উদাসীনতা!Apathy!

in hive-120823 •  11 days ago 
1000048070.png

আজকের শীর্ষক নির্বাচিত বেশ কিছু মানুষের সংস্পর্শে এসে, তাদের নিরীক্ষণের ভিত্তিতে!

পাশাপাশি, কিছুদিন আগেই সুন্দরবন ঘুরতে গিয়ে সেখানের মানুষের মুখে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সংঘর্ষের কথা জানতে পেরে।

উদাসীনতা!
হ্যাঁ! সংঘর্ষের পরিবর্তে যারা অজুহাতকে পাথেয় করতে পছন্দ করেন;
নানান কারণ দেখিয়ে, দায়িত্বের দায় এড়িয়ে যায়, তাদেরকে আমি এই তালিকাভুক্ত করি।

দেখুন অনেকেই হয়তো দ্বিমত পোষণ করবেন, কিন্তু তার আগে কিছু প্রশ্ন রাখছি!

  • আচ্ছা! মন খারাপ করে কবে সাত দিন একটানা না খেয়ে ছিলেন? জল পর্যন্ত মুখে তোলেন নি?

  • যাক! এবার আরেকটি প্রশ্ন, মন খারাপ করে হাতের ফোন দেখেননি সারাদিন এ একবারের জন্য? এরকম কতদিন করেছেন একটানা?

  • উদাসীন মন নিয়ে রাতের পর রাত জেগে কাটিয়ে দিয়েছেন সর্বোচ্চ কতদিন?

  • কতদিন স্নান ছাড়া অতিবাহিত করেছেন মন খারাপ ছিল বলে?

এরকম বহু প্রশ্ন কখনো নিজেকে করে দেখবেন, তাহলে বুঝবেন উদাসীনতা একটা ব্যাধি!
যেটা খানিক অজুহাতে সামিল।

যদি আমরা উপরিউক্ত বিষয়গুলোকে দৈনন্দিন জীবনে অব্যাহত রাখতে সমর্থ, তাহলে আমার মনে হয়, বাকি বিষয়গুলো কেবলমাত্র আমাদের ইচ্ছের তালিকাভুক্ত নয় বলে আমরা দায় এড়াতে পারি।

1000046732.jpg
উদাসীনতাকে পদদলিত করে অদম্য লড়াইয়ের একটি উদাহরণ! ইচ্ছে থাকলে পাথরেও ফুল ফোটে, তারা মালির ভরসা করে না!

এখন এই উদাসীন ব্যক্তিরা দু'প্রকারের হয়ে থাকেন!

প্রথম:-
যারা সৃষ্টিশীলতায় নিমজ্জিত রাখেন নিজেদের সর্বক্ষণ! তারা, বিলাসিতা সহ আনুষাঙ্গিক বিষয় নিয়ে খানিক উদাসীন হয়ে থাকেন।
এরমধ্যে পড়েন গবেষক, অনেক লেখক, কবি, এমনকি ছায়াছবি নির্দেশক পর্যন্ত।

এরকম একটি বাস্তব ঘটনা ভারতীয় ছায়াছবির অন্যতম নায়ক তথা প্রযোজক এবং পরিচালক আমির খান বলেছিলেন একটি সাক্ষাৎকারে।

তিনি বলেছিলেন, আমি নিজের জগতে বেশিরভাগ সময় কাটাই, এবং আশেপাশে কি চলছে, এমনকি পরিবারের মানুষ পাশে কি বলছে, সেগুলো অনেক সময় কানে যায় না!

এমনকি, তার উদাসীনতা স্বভাব ব্যক্ত করতে গিয়ে খানিক চোখের জল নিয়ে জানালেন, কবে আমার ছেলে জুনেদ বড় হয়ে গেল, আমি টের পাইনি, ওই ৩০ বছর আমি ভীষণ মিস করি!

দুটি বিবাহিত জীবন ঠিক এই কারণে হয়তো আমার টেকে নি!

এই ধরনের মানুষগুলোর জীবনে স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়িত করবার একটা অদম্য জেদ কাজ করে বলে, এই ধরনের সৃজনশীল মানুষ বেশ উদাসীনতার মধ্যে সময় ব্যতীত করেন।

দ্বিতীয় :-
যারা জানেন তাদের মাথার উপরে সুরক্ষিত ছত্রছায়া আছে, আর শুধু তাই নয়, তাদের দৈনন্দিন ইচ্ছে পূরণের রসদ, তথা ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত!

এই ধরনের মানুষের আধিক্য সমাজে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ তারা চিন্তামুক্ত জীবন অতিবাহিত করেন এই ভেবে, তাদের কাজ না করলেও বাকি জীবন ঠিকই উৎরে যাবে!

মানে উদাসীন, লক্ষ্য বিহীন এক প্রকার নির্জীব পদার্থ ছাড়া এরা আমার নজরে বিশেষ কিছু নয়!

