২০শে সেপ্টেম্বর স্মৃতির পাতায় ধরে রাখা আরেকটি দিন!

in hive-120823 •  2 months ago 
1000036080.png

অনেকেই দেখে থাকবেন, আমি খুব একটা পোস্ট লেখা বাতিলের দলে পরি না! বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমি লেখার সময় পাই রাতের বেলায়!
হ্যাঁ! আজকে ভোর চারটের পরে ঘুমাতে গিয়েও কেনো পোস্ট লেখা হয়নি, সেটার কারণ তুলে ধরাই আজকে আমার লেখার মূল বিষয়।

কেনই বা দিনটিকে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখবো বলছি? সবটা মিলিয়ে এই সময় হাজির হলাম।

ছেলেবেলা থেকেই মা কে দেখেছি ভাদ্র মাসে আলমারির যত জামাকাপড় সব রোদ্দুরে দিত, সাথে ঘরের সমস্ত কিছু ধোঁয়া কাচা তো সাথে থাকতই।

কারণটা হলো, পরের মাস মানে, বাংলার আশ্বিন মাসে আমাদের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়, তাই তার প্রস্তুতি শুরু হয় ভাদ্র মাস থেকেই।

যথারীতি আমিও সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছি বলে, প্রতি বছর জামাকাপড় রোদ্দুরে দিতে না পারলেও, ঘরের সমস্ত কিছু ধোঁয়া কাচার বিষয়টি করে থাকি।

যেহেতু, এখন প্রকৃতির ভারসাম্য বদলে গেছে, তাই ভাদ্র মাস কেটেছে বৃষ্টিতে।
এখন বাংলার আশ্বিন মাস চলছে, তবে তাপমাত্রা শরৎ কালের মত নয়, তাপমাত্রার নিরিখে এটিকে ভাদ্র মাস বলা যায়!

গত পরশু ঠিক করেই রেখেছিলাম, ঘরের সমস্ত কাচা কাচি শুক্রবার মানে গতকাল করবো।
এমনিতেই এখন সময় পাই না, বিভিন্ন কারণে! তারসাথে প্রায় প্রতিদিন রাত জাগা, আর সেই মধ্যরাতে কিছু একটা খাওয়া আমার দৈনন্দিন জীবনের দিনলিপিতে সামিল হয়ে গেছে!

1000036082.jpg
1000036081.jpg

গতকাল ঘড়ির কাঁটায় যখন ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে এগারোটা, তখন কাজে হাত দেওয়া শুরু করি, সমস্ত পর্দা সহ, সিলিং ফ্যান পরিষ্কার, এসি পরিষ্কার করে, পা মোছার পাপোশ কাচা সেরে;
এরপর, যাই দ্বিতীয় পর্বে, এবং সেখানে দুটো বিছানার চাদর সহ আর আনুসাঙ্গিক বিছানার জিনিষ ধোয়ার পর্ব সারি!

আগে ছাদে কাপড় মেলতে গেলেও এখন যে ফ্ল্যাটে থাকি, তারই আরেকটি ঘরে সমস্ত কিছু মেলে দিয়ে থাকি।
যেহেতু চার তলায় থাকি, তাই ছাদের গরমে সবটাই শুকিয়ে যায়, দুটো জানালা খোলা থাকে অসুবিধা হয় না।

তবে, মেলার পর ঘরটা শুকনো করে মুছতে হয়, নইলে মার্বেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে, পরের বাড়ি তাই বাড়তি যত্নের প্রয়োজন আছে।

1000036083.jpg
1000036084.jpg

সমস্ত কাচা শেষ করে, সমস্ত আসবাব এর ধুলো মুছে(যেটা আমি প্রতিবার ঘর মোছার আগে করি) যখন ঘর মুছতে শুরু করি, তখন থেকেই বুঝতে পারছিলাম আমার শরীর ছেড়ে দিচ্ছে, আমি দাঁড়াতে পারছি না!

তবুও যে ঘরে আমার বিছানা সেই ঘর মুছে, যে ঘরে সব মেলে দিয়েছিলাম সেই ঘর মোছা সবে শুরু করেছিলাম, আমি আর পারিনি!

সব রেখে মাথায় জল দিয়ে ভেজা কাপড় নিয়ে ভেজা মেঝেতে আমি শুয়ে পড়ি, কতক্ষন শুয়ে ছিলাম জানিনা কারণ আমার কোনো চেতনা ছিল না, আর ওই ঘর দুটোতে ঘড়িও নেই!

এরপর সাময়িক চেতনা ফিরলে, আমি কোনোরকমে একটা বিস্কুট খেয়ে, জল খেয়ে আবার ডাইনিং রুমের মেঝেতে শুয়ে পড়ি।

না মুখ থেকে শব্দ বের করার শক্তি ছিল, আর না দাঁড়াবার ক্ষমতা।
তারপর কিভাবে বাকি কাজ সেরে এসে আমি বিছানা পর্যন্ত পৌঁছেছি, সেটা সত্যি আমি ভাষায় বোঝাতে পারবোনা!

