বীণাপাণির মহিমা!The glory of Veena Pani!

in hive-120823 •  2 days ago 
1000048980.jpg

আজকে আমার লেখার শীর্ষক অনেককেই অবাক করতে পারে!
বিশেষ করে যারা বিদ্যার দেবী হিসেবে পূজিত সরস্বতী দেবী যাকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হয়!
সেরকমই, বীণাপাণি বিদ্যার দেবীর আরেকটি নাম।

এবার আসি মূল পর্বে। গতকাল আমাকে বাজারে যেতে হয়েছিল, সাথে ছিল ফ্ল্যাটের মিটিং কাজেই, ওই এক কাজে দু'কাজ সমাধা করতে বেড়িয়েছিলাম।

অনেকেই হয়তো জানবেন, গত পরশু এবং গতকাল ছিল সরস্বতী পুজো!
কিছু টাকা তোলার তাগিদে এটিএম মুখো হয়ে দেখলাম, একাকী বিদ্যার দেবী মঞ্চে বসে বসে হিন্দি গান উপভোগ করছেন।

আচ্ছা মা সরস্বতী শুধু বিদ্যার নয়, জ্ঞান, সঙ্গীত তথা শিল্পের দেবী। তাই তার হাতে বীণা রাখা থাকে!

কথাটি মজার ছলে বললেও এখন যে সত্য ঘটনার উল্লেখ করতে চলেছি, সেটা কোথাও না কোথাও প্রমাণ করে, বীণাপাণি যার সহায় তার কখনো ধণ এর অভাব হয় না, কারণ তার সহায় থাকেন তাঁর বোন মাতা লক্ষ্মী, যিনি ধনসম্পদ, সৌভাগ্য, সৌন্দর্য, উর্বরতা, সমৃদ্ধি, রাজকীয় শক্তি, প্রাচুর্যের দেবী!

আমাদের জীবনে অনেককিছুই আমরা উন্নত প্রযুক্তির যুগে দাঁড়িয়ে প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করতে পারি না!

সংগীত সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর সহ, তাবড় তাবড় শিল্পীরা তাদের সুরের প্রতিভায় গোটা পৃথিবীতে নিজেদের অমর করে রেখে গেছেন, এবং এখনও বিশ্বে অনেক শিল্পী আছেন যারা তাদের সুরের জাদুতে মাতিয়ে রেখেছে গোটা বিশ্ব।

অনেকেই বলবেন এগুলো তো জানা বিষয়! এরমধ্যে কি বিশেষত্ব আছে?
দেখুন সৃষ্টিকর্তা আমাদের মধ্যে কিছু না কিছু গুণাবলী দিয়ে এই ধরায় পাঠিয়েছেন!
যারা দেখতে পান আর সম্মান করেন সৃষ্টিকর্তার দেওয়া গুণাবলী তারাই জীবনে অমরত্ব লাভ করেন।

1000048988.jpg

আচ্ছা, আপনাদের কাছে যদি জানতে চাই, বলুন তো ভজন চন্দ্র রায় কে ছিলেন?

আমি হলফ করে বলতে পারি বহু মানুষ এই নাম হয়তো কখনো শোনেনি! সাথে সাথে গুগল বাবাজীবনের সাহায্য নেওয়া শুরু করে দেবেন!

  • তবে, যদি জিজ্ঞাসা করি, ডক্টর বিধান চন্দ্র রায় কে ছিলেন?

তাহলে হয়তো কিছুজন উত্তর দিতে পারলেও পরতে পারবেন।
বিশেষ করে কলকাতা তথা ভারতবাসী।

এখানে জানিয়ে রাখি, যুগের সাথে এখন চিকিৎসা উন্নত হলেও, চিকিৎসক কতখানি উন্নত হয়েছে, সেটা নিয়ে আমি অন্ততপক্ষ বেশ সন্দিহান!

কারণ, এখন ডাক্তার একরাশ টেস্ট না করে রোগীর রোগ ধরতে অসমর্থ!
সেখানে দাঁড়িয়ে এই ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় রোগীকে না ছুঁয়ে কি রোগ হয়েছে বলে দিতে পারতেন!

কি অবাক হচ্ছেন?

  • দুটি ঘটনার উল্লেখ করবার পূর্বে জানিয়ে রাখি এই ডাক্তারের রোগীদের মধ্যে কারা কারা ছিলেন?
    মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী ইত্যাদি ইতিহাসের পাতায় অক্ষত নামী ব্যক্তিত্বগণ!

  • অনেকেই জানেন, তবুও যারা জানেন না, তাদের জন্য জানিয়ে রাখি, ডক্টর বিধান চন্দ্র রায় এর জন্ম এবং তিরোধানের দিন একই পয়লা জুলাই!

এটাও এক অভিনব বিষয়, তাই না?

ডাক্তারী পড়তে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল বিধান চন্দ্র রায় কে, কারণ তিনি একটি ইংরেজের পথ দুর্ঘটনার সাক্ষী ছিলেন, যেখানে দোষ ছিল ইংরেজের কিন্তু বিধান চন্দ্র রায়কে মিথ্যে সাক্ষী দিতে বলা হলে, তিনি সেই কাজ করতে রাজি হন নি!
বরঞ্চ আদালতে দাঁড়িয়ে জানিয়েছিলেন দোষ ট্রাম চালকের নয়, বরং ঘোড়ার গাড়িতে থাকা ইংরেজের ছিল!

সত্যের বিড়ম্বনা বিধান চন্দ্র রায়কে সেই ইংরেজ ইচ্ছাকৃত ফেল করিয়ে দেন বহুবার প্রতিশোধ নিতে!
এরপর অনেক লড়াই করে বিদেশের মাটি থেকে ডাক্তারি পাশ করে ফেরেন ডক্টর বিধান চন্দ্র রায়, যিনি মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে নিজের মাকে হারিয়েছিলেন।

1000048989.jpg

শুরুতেই বলেছি বীণাপাণি যার সহায় তার কিন্তু অর্থের অভাব হয়না কখনো!
তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন।

একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে কেমন ছিলেন সেটা হয়তো আপনাদের অনেকেই অনলাইন থেকে জানতে পেরে যাবেন, তবে মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন তিনি? ডাক্তার হিসেবেই বা তিনি কেমন ছিলেন সেটাই আজকের উল্লেখিত বিষয়!

প্রতিদিন পনেরোটা রোগীর চিকিৎসা তিনি বিনামূল্যে করতেন, তবে ঐ পনেরো কখনো ষোলো হবে না!

তবে, একদিন নিয়মে বাধ সাধলো যখন কম্পাউন্ডার এসে জানালো পনেরোর পরেও আরেকজন গুরুতর রোগী আছেন!
শুনেই বিরক্ত হয়ে বললেন তুমি জানোনা আমি পনেরো জনের বেশি রোগী দেখিনা?

প্রচণ্ড কানে ব্যথা তাই...আমরা আমতা করে জানালেন কম্পাউন্ডার!
শুনে রোগীকে পাঠাতে বললেন ডক্টর বিধান চন্দ্র রায়।

এরপর রোগীকে দেখে কম্পাউন্ডারকে বাজার থেকে পাকা কাঁঠাল কিনে আনতে বললেন!
সকলেই অবাক কিন্তু জিজ্ঞাসার উপায় নেই!
এরপর পাকা কাঁঠাল থেকে দু'কোয়া বের করে দুই কানের সাথে বেঁধে দিয়ে নিজের কাজে বেরিয়ে গেলেন রোগীকে ঐ অবস্থায় শুইয়ে রেখে।

কাজ থেকে বেশ কয়েক ঘণ্টা পর ফিরে কাঁঠালের কোয়া কান থেকে খুলতেই দেখা গেল কাঁঠালের কোয়া ভরে আছে পোকায়!

এরপর, রোগীকে জানালেন পানা পুকুরে স্নান বন্ধ করতে!

এই ছিল একটি ঘটনা, যেটি অবাক করার মতো, আজকের টেস্টের তালিকার যুগে দাঁড়িয়ে।

এরপরের ঘটনা যখন তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন, তখন সকলকে তিনি সন্ধ্যে ছয়টার পরে আর মহাকরণে থাকতে দিতেন না, নিজে কাজ করে যেতেন, কিন্তু বাকিদের ছুটি দিয়ে দিতেন।

তার ব্যক্তিগত সহকর্মী ছাড়া কেউ থাকতো না তাঁর সাথে! একদিন কাজ সেরে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে কাশির শব্দ শুনে প্রথমে সহকর্মীকে বললেন, কে এখনও কাজ করছে?
এদিকে যিনি কাশ ছিলো তিনি ছিলেন, মহাকরণ পরিষ্কার করার দায়িত্বে!

1000028811.jpg
1000039295.jpg
1000039293.jpg
জ্ঞানের পরিধি হোক অপরিসীম এই প্রার্থনা মায়ের কাছে!

কাশির শব্দে ডক্টর বিধান চন্দ্র রায় লোকটিকে ডেকে পাঠান এবং জানান লোকটি টিভি রোগাক্রান্ত সত্বর চিকিৎসায় সেরে উঠবেন।

পরে সত্যি জানা যায় ব্যক্তির টিভি রোগ হয়েছিল।
তাহলে, আজকের ঘটনার সারমর্ম, যারা পুঁথিকে প্রকৃতার্থে আপন করেছেন;
জীবনের কোনো না কোনো সময়, দেখবেন তাদেরকে বীণাপাণি সুযোগ করে দিয়েছেন জীবনের চলার পথে।

কেউ তাকে নিজের পাথেয় করে এগিয়ে গেছেন জীবনে, নিজেদের করে রেখে গেছেন অমর! আর, অধিক সংখ্যক ভাগ্যের দোহাই দিয়ে পিছিয়ে গেছেন।

যারা লেখাটি পড়বেন তাদের জন্য জানিয়ে রাখি, ভাগ্যের পথ প্রশস্ত হয় যখন কর্মকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় বিদ্যা আর জ্ঞানকে সহপাঠী করে।

1000010907.gif

1000010906.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...
Loading...

মহিমা এবং ডক্টর বিধান চন্দ্র রায়ের অসাধারণ জীবনগাথা নিয়ে এমন তথ্যবহুল ও হৃদয়স্পর্শী লেখা উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, দিদি! বিদ্যার দেবীর আশীর্বাদ যাদের উপর থাকে, তারা যে শুধু জ্ঞানের দিক থেকে সমৃদ্ধ হন তা নয়, বরং মানবসেবার ক্ষেত্রেও তাদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে ডক্টর বিধান চন্দ্র রায় তার উজ্জ্বল প্রমাণ।

আজকের উন্নত প্রযুক্তির যুগে দাঁড়িয়ে, যেখানে চিকিৎসা অনেকটাই নির্ভরশীল টেস্ট রিপোর্টের উপর, সেখানে তার মতো একজন চিকিৎসকের অসাধারণ রোগ নির্ণয় ক্ষমতা সত্যিই বিস্ময়কর! পাশাপাশি, তার বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, সময়ানুবর্তিতা ও নীতিবোধ বর্তমান সমাজের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

লেখার প্রতিটি অংশ গভীর ভাবনার খোরাক জোগালো। এমন অনুপ্রেরণাদায়ক লেখা আরও চাই।

এত সুন্দর একটা বিষয়বস্তু নিয়ে, আজকে আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন এর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি।
আপনার পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। এটি একটি গভীর চিন্তাভাবনার পোস্ট ছিল আজকে ! লেখাটি খুবই প্রেরণাদায়ক এবং যেভাবে এটি সরস্বতী দেবী, এবং ডক্টর বিধান চন্দ্র রায়ের জীবন কাহিনির মাধ্যমে মানবতার সেবা ও জ্ঞানের গুরুত্ব তুলে ধরেছে আমাদের সাথে। সত্যিই তা মনোমুগ্ধকর।
তাঁর জীবনের ঘটনাগুলি খুবই প্রশংসনীয়, বিশেষ করে তাঁর চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিঃস্বার্থ সেবা এবং ১৫ টায় রোগের বেশি সে দেখতো না। আপনার পোস্টটি সত্যিই অতুলনীয় দিদি, ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন,আপনার জন্য সব সময় শুভকামনা রইল দিদি।