ভেবে দেখুন শারীরিক বিকলাঙ্গতা নিয়ে যারা পাহাড় চড়েছেন!
যারা একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েও অলিম্পিকে পদক জিতেছেন!

এই বিষয়টি আমার মনে কাজ করেছিল, যখন আমি দেখেছিলাম, খটখটে শুকনো মাটিতে একটি ফুল ফুটে আছে!

1000046727.jpg

ফুলটির দিকে তাকিয়ে আমার মনে হয়েছিল, এই উদ্ভিদ যে জানে তাকে লড়াই করে বড় হতে হবে, তার উপরে উদাসীনতা ভর করতে পারে না!

পরিস্থিতির দোহাই মানুষের সবচাইতে সহজ দোহাই, যেটা কিছুজন শুধুমাত্র দায় এড়াতে ব্যবহার করে থাকেন!

আর, যারা লড়াই করছেন অহর্নিশি, তারা জানেন এই লড়াইতে জয়লাভ করুক বা নাই করুক, একটা আত্মতৃপ্তি নিয়ে সেই মানুষগুলোর একটা দিনের অবসান ঘটে।

1000046736.jpg
ভেবে দেখুন যদি সূর্য্য কোনোদিন উদাসীন হয়ে, উদিত হতে অস্বীকার করে? পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকবে? প্রাণীর অস্তিত্ব থাকবে?

যদি সৃষ্টির তাগিদে কেউ উদাসীন হয়, সেটার পিছনে থাকে পৃথিবীর বুকে রেখে যাওয়া কিছু উদাহরণ!

তবে, দ্বিতীয় শ্রেণীর পাতে বোধহয় আফসোস ছাড়া কিছুই পড়ে থাকে না!
জানিনা, কারণ আমি এই দ্বিতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত নই!

মন্তব্যের মাধ্যমে ভেবে জানাবেন, আপনি কোন উদাসীনতার অন্তর্ভুক্ত?

1000010907.gif

1000010906.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

প্রথমে আপনাকে বলব আজকের বিষয়বস্তুর হেডলাইন ছিল উদাসীনতা।
আপনার কথাটি আমি সমর্থন করি আপনার এ কথাটি লজিক আছে।
উদাসীনতা একটা ব্যাধি!
যেটা খানিক অজুহাতে সামিল

আপনে উদাসীনকে দুইভাবে বিভক্ত করেছেন!প্রথম; যারা সৃষ্টিশীলতায় নিমজ্জিত রাখেন নিজেদের সর্বক্ষণ!

দ্বিতীয়ত ; যারা জানেন তাদের মাথার উপরে সুরক্ষিত ছত্রছায়া আছে, আর শুধু তাই নয়, তাদের দৈনন্দিন ইচ্ছে পূরণের রসদ, তথা ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত!

আপনি এত সুন্দর ভাবে উদাসীনতা নিয়ে মানুষের জীবনের সাথে মিল রেখে বাস্তব উদাহরণ দিয়ে আমাদেরকে বুঝিয়েছেন। তা অতুলনীয় যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

আপনার সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আমি অনুভব করতে পারলাম! আমি হয়তোবা দ্বিতীয় উদাসীনতা তালিকাভুক্ত একজন ব্যক্তি, যাই হোক নিজেকে সব সময় গোছানোর চেষ্টা আছি এবং নিজের চিন্তাভাবনাকে বা স্বপ্নগুলোকে আরো দৃঢ় করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছি। আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন এই দ্বিতীয় উদাসীনতা থেকে বের হয়ে আসতে পারি, এবং নিজেকে বদলাতে পারি।

আমি একটি কথা সব সময় বিশ্বাস করি।
মানুষ মরে গেলে পচে যায় আর বেঁচে থাকলে বদলায়। এত সুন্দর একটি বিষয়বস্তু নিয়ে আজকে আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। এর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আপনার জন্য সব সময় শুভকামনা রইল দিদি।

মাঝেমধ্যে অন্যের খুঁত ধরবার আগে, সমালোচনার পূর্বে যদি আমরা আমাদের উন্নতির দিকে সচেতন হই, তাহলে এরকম অনেক কিছু খুঁজে পাবো, যে বিষয়গুলো নিজেদের উন্নত করতে সহায়ক।
দেখুন যেমন আপনি লেখাটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন, আপনি দ্বিতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত!

এখন বিষয় হল, আপনি এটি উপলব্ধি করবার পরে, আপনি নিজেকে কীভাবে আগামীতে চলবেন!

উদাসীনতা এমন একটা ঘোর যেটা সময়ের চপেটাঘাত পড়লে এক মুহূর্তে উবে যায়।

ধন্যবাদ দিদি আপনাকে, এত সুন্দর একটি পরামর্শ দেওয়ার জন্য। আমি অবশ্যই এইসব বিষয়গুলো মাথায় রেখে সামনের দিকে আগাবো।

IMG_20250104_205140_662.jpg

Thank you so much @nishadi89 mam 💕

You are wwelcome dear

Loading...

আপনার এই পোস্টটি খুবই শক্তিশালী এবং ভাবনাপ্রসূত। উদাসীনতা মানুষের জীবনকে কীভাবে অচল করে ফেলতে পারে, তা খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। প্রথম শ্রেণীর সৃজনশীল মানুষদের উদাসীনতা যেন তাদের লক্ষ্যের প্রতি অবিচলিত মনোভাবের প্রতিফলন, যা কখনও কখনও সম্পর্কের ক্ষতি হলেও তাদের স্বপ্ন পূরণের পথ প্রশস্ত করে। দ্বিতীয় শ্রেণীর উদাসীনতার তীব্র সমালোচনা করাও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এরা নিজেদের চারপাশের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আপনি সুন্দরভাবে উদাহরণ দিয়েই বোঝাতে চেয়েছেন যে, সৃষ্টির তাগিদে, বা জীবনের উদ্দেশ্যে যদি আমরা উদাসীন হই, তবে আমরা কেবল বেঁচে থাকার প্রক্রিয়াকে এক ধরনের অন্ধকারে ফেলে রাখি।

যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের মধ্যে লড়াই করার শক্তি থাকে, ততক্ষণ তাকে উদাসীনতা হার মানাতে পারে না। এই পোস্টে শেয়ার করা বিভিন্ন উদাহরণ, বিশেষত ফুলের মত জীবনধারণ, একদিকে যেমন অনুপ্রেরণা দেয়, অন্যদিকে আমাদের উদাসীনতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের তাগিদও বাড়ায়।

দিদি আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি বিষয় আমাদের মাঝে আলোচনা করার জন্য।

আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়ে নিজের উপলব্ধি মন্তব্যের মাধ্যমে উপস্থাপন করবার জন্য।
যদি আমরা নিজেদের উন্নত করতে দৈনন্দিন জীবনে বিষয়গুলি প্রয়োগ করতে পারি চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিকেষ না করে, তবেই বোধহয় নিজেদের উন্নত করা সম্ভব।

Loading...

আমার মনে হয় আমাদের অজুহাতে মোটেও ঠিক না। আমরা যদি আমাদের ইচ্ছা শক্তিকে জাগিয়ে তুলি। তাহলে কিন্তু আমরা যে কোন কাজ খুব সহজেই করতে পারি। আমাদের মন খারাপ হলে আমরা কখনোই উপরোক্ত প্রশ্ন আপনি করেছেন। তার উত্তর আমার কাছে নেই কারন আমি কখনোই মন খারাপ করে হয়তোবা অনেক দিন খাবার খাইনি। অনেকদিন বললে ভুল হবে দুই দিন বা তিন দিন কিন্তু মোবাইল দেখা থেকে বিরত থাকেনি কখনো রাত জাগিনি।

আমাদের জীবনটাকে আমরা যদি একটু অন্যরকম ভাবে কাটানোর চেষ্টা করি, সেটা সম্ভব আর কিছুটা সময় হলে ও নিজেকে দেয়া উচিত। কারণ আমরা এত বেশি অজুহাত দেয়া শুরু করি যেটা দেয়া মোটেও ঠিক না।

একজন মানুষ যে শারীরিক বিকলাঙ্গ সে কিন্তু পাহাড়ে উঠেছে আর অথচ আমি বা আমার আশেপাশে যারা রয়েছেন। তারা সবকিছু বুঝি আল্লাহ তায়ালা মেধা দিয়েছে বুদ্ধি দিয়েছে। হাত পা দিয়েছে তারপরেও আমাদের অজুহাতের শেষ নেই। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন নিজের কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করে নেয়াটাই উত্তম। অসংখ্য ধন্যবাদ উপলক্ষে বিষয় আমাদের সাথে আলোচনা করার জন্য। ইনশাআল্লাহ অজুহাত দেয়া থেকে বিরত থাকবো।

IMG_20250104_205140_662.jpg

Thank you my dear for this encouraging support 😊😍

আপনি উদাসীনতার বিষয়গুলো এমন ভাবে তুলে ধরেছেন যা খুবই চমৎকার। আসলে আমিও এই উদাসীনতার ভুক্তভোগী। উদাসীনতা আমাদের জীবনে খুবই খারাপ প্রভাব ফেলে। কিন্তু আপনার এই পোস্টটি পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছে এবং এর থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বা প্রফেশনাল জীবনে অনেক কিছু নিয়েই আমরা উদাসীনতায় থাকি, যা আমাদের মোটেই কাম্য নয়।ধন্যবাদ এত সুন্দর করে আমাদের মাঝে উদাসীনতার বাস্তবতা তুলে ধরার জন্য।