Copyright Free Image - Source : Pixabay
বাঘ ! শব্দটার সাথে পরিচয় আমাদের খুব ছোট্টবেলাটি থেকেই । বর্ণপরিচয়ের শুরুতেই T for Tiger, L for Lion পড়েছি প্রায় সবাইই । সিংহ যদিও বনের রাজা তা সত্ত্বেও বাঘ আমাদের মনোরাজ্যে সব চাইতে বেশি স্থান করে নিয়েছে । কারণ অনেকগুলি - তার মধ্যে প্রধান কারণ হলো দেশের জাতীয় পশু বাঘ, সুন্দরবন আমাদের রাজ্যে আর সেই সুন্দরবনের সব চাইতে আকর্ষণীয় প্রাণীই বাঘ, এছাড়াও বাঘ নিয়ে ছোটবেলা থেকে মজার মজার কতই না গল্প পরে বড় হয়েছি আমরা - বাঘ মামা ও শিয়াল পন্ডিতের শিশুতোষ গল্পগুলি তো অসম্ভব প্রিয় ছিল আমাদের । এসব কারণে বাঘ আমাদের অতি পছন্দের, অতি আপন ।
বাঘের গায়ে অমিত শক্তি । বিশেষজ্ঞরা বলেন যে একটি বাঘ আর একটি সিংহের মধ্যে লড়াই বাধলে বাঘের জিতে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি । তা ছাড়াও বাঘ দেখতে খুবই সুন্দর । গায়ের হলদে লোমের উপর কালো ডোরাকাটা প্যাটার্নটা এককথায় অসাধারণ । বাঘের মুখটাও সিংহের চাইতে অনেক বেশি সুন্দর ।
ছোটবেলা থেকে বাঘ দেখে আসছি আমরা সবাই চিড়িয়াখানায় । অথচ এই বাঘ সম্পর্কে অনেক চমকপ্রদ মজার তথ্য আছে যেগুলো আমরা কেউ হয়তো জানি, কেউ জানি না । আজ সেই ব্যাঘ্র মামা সম্পর্কে কিছু অবাক করা তথ্য শেয়ার করবো । চলুন জেনে নেওয়া যাক -
#০১ বাঘের গায়ে যে হলুদ কালো ডোরাকাটা দেখি এগুলো কিন্তু এক একটি বাঘের বডিতে ইউনিক প্যাটার্নের থাকে । আমাদের আঙুলের ছাপ যেমন প্রত্যেকের ইউনিক প্যাটার্নের থাকে বাঘের শরীরের ডোরাকাটা প্যাটার্নও ঠিক তেমনই ইউনিক । একটা বাঘের শরীরের ডোরাকাটা দাগের প্যাটার্নের সাথে দুনিয়ার আর কোনো বাঘের ডোরাকাটা দাগের প্যাটার্নের মিল নেই ।
#০২ বাঘের গায়ের ডোরাকাটা দাগ সম্পর্কে আরেকটা মজার তথ্য দেই - বাঘের গায়ের লোমের উপর এই যে ডোরাকাটা দাগ তা কিন্তু লোমের নিচে তাদের চামড়াতেও আছে । অর্থাৎ, একটা বাঘের লোম ছাড়িয়ে ফেললে দেখা যাবে তার চামড়াতেও এই ডোরাকাটা দাগ রয়েছে ।
#০৩ বাঘের ডাক মেঘ ডাকার মতো শোনায় । একটা পূর্ণবয়স্ক বাঘের হুঙ্কার ৩ কিলোমিটার দূর থেকেও মেঘের গর্জনের মতো শোনায় ।
#০৪ বনের বাঘ কি প্রতিদিন শিকার ধরে খায় ? উত্তর হলো মোটেই না । বাঘ যদি বড় কোনো মাঝারি জানোয়ার যেমন হরিণ বা শুয়োর ধরতে পারে তবে ৩-৪ দিন আর শিকার করে না । আর যদি গরু-মোষ বা শম্বর-নীলগাই ধরতে পারে তবে ৭-৮ দিন আর শিকার ধরে না । এক বারে বাঘ ৪০-৪৫ কেজি মাংস খেয়ে উদরপূর্তি করতে পারে ।
