ছোটবেলা থেকেই আমরা একটা জিনিস শিখে আসছি, “অহংকার পতনের মূল”। অর্থাৎ, অহংকার করলে পতন ঘটবে। কিন্তু ছোটবেলায় এই কথাটির তাৎপর্য আমরা হয়তো সেভাবে উপলব্ধি করতে পারিনি। কিন্তু যত বড় হচ্ছি ততই যেনো নিজের চোখের সামনে ফুটে উঠছে কথাটির সত্যতা।
দম্ভ বা অহংকার মানব চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ”যার যোগ্যতা যত কম তার আড়ম্বর তত বেশী”। মানে আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী আপনার যা পাওয়ার কথা ছিল যদি আপনি তার চেয়ে বেশী পেয়ে যান তাহলে আপনার মধ্যে অহংকারের সৃষ্টি হয়।
আমার পরিচিত এক জনের উদাহরণ আপনাদের সাথে শেয়ার করি। আমার এক আত্মীয় কর্মসূত্রে দেশের বাইরে থাকেন। বিদেশ যাওয়া আগে তার পরিবারের অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটে। নতুন করে ঘোর তোলে। এক কথায় রমরমা অবস্থা। কিন্তু অবস্থার সাথে সাথে তাদের যে জিনিসটা পরিবর্তন হলো তা হলো মানসিকতা। আগে যেখানে সবার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল সেখানে তাদের চেয়ে একটু নিচু লেভেলের লোকগুলোকে হেয় করতে থাকলো। টাকার দম্ভ যেনো তাদের একটু একটু করে পেয়ে বসতে থাকলো।
এর মধ্যে ছুটি পেয়ে আমার সেই আত্মীয়। দেশে ফিরে আসলো। বার বার আত্মীয় বলার কারণ তারা আমার ঘনিষ্ট আত্মীয়ই বটে তাই সম্পর্কটা গোপনই রাখতে চাচ্ছি। তো যা হোক। আমরা সবাই গেলাম তাকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করতে। সবাই খুব খুশি। প্রায় ৪ বছর পর সবার সাথে দেখা হবে। হই হুল্লোড় করে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হলো। কাছের মানুষ সবার জন্যই তিনি কিছু কিছু জিনিস নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তার পরিবারের এমনভাব যেনো কাউকেই কিছু ধরতে দিবে না। সেই আত্মীয় যার জন্য যা এনেছে সবাইকে তা বুঝিয়ে দিয়েছিল যদিও। ১ মাসের ছুটির পর সে আবার বিদেশ চলে গেলে তার পরিবারের লোকজনের কথায় যেনো টিকা যাচ্ছিল না। যাকে যা উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল সেই নিয়েই খোঁটা দেওয়া শুরু করলো তারা। অনেকে অতিষ্ট হয়ে সেগুলো ফেরতও দিয়েছিল। এভাবেই আস্তে আস্তে সেই পরিবার সকলের চক্ষুবিষ হয়ে উঠছিল। কিন্তু তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। কারণ তাদের টাকা আছে কারও তোয়াক্কা করেনা।
সেই পরিবারের বড় ছেলেটা ধীরে ধীরে নেশার কবলে পড়ে গেলো। এহেন কোন নেশা নেই যে সে না করে। বিদেশে থাকা সেই আত্মীয় এরও হঠাৎ একদিন চাকুরী চলে গেলো। পরিবারের ভোরণ পোষণ দিতে পারছিল না আর। অন্যদিকে ছেলে নেশাগ্রস্থ। টাকার জন্য মায়ের উপর চাপ দিচ্ছিলো। নিরুপায় হয়ে মা এনজিও থেকে টাকা তুলে ছেলের নেশার টাকা জোগাচ্ছিল। আমাদের সকলের অগোচরে। কিন্তু সত্যি তো কখনও চাপা থাকে না। পরবর্তীতে আমরা সব জানতে পারলাম। এভাবেই আমার চোখের সামনেই একটি সাজানো গোছানো পরিবারকে ধ্বংস হয়ে যেতে দেখলাম। তাদের অবস্থা এখন পূর্বের চেয়েও শোচনীয়। যদিও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের তারা হেয় করেছিল, সেই আত্মীয়রাই তাদের এখন আগলে রেখেছে।
এতো গেলো একটি উদাহরণ। এমন আরও হাজার হাজার নজির আছে দম্ভের কারণে যে পতন ঘটেছে। উপরে একজন বসে আছেন। তিনি সব দেখছেন। আপনি অন্যায় করবেন, অবিচার করবেন আর পার পেয়ে যাবেন? তা কখনো হবে না। প্রকৃতি তার আপন নিয়মে প্রতিশোধ নিয়ে নিবে। তাই অর্থ-সম্পদ , ক্ষমতা বা যে কোন কিছুর দম্ভ করার আগে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন। আজকে আপনি রাজা কাল যদি ফকির হয়ে যান তখন কি সেটা মেনে নেওয়ার ক্ষমতা আপনার আছে?