যা কিছু শুরু হয়, তার শেষ ও আছে, ঠিক তেমনি বিগত দুটো দিন সুন্দরবনে অতিবাহিত করে, আজকে নিজ বাসস্থানে ফিরে এসেছি।
এখন ঘড়িতে বাজে রাত ৮ টা বেজে ৪৮ মিনিট, যখন লেখা শুরু করলাম, ফিরেছি আধঘন্টা হয়েছে।
আজকে যেহেতু যাত্রার অন্তিম পর্ব, কাজেই লেখাটি একটু দীর্ঘ হবে, জানিনা কতজন লেখাটি পড়বেন, তবে সেই আশায় নিজের লেখায় খামতি রাখা কারচুপি হবে।
কাজেই, লেখার সূত্রপাত করবো গতকালের ঝড় খালি সম্পর্কে আপনাদের অবগত করেছিলাম, আজকে সেখান থেকে ফেরার পর থেকে আজকে বাড়ি পৌঁছনোর আগ পর্যন্ত যাত্রার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেবো।
গতকাল, দুপুরের খাবার খেয়েছিলাম ঝড় খালি থেকে ফিরে। ফেরার পথে স্থানীয় বাজার থেকে তেমন কিছুই কেনার পাই নি, খালি মধু কিনেছি, আর আমার সাথে থাকা তিনজন মহিলাদের চাবির রিং উপহারস্বরূপ দিয়েছি, আর নিজের জন্য দুটো কিনে এনেছি।
অবশ্য বিনিময়ে দুজন আমাকে দুটি বাঘের ছবি ম্যাগনেট যুক্ত, সাধারণত ফ্রিজ এবং আলমারির গায়ে লাগানো থাকে উপহার দিয়েছেন।
আসলে সুন্দরবন মানেই বাঘ, মধু, খেজুরের রস ইত্যাদি। তাই একটা কিছু স্মৃতি সঙ্গে আমি সবসময় নিয়ে আসি যেখানেই যাই, এবার উল্লিখিত জিনিসগুলি নিয়ে এসেছি।
ফিরে দুপুরে খেয়েছিলাম, ডাল, বেগুন ভাজা, পাবদা মাছ, ভেটকি মাছ, চাটনি, পাপড়।
রাত্রি ছাড়া সব খাবারের ব্যবস্থা লঞ্চের ডেকেই করা হয়েছিল। কাজেই, দুপুরের খাবার শেষে পুনরায় গন্তব্য পথ ছিল হোটেল।
প্রায় সাড়ে চারটে নাগাদ আমরা হোটেল পৌঁছে গিয়েছিলাম। এরপর স্নান সেরে বড্ডো ক্লান্ত লাগছিল, কিন্তু ঘুম আসছিল না!
আমি যেহেতু খুব বেশি বাইরে যাই না, তাই জায়গা পরিবর্তন হলে এই অসুবিধার সম্মুখীন প্রতিবার আমাকে হতে হয়!
বিকেলের চায়ের পর, সন্ধ্যের টিফিন এগরোল দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু আমার এত ঘন ঘন খাবার খাওয়ার অভ্যেস নেই, রাত সাড়ে আটটা থেকে আমার শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে!
আগের দিনের মতই সকলে ডাইনিং রুমে একত্রিত হয়েছিল, আমাকেও ডাকা হয়, পনেরো মিনিট বসার পর, আমি আর ওখানে বসে থাকতে পারিনি।
এর আগেই ভাগ্যিস বুমিং পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, কারণ রুমে আসার খানিকক্ষণে মধ্যেই লোডশেডিং হয়ে যায়।
জেনারেটর কিছুতেই চলছিল না, মোবাইলের টর্চ আর স্ক্রিনের আলোয় গতকালের লেখা লিখেছি, অসুস্থ শরীর নিয়ে।
যেহেতু অনেক দেরি করে বিদ্যুৎ ফিরেছিল, তাই রাতের খাবারের জন্য আমায় যখন ডাকতে এসেছিল, আমার রুমে তখন রাত প্রায় বারোটা বাজতে যায়।
আমি কিছু খাই নি গত কাল রাত্রে, মানা করে দিয়েছিলাম। পেটের বিশ্রামের প্রয়োজন বোধ করছিলাম।
আজকে মানে ১১ই জানুয়ারি সকাল সেই নয়টায় বেরোবার কথা ছিল, আমার বাড়িওয়ালার রুম উপরের তলায় আর আমি ছিলাম নিচের তলার রুমে।
সারা রাত একটুও ঘুম হয়নি গত রাত্রে, তাই সকালে ওনাকে ফোন করে জানতে চাইলাম কিছু ওষুধ ওনার কাছে আছে কিনা!
