রে নিয়মের দায়রা বেঁধে দেন, আদেও কি সেটা নৈতিক?

  • বিশ্বাস, আত্মত্যাগ, সহযোগিতা, সবটাই কেনো নারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য?

  • কেবল অর্থ উপার্জন করলেই কি রাজা হয়ে যাওয়া যায়?

  • অর্থ থাকলেই কি পদদলিত করা যায়, অন্যের ইচ্ছে, শখ, চাওয়া পাওয়াকে?

সকলেই এক্, একথা কখনোই বলবো না, তবে সমাজ কি ব্যাতিক্রম দিয়ে চলে?

যে কাজটা অন্যের বেলায় সমাধা করার আশা রাখি;
যে, সেটা সে পালন করবে সঠিকভাবে!
সেটা নিজের ক্ষেত্রে কেনো পালিত হয় না?

কেনো একটা মেয়ে সুশিক্ষিত হয়েও, নিজের লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করলেই, আজও তাকে ঘরের কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে আটকে দেওয়া হয়? তার জায়গা কোনটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়!

কেনো ভালোলাগা, না লাগার অনুভূতি তাদের বলা তো দূরের কথা, ভাবার অনুমতিও নেই?

কেনো আজও, একটি মেয়ের স্বামী মারা গেলে, সে নতুন করে বাঁচতে চাইলে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় তাকে?

তাহলে, কিসের ভালোবাসা? কিসের উন্নত সমাজ? আর কি দাম সেই শিক্ষার?

আমি মনে করি আজকের এই উন্নত সমাজব্যবস্থায় দাড়িয়েও সমানাধিকার কথা বলা সহজ কিন্তু পাওয়া একটা বড়ো ব্যাপার!
কিছু ক্ষেত্রে আমরা মুক ও বধির হয়ে অন্যেকে আমাদের উপর নানা ভাবে অত্যাচারের সুযোগ নিজেরাই করে দিয়ে থাকি।

কারণ, আজকের এই উন্নত সমাজব্যবস্থায় মেয়েদের লেখাপড়া শেখালেও, তাদেরকে সেই শিক্ষা ব্যবহার করতে বলা হয় সন্তানকে পড়াশুনা শেখানোর জন্য।

এই পৃথিবীতে যদি এখন বাক স্বাধীনতা, সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা এবং সর্বোপরি যদি নিজের যোগ্যতা প্রমাণের স্বাধীনতা না পাওয়া যায়, এবং শিক্ষিত হয়েও পরনির্ভরশীল হয়েই জীবন কাটিয়ে দিয়ে হয়, সেটা কতখানি সমীচীন!

আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা একে অপরকে প্রয়োজনের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি, আন্তরিকতা তো তখন প্রমাণিত হয় যখন আমরা সমান সুযোগ এবং সন্মান পেয়ে থাকি সম্পর্ক থেকে।

কিন্তু, সেটাও যদি না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে, যদি কেউ একতরফা নিজের স্বপ্ন পূরণের লড়াই করতে বদ্ধপরিকর হন;
নিজের কথা ভেবে, নিজের জন্য অর্জিত সম্মানের কথা ভেবে। সেক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ বাঁধার সৃষ্টি করবে বটে, তবে আমি মনে করি;
নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা আত্মকেন্দ্রিকতা নয়।
বরঞ্চ, অনেকক্ষেত্রেই সেটা অনেক মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, আমরা কোনো অংশে কম নই।

জীবন আমাকে শিখিয়েছে, পরিস্থিতি যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে, কাজেই নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। এটা ভেবে, কেউ আমার সাথে আসেনি, আর কেউ সঙ্গে যাবে না।

যারা জীবনে যুক্ত হয়েছে, তারা তাদের মত করেই পাশে থাকবে, আমাদের বুঝবে এই আশা করাটা একেবারেই বোকামি।

আজকের লেখাটা আমি, আমার অভিজ্ঞতা থেকে ভাগ করে নিলাম, সহমতের আশা নিয়ে নয়। ভালো থাকবেন সবাই, আর নিজের যোগ্যতা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করুন, লতানো গাছ নয়, বৃক্ষ রূপে স্থাপিত করুন নিজেকে।

I9Ws6mn5yoT8JYcTf1.gif
3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeTntZEMjmNE2ojS3wJkRgH4FAk5wzUJTnRwSJu27LuNnR3DZNbpLAeQCyaNbnKVWTpGhovHtq.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

বাস্তবতার মূলে গিয়ে নারীদের অবহেলিত জীবনের কিছুটা অংশ,,, আজকে আপনি আমাদের সাথে তুলে ধরেছেন। আসলে বর্তমান সমাজে এখনো একজন নারী যখন পর্যাপ্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে। একটা পরিবারের গৃহবধূ হয়ে যায়। তখনই তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। নারীরা শুধু রান্না করতে জানে।

যখনই সেই মেয়েটা নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি খুঁজতে বের হওয়ার চেষ্টা করে। তখনই তাকে সংসারের বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে আটকে দেয়া হয়। তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়,,,, পরিবার থেকে বের হওয়াটা মোটেও ঠিক নয়।

আর যে মেয়ের স্বামী মারা গেছে,, তাকে কতটা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যভাবে কথা বলা হয়। সেটা হয়তোবা কল্পনার বাহিরে। মাঝে মাঝে যখন একটা মেয়ের স্বামী মারা যাওয়ার পরে,,, তার সন্তানদেরকে নিয়ে নতুন ভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। তখন সমাজের প্রত্যেকটা মানুষ চেষ্টা করে,,,, সেই মেয়েটাকে কিভাবে অবহেলিত এবং সেই মেয়েটাকে কিভাবে,,, সমাজের কাছে মাথা নত করা যায়।

আমি আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি না। কিন্তু আপনি আজকে আমাদের সমাজের বাস্তব কিছু কথা তুলে ধরেছেন। আপনি ঠিকই বলেছেন,,, কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে। নিজেই একটা বৃক্ষের মতো নিজেকে তৈরি করে নেয়াটা খুব প্রয়োজন। কারণ আমরা আমাদের ভালোলাগাটা কারো কাছে শেয়ার করা তো দূরের কথা,,,, কখনো চিন্তাও করি না।

আপনি আপনার অভিজ্ঞতাটা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আসলে জীবনে অনেক কিছুই ঘটে কিছু ভালোবাসা পূর্ণতা পায়। আর যেই ভালবাসা একবার হারিয়ে যায়। সেই ভালোবাসা ফিরে পাওয়াটা অসম্ভব। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে,,, বাস্তবতা এত সুন্দর ভাবে তুলে ধরার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। ভালো থাকবেন।

দিদি আমি খুব আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম আপনার পোস্ট টি পড়ে। মনে হচ্ছে আমার কথা গুলো আপনি বলছেন। আমার মনের কথা আপনি জানলেন কীভাবে?
আসলে দিদি আমাদের প্রত্যেকটা মেয়ের জীবন গল্পের ভিতরটা একইরকম।
আমি যখন প্রথম চাকরি পাই ছেলে মেয়ে ছোট ওদের দেখবে কে? সেই কাজ আর করা হলোনা।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থা পাল্টাতে হলে প্রথম আমাদের পাল্টাতে হবে।
ভালো থাকবেন, নিজের যত্ন নিবেন দিদি।

আমাদের সমাজ এখনো কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসে জর্জরিত। শিক্ষার হার বেড়ে থাকলেও প্রকৃতি শিক্ষিত মানুষ খুব কমই দেখা যায়। মানুষ কাউকে সত পরামর্শ বা উপদেশ না দিতে পারলেও সমলোচনা করতে পিছুপা হয়না।

দিদি আমার মনে হচ্ছে ,আমার মনের কথাগুলো আপনার লেখায় গুছিয়ে লিখেছেন। সত্যিই অসাধারণ লিখেছেন। মনে হচ্ছে আমার মনের না বলা কথাগুলো আপনি আপনার লেখায় প্রকাশ করেছেন । দিদি আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।