শৈশবে মামার বাড়ি বেড়াতে যাবার কিছু স্মৃতিচারণ।

in hive-120823 •  3 months ago  (edited)

''নমস্কার''

প্রিয় বন্ধুরা,

আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় সকলেই ভালো আছেন। সবাই ভাল থাকেন ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করি। ঈশ্বরের কৃপায় ও আপনাদের আশীর্বাদে আমিও ভালো আছি। আজ আপনাদের মাঝে আমি একটু অন্যরকম বিষয় নিয়ে হাজির হলাম। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো মামার বাড়ি নিয়ে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

lost-places-2759275_640.jpg
Pixabay

মামার বাড়ি


ছোট বেলা মামার বাড়ি বেড়াতে যেতে কত আনন্দ লাগতো। স্কুল পরকালীন সময়ে যখন স্কুল বন্ধ পেতাম মা-বাবাকে বলতাম আমাদেরকে মামার বাড়ি নিয়ে চলো। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন সময়ে স্কুল এক মাসের জন্য ছুটি দেওয়া হতো। এই সময়টাই ছিল মামার বাড়ি বেড়ানোর উত্তম সময়।

আমার মামার বাড়ি ছিল ভাটি অঞ্চলে মেঘনা নদীর কিনারায়। মামার বাড়ি আমাদেরকে লঞ্চে করে যেতে হতো। আমার মামার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিনগর থানা চাতলপাড় গ্রামে। মামার বাড়ি যাবার জন্য আমরা প্রস্তুত হলে তারপর মামার বাড়ি যাবার জন্য মামার বাড়িতে কিছু না কিছু নিয়ে যেতে হবে তাই আমাদের বাজারে মিষ্টি খুব প্রসিদ্ধ ছিল।

আমার বাবা আমাদের বাজার থেকে মিষ্টি জিলাপি নিমকি দই মামার বাড়িতে নেয়ার জন্য এখান থেকে ক্রয় করে নিতো। মামার বাড়ি যাবার জন্য আমাদের বাড়ি থেকে ভোর ৬টা সময় রওনা দেওয়া লাগতো এবং প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে লাখাই থানার মাদনা নামক স্থান থেকে লঞ্চের মাধ্যমে যেতে হতো।
river-6580641_1280.jpg
Pixabay
লঞ্চ জেটিঘাটে আসার আধঘন্টা আগে মাদনা পৌঁছে যেতাম তারপর বাবা মা ছোট ভাই বোন মিলে হালকা নাস্তা সেরে ফেলতাম। তারপর জেটিঘাটে গিয়ে লঞ্চের টিকেট ক্রয় করে লঞ্চে ওঠার জন্য প্রস্তুত হতাম। আমার আবার লঞ্চে খুব ভয় লাগতো উঠতে বাবা আমাকে ধীরে ধীরে উঠিয়ে নিতো।

তারপর লঞ্চে প্রায় ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট যাত্রা পথে লঞ্চের ভেতর নানান রকম খাবার পাওয়া যেত যেমন- চিনি মিশ্রিত কুড়ানো নারিকেল, ঝাল মুড়ি, চানাচুর, সাগরকলা, ব্রেড, পানি, এমনকি ভাত খাবারও ব্যবস্থা ছিল। লঞ্চে উঠতে ভয় পেতাম কিন্তু লঞ্চে যাতায়াত করা খুব আনন্দের ছিল।
ship-50445_1280.jpg
Pixabay
৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট লঞ্চ ভ্রমণ শেষে বরবাজার যেটি ঘাটে এসে পৌঁছায়। তারপর চাতলপাড় বড়বাজার থেকে ১০ মিনিট পায়ে হেঁটে চাতলপাড় চকবাজার পাড়া পৌঁছাই। চাতলপাড় চকবাজার পাড়ার রাস্তার সঙ্গেই আমার মামার বাড়ি সামনে মেঘনা নদী। আমার দিদিমা আমাদের আসার খবর শুনলে রাস্তায় পথ চেয়ে অপেক্ষায় বসে থাকতো।

আমার দিদিমা আমাকে খুব ভালবাসত। মামার বাড়ি গিয়ে সবাই ফ্রেশ হয়ে তারপর মেঘনা নদীর ফ্রেশ মাছ দিয়ে এবং হাঁসের মাংস দিয়ে আমরা প্রথমে খেতাম। বিশেষ করে মেঘনা নদীর কিনারায় মামার বাড়ি হওয়াতে এখানে নদীর ফ্রেশ মাছ ফ্রেশ সবজি গাভীর দুধ সস্তা ও ছিল এবং প্রচুর পরিমাণ পাওয়া যেত।
fish-5893409_640.jpg
Pixabay
আমি আমার দাদুর সঙ্গে বাজার করার জন্য সকালবেলা চলে যেতাম বাজারে। বাজার থেকে মেঘনা নদীর ফ্রেশ গলদা চিংড়ি, ফ্রেশ টেংরা মাছ, ফ্রেশ পোয়া মাছ, বোয়াল মাছ, আইর মাছ ইত্যাদি ক্রয় করা হত। কথায় আছে মামার বাড়ি মধুর হাড়ি। আমার দিদিমার হাতের রান্না কি যে করত আমি তা এখনো ভুলতে পারিনা।

দিদিমাদের সঙ্গে আমি আবার লুডু খেলাতে বসে যেতাম লুডু খেলায় আমাকে নিয়ে টানাটানি করতো কার সঙ্গে খেলবো। আমি লুডু খেলায় খুব ভালো করতাম বলে আমি আমার দিদিমার সঙ্গে খেলতাম। মামার সঙ্গে মেঘনা নদীতে গিয়ে স্নান করতাম, কি যে ভালো লাগতো এত বড় নদীতে স্নান করতে।
boat-4772295_640.jpg
Pixabay
বর্তমান সময়ে মামার বাড়িতে গাড়ি করে যাওয়া যায়। কিন্তু ভ্রমণে সেই আগের আনন্দ অনুভব হয় না।আশা করি সকলেরই পোস্টটি পড়ে ভাল লাগবে যে সবার মামার বাড়ি ভ্রমণ করার ওই দিনগুলির কথা মনে হবে।

সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করে আজ এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আমার মামার বাড়ি মাত্র ২ কিলোমিটার সকাল হলেই সবার সাথে দেখা হয় ৷ আর আমি কি যাবো মামার বাড়ি তবে আমি ছোট থেকেই আমার মামার বাড়ি খুব কম যাওয়া আসা করেছিলাম ৷

যাই হোক আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ৷ ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷

যেহেতু আপনার মামার বাড়ি কাছাকাছি তাই আপনি মামার বাড়ি আদর্শ সম্পর্কে একটু কমে জানবেন। কারণটা হচ্ছে যখন আমরা সচরাচর কোন আত্মীয় দেখি তার প্রতি মায়া একটু কমই থাকি। আপনার মামার বাড়ি যেদি দূরে থাকতো তাহলে বুঝতেন মামার বাড়ির আদর ভালোবাসা কেমন। আপনি দেখেন আপনার মামার বাড়ি কাছে থাকার কারণে মামার বাড়ি তেমন একটা যান না তার কারণ যেতে কাছাকাছি মামার বাড়ির কাউকে না কাউকে আপনি দেখতে পাচ্ছেন। যাইহোক সুন্দর মন্তব্যটি করেছেন তার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

মামার বাড়ি ফিরে প্রত্যেকের অনেক আনন্দের কিছু স্মৃতি থাকে।। আপনার মামার বাসা মেঘনা নদীর পাশেই আর লঞ্চে করে যেতেন।। আমার মামার বাসায় আমি নৌকা দিয়ে যেতাম আর নদীর কিছুটা দূরেই বাসা ছিল এখন অবশ্য নদী নেই কিন্তু আগের মতো যাওয়া হয় না।।

মামারবাড়ি স্মৃতিগুলি মনে হলে মন চায় সেই আগের মত যদি হয়ে যেত আমাদের জীবন তাহলে কতই না ভালো হতো। সত্যিকার অর্থে আমাদের পিছনে ফেলে সেই দিনগুলি খুবই ভালো ছিল। মামার বাড়িতে বেড়ানোর সে আনন্দগুলো যখন মনে হয় ভাবলেও তখন খুব আনন্দ লাগে। মামার বাড়ির আদর ভালোবাসা কখনো ভোলার নয়। আমার কষ্ট পড়ে এত সুন্দর এ কেমন মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

সত্যি ভাই আমারও এমন মনে হয় যদি সেই আগের দিনগুলো ফিরে পেতাম কতই আনন্দ করতাম।। আমি অনেক সময় বাসায় না বলেই মামার বাসায় চলে যেতাম এতটা আনন্দ লাগতা আর এখন যেতে ইচ্ছে করে না দিনের সাথে সাথে মানুষের পরিবর্তন।।

বর্তমান সময়ে মামার বাড়ি যাবার মধ্যে আর শশুর মামা বাড়ি যাওয়ার মধ্যে রাত দিন পার্থক্য। সে আগের আনন্দ আর এখন নেই পরিবারে কিছু মানুষও এখন পাওয়া যায় না কারণ বয়সের কারণে অনেকে পৃথিবী থেকে চলে গেছে।

ভাই যেহেতু বিয়ে করিনি তাই শ্বশুরবাড়ির কথা বলতে পারছি না এটা একদম সঠিক বয়সের কারণে সব কিছুর পরিবর্তন আছে মানুষ থেকে শুরু করে।।

Loading...

মামার বাড়ি যাওয়ার অনুভূতিটা অন্যরকম, যখনই মামার বাড়ি যাওয়ার সময় আসত তখনই খুব আনন্দ অনুভব হতো, আগে পায়ে হেঁটে মামার বাড়ি যেতাম, আমাদের গ্রাম থেকে ২ গ্রাম পরেই মামার বাড়ি ছিল পায়ে হেঁটে যেতে কষ্ট হলেও খুব আনন্দ হতো, কিন্তু সেই আনন্দটা এখন আর নাই, ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

শৈশবে মামার বাড়ি যাবার কথা শুনলেই মন আনন্দে ভরে উঠতো। মামার বাড়ি যাব বলে খেলার সাথীদেরকে বলতাম যে মামার বাড়ি যাচ্ছি আমি। মামার বাড়িতে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্ত মামার বাড়ির আদর ভালোবাসা কখনো ভুলার নয়। আমার বাড়ি কথা যখন মনে হয় তখন মন চায় সে আগেকার মতো যদি সবকিছু হয়ে যেত। খুব সুন্দর মন্তব্য করেছেন তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সবার ছোটবেলাতে মনে হয় মামার বাড়ি যাওয়ার এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা। আপনারা পড়ছেন একটা সময় বের হয়ে যেতেন বিভিন্ন ধরনের নিমকি, মিষ্টি ইত্যাদি নিয়ে। হেটে ৪ কিলোমিটার জায়গা যাওয়াটা কষ্টকর কিন্তু মামা বাড়ি যাওয়া বলে কথা।
এরপর আমি তিন ঘণ্টার লঞ্চ জার্নি।
পৃথিবীর সব দিদিমার এই বোধ করে একই রকমের হয়ে থাকে।
আমার নানী ও আপনাদের দিদিমার মতই পথ চেয়ে বসে থাকতো। লেখা পড়ে মনে পড়ে গেল সেই সব দিনের কথা।
দাদুর সাথে বাজারে যেতেন। মেঘনার টাটকা মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরতেন।
সত্যি বলতে এসব আমাদের স্মৃতি আজীবনের সঙ্গী।

বর্তমান সময়ে এগুলো শুধু স্মৃতি। যে দিনগুলি ফেলে এসেছি ঐ দিনগুলি আর কোনদিন ফিরে পাবো না। সেই আনন্দ এখন আর নেই। দাদুর সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো মামাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো দিদিমার সঙ্গে লুডু খেলা দিদিমার সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো যখন মনে হয় ভালো লাগে আবার সেই দিনগুলিতে ফিরে যেতে পারবো না বলে খুব কষ্ট লাগে। সুন্দর মন্তব্যটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।