আশা করি সকলেই অনেক ভালো আছেন। আমি ও ভালো আছি। আবার ও ফিরে আসলাম, তবে এবার আর অন্যের লেখা চুরি করে নিয়ে আসিনি। নিজে লিখেছি নিজের মত করে।
আপনাদের মনে জায়গা পেলে পরবর্তী তে আরো অনেক ভালো কিছু করবো ।
সবাই কে অনুরোধ করব আগের ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আজকের গল্পের নাম -মা
মা
ছোট্ট গ্রামটির নাম ছিল সীতাপুর। সেখানকার বাতাসে সব সময়েই মাটির গন্ধ মিশে থাকত। মেঠো পথ ধরে হাঁটলে দূরে সবুজ ধানের ক্ষেতে চোখ আটকে যেত। গাঁয়ের মেঠো পথে ভোরের কুয়াশা ভেদ করে হেঁটে চলত মানুষ আর তাদের মাঝে এক নারী ছিলেন ।
তার নাম ছিল রাধা।
রাধার দুই ছেলে অরুণ আর বরুণ। স্বামী কৃষ্ণের মৃত্যুর পর থেকেই রাধা তার ছেলেদের নিয়ে একাই সংসার চালায়। অরুণ বড় কিন্তু বয়সে তেরো ,আর বরুণ এর বয়স ১০।
কৃষ্ণ মারা গেছেন অনেক বছর আগে আর সেই থেকেই রাধা সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ভোর হতে না হতেই রাধা ঘুম থেকে উঠতেন। পুকুরে গিয়ে পানি আনতেন তারপর রান্না-বান্না করে ছেলেদের খাইয়ে দিয়ে তাদের স্কুলে পাঠাতেন। নিজেও মাঠে কাজ করতে যেতেন। দিনের শেষে আবার বাড়ি ফিরে সারা দিনের কাজের ক্লান্তি ভুলে হাসিমুখে ছেলেদের আদর করতেন। তাদের বুঝতে দিতো না যে তাদের বাবা নাই।
অরুণ আর বরুণ নিজেদের মধ্যে খুব মিলেমিশে থাকত। অরুণ বরাবরই একটু শান্ত স্বভাবের ছিল বরুণের তুলনায়। বরুণ ছিল দুষ্টু, সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াত আর রাধা তাকে নিয়ে একটু চিন্তায় থাকতেন। তবে, ছেলেদের প্রতি রাধার ভালোবাসা ছিল অনেক বেশি। তিনি নিজের সমস্ত শক্তি আর ভালোবাসা দিয়ে তাদের বড় করছিলেন।
একদিন, বরুণ হঠাৎ জ্বরে পড়ে গেল। প্রথমে রাধা ভাবলেন সাধারণ জ্বর তবে যখন জ্বর কিছুতেই কমছে না, তখন তিনি চিন্তিত হয়ে উঠলেন। গ্রামের হেকিম এসে কিছু ওষুধ দিলেন তবে তাতেও বরুণের জ্বর কিছুতেই কমছিল না। রাধা ছেলেকে বুকে নিয়ে সারারাত জেগে থাকতেন তার কপালে হাত রেখে মনেপ্রাণে প্রার্থনা করতেন যাতে তার ছেলের জ্বর সেরে যায়।
এরপর, একদিন গ্রামের প্রধান রামদাস এলেন রাধার বাড়িতে। তিনি বললেন, রাধা শহরের হাসপাতালে বরুণকে নিয়ে যাও। গ্রামের চিকিৎসায় কিছু হবে না। শহরের ডাক্তাররা ভালো ওরাই ঠিক করতে পারবে তুমি ওখানেই যাও।
রাধা তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন, বরুণকে শহরের হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। তবে সমস্যা ছিল অন্য জায়গায়। শহরে যাওয়ার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন যা রাধার কাছে নেই। তিনি তার গয়না বিক্রি করে টাকা জোগাড় করলেন। অরুণও মায়ের পাশে দাঁড়াল তার জমানো কিছু টাকা মাকে দিল।
রাধা আর অরুণ মিলে বরুণকে নিয়ে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। ট্রেনে চড়ে তারপর বাসে করে অনেক কষ্টে তারা শহরের হাসপাতালে পৌঁছালেন। ডাক্তার বরুণকে পরীক্ষা করে বললেন তোমার ছেলে টাইফয়েডে জ্বরে আক্রান্ত। তবে চিন্তা করো না আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
হাসপাতালে বরুণের চিকিৎসা শুরু হল। রাধা সারাদিন বরুণের পাশে বসে থাকতেন তার হাত ধরে। অরুণ মায়ের সব কাজে সাহায্য করত। কিছুদিন পর ডাক্তার বললেন,তোমার ছেলে এখন ভালো আছে। তবে আরো কয়েকদিন এখানে থাকতে হবে।
রাধা আনন্দে কেঁদে ফেললেন। তার প্রার্থনা সফল হয়েছে। বরুণ ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিল। কিছুদিন পর তারা সবাই বাড়ি ফিরে এলেন। গ্রামের সবাই তাদেরকে দেখে খুশি হলেন।
বাড়ি ফিরে রাধা তার আগের মতোই কাজকর্ম শুরু করলেন। তবে এবার তার হৃদয়ে একটা নতুন বিশ্বাস জন্ম নিল। তিনি জানলেন ভালোবাসা আর প্রার্থনার শক্তি অসীম। মা হওয়া সহজ নয় তবে একজন মা যে কোনো বাধা অতিক্রম করতে পারেন তার সন্তানের জন্য।
বছর ঘুরে এল অরুণের বার্ষিক পরীক্ষা। সে সারা বছর ভালোভাবে পড়াশোনা করেছে। রাধা দেখেছে কীভাবে তার বড় ছেলে মায়ের সমস্ত দায়িত্ব ভাগ করে নিতে শিখেছে। বরুণও এবার বেশ ভালো হয়ে গেছে। সে এখন বুঝতে শিখেছে মায়ের কষ্ট আর ভালোবাসার মর্ম।
পরীক্ষার ফলাফল বের হলো। অরুণ প্রথম স্থান অধিকার করেছে। রাধা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। তিনি ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। বরুণও ভাইয়ের সাফল্যে খুশি হল।
গ্রামের সবাই অরুণের প্রশংসা করল। প্রধান রামদাস এসে বললেন,রাধা তোমার ছেলেরা তোমার গর্ব। তুমি মা হিসেবে যেমন মহান তোমার সন্তানরাও তেমনই হবে।
রাধা বললেন,আমি তো শুধু আমার দায়িত্ব পালন করছি। মায়ের ভালোবাসা সন্তানদের সঠিক পথে চালিত করে।
সময়ের সাথে সাথে অরুণ ও বরুণ বড় হয়ে উঠল। তারা দুজনেই মায়ের শিক্ষা ও আদর্শ নিয়ে চলতে শিখল। অরুণ উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে গেল, আর বরুণ গ্রামের স্কুলে পড়তে থাকল।
অরুণ যখন শহরে পড়াশোনা করত তখনো রাধার মনে তার ছেলেদের জন্য একই ভালোবাসা ও চিন্তা ছিল। তিনি নিয়মিত অরুণের সঙ্গে চিঠি বিনিময় করতেন। অরুণও মায়ের চিঠির উত্তর দিত প্রতিবার মায়ের কথা শুনে তার হৃদয় শান্তি পেত।
অবশেষে অরুণের পড়াশোনা শেষ হল। সে একটি ভালো চাকরি পেল শহরে। রাধা আনন্দে কেঁদে ফেললেন। তার সমস্ত পরিশ্রম আজ সার্থক হয়েছে। অরুণ শহর থেকে এসে মাকে বলল মা, আমি আজ যে অবস্থানে পৌঁছেছি, সব তোমার জন্য। তোমার স্নেহ আর মমতা আমাকে আজ এই জায়গায় এনে দিয়েছে।
রাধা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, তুই আমার গর্ব অরুণ। তুই আর বরুণ আমার জীবনের সম্পদ।
বরুণও স্কুল শেষ করে কলেজে ভর্তি হল। সে চাইত তার বড় ভাইয়ের মতো সফল হতে। রাধা তাকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিতেন, তাকে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে বলতেন।
বছরের পর বছর কেটে গেল। অরুণ চাকরিতে ভালো উন্নতি করল, আর বরুণও পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াল। রাধা তার ছেলেদের সাফল্যে গর্বিত ছিলেন। তবে, তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল তার সন্তানদের ভালোবাসা।
একদিন অরুণ আর বরুণ মিলে রাধাকে বলল মা আমরা তোমার জন্য কিছু করতে চাই। আমরা তোমার জন্য শহরে একটি সুন্দর বাড়ি কিনেছি। তুমি সেখানে গিয়ে আমাদের সঙ্গে থাকো।"
রাধার চোখে জল এসে গেল। তিনি বললেন, তোমাদের সঙ্গে থাকতে পারলে আমার আনন্দের শেষ থাকবে না। তবে আমার এই ছোট্ট গ্রাম, এই মাটি আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে। আমি এখানেই থাকব।
অরুণ আর বরুণ মায়ের ইচ্ছার সম্মান । তারা প্রতিবার গ্রামের বাড়িতে এসে মায়ের সঙ্গে সময় কাটাত। রাধা তাদের স্নেহে ভরে উঠতেন।
এইভাবেই চলতে থাকল জীবন। রাধা তার ছেলেদের নিয়ে সুখী হলেন। তার মা হওয়ার দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন সসম্মানে। আর তার সন্তানরা তাকে সবসময় মনে রেখেছে। মায়ের ভালোবাসার শক্তিতে তারা নিজেদের জীবনকে গড়ে তুলেছে।
সকল কে ধন্যবাদ
গল্প টি কেমন লেগেছে একটু কমেন্ট করে জানাবেন🙏
@ubuttam,
ইতিপূর্বে ও আমাদের কমিউনিটি থেকে আপনাকে চৌর্যবৃত্তির জন্য সতর্ক করা হয়েছিল এবং ট্যাগ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি হ্যাশট্যাগসহ আরো কিছু সমস্যা রয়েছে আপনার লেখাতে।
আপনাকে স্পষ্টভাবে বলে রাখি যে আমাদের কমিউনিটিতে সর্বদাই স্টিমিট প্ল্যাটফর্ম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সকল নিয়মাবলি অনুসরণ করা হয়। তাই আপনার যদি এখানে পোস্ট করতে হয় অনলাইনে সক্রিয় থেকে আমাদের সাথে ডিসকর্ডে কথা বলবেন। এমনকি আমি লক্ষ্য করলাম আপনার প্রোফাইলে আরো অনেক পোস্ট যে গুলো মিউট করা বিভিন্ন কমিউনিটি থেকে।
যদি সম্ভব হয় আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন এবং নিয়মাবলী অনুসরণ করেই পোস্ট করবেন। নচেৎ আপনার বিরুদ্ধে আমরা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো। কারণ একজন সক্রিয় স্টিমিয়ান সর্বদাই নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করে। অথচ আপনার সাথে ভয়েসে কথা বলেও আমাদের সন্দেহ দূর হয়নি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit