History of rasgulla (a famous sweet) রসগোল্লার ইতিহাস।

in hive-120823 •  11 months ago 
1000023697.png

ইতিহাস যেকোনো দেশের ঐতিহ্যের পটভূমি ধারণ করে রাখতে সক্ষম বলেই;
নব প্রজন্ম, হারিয়ে যাওয়া অনেক বিষয় সম্পর্কে আজও জানতে পারছে।

আজকের লেখার শীর্ষক দেখে অনেকেই বুঝতে পেরেছেন আমার লেখার বিষয়বস্তু।
সেই বিষয়ে কথা বলার আগে আপনাদের জানিয়ে রাখি, একলা ঘরে কাজের ভিড়ের মাঝে আমার অবস্থা নিম্নে উল্লেখিত বাক্যের মতন!👇

যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই,পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন
- ভারত চন্দ্র রায়।

আমার নিঃসঙ্গতার একমাত্র কথা বলার সঙ্গী আমার টেলিভিশন, রাত জাগার সঙ্গী বললেও ভুল হবে না।

যাইহোক, গতকাল কাজের সময় রোজকার মতন, টেলিভিশন নিজের মতো করে বকে যাচ্ছিল।

এক্ নাগারে কাজ করতে করতে, একটু ঘাড় ঘুরিয়ে টেলিভিশন এর দিকে নজর দিতেই চোখে পড়ল একটি ছায়াছবি যার নাম

রসগোল্লা

এখন আপনাদের সাথে নিজের মতো করে সেই ছায়াছবি থেকে রসগোল্লার ইতিহাস নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে উপস্থাপনের প্রয়াস করছি।

নিজে ঘরে বানিয়েছি রসগোল্লা তাই সেই ছবিগুলোই লেখায় সহযোগিতা করবে।



এবার মূল বিষয়বস্তুতে ফিরে আসা যাক।
কোলকাতা,

নাহ্!আমার কল্লোলিনী কোলকাতা।

এই নামটা উচ্চারণের সাথে সাথে চোখের সামনে একসাথে ইতিহাসের অনেকগুলো পাতা ভেসে ওঠে চোখের সামনে।

আমার নিজেকে এক্ দিক থেকে সৌভাগ্যবতী মনে হয়, কারণ এই শহরে আমার বেড়ে ওঠা, কাজ, রাস্তায় যাতায়াতের সুবাদে ইতিহাসকে আমি ছুঁতে পারি।

হ্যাঁ!
পুরোনো ইমারত, ট্রাম, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ইত্যাদি বহু কিছুর সাথে রসগোল্লা কলকাতার সৃষ্টি একটি গর্বের ইতিহাস আজও বয়ে চলেছে।

বাঙালির যেকোনো অনুষ্ঠানে আজও রসগোল্লার উপস্থিতিতে ভাটা পড়েনি, অনেক নিত্য নতুন করে রসগোল্লা উপস্থাপন করা হলেও, আসলের কদর আজও অমলিন।

1000001638.jpg
1000001587.jpg

অনেক ভূমিকা হলো, এবার রসগোল্লার ইতিহাসের দিকে একটু নজর ঘোরানো যাক।
অবিভক্ত ভারতের (স্বাধীনতার পূর্বে) বুকে জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও;
রান্নার দিকে, সেই কৈশোর থেকে ঝোঁক ছিল ২০ বছর বয়সী

নবীন চন্দ্র দাস এর।

ওই বয়সে পিতৃহারা ছোটো ছেলেটি থাকতো যৌথ পরিবারে, কিন্তু সে সময় সমাজে মানুষের বংশমর্যাদা নিয়ে বড্ডো নাক উঁচু ছিল।

কাজেই, একটি ছেলে রান্নার কাজ করবে, তাও আবার উচ্চ বংশের হয়ে, এটা তার জ্যাঠামশাই কিছুতেই মানতে পারেন নি।

বিধবা মা, সেই সময় ছেলের সাথ দিতে চাইলে দুজনকেই বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন বাড়ির কর্তা!

এদিকে ছেলের ইচ্ছে সে ময়রা হবে, কারণ?
একদিন বাড়ির এক্ অনুষ্ঠানে রান্নার সময় মোচার ঘন্ট রান্নার সময় গবেষণার জন্য চিংড়ি মাছ দিতে চাইলে, কর্মরত রাঁধুনি জানায়, ওসব মোচায় দিতে নেই, ওসব পোকা!

কম বয়সী ছেলে, তায় আবার বাড়ির বংশধর কাজেই, বিশেষ বাকবিতণ্ডা না বাড়িয়ে কিশোর নবীনকে তার মনের ইচ্ছে পূর্তি করতে দেন রান্নার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠাকুর।

এরপর, খাবার শেষে অতিথিদের মধ্যে একজন রাঁধুনির রান্নার প্রশংসা স্বরূপ তাকে এক্ টাকা বকশিস দিতে চায়।

জ্যাঠামশাই জানতেন এ কাজ নবীনের কিন্তু লজ্জায় সে কথা বলার উপায় নেই, তাই যার উপরে রান্নার দায়িত্ব ছিল তাকেই এগিয়ে দেন।

এরপর অন্দর মহলে চলে বাকযুদ্ধ!

  • জ্যাঠামশাই:- মহিলাদের মত রান্না করবে এই বংশের ছেলে হয়ে?
  • নবীন :- আমি ময়রা হবো।
  • জ্যাঠামশাই:- বেরিয়ে যাবে মা ছেলে এই বাড়ি থেকে কাল সকলেই।
  • নবীন :- মা কাল থেকে তোমার দৈহিক পরিশ্রম কমে গেলো!
1000001631.jpg

এরপর শুরু হলো এক্ যুদ্ধ! নবীনকে বাগ বাজারে এক্ ময়রার দোকানে তার মা কাজ শিখতে পাঠালো।

সেখানে তাকে দোকানের মালিক হিসেব নিকেষ রাখার দায়িত্ব দিতে চাইলে, সে রান্না ঘরের ঠিকানা জানতে চায়।

সেখানে গিয়ে প্রতিটি মিষ্টিকে কিভাবে আরো সুন্দর করে উপস্থাপন করা যায় তাই নিয়ে সর্বক্ষণ ময়রার কানের কাছে বক বক করতে থাকে নবীন।

সবাই বিরক্ত কেবল একজন বয়স্ক ব্যক্তি ছাড়া, এরকম একদিন ১৫ বছরের মেয়ে(পরে তার সহধর্মিণী হয়)লুকোচুরি খেলতে খেলতে দোকানে এসে লুকোয়, এবং অনেকক্ষণ লুকিয়ে থাকার পরে, সে একটা মিষ্টি এবং জল চায় নবীনের কাছে।

সহজ সরল নবীন যে মিষ্টি দেয় মেয়েটির মনে ধরে না! এরকম করে, নবীনকে বোকা বানিয়ে ১৬ টা মিষ্টি খেয়ে সে পালিয়ে যায় কোনো দাম না মিটিয়ে।

স্বাভাবিক ভাবেই দোকানের মালিক এসে বলে, মিষ্টির দাম না নিয়ে দোকানে ঢুকবে না, আর না আনতে পারলে তোমার বেতন থেকে দাম কেটে নেওয়া হবে।

নবীন বেরিয়ে পরে মেয়েটিকে খুঁজতে, এরপর তার সন্ধান পেলে তার মায়ের কাছে নালিশ জানিয়ে দাম নিয়ে ফেরার পথে মেয়েটি তার হাত থেকে টাকা কেড়ে নিয়ে বলে ওই বাজে মিষ্টির দাম এতো হতেই পারে না।

যেদিন ভালো মিষ্টি আনতে পারবে, সেদিন এই মিষ্টির দাম পাবে।

1000001499.jpg
1000023694.jpg

মিষ্টির বর্ণনা করতে গিয়ে বলে, মিষ্টি হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো ধবধবে সাদা, এবং গোল।
মুখে দিলেই যা মিলিয়ে যাবে এক্ মুহূর্তে মুখের ভিতর এতটাই তুলতুলে, তাকেই ভালো মিষ্টি বলে!

এবার নবীনের দীর্ঘ্য যাত্রা শুরু হয়, এই মিষ্টি আবিষ্কারে, মাটি পেলে তাই দিয়ে গোল, দোকান থেকে চুপি চুপি ছানা সরিয়ে তাই নয় চলে তার গবেষণা।

শেষ রক্ষা হয় না, আবার ধরা পড়ে মালিকের কাছে, এবার ক্ষমা নয় বহিষ্কার করে তাকে মালিক।
এর মাঝে অনেককিছু আছে, তবে যে বিষয় তুলে ধরতে আমার এখানে আসা সেটা কেবল উল্লেখ করছি।

মনের দুঃখে নদীর পাড়ে বসে থাকে নবীন, এমন সময় তার পরিচিত কীর্তনের দলকে দেখতে পেয়ে তাদের সঙ্গ নেয় নবীন।

এক্ ইংরেজের বাড়িতে অনুষ্ঠান, নবীনের গানে মুগ্ধ হয়ে, তাকে এবং তার দলের সকলকে চীজ কেক খেতে দিয়ে ইংরেজ তাকে জিজ্ঞেস করে বলো তো এটা কি দিয়ে তৈরি?

তোমার যেমন রান্না করতে ভালো লাগে আমার ও ভালো লাগে। কেক মুখে দিয়ে নবীন বোঝে তাতে ছানার ব্যবহার করা হয়েছে।
এরপর, ইংরেজ বলে তোমাদের ছানা যাকে আমরা বলি কটেজ চীজ।

নবীন আবার রান্না ঘর দেখার আর্জি জানায়, কারণ ইংরেজ বলে তোমাদের ছানা মোটা দানার আর আমাদের ছানা মিহি হয়!

1000001496.jpg

এই রহস্য রান্নাঘর ছাড়া জানা সম্ভব নয়, কাজেই অন্দরমহলে প্রবেশ করে, যে নবীন বেরিয়ে আসে, সে আর কেউ নয়

রসগোল্লার আবিষ্কর্তা নবীন চন্দ্র দাস।

কারণ, সে শিখে গেছিলো গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজো করতে!
মানে, ছানার জল দিয়ে ছানা কেটে তাকে হাতের সাহায্যে মিহি করে বেটে নিয়ে চিনির রসে দিলেই তৈরি হয় পূর্ণিমার চাঁদের মতো ধবধবে সাদা, নরম তুলতুলে গোলাকার এক্ মিষ্টি যার নাম রসগোল্লা।

ছবিটি থেকে আমি শিখলাম, একমাত্র ধৈর্য্য ধরে নিজের ভালোলাগার পিছনে পড়ে থাকলে সফলতা একদিন ধরা দিতে বাধ্য;
আর সাথে পেলাম আমার শহরের পৃথিবী বিখ্যাত মিষ্টির ইতিহাস।

1000010907.gif

1000010906.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.

Loading...


We support quality posts and good comments posted anywhere and with any tag.

Curated by : @shiftitamanna

রসগোল্লার এই ইতিহাস আমার জানা ছিলো না।এধরণের পুরোনো দিনের জিনিস জানতে আমার ভালো লাগে।তাই আপনার লেখা পড়ে খুব ভালো লাগলে।
পড়তে ছিলাম আর ভাবতে ছিলাম যে তৎকালীন সময়ের একটা উচ্চ বংশের ছেলের জন্য এই ধরনের কাজ করা কঠিন ছিলো। তারপরও কোন কাজের প্রতি যদি কেউ নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে তাহলে বেশির ভাগ সময়ই ভালো কিছু হয়। আর যদি একান্তই ভালো কিছু নাও হয় তবে কিছু না কিছুতো হয়ই।
ধন্যবাদ আপনাকে এধরণের একটা লেখা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ভালো থাকবেন সবসময়।

আপনার পোস্ট পরলেই নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। আপনি রসগোল্লা ছায়াছবির অনেক তথ্য শেয়ার করেছেন।

সত্যি কথা বলতে রসগোল্লা আমার বরাবরই অনেক পছন্দের। সত্যি কথা বলতে কেউ যদি কোন কাজের জন্য চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত তাহলে ইনশাআল্লাহ সফলতা আসবেই।

সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।