আমার এলাকার কিছু দুর্গা পুজো!(Hopping pandals)

in hive-120823 •  3 months ago 
1000038216.png
(Goddess Durga)

প্রতি বছর কলকাতাবাসী মুখিয়ে থাকে যে উৎসবের আগমনের দিকে সেই উৎসব এই মুহূর্তে চলছে কলকাতা শহরে।

আজ বিকেলে কিছু কাজে বাইরে বেরোতে হয়েছিল, তখন কিছু ছবি এবং তার পাশাপশি ছোটো ছোটো ভিডিও করেছিলাম আমার এলাকায় যে পূজগুলো প্রতি বছর হয়, সেগুলো সকলের সমক্ষে তুলে ধরবার জন্য।

তবে, এবছরের দুর্গোৎসব অন্যান্য বছরের চাইতে অনেক শান্ত পরিবেশে আয়োজিত হয়েছে, কারোর বাড়িতে ক্লাবের থেকে চাঁদা নিতে আসেনি ক্লাব পক্ষ, নিজেরাই নিজেদের যতটুকু সামর্থ্য তাই দিয়েই বছরের শ্রেষ্ঠ উৎসব এর আয়োজন করেছে।

IMG_20241009_013633.jpg
IMG_20241009_013618.jpg
IMG_20241009_013549.jpg
IMG_20241009_013601.jpg
IMG_20241009_013648.jpg

প্রতিবছর মা দুর্গা আসেন এই শরৎ কালে নিজের বাবার বাড়িতে, সঙ্গে নিয়ে আসেন নিজের সন্তানদের।

প্রথমেই তার সন্তান গণেশ ঠাকুরকে দিয়ে পুজো পুজোর শুভারম্ভ হয়! এরপর এক্ এক্ করে মা দুর্গার আরাধনা, এরপর হবে তার আরেক সন্তান লক্ষ্মী দেবীর পুজো, তারপর কার্তিক পুজো, এবং শেষে তার সন্তান সরস্বতী পূজা দিয়ে পুজোর গন্ধের সমাপ্তি ঘটবে।

তবে, শিব ঠাকুরের আরেক নাম মহাদেব তিনি এই দশদিন ও নিজের স্ত্রী কে ছেড়ে থাকতে পারেন না, তাই লুকিয়ে থাকেন, মা দুর্গার আড়ালে এবং নজর রাখেন তাঁর সুরক্ষার।

(Hopping pandals in my locality)
1000038171.jpg
(Worshipping goddess Durga in my neighborhood)

অনেকেই দেখেছেন, মা দুর্গা তথা তার সন্তানের ঠিক পিছনে মহাদেব থাকেন।
পুরাণে উল্লেখিত আছে মা দুর্গাকে আহ্বান করা হয়েছিল মহিষাসুর নিধনের জন্য।
তিনলোকে সমস্ত দেবতা তাকে নিধনে করতে অসমর্থ হলে, ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ সহ সমগ্র দেবকুল মাকে আহ্বান জানান এবং দশভূজা কে এক এক দেবতা একটি একটি করে অস্ত্র দিয়ে অসুর নিধনে সহযোগিতা করেন।

সিংহবাহিনী মহিষা মর্দিনী অসুর নিধনে সমর্থ হয়, এবং এক্ বার নয় তিন বার তিন কালে , তিন রূপে!

স্বপ্নে একবার ভদ্রকালী রূপে মহিষাসুর মায়ের দর্শন পায়, এবং তাঁর আরাধনা শুরু করেন।
তবে, কর্মফল স্বরূপ মায়ের হাতে তার মৃত্যু নিশ্চিত ছিল, তাই ভদ্রকালী মায়ের থেকে আশীর্বাদ স্বরূপ মহিষাসুর বর পান, এবং মা বলেন, মায়ের তিন মূর্তির পুজোর সময় তাঁর পদতলে মহিষাসুর ও পূজিত হবেন।
একইসময় মানব, দেবতা তথা রাক্ষস পূজিত হবে।

সবকিছুর সারমর্ম হলো, পাপ সর্বদাই পরাজিত হয় অবশেষে।
কর্মফল পেতে হবে, সেটা এই পূরণের উর্ধ্বে গিয়ে।

প্রকৃত শিক্ষা সেটা যেখানে নারী পূজিত হয়, এবং তার শক্তির পরিচয় কেবলমাত্র পূরণেই নয়, বর্তমান সময়েও প্রমাণিত একজন নারীর শক্তি কতখানি।

সমাজে বহু উদাহরণ ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
একজন নারী মমতার রূপের পাশাপশি শক্তির নিদর্শন।
আর ঠিক সেই কারণেই সৃষ্টিকর্তা হয়তো বুদ্ধি, বিচক্ষণতার সাথে সন্তান ধারণের ক্ষমতা শুধুমাত্র নারীকেই দিয়েছেন।

IMG_20241009_014424.jpg

1000038154.jpg
1000038143.jpg
(Decoration still going on)

বেশ খানিকক্ষণ দাড়িয়ে ছিলাম মায়ের সামনে, নিজের মধ্যে তাঁর একাংশ শক্তি ধারণের ক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হই এই আশীষ চাই।

সমাজের সমস্ত কিটের নাশ হোক আর মানসিকতা উন্নত হোক, সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এই আশীষ দিয়ে যান যেনো তিনি।

একদম কয়েক পা দূরত্বে একটি বাড়িতে প্রতিবছর দুর্গা পুজো অনুষ্ঠিত হয়।
এর পাশাপশি আমি যে ফ্ল্যাটে থাকি সেই গলির দুই মাথায় দুটো আলাদা ক্লাব দুর্গা পূজার আয়োজন করে।

এরপর বাজারে যাবার পথে একটি ক্লাব আছে, যেখানে ছোটো বাচ্চারা ক্যারাটে শিখতে আসে, তারাও প্রতিবছর দুর্গা পূজার আয়োজন করে থাকে।

এই পুজোর পাশাপশি, আজকে দেখলাম একটি নতুন ফ্ল্যাট হচ্ছে ঠিক স্টেশন এর রাস্তায়, প্রথবে ভেবেছিলাম কোনো মল হচ্ছে, বিষয়টা হলো এটা আমার চোখে পড়েনি কারণ বেশিরভাগ সময় আমি ভিতরের গলি দিয়ে যাতায়াত করি।

তবে, ভাবার চেষ্টা করছিলাম, এর আগে এই জায়গায় কি ছিল? তারপর মনে পড়ল একটি ফাঁকা জায়গা।

যাইহোক দিন দিন শ্বাস রুদ্ধ করা পরিবেশ হয়ে যাচ্ছে এত আকাশ ছোঁয়া বড়ো বড়ো ফ্ল্যাটের কারণে।

তবে এখনো বাঁচোয়া বাড়িয়ে কাছেই একটি মাঠ এখনও অক্ষত আছে, আজকে রাতের আলোয় সবুজ ঘাসগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল কেউ সবুজ কার্পেট বিছিয়ে রেখেছে।

তবে, বাজারে আজকে আমার ফ্ল্যাটের নিজের এক্ মাসিমার সাথে দেখা হয়েছিল, এবং অবাক বিষয় আমি জানতাম না, ওনার নাতি নিজেই মা দুর্গার প্রতিমা তৈরি করে, প্রতিবছর পুজো করে।

এতো বছর এই ফ্ল্যাটে থেকেও জানাই ছিল না, একেই বলে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা যেখানে ফ্ল্যাটের চার দেয়ালের ভিতরেই যার যার জগত বন্দী।

কেউ কারোর খবর নেওয়ার, কারোর সাথে মেশার, কারোর বাড়ি যাবার সময় নেই।
জানাবেন, আপনাদের কেমন লাগলো আমার পাড়ার পুজো।

1000010907.gif

1000010906.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.

Loading...
Loading...

দুর্গাপুজোর সাথে আমার ছোটবেলার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। আমাদের বাড়ির চারপাশেই অনেকগুলো পুজো হতো। বছর দুয়েক আগে দশমীর দিন গিয়েছিলাম আমি দেখার জন্য সাথে হারিয়ে যাওয়া ছোটোবেলাকে কিছুটা হলেও ফিরে পাবার জন্য।
আধুনিক কালের ফ্ল্যাটগুলোতে আমরা হয়তো অনেক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি কিন্তু হারিয়ে গেছে পুরোনো দিনের সেই আন্তরিকতা যা এখনো আমি আমার গ্রামের বাড়িতে খুঁজে পাই পাশের বাড়ির কাকী,ও ভাইদের মাঝে।