1000036086.jpg

source

এটা ছিল আমার জীবনের দ্বিতীয় মুহুর্ত যখন আমি মৃত্যুকে এক্ হাত দূরে দেখতে পাচ্ছিলাম।
তবে, যখন শুয়ে উঠলাম, তখন একটু সুস্থ বোধ করলেও আমার প্রতিটা আঙুলের নখ থেকে শরীর এতো যন্ত্রণা করছিল যে, লেখার শক্তি ছিল না।

এর মাঝেও আমি কিন্তু চেষ্টা করেছি, যে ফোন করে যেটুকু সহায়তা যারা চেয়েছে সেটা করার।

সকলের জীবনের একটা লড়াই আছে, আমি কখনোই সেটা অস্বীকার করি না, তবে অসুবিধাকে টপকে কতজন এগিয়ে যেতে সক্ষম সেটাই বোধহয় আমাদেরকে ব্যতিক্রমী হতে সহায়তা করে।

প্রতি মূহুর্তের লড়াই কি দুর্বিষহ যদি সেটা একাধিক দিকের হয়, সেটা বোঝার মানসিকতা সবার থাকে না।

সবচাইতে বড় আমরা বেশীরভাগ সময় পথ বদলে নিয়ে, অনেককিছু এড়িয়ে যাই, বিরক্ত হয়ে যাই, অধৈর্য্য হয়ে পড়ি!

এখনও যে লিখছি সেটাও অনেক কষ্ট করে;
তবে, এখনও যদি কেউ আমার সাথে ফোনে কথা বলে, হয়তো তাকে না বললেও আমার যন্ত্রণা আমার কথা শুনে বুঝতে পারবে না।

কাউকে, নিজের অসুবিধা শুনিয়ে বিশেষ কিছু হয়না, জীবন নিজের লড়াই নিজেকেই করতে হবে।

তবে, যারা সবকিছুতেই বিরক্ত হয়ে যান, তাদের উদ্দেশ্যে জানাতে চাই, জীবনের লড়াইটা আড়াই ঘণ্টার ছায়াছবি নয়।

আজকেও, বেলা আড়াইটার সময় কাজ শুরু করেছি, তার আগে পর্জন্ত আমার শরীরের কর্ম ক্ষমতা তলানিতে ছিল!

আজকে ঠাকুরের সমস্ত কিছু কাচা বাকি ছিল, সেগুলো সেরে পাঁচটার সময় পুজো দিয়ে উঠেছি।
বিকেলের চা খেয়ে লিখতে বসেছি, কারণ জানা নেই এরপর শরীরের পরিস্থিতি কি হবে?

1000010907.gif

1000010906.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

সম্পূর্ণ পোস্টটা পড়ে খুব খারাপই লাগলো কিন্তু কিছু করার নেই। কবি এখানেই নিরব, হয়তো দূরে থেকেই আমাদের মনে হয় সব করে দিবো বাস্তবতার চিত্রটা সম্ভব ভিন্ন যেটা সবসময়ই দেখা যায়।

আমি তো অনেক আগে থেকেই জানতাম যে আপনার শরীর ঠিক নেই তবে এতোটা খারাপ এই মুহূর্তে সেটাও বুঝতে পারিনি। দিদি, আপনার শারীরিক সমস্যা আমি বা অন্যকেউ বুঝতে পারবো না এবং যে কষ্ট সেটাও নিতে পারবো না। তবে এইটুকু বলবো যে হয়তো আপনার সাথে থেকে কষ্ট লাঘবের প্রচেষ্টা করা ও আমার জন্য সম্ভব না। কিন্তু নিজের প্রতি আরো বেশি যত্নশীল হতে হবে, নচেৎ বড্ড মুশকিল।

পাশাপাশি, ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি কারণ এই মুহূর্তে আপনি একটু হলেও ভালো আছেন। ঈশ্বর যেন সর্বদাই আপনার সাথে থাকে এটাই প্রার্থনা করি।

আপনার লেখাটা পড়ে সত্যি খুব খারাপ লাগলো। কাজ করুন কিন্তু সেটা যেন নিজের উপর অত্যাচার না হয়। এক দিনে সব কিছু না করে বরং প্রতিদিন কিছু কিছু করে করলে এতটা চাপ পরতো না আপনার উপর। শারীরিক ও মানসিক এই দুই দিক থেকেই সুস্থ থাকুন এই প্রার্থনা করি।

Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.

আপনার এই পোস্টটা পড়ে যেমন খারাপ লেগেছে আবার কিছু অংশে অনেক ভালোও লেগেছে, যেকোনো অনুষ্ঠানের আগে নিজের ঘরবাড়ি পোশাক সব কিছু পরিষ্কার করে নেওয়া বাড়ির মুরুব্বিদের একটা অভ্যাস, আমার মাকে দেখেছি ঈদের আগে বাড়ির সব কাপড়চোপড় এবং ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে নিতেন।

সকলের জীবনেই কিছু সমস্যা থাকে, সেই সমস্যাকে পিছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন, যারা সমস্যাকে সামনে রেখে আর চলতে পারে না তারা কখনো জীবনে সফল হতে পারে না, আমাদের মাঝে অনেকেই আছি যারা অল্প সমস্যার কারণে ভেঙে পড়ে, তাদের দ্বারা কখনোই জীবনে সফলতার আশা করা যায় না।

আপনি এতটা অসুস্থ এটা আমার জানা ছিল না, অবশ্যই নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিবেন, সৃষ্টিকর্তা আপনাকে অতি দ্রুত পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করুন।