আচ্ছা যদি আপনাদের প্রশ্ন করি পরাধীনতা মানে কি?
কথাটি বলা মাত্রই আপনাদের মাথায় দেশের কথা আসবে! অন্ততঃপক্ষে বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই কথাটি প্রযোজ্য।
এক্ সময় ভারত যখন পরাধীন দেশ হিসেবে চিহ্নিত হতো, তখন অনেক কবি তাদের লেখনীকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
অনেক কবিতা আজও মানুষ মনে রেখেছেন, আবার ঠিক বিপরীত দিক ও চোখে পড়ে!
অনেক কবি তথা কবিতার নাম অনেকেই জানেন না।
এরকম একজন কবির লেখা কবিতা আমি শৈশব থেকে জেঠিমাকে সর্বক্ষণ আওড়াতে শুনতাম।
আমার জেঠিমার একটি মাত্র কন্যা এবং একটি পুত্র আছে, উভয়েই অনেক বড় আমাদের চাইতে, হামেশাই মায়ের কাছে আবদার করতো কবিতাটি শোনানোর জন্য।
যেহেতু আমি জেঠিমার খুব কাছের ছিলাম, সেই সুবাদে আমিও কবিতাটি শুনে শুনে মুখস্ত করে ফেলেছিলাম।
তখন সেটি আমার কাছে ছিল ছন্দ মেলানো কয়েকটি শব্দগুচ্ছ ছাড়া আর কিছুই না!
যতো বড় হতে থাকলাম, বুঝলাম আমার জেঠিমা আসলে পরাধীনতা রচিত কবিতার আড়ালের সারমর্মকে জীবনের পাথেয় করবার শক্তির জোগান দিয়ে চলছিলেন!
তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, পরাধীনতা শুধু দেশকে স্বাধীন করেই শেষ হয়ে যায় না!
দৈনন্দিন জীবনে পরাধীনতার বশ্যতা স্বীকার না করে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে শেখার পাঠ তিনি পড়িয়ে চলেছিলেন কবিতার আড়ালে।
এই উন্নত সমাজে আজও অনুন্নত হয়ে রয়েছে অনেকের মানসিকতা।
পরনির্ভরশীলতা তারই মধ্যে অন্যতম! জন্মাবার পরে মা বাবার উপরে নির্ভরশীল, তারপর মেয়েদের ক্ষেত্রে স্বামীর উপরে নির্ভরশীলতা একটি সাধারণ বিষয় অনেকের ক্ষেত্রে আজও।
খুব বলিষ্ঠ অথবা দরাজ কণ্ঠে মহিলাদের দেখেছি স্বামীর সামাজিক পরিচিতি এবং আর্থিক উপার্জন নিয়ে গর্ব করতে।
আবার অনেকেই পিতার কত উপার্জন আছে সেই নিয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়, আর যদি সে হয়, পুত্র সন্তান, এবং একমাত্র উত্তরসূরি তাহলে তো কথাই নেই!
এই সকল বিষয়গুলো এখনও খুব সহজেই নজরে পড়ে ঘরে ঘরে! আর এইখানেই আমার জেঠিমার কবিতার অভ্যন্তরীণ শিক্ষা মনে পড়ে যায়।
নিজের পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থের পরিমাণ সামান্য হলেও সেখানে পরাধীনতার গন্ধ নেই, না আছে সেখানে কথার খোঁচা!
কাজেই, পরাধীনতা মুক্ত কেবলমাত্র দেশকে করেই থেমে গেলে হবে না, সর্বাগ্রে মানসিকতাকে পরাধীন মুক্ত করতে হবে।
আদর্শ পুরুষ তথা উচ্চ মানসিকতার উদাহরন আর পাঁচ জনের থেকে এই ব্যক্তিকে ভিন্ন করে! |
---|
ভারতে বসবাস করা এমন অনেক উদাহরণের মধ্যে একটি পরিবারের উদাহরণ হচ্ছে আমার নিজের পরিবার, আমার শিক্ষায় কোনোদিন বৈশ্যমতার গন্ধ ছিল না, পরাধীনতার মত।
স্বামী উপার্জন করবে আর স্ত্রীর কাজ? সংসার এবং সন্তান জন্ম দিয়ে তাদের বড় করা!
এই দিক থেকে আমার শিক্ষা ছিল স্বাধীন, আমার পরিবারে মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে কাজ করতেন এবং মহিলা নয়, পুরুষ( বাবা, জ্যাঠা মশাই) রান্না করা, আমাদের সামলানো ইত্যাদি কাজ করতেন, এতে কিন্তু তাদের পুরুষত্ব বিঘ্নিত হয়নি কখনও!
