অসীম আদর, স্নেহ, মমতা এবং ভালোবাসার সমষ্টিগত উচ্চারিত শব্দ “মা”। মা শব্দের বিপরীতে যে নারীর অবস্থান, সে নারীর পদযুগলের নীচে সমগ্র মনুষ্যজাতির জন্য বিধাতা স্বর্গকে প্রতিস্থাপিত করেছেন। "মা” তিনিতো স্বর্গরাজ্যের শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করবেন। আমাদের মা এবং আমাদের মায়ের দ্বারা তৈরীকৃত সংবিধান অনুযায়ি আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালিত হতো তাহলে হয়তোবা মানবজাতির ধরীত্রির মাঝেই স্বর্গসুখ প্রাপ্তী হতো।
নারীর মাতৃরূপের বর্ননা সঠিকভাবে এবং সম্পূর্নরূপে কোন সন্তানের পক্ষেই নিক্ষুতভাবে অভিব্যক্ত করা সম্ভবপর নয়। অধিকাংশই অব্যক্ত রয়ে যাবে। স্ত্রী নারীর ব্যাখা প্রতিটি পুরুষ তার বাস্তবতায় প্রতিনিয়ত ব্যাখা করেই চলছেন। বর্ষাকালে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যেমন বন্যা হয়, ঠিক তেমনি ধৈর্ষ্যের বাঁধ ভেঙ্গে পুরুষের বুকের ভিতরের রক্তক্ষরন হয় প্রতিনিয়ত এই স্ত্রী জাতির জন্য। নারীর মাতৃরূপ নহে, স্ত্রীরূপ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আমাদের পরিবার এবং সমাজব্যবস্থাকে পরিচালিত করছে বর্তমানে।
Image Src
শোন আমরা সবে মাত্র বিয়ে করলাম, আমাদের একটু প্রাইভেসি দরকার। তোমার বৃদ্ধ বাবা, মা, ছোট ভাইবোনদের জন্য প্রাইভেসির অস্তিত্ত্বটুকু আমি খুঁজে পাচ্ছি না এই বাসায়। তোমার ইনকামতো এখন ভালোই হচ্ছে, ব্যাংক থেকে কিছু টাকা লোন নিয়ে চলো আমরা একটা নতুন ফ্লাট কিনে ফেলি। তোমার বুড়া বাবা মা আর ছোট ভাইবোন তোমার বাবার এই ভাঙ্গাচুড়া বাড়িতেই থাকবে। তুমি প্রতিমাসে তাদের খরচের জন্য কিছু টাকা দিয়ে দিলেইতো হবে। তুমিতো আর তোমার দায়িত্বে অবহেলা করছ না। আমরা মাঝেমধ্যে এসে তাদেরকে দেখে যাব।
ভাবা যায়, নতুন বউয়ের মাথায় নিউক্লিয়ার বোমা, থুক্কু, নিউক্লিয়ার পরিবার গঠনের কি যুগান্তকারি প্রতিভা ঝিঁকমিঁক করে। নিজ স্ত্রীর বিষাদময় সেই প্রতিভাকে যথাযথভাবে সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক স্বামী মহাশয় ভালবাসা ও মমতায় শক্ত বন্ধনে তৈরীকৃত গৃহপ্রস্থান করিয়া,টোনা টুনির তাসের ঘরে আশ্রয় লহিতে বাধ্য হন। শুধুমাত্র সামান্য প্রাইভেসির জন্য। বর্তমানের স্ত্রী জাতি যেমন নিজেদের অনলাইন জগতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিজের প্রোফাইলের এর প্রাইভেসি সেটিংসটা খুব ভালোভাবে করতে পারেন, বাস্তবজীবনেও স্বামীর মাতা-পিতা, ভাই-বোনদের থেকে সামাজিক বিচ্ছেদ ঘটিয়ে, বাস্তবজীবনের প্রাইভেসি সেটিংটাও পুঙ্খানুরূপে সম্পাদন করিয়া, সামাজিক ব্যবস্থায় নিউক্লিয়ার বোমা পরিবার তৈরীতে দক্ষ ভূমিকা পালন করিয়া আসিতেছেন।
সামাজিক অবকাঠামো গঠনেও স্ত্রী সমাজের ভূমিকা যথেষ্টভাবে পরিলক্ষিত। উদাহরন দিতে হবে তাইতো, ঠিক আছে দিচ্ছি তাহলে। বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের কথা আমি বাদেই দিলাম, শুধুমাত্র যদি ঢাকা শহরের কথাই বলি, ঢাকাতেই শতাধিক এর উপরে আপনি বৃদ্ধাশ্রমকেন্দ্র খুঁজে পাবেন। বৃদ্ধাশ্রম নামক এই অবকাঠামোর পিছনের ওয়ান এন্ড অনলি স্ত্রী শাষিত পরিবারের অবদান বর্ননাতীত। আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ প্রতিভাবান স্ত্রীদের জন্যই বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং নায়ক “অনন্ত্য জলীল” কয়েক একর জমির উপরের বৃদ্ধাশ্রম নির্মান করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। একবার চিন্তুা করে দেখুন কি বিশাল উন্নয়নের পিছনে স্ত্রী জাতির প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করছেন।
নিউক্লিয়ার পরিবারে শুধু মাত্র স্ত্রী জাতির শাষনতন্ত্রই প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি সমাজের গঠনতন্ত্র এবং শাসনব্যবস্থা পরিবারের শাসনব্যবস্থার সমষ্টিরূপ। স্ত্রীজাতির যে কুটনৈতিক প্রতিভা একটি সন্তাকে তার পিতা-মাতা ও ভাই-বোনদের মাঝে বিচ্ছেদ প্রতিষ্ঠা করে, প্রাইভেসি সেটিং এর অজুহাতে, ধিৎকার সেই সকল স্ত্রীদেরকে এবং তাদের আলালের দুলাল স্বামীদেরকেও।
স্ত্রীবর্গ শুনে রাখুন একটি ভবিষ্যৎবানী, আপনিওতো একজন মা, অথবা ভবিষ্যৎ মাতা, আপনার ক্ষেত্রেও উক্ত বিষয়গুলোর পুনরাবৃত্ত্বি অস্বাভিক কিছু না। আপনাদের প্রাইভেসি সেটিংটা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকলে, আমরা মাতৃ শাষিত একটি পরিবার, একটি সমাজ এমনকি একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাও পেতে পারি।
”মা দ্বারা শাষিত পৃথিবী, স্বর্গলোকের থেকেও অতিব উত্তম”