উনি জানালেন আছে, এবং নিচে নেমে আমাকে দিয়ে গেলেন।
এরপর চা খেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছিলাম। আজকে রুম ছেড়ে দিতে হবে, বিদায়ের পালা।
ওষুধ খেয়ে খানিক বসে রইলাম, শরীর একেবারে ছেড়ে দিয়েছিল! খানিক বিশ্রাম নিলাম, কারণ ব্যাগ গোছাতে গোছাতে আবার লোডশেডিং কাজেই জল গরম করবার উপায় নেই।
ইলেকট্রিক কেটলিতে জল দিয়েছিলাম সেটাও গরম হয়নি, আরেকবার চা খাবো বলে।
খানিক অপেক্ষা করে ভালোই হয়েছে, ওষুধে কাজ হয়েছিল, তাই শরীর একটু ভালো লাগছিল। এতটা পথ আসতে হবে, রীতিমত দুশ্চিন্তায় ছিলাম।
দেখলাম, কারেন্ট ফিরলো, জল গরম হতেই স্নান সেরে তৈরি হয়ে বেরোতে বেরোতে সাড়ে নয়টা বেজে গেল।
এরপর, জানতে চাইলাম, কোথায় যাওয়া হবে?
শুনলাম, পাখিরালয় আর হ্যামিল্টন সাহেবের বাড়ি দেখতে যাওয়া হবে।
কারণ, দুটি জায়গা গৎখালি যেখানে আমাদের বাস দাঁড়িয়ে ছিলো তার কাছাকাছি।
যেহেতু রাত্রে খাই নি, তাই সকলের প্রাতঃরাশ করে নিয়েছিলাম। সেখানে ছিল, ছোলে ভাটুরে, আর সেদ্ধ ডিম।
কথা ছিল, দুপুরের খাবার খেয়ে বসে ওঠা হবে, তাই দশটায় সকালের খাবারের পর দুপুরের খাবার খেতে বসেছিলাম দেড়টা নাগাদ।
ইচ্ছে করেই খেয়ে তারপর হ্যামিল্টন সাহেবের বাংলোয় যাবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যাতে একটু হাঁটাচলা করে বাসে ওঠার সময় পাওয়া যায়, খেয়েই সঙ্গে সঙ্গে বাস জার্নি বেশ ধকলের।
সকালের খাবার খাওয়ার পর যখন পাখিরালয় পৌঁছলাম, বেশ কিছু পরিযায়ী পাখির দেখা পেলাম।
গত দুদিন এর মত আজকেও ভিডিও করে নিয়েছিলাম। এরপর মনে হলো সম্পাকে ভিডিও কল করি।
দেখাই পাখিগুলোকে, যথারীতি হাঁপাতে হাঁপাতে ফোন ধরলেন আমাদের মহারানী, এরপর বেশ খুশি হলো প্রকৃতির নির্ভেজাল দৃশ্যের সাথে পাখিদের দেখে।
প্রতিবছর এই সময় অস্ট্রেলিয়া থেকে পরিযায়ী পাখিরা আসে। আজকে আমি ডিজিটাল ক্যামেরার অভাব বোধ করেছি ভীষণভাবে।
অনেক পাখির ছবি মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় স্পষ্ট তোলা সম্ভব নয়। আরো একটি বিষয় বন্যেরা কখনোই মানুষের মতো করে চলে না, তারা নিজেদের মতো করেই বনে চলে ফিরে বেড়ায়। আমরা তাদের জায়গায় অনুপ্রবেশ করে তাদেরকে নিজেদের আনন্দের খোরাক মনে করি, সেটা আমাদের দুর্বলতা।
তাই অনেক পাখি এক মুহূর্তের মধ্যেই চোখের অলক্ষে চলে যাচ্ছিল, যেটি মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ এক প্রকার অসম্ভব!
যাইহোক, কথা শেষে খানিক আড্ডা পর্ব চললো, লঞ্চের নিচে পাঁচ খানা বেড ছিল, একটাও ছবি তুলতে পারিনি কারণ সেখানে তরল পার্টি চলছিল।
সেটি অন্য বিষয়, কারণ ব্যক্তি হিসেবে আমরা ভিন্ন, কাজেই যার যেভাবে আনন্দ করতে ভালো লাগে, করবে!
আমরা উপরেই ছিলাম। উচ্ছে আলু ভাজা, ডাল, আলু পটলের তরকারি, ট্যাংরা মাছ, চাটনি দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে প্রবেশ করলাম ৫ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে হ্যামিল্টন সাহেবের বাড়িতে।
এই বাড়ির একটি ইতিহাস এখানে উল্লেখ করছি, এই বাড়িতে ১৯৩২ সালে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এবং কবি ঐ বছরের ডিসেম্বর মাসের ৩০ এবং ৩১ তারিখ হ্যামিল্টন সাহেবের বাড়িতে অতিবাহিত করেন।
সাহেবের ইচ্ছে ছিল, সুন্দরবনে অবস্থিত ওনার বাংলোর আশপাশটা যদি শান্তিনিকেতনের মতো করে গড়ে তোলা যায়।
ভালো লাগলো, সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি বাড়িটি দেখতে। ঘরগুলো খালি এবং দরজা তালাবন্ধ।
জানিনা আদেও ভিতরের জিনিসের কি করা হয়েছে, তবে এখনও বাইরেটা এবং কাঠের বাড়িটি পর্যটকদের রোমাঞ্চ জাগাবার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ রসদ জোগাচ্ছে।
একটি কারণ বাড়িটি এখনও অক্ষতই রয়েছে এত বছর বাদে যত্নের ফলে, আরেকটি এর পিছনের ইতিহাস।
এখানে বেশকিছু ছবি তুলে পুনরায় লঞ্চে উঠে পড়ি কারণ সকলের মধ্যে একজনের গৌহাটির ফ্লাইট ছিল রাত সাড়ে নয়টায়, কাজেই সাতটার মধ্যে ওনাকে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দেবার কথা।
খানিক ধকলের হলেও প্রকৃতির মাঝে কাটানো তিন দিন এবং দুই রাত আমি উপভোগ করেছি।
কিছু বিষয় আমার ভালো লাগেনি, তবে সেটা জায়গা নয়, কিছু মানুষকে, তথা তাদের আচরণ।
আর, ঠিক এই কারণে আমি অপরিচিত কিংবা চেনা অথচ ঐ রথ দেখা কলা বেচার মতো করে ঘোরা পছন্দ করি না।
একলা থাকলে এই বিড়ম্বনা! অচেনা জায়গায় একলা যেতে খানিক ভয় হয়। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা জেনেই আমি অন্যের সাথে বেড়াতে যাই, কিছু বিষয় মানিয়ে নিতে হবে।
এটাও হয়তো প্রয়োজন, জানিনা তবে এবার আবার চেনা পরিবেশে প্রবেশ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর নয় এবার আবার কাজে মনোনিবেশ আর চেনা রুটিন এর মধ্যে থাকবো।
এখন ঘড়ির কাঁটা বলছে রাত এগারোটা বেজে ৭ মিনিট, লেখায় ইতি টেনে বিদায় নিলাম, তবে আপনাদের মধ্যে কে কে সুন্দরবন গিয়েছেন জানাতে ভুলবেন না মন্তব্যের মাধ্যমে।
আজকে আপনার সুন্দরবনে, আনন্দের, মুহূর্তের, শেষ দিন ছিল! যা আপনার পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম, আপনার পোস্টের কিছু ভিডিও দেখে খুব আনন্দ উপভোগ করছি!কেননা এত সুন্দর পাখিদের মেলা, একসাথে এত ঝাক পাখিগুলো, আকাশে উড়ছে যা একটি মনোরম দৃশ্য ছিল। যা ভুলার মত নয়! আমি আশাবাদী এত সুন্দর দৃশ্যটি আপনার স্মৃতি হয়ে থাকবে।
আপনার পোস্টটি পড়ে জানতে পারলাম,আপনি সুন্দরবন থেকে মধু নিয়ে আসছেন। এই শীতকালে মধুর উপকারিতা অসীম যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার। আপনার গিফটের জিনিসগুলো অনেক সুন্দর হয়েছে, এত সুন্দর একটি আনন্দ মুহূর্ত,আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সব সময় আপনার জন্য দোয়া রইল দিদি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বেশকিছু অচেনা মানুষের সাথে এখানে পরিচিত হলাম, জানিনা ভবিষ্যতে আর কোনদিন দেখা হবে কিনা! সেটার সম্ভাবনা খুবই কম, তাই এই সামান্য উপহার একটা স্মৃতির অংশ হয়ে থাকবে।
সুন্দরবন কিছু জিনিসের জন্য প্রসিদ্ধ তারমধ্যে মধু একটি। তাই সঙ্গে নিয়ে এলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
We support quality posts and good comments Published in any community and any tag.
Curated by : @edgargonzalez
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Thank you @edgargonzalez for your support 🙏😊
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit