টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যেসব ম্যাচে তাকিয়ে থাকবে পুরো বিশ্ব!

in hive-121930 •  3 years ago 

আইসিসি মেনস্ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসর দরজায় কড়া নাড়ছে। পাঁচ বছরের অপেক্ষার পর ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের যৌথ আয়োজনে সম্পূর্ণ হবে টুর্নামেন্টটি। এরই মাঝে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করা দলগুলো নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিচার বিশ্লেষণ, আলাপ-আলোচনা। এই বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু ম্যাচের দিকে সবার নজর থাকবে। এমনি কিছুই গুরত্বপূর্ণ ম্যাচ সম্পর্কে আলোচনা করবো আজকের এই প্রতিবেদনে। তবে চলুন আর দেরি না করে মূল আলোচনায় আসা যাক:


image.png
image

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ইংল্যান্ড; ২৩ অক্টোবর; দুবাই

দুই দলের পরিসংখ্যান টানার আগে, শুরু করি ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল দিয়ে। মনে আছে কি, সেদিন কিভাবে শেষ ওভারে লোমহর্ষক নাটকীয়তায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা বৃটিশদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছিল ক্যারিবিয়ানরা, ইডেন গার্ডেনে পিচের একপ্রান্তের কার্লোস ব্রাথওয়েটের দানবীয় ব্যাটিং, আর অন্য প্রান্তে বেন স্টোকসের অসহায়ত্বের কথা? না থাকার কথা নয়। তবে এই বিশ্বকাপে সে ব্রাথওয়েট কিংবা স্টোকস কেউ-ই নেই! দীর্ঘ ৫ বছর পর দুই দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আবারও মুখোমুখি হচ্ছে। উত্তেজনার পারদে ঠাসা এই ম্যাচের দিকে মুখিয়ে আছে ক্রিকেট প্রেমীরা। প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে ইংলিশদের মনেপ্রাণে। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডে হেরেছিল মাত্র ২ ম্যাচ। দুইটিতে প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ! বর্তমানে টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিংয়ের মুকুটধারী ইংল্যান্ড, ৫ বছর আগের সে দল থেকে এখন অনেক শক্তিশালী। বিপরিতে খর্ব হয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন উইন্ডিজদের শক্তি। র‍্যাংকিংয়ে তাদের বর্তমান অবস্থা নবম। কিন্তু গত আসরগুলোর পরিসংখ্যান ক্যারিবিয়ানদের পক্ষে কথা বলছে। বিশ্বমঞ্চের অন্যতম এই প্রতিযোগিতায় পাঁচ বারের দেখায় একবারও গেইলদের পরাজিত করতে পারেনি তারা। তবে এইবার সে অধরা স্বপ্ন পূরণের অনেক কাছাকাছিই আছে থ্রি লায়ন্সরা। ইয়ন মর্গানসহ দলের দম নেওয়ার জায়গা ডেভিড মালান। টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিংয়ের সেরা এই ব্যাটার আছেন দারুন ছন্দে। তাছাড়া জেসন রয়, জশ বাটলারতো আছেনই। আদিল রাশিদকে নিয়ে গড়া বোলিং লাইনআপও বেশ শক্তিশালী। অন্যদিকে, টুর্নামেন্টের অন্য দলগুলোর চেয়ে ব্যাটিংয়ের দিক দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেক্কা দেওয়া বড়ই মুশকিল। বিগ হিটারদের পাওয়ার হাউজ বলা যায় দলটাকে। টি-২০ গ্রেট ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, কাইরেন পোলার্ড, টি-২০তে দ্রুততম ১০০ ছক্কা হাঁকানো ইভেন লুইস থেকে শুরু করে আগাগোড়া সবার কব্জির জোর সমান। যে কোন স্কোর তাড়া করে জেতার সক্ষমতা রাখে তারা। টুর্নামেন্টের ভয়ডরহীন এক দস্যু দল বলা যায় তাদের! ২৩ অক্টোবর, রিমেম্বার দ্যাট ডেট! দুই দলের লড়াই উপভোগ করতে ভুলবেন না।


image.png
image

ভারত বনাম পাকিস্তান; ২৪ অক্টোবর; দুবাই

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এই আসরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ও প্রতিদ্বিন্দ্বীতামূলক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ২৪ অক্টোবর। সেদিন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের মুখোমুখি হবে। প্রতিবেশি এই দুই দেশের মধ্যে ভূরাজনৈতিক সম্পর্কে থেকে সব কিছুতেই সবমসময় রেষারেষি লেগেই থাকে। সে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ক্রিকেট থেকে ফুটবল, সব জায়গাতেই। মাঠের খেলায়ও দুই দলের লড়াই বেশ উপভোগ করেন সবাই। টানটান উত্তেজনায় মাঝে নির্ধারণ হয় প্রায় সব কয়টি ম্যাচের ফলাফল। শুধু দক্ষিণ এশিয়াতেই না, দুই দলের ম্যাচকে ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করে পুরো দুনিয়া জুড়ে। এই উত্তেজনার কমতি নেই, বিশ্বকাপের এইবারের মোকাবেলায়ও। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল পাক-ভারত। টানটান উত্তেজনার মাঝে ৫ রানের ব্যবধানে হেরে শিরোপা হাতছাড়া হয় পাকিস্তানের। তার ২ বছর পর এই হারের আক্ষেপ ঘুচিয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিজেদের করে নেয় পাকিস্তান। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৫ বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। এক ম্যাচ ড্র ব্যাতিত, জয়ের মুখ দেখেনি পাকিস্তান। এই আসরের লড়াইয়ে সবার নজর থাকবে বাবর আজম আর বিরাট কোহলির দিকে। এক বিশেষ লড়াই চলবে তাদের ব্যাট হাতে। তাদের লড়াই মানে দুই কাপ্তানের লড়াই, দৃষ্টিনন্দন কাভার ড্রাইভের লড়াই, দুই নাছোড়বান্দার লড়াই। বিরাট কোহলি এই সংস্করণের সর্বোচ্চ রান(৩১৫৯) সংগ্রহকারী। সর্বোচ্চ গড়ও(৫২.৫৬) তার। এই ফরম্যাটে বাবর আজমের ব্যাটও দ্রুত রানের খাতা ভারি করছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ গড়(৪৬.৮৯) নিয়ে এখন পর্যন্ত করেছেন ২২০৪ রান। আকাশী-নীলদের দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে যেমন বিগ হিটার রোহিত শার্মা আছেন, যিনি এই ফরম্যাটের সর্বোচ্চ(৪) সেঞ্চুরিয়ানও বটে, এ ছাড়া আছেন লোকেশ রাহুল, ঈশাণ কৃশান, হার্দিক পান্ডিয়াও। পাকিস্তানকে যেকোন বড় স্কোর তাড়া করতে কিংবা বড় পুঁজিতে বাজিমাত করতে উইলো হাতে ভরষা যোগাবেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গড়ধারী মোহাম্মদ রিজওয়ান, এছাড়া মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিকতো আছেনই। বোলিং অ্যাটাকে দুই দলেরই রয়েছে সেরা অস্ত্র। জাসপ্রিত বুমরাহ, ভুবেনশ্বর কুমারের বিপরিতে আছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলিরা। দুই দলের লড়াই দেখার অপেক্ষা সবাইকে পোড়াচ্ছে।


image.png
image

শ্রীলঙ্কা বনাম আয়ারল্যান্ড; ২০ অক্টোবর; আবুধাবি

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ৫ শিরোপাধারী দলের একটি শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এই বিশ্বকাপে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে না তারা। বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলতে হলে তাদের টপকাতে হবে রাউন্ড ওয়ানের বাধা। এই রাউন্ডে 'এ' গ্রুপের হট ফেভারিট দল তারা। প্রথম ম্যাচে নামিবিয়াকে সহজে দমাতে পারলেও পরের ম্যাচে আয়ারল্যান্ড বাধা টপকাতে বেগ পেতে হতে পারে লঙ্কানদের। হোচট খেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ার স্বপ্ন ভাঙার পাশাপাশি সুপার টুয়েলভে খেলার সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে। তাই সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত করতে হলে জয়ের বিকল্প নেই লায়ন্সদের। আয়ারল্যান্ড টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিংয়ে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই ধাপ(১২তম) পিছিয়ে থাকলেও, এই ফরম্যাটে তাদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে অনেকবার। বিশ্বকাপ ইতিহাস দুই দল একবারই মুখোমুখি হয়েছিল ২০০৯ সালে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মাত্র ৯ রানের ব্যবধানে হেরেছিল আইরিশরা। সে আসরে বাংলাদেশকেও হারিয়েছিল তারা। যার কারনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাউন্ড খেলতে পারেনি। শ্রীলঙ্কার সেদল আর বর্তমান দলের শক্তি আকাশ পাতাল ব্যবধান। আরিশরা তাই শ্রীলঙ্কার মাথাব্যাথার প্রথম কারন হতে যাচ্ছে। আইসিসির অন্য টুর্নামেন্ট গুলোতে আয়ারল্যান্ড অনেক বার চমক দেখিয়েছে। ২০০৭ ওডিআই বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে ক্রিকেট পাড়ায় হৈচৈ পেলে দিয়েছিল, ২০১১ বিশ্বকাপে তো রীতিমতো রেকর্ড গড়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল, তাছাড়া নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও ৩০০+ রান তাড়া করে জয় তুলে নেয়। ২০১৫ বিশ্বকাপেও জয় তুলতে ভুলেনি। হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়েকে। বলা চলে, বিশ্বকাপের মূল পর্বে যাওয়ার আগেই শ্রীলঙ্কাকে অগ্নি পরিক্ষা দিতে হচ্ছে।


image.png
image

নেদারল্যান্ডস বনাম আয়ারল্যান্ড; ১৮ অক্টোবর; আবুধাবি

নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ডের ম্যাচ রাউন্ড ওয়ানের 'এ' গ্রুপের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ন ম্যাচ হতে যাচ্ছে। যে দল জয় লাভ করবে, সে দল সুপার টুয়েলভে এক পা রাখবে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল তারা। ডুবাইতে আয়ারল্যান্ডসকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় নেদারল্যান্ডস। দুই দলের টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যানও নেদারল্যান্ডসকেই এগিয়ে রাখে। যদিও টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিংয়ে বর্তমানে ১২তম স্থানে আছে আয়ারল্যান্ড ও ১৭তম নেদারল্যান্ডস। পরিসংখ্যান তো আর ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করে না। মাঠের খেলায় অনেক কিছুই বদলে যায়। সে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন আয়ারল্যান্ডের খেলোয়াড়রাও। পল স্টার্লিং, কেভিন'ও ব্রায়ানের ব্যাটিং ক্যামিও, অধিনায়ক অ্যান্ডি ব্যালবার্নি, হ্যারি টেকটর, গ্যারি উইলসনের দ্বায়িত্বশীল ব্যাটিং যেকোন ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। আয়ারল্যান্ডের যথেষ্ট শক্তিশালী বোলিং ইউনিট রয়েছে। মার্ক এডিয়ার, যশ লিটলের সাথে অলরাউন্ডার সিমি সিং ও জর্জ ডকরেলের স্পিন ভেল্কি আইরিশদের নতুন সম্ভাবনা দেখাতে পারে। নেদারল্যান্ডসও কম যায় না। অধিনায়ক পিটার সিলার যেমন নেতৃত্বের দিক থেকে এগিয়ে, তেমনি বল হাতে দলকে রাখেন স্বস্তিতে, ব্যাট হাতে পূরণ করেন রানের অভাব। তাছাড়া তার দলের ব্যাটিং লাইনআপে ম্যাক্স ও'দোদ, বেন কুপার রান তুলতে পারেন যেকোন পরিস্থিতিতে। অলরাউন্ডার রুডলফ ভ্যান ডার মারউই ও রায়ান টেন ডেসকাট দলের চাহিদা অনুযায়ী নিজেরদের ব্যবহার করতে সদা প্রস্তুত। আশা করা যায়, দুই দলের লড়াই সবার জন্য উপভোগ্য হবে।


image.png
image

শ্রীলঙ্কা বনাম নামিবিয়া; ১৮ অক্টোবর; আবুধাবি

বিশ্ব মঞ্চে কোন দলকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সবাই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। ঝোপ বুঝে কোপ মারার জন্য সবাই সদা প্রস্তুত। ১৮ বছর পর আইসিসির কোন গ্লোবাল ইভেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া নামিবিয়া, বিশ্বকাপ যাত্রার প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কার। কঠিন প্রতিপক্ষ হলেও শ্রীলঙ্কাকে কোনঠাসা করার সক্ষমতা রয়েছে তাদের| ২০০৩ সালে আইসিসি ওডিআই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা সে নামিবিয়া আর গেরহার্ড এরাসমুসার এই নামিবিয়ার শক্তির অনেক তফাৎ রয়েছে। স্টিফেন বার্ড, বেন শিকংগ, জেজে স্মিথ, জেন গ্রিনের সাথে কাপ্তান এরাসমুসার সমন্বয়ে গঠিত ব্যাটিং লাইনআপ। অন্যদিকে, বোলিং লাইনআপকে নেতৃত্ব দিবেন বামহাতি অর্থোডক্স বার্নাড স্কল্টজ, জান ফ্রাইলিঙ্ক, লেগ স্পিন অলরাউন্ডার নিকোল লফি ইয়াতন, সাবেক দক্ষিন আফ্রিকান ক্রিকেটার ডেবিড ভিসে। দলটির মূল আকর্ষণ থাকবে ডেভিড ভিসেকে ঘিরেই। শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং লাইনআপকে নেতৃত্ব দিবেন আভিষ্কা ফার্নান্দো, কুশল জেনিথ পেরেরা, দীনেশ চান্দিমাল, ধনঞ্জয়া ডি সিলভারা। মিডেল অর্ডারের ভরষা কাপ্তান দাসুন শানাকা। বল হাতেও ভূমিকা পালন করবেন তিনি। বোলিং অ্যাটামে মূল অস্ত্র ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এছাড়া দুশমান্থ চামিরা, লাহিরু কুমারা, মহেশ থিকশানা, আকিলা ধনঞ্জয়া ও বিনুরা ফার্নান্দোরা তো আছেনই। আশা রাখা যায়, দুই দলের দুর্দান্ত এক লড়াই প্রথম থেকেই জমিয়ে দিবে বিশ্বকাপের এইবাবের আসর।


image.png
image

পাপুয়ানিউগিনি বনাম ওমান; ১৭ অক্টোবর; ওমান

প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে পাপুয়ানিউগিনি। এই আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে সহযোগী আয়োজক ওমানের বিপক্ষে মাঠে নামবে তারা। এর আগে টি-টোয়েন্টিতে দুই দল কখনো মুখোমুখি হয়নি। তবে ৪ ওডিআই ম্যাচের সব কয়টিতে ওমানের বিপক্ষে হেরেছে নিউগিনি। প্রথম রাউন্ডে ওমান ছাড়াও বাংলাদেশ, স্কটল্যান্ডের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে টেক্কা দিতে হবে তাদের। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের এতটা পথ পাড়ি দেওয়া পাপুয়ানিউগিনির ব্যাটিং লাইনআপের মূলমন্ত্র ছিলেন অধিনায়ক আসাদ ভালা ও টনি উরা। ওপেনিং জুটিতে দুই জনের ৫৩.৮৫ গড় আর ৮.৩৪-এর রান রেট সবসময় দলকে চাপ মুক্ত রাখত। এছাড়া মিডেল অর্ডারে সেসে বাউ, লেগা সিয়াকা, জর্ডান আমিনিও দলের ভরসা। তাদের চড়াও ব্যাট যেকোন দলের জন্য হতে পারে বিপদ সংকেত। তবে বিলাল খানের স্পিন ঘূর্ণি বিপদে পেলতে পারে নিউগিনির ব্যাটিং লাইনআপকে। ইতিমধ্যে, বিলাল ১৪.৩০ স্ট্রাইক রেটে ৫১টি উইকেট নিজের ঝুলিতে নিয়েছে। তার সহচর ফাইয়াজ বাট, মোহাম্মদ নাদিম বেশ ভালো ভাবেই মধ্যভাগের ওভার গুলোতে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে পারেন। বামহাতি অর্থোডক্স অধিনায়ক জিসান মাকসুদ, লেগ স্পিনার খাওয়ার আলী, বলতে গেলে স্পিন অ্যাটকের শক্তিশালী প্যাকেজ নিয়েই বিশ্বকাপে এসেছে ওমান। পাপুয়ানিউগিনির অধিনায়ক প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করার জন্য যথেষ্ট পারটাইম বোলার ব্যবহার করতে পারবেন। তার হাতে যেকোন সময় বল তুলে দেওয়ার মতো আটটি অপশন রয়েছে। ওমানের ওপেনিং জুটিতে যতিন্দর সিং ও খাওয়ার আলীর যেকোন ভয়ংকর রুপ, কিংবা মিডেল অর্ডারে আকিব ইলিয়াস ও মাকসুদের প্রতিরক্ষা দেওয়াল, সবকিছুই গুড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে নিউগিনির সৈন্যরা। অবশ্যই দুর্দান্ত এক লড়াই দিয়ে শুরু হতে চলছে বিশ্বকাপের এই বারের রাউন্ড ওয়ান।


image.png
image

বাংলাদেশ বনাম স্কটল্যান্ড; ১৭ অক্টোবর; ওমান

রাউন্ড ওয়ানের গ্রুপ 'বি'তে বাংলাদেশ, স্কটল্যান্ড দুই দলের অবস্থান। তাদের সাথে আছে পাপুয়ানিউগিনি আর ওমান। বিশ্বকাপে উদ্বোধনী দিনে চার দলই মাঠে নামবে। যারা জিতবে, সুপার টুয়েলভের যাত্রা তাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। গ্রুপ 'বি'এর হট ফেভারিট দল বাংলাদেশ। গ্রুপ রানার্সআপ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছে স্কটল্যান্ড। টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিংয়ের ছয় নম্বর দল বাংলাদেশ, যেখানে স্কটল্যান্ড ১৪ নম্বরে। বলা যায় দুই দলের লড়াইয়ে, কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। যদিও শক্তি আর সামর্থ্যের দিক দিয়ে বাংলাদেশই এগিয়ে। সাম্প্রতিক জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তারা সিরিজ জিতেছে। বোলিং ইউনিতে মুস্তাফিজ, সাকিবের মতো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কারিগর রয়েছেন। তবুও স্কটল্যান্ডকে নিয়ে ভয় আছে। দুই দল এই ফরম্যাটে এক বারই মুখোমুখি হয়েছে। সেই ২০১২ সালে। রিচার্ড বেরিংটনের ৫৮ বলে ১০০ রানের টর্নেডো ইনিংস বাংলাদেশকে কোনঠাসা করেছিল। ৩৪ রানের ব্যবধানে জিতেছিল স্কটল্যান্ড। সে বেরিংটন এই বিশ্বকাপেও আছেন। এছাড়া তখনকার একাদশের কাইল কোয়েটজার, কালাম ম্যাকলেয়ডও আছেন। বাংলাদেশের হয়ে সে ম্যাচে অংশগ্রহণ করা সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম আছেন এইবারও। তখনকার বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল ব্যবধান। সর্বশেষ দুই ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৫ ওডিআই বিশ্বকাপে। সেখানে স্কটল্যান্ডের দেওয়া ৩১৮ রানের বাঁধা টপকে।জয় ছিনিয়ে আনে টাইগাররা। স্কটল্যান্ড বাঁধা টপকাতে পারলে সহজেই সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নিতে পারবে এইভাবের বিশ্বকাপের ডার্ক হর্সরা(বাংলাদেশ)।


image.png
image

অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা; ২৩ অক্টোবর; আবুধাবি

সাম্প্রতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ হারায় র‍্যাংকিংয়ে ১ ধাপ পিছিয়ে ৭ম স্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া, অন্যদিকে ৫ নম্বরে আছে দক্ষিন আফ্রিকা। এই সংস্করণে অন্যতম পরাশক্তির দল হলেও, দুই দলের কেউই এখনো শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি। এছাড়া দুই দল হলো পুরোনো শত্রু। ৯৯'এর বিশ্বকাপে অজিদের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ড্র করেও ফাইনালে পৌঁছাতে পারেনি প্রোটিয়ারা। টি-টোয়েন্টির বড় মঞ্চেও দুই মুখোমুখি হয়েছিল একবার। এতেও জয়ের স্বাদ নিতে পারেনি দক্ষিন আফ্রিকা। এইবার দুই দলের লড়াই একটু ভিন্ন ধরনের হতে যাচ্ছে। দুই দলই শক্তির দিকে থেকে সমান্তরালে রয়েছে। সুসজ্জিত ব্যাটিং অ্যাটাক, পেস-স্পিন দুই ক্যাটাগরিতেই সেরা বোলারদের নিয়ে স্কোয়াড সাজিয়েছে তারা। অ্যারন ফিঞ্চ, ম্যাক্সওয়েল, ডেভিড ওয়ার্নাদের টপাকে প্রস্তুত কুইন্টন ডি কক, এইডেন মার্কারাম, ডেবিড মিলাররা। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সদের বিপক্ষে অগ্নিগোলা ছুড়তে প্রস্তুত আছেন কাগিসো রাবাদা, অ্যানরিখ নরকিয়ারা। আমিরাতের কন্ডিশন বিবেচনায় পেসাররা কিছুটা পিছিয়ে থাকবেন স্পিনারদের থেকে। কিন্তু এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না দুই দলকে। র‍্যাংকিংয়ের সেরা স্পিনাররা আছেন তাদের তালিকায়। এই ফরম্যাটের সেরা স্পিনার তাবরাইজ শামসি যেমন আছেন প্রোটিয়াদের দলের, তেমনি র‍্যাংকিংয়ের ৬ষ্ঠ ও ৭ম বোলার অ্যাডাম জাম্পা, অ্যাস্টন অ্যাগার আছেন অজিদের দলে। পাওয়ার হিটিং থেকে শুরু করে স্পিন ভেল্কি কিংবা পেসারদের গতি, অনেক কিছু অপেক্ষা করছে ম্যাটিতে।


image.png
image

ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড; ৩১ অক্টোবর; দুবাই

২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, ২০২১ আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল, দুই জায়গাতে ভারতের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিউজিল্যান্ড। সে ব্ল্যাকক্যাপসদের নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আবারো দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে আকাশী-নীলদের। দুই দলের বেশ কয়েকজন ব্যাটাররা আইসিসি টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষ ১০-এর মধ্যে রয়েছেন। ভারতের বিরাট কোহলি ৪ নম্বরে, লোকেশ রাহুল ৬ নম্বরে, কিউইদের ডেবন কনওয়ে আছেন ৫ নম্বরে। এছাড়া দুইদলে আরও কিছু পাওয়ারফুল ব্যাটার রয়েছেন এদের মধ্যে ভারতের রোহিত শর্মা যিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে সেঞ্চুরির মালিক, দ্বিতীয় সর্বোচ্ছ ছক্কা হাঁকানো ব্যাট্যার। আরও আছেন ইশান কিষাণ, হার্দিক পান্ডিয়া, অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা। কিউইদের ব্যাট হাতে আস্থার জায়গা মার্টিন গাপটিল, অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন, রস টেইলর, হেনরি নিকোলাসরা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ও সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানো ব্যাটার গাপটিল একাই নাস্তানাবুদ করে ছাড়তে পারেন ভারতীয় বোলারদের। বোলিং ইউনিটের ভারতের আছে সময়ের অন্যতম সেরা পেসার জাসপ্রতি বুমরাহ, আছেন ভুবেনশ্বর কুমার। তার বীপরিতে থাকবেন টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিংয়ের ১০ নম্বর বোলার ট্রেন্ট বোল্ট, ও লুকি ফারগুসন। স্পিন ভেল্কি দেখানোর জন্য দুই দলেই যথেষ্ট শক্তিশালী।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Great post