#০৫ জঙ্গলের বাঘ কী শুধু হরিণ ধরেই খায় ? উত্তর হলো না । বাঘের খাদ্যের রুচিবোধের প্রশংসা আসলেই করতে হয় । একটা বাঘ জঙ্গলে থাকাকালীন কখনই এক ধরণের শিকার ধরে খায় না । ছোট পাখি, পাখির ডিম, বড় পাখি, হরিণ, শম্বর, বুনো শূকর, বিভিন্ন জাতের গিরিগিটি, গোসাপ, জলাশয়ের ব্যাঙ, ছোটমাছ, বড়মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া এমনকি কুমির অব্দি তাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে । বাঘ চমৎকার মাছ ধরতে পারে । অগভীর জলাশয় বা নদী-খালের পাড়ের কাছে তারা মাছ ধরতে পটু ।
#০৬ এবার একটা হৃদয় বিদারক তথ্য দেব আপনাদের । এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে মোট বাঘের সংখ্যা (অন্যান্য বাঘ নয় কিন্তু, অনলি Panthera Tigris অর্থাৎ বেঙ্গল টাইগার) ৫,৫০০ । এর মধ্যে শুধু ভারতবর্ষেই রয়েছে ৩,৩০০ বাঘ । বাকি ২,০০০ বাঘ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে । এটা গেলো জঙ্গলের বাঘের পরিসংখ্যান । এবার শুনুন চিড়িয়াখানাতে বাঘের পরিসংখ্যান - শুধুমাত্র চীন আর আমেরিকায় এই মুহূর্তে চিড়িয়াখানায় বন্দী বাঘের মোট সংখ্যাটি ৫,০০০ । অর্থাৎ, সারা বিশ্বে জঙ্গলের বাঘের সংখ্যার সমান চীন আর আমেরিকার চিড়িয়াখানায় বন্দী বাঘের সংখ্যা ।
#০৭ জন্মের সময় বাঘের বাচ্চাগুলি অন্ধ থাকে । প্রায় দু'সপ্তাহ পরে তাদের চোখ ফোটে । বাঘ কিন্তু সিংহের মতো সামাজিক জীব নয় । এক একটা বাঘ একদমই স্বাধীন জীবন কাটায় । আর তাই বাঘের বাচ্চা জন্মের পরে খুবই ঝুঁকিতে থাকে । মা বাঘিনীর অনুপস্থিতে তার বাসায় হানা দিয়ে পুরুষ বাঘ বাচ্চাদের খেয়ে ফেলে ।
#০৮ বাঘিনী দূর থেকে বাচ্চাদের ইশারা দিয়ে বা মৃদু গর্জন করে ডাকে । আমরা যেমন হাতছানি দিয়ে বাচ্চাদের ডাকি বাঘিনী তেমনই তার কান দুটো বিভিন্ন ভঙ্গিতে নাড়িয়ে বাচ্চাদের ইশারা করে ডাকে ।
#০৯ সাদা বাঘ আসলে অন্য কোনো প্রজাতির বাঘ নয় । এটা সেইম প্রজাতির । এদের গায়ের রং সাদা হওয়ার পেছনে রয়েছে বিরল জিনঘটিত একটা রোগ । এই রোগে বাঘের শরীরে pheomelanin pigments একদমই কমে যায়, ফলশ্রুতিতে এলবিনো (Albino) হয়ে জন্মগ্রহণ করে তারা ।
#১০ বাঘ যদিও বিড়াল গোত্রের প্রাণী তা সত্ত্বেও বিড়ালদের মতো তারা কিন্তু জলে নামা অপছন্দ করে না । বাঘ সাঁতার কাটতে দারুন পছন্দ করে । তীব্র গরমে অনেক সময় জলাশয়ে নেমে ঘন্টার পর ঘন্টা জলে জিইয়েও রাখে নিজেকে ।
বাঘ মা খুব শক্তিশালী।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit