কারিগর

in hive-120823 •  11 months ago  (edited)

IMG_20190828_212650.jpg

আমার পিছনের ছবিটিতে যে মানুষটিকে দেখতে পাচ্ছেন তার নাম আফছার আলী, সম্পর্কে আমার নানা। বাপ দাদার আমলে জমিজমা ছিলো প্রচুর। বহুদিন আগের কথা। যেসময় পুরো দেশব্যাপি প্রচুর অভাব ছিলো, মানুষ ছিলো কর্মহীন। অভাবের কারণে বাপের আমলেই সব সম্পদ খোয়াতে হয়েছিলো তাকে। বাপ মারা যাওয়ার পর সংসারে আরো অভাব নেমে এসেছিলো। সংসারে শুধু তিনি এক সন্তানই ছিলেন না, ছিলো আরও চারজন। যদিও তিনি বাদে আজ তারা সবাই গত হয়েছেন। যাইহোক যেটা বলছিলাম, বাপ মারা যাওয়ার পর চার ভাই জড়িয়ে পড়েছিলেন বিভিন্ন ছোট ছোট ব্যবসায়। ব্যবসা করে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চলতো কোনোরকমে।

1711045150969-01.jpeg

তিনি প্রায়ই গল্পের খাতিরে বলেন, আজ তোমরা যা দেখছো এবং ভোগ করছো, আমরা আমাদের আমলে তার বিন্দু পরিমানেও পাইনি। ছিলো খাদ্য এবং বস্ত্রের অভাব, পড়েছি ছিড়ে কাপড়। সারাদিনের কাজের আয় দিয়ে রাতে চাল ও তরিতরকারি কিনে এনেছি তারপর সংসারের মানুষ খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছে। শোনায় তখনকার প্রচন্ড ভয়াবহ অভাবের কথা। তখনকার দিনের সেই অভাবের কথা বর্ণনা করে গিয়ে তিনি অনেক সময় কেঁদেও ফেলেন।

তিনি তখন পেশায় ছিলেন একজন হকার। মানে এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে গিয়ে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করতেন, চালিয়েছেন রিক্সাও৷ সবশেষে তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন হোটেল ব্যবসায়। দুর্ভাগ্যক্রমে সে ব্যবসাও তাকে ছাড়তে হয়েছে। তারপর তিনি মনোনিবেশ করেছিলেন ফলের ব্যবসায়। সে ব্যবসাটাও বড় ছেলেকে বুঝিয়ে দিয়ে তিনি ফ্রি মানুষ হিসেবে ঘুরে বেড়িয়েছেন কিছুদিন।

অভাবের সংসারে বড় হওয়া কঠোর পরিশ্রমী মানুষগুলো অলস সময় কমই কাটাতে চান। তাই হয়তো তিনি আবারও উদ্যোগ নিয়ে প্রসার ঘটিয়েছেন নতুন ব্যবসার৷ তার এই ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন অনেক মানুষ।

20170709_155940.jpg

তার এই ব্যবসার কারণে অনেক কর্মহীন মানুষের কর্মের ব্যবস্থা হয়েছে৷ প্রতিনিয়ত তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ২০ এর অধিক মানুষ। শুধু তাই নয়, তার এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বাহিরের মানুষদেরও আয় বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েক গুন।

প্রচন্ড খাদ্যের অভাবে বড় হওয়া এই মানুষটার সংসারে এখন প্রতিদিনই রান্না হয় কমপক্ষে ২০ জন মানুষের খাবার, দিন ভেদে আরো বেশিও হয়।

একজন মানুষ কতটা কঠোর পরিশ্রমী হতে পারে তা আমার নানাকে দেখলেই বুঝতে পারি। বয়সের ভাড়ে নুয়ে পড়েছেন তবু কখনও অলস সময় কাটাতে দেখিনি। ঘুম ব্যতিত সবসময়ই তিনি থাকেন কর্মব্যস্ত।

শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন বলেই তিনি আজ একটা অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন। ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বহু মানুষের কর্মসংস্থান। একটা প্রবাদ আছে, "পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি"। সত্যি তাই, জীবনে যিনিই পরিশ্রম করবেন, একদিন না একদিন তিনি সফল হবেনই। হোক সেটা যুবক বয়সে কিংবা বৃদ্ধ বয়সে। আমার নানা ষাটোর্ধ একজন বৃদ্ধ মানুষ। আমার চোখে দেখা তিনি একজন দক্ষ মানুষ তৈরির কারিগর।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

প্রিয় ভাই পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই আসবেই আজ অথবা কাল। আপনার নানাকে আমার সালাম দেবেন এবং তার প্রতি আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। উনারা যে পরিমাণ কষ্ট করেছেন তার বিন্দুমাত্র কষ্ট হয়তো বা আমরা করতে পারব না। তারা আমাদের অহংকার তারা আমাদের গর্ব। আমাদের পথ প্রদর্শক।

ভালো থাকবেন প্রিয় ভাই।

খুব সুন্দর একটি মতামত প্রদান করেছেন, প্রিয় ভাই।

Hello @xhadhin
Hard work yields success in a long run my friend. This story is inspiring and encouraging. Good to see how your grandfather is impacting you positively with great words of wisdom.
Thank you for sharing!

Thank you brother for your nice comment.