গতকাল ঠিক এমনি একটি স্বামী স্ত্রী এসেছিল টেলিভিশন এর এক্ অনুষ্ঠানে।
যেখানে, আলোচনায় ভদ্রলোক জানালেন, তার স্ত্রী বয়েসে তার চাইতে বড়, অফিসে তার বস ছিলেন!
গর্বিত স্ত্রী, যোগ্যতার সম্মান স্বামীর কাছ থেকে পাবার কারণে! |
---|
ভালোবাসা করে বিয়ে, কাস্টের পার্থক্য আছে, এবং একটা সময় ছেলেটি উচ্চ পড়াশুনা করবে সিদ্ধান্ত নিলে, তার স্ত্রী তাকে জানায়, সংসারের প্রয়োজন এর ভার সে নেবে তার উপার্জনের মাধ্যমে এবং স্বামীকে মন দিয়ে পড়াশুনা করতে বলেন।
ব্রাহ্মণের সন্তান কায়স্থ ঘরের বয়সে বড় মেয়েকে বিয়ে করে তার উপার্জনে শিক্ষিত হয়ে ৫০ লক্ষ টাকা জিতে ফিরলো! সুস্থ্য মানসিকতার নিদর্শন। যেখানে তার বিন্দুমাত্র পুরুষত্ব বিঘ্নিত হয় নি! |
---|
প্রতিবেশী কিছু সব জায়গায় থাকে যাদের এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়, মহিলার উপার্জনে পুরুষ বাড়িতে বসে খাচ্ছে!
কি অদ্ভুত মানসিকতা তাই না?
উল্টো বিষয়টি সম্মানের? মানে বসে বসে সংসারের রান্না এবং বাচ্চা লালন পালন, আর স্বামীর অর্থে বুক ফুলিয়ে বাঁচা!
অথচ, নিজেদের আধুনিক বলতে এক্ মুহুর্ত আমরা ভাবী না!
এটাকে কোন ধরনের আধুনিকতা বলে আমার জানা নেই, তবে আমি এই আধুনিকতার পাঠ পড়ে বড় হইনি!
সমান সম্মান, সমান অধিকার, এটাই বোধহয় আধুনিকতা।
কারোর কাঁধে ভর করে চলাকে আর যাই হোক স্বাধীনতার নাম দেওয়া যায় না!
বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
"কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি ঝড়ে।"
বাবুই হাসিয়া কহে, "সন্দেহ কি তাই?
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।
পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা,
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।"
নিজের ক্ষমতায় গড়া যেকোনো কিছুতেই পরাধীনতার গ্লানি থাকে না,
সেখানে থাকে না অপমান, অসম্মানের যন্ত্রণা!
পরনির্ভরশীলতা আর পরাধীনতার মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য আমি অন্তত খুঁজে পাই না।
বিশেষ করে সুস্থ্য দেহে জন্মে, জীবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আখ্যা পেয়ে কি লাভ? যদি পরনির্ভরশীলতা অব্যাহত থাকে?
স্বাধীনতার মানেটা বসে খেতে খেতে অনেকেই আসলে ভুলতে বসেছে, বিলাসিতা শ্রেয় চড়ুই পাখির মতো, কিন্তু নিজের হাতে গড়া স্বাধীন কাঁচা ঘরে অনেকেই থাকতে নারাজ!
সামাজিক পরিবর্তনের পূর্বে বোধহয় মানসিক পরাধীনতার গ্লানি মুক্ত হবার প্রয়োজনীয়তা অধিক!
অসাধারণ একটি পোস্ট। পোস্টটি পড়ে সত্যিই মন ছুয়ে গেল। স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ শুধু রাজনৈতিক বা ভূগোলিক স্বাধীনতা নয়, বরং মানসিকতা ও সমাজের চিন্তাধারার স্বাধীনতাও এর অংশ।
রজনীকান্ত সেনের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে যে শিক্ষাটি দেওয়া হয়েছে, তা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। নিজের শ্রমে ও মেধায় অর্জিত স্বাধীনতার আনন্দ আর গৌরব অন্য কিছুতে নেই।
ম্যামের কথার সঙ্গে আমি একমত, আধুনিকতার আসল অর্থ সমান অধিকার ও সম্মান চিন্তায় এবং কাজে। এই ধরনের ইতিবাচক চিন্তাভাবনা আমাদের সমাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। এমন একটি অর্থবহ লেখার জন্য ম্যাম আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Your comment has been supported by THE QUEST TEAM. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Thank you so much
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Thank you for your encouraging support my dear friend @alejos7ven😊
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit