কেমন আছেন সবাই। আশা করি ভাল আছেন। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যকে সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আজ আমি আপনাদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যদিও এই পোষ্টের টপিকটি আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। অর্থাৎ আমি বাংলাদেশের ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে আলোচনা করব। |
---|
এইযে এক ঘন্টার কাজ করতে গিয়ে যাওয়া-আসা মিলে আমি প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার সময় নষ্ট হচ্ছে যা আমাদের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ভাবতে পারবেন না আমাদের লক্ষ লক্ষ কোটি কর্ম ঘন্টা প্রতিদিন জ্যামে নষ্ট হচ্ছে। আপনি ভাবুন ঢাকা শহরে প্রায় তিন কোটি লোকের বসবাস তার মধ্যে যদি আমরা এক কোটি লোকের হিসাব করতে যাই তাহলে দেখুন প্রতিদিন যদি এক কোটি লোকের এক ঘন্টা করে সময় জ্যামে নষ্ট হয় তাহলে প্রতিদিন ১ কোটি কর্ম ঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। এই এক কোটি কর্মঘন্টা যদি আমরা দেশের জন্য নিজের জন্য বা আমাদের কর্মক্ষেত্র ব্যয় করতাম তাহলে তা দেশের জিডিপিতে কত বড় ভুমিকা রাখতে ভাবতে পারেন। আমি তো মাত্র এক ঘণ্টার হিসাব করলাম এমনও লোক আছে যাদের ২/৩ ঘন্টা জ্যামে বসে থাকতে হয় মিনিমাম।জ্যাম থেকে বাঁচার জন্য সকাল দশটার অফিস করতে হয় আটটায় অথচ অফিস শেষে একজন লোক বাসায় ফেরে দশটা বাজে জ্যামের কারণে । বাসায় ফিরে সারাদিন কাজ করে রাস্তায় জ্যামে কাটিয়ে সে নিশ্চয় ক্লান্ত হয়ে পড়বে তার পক্ষে পরিবারকে কখনোই সময় দেওয়া সম্ভব নয়। এই অবস্থায় আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস ধরার জন্য সকাল ৮ টায় রওনা হওয়া একটা মানুষের যদি প্রতিদিন এভাবে করতে থাকে তার মানসিক প্রশান্তি বলতে কিছুই নেই। এতে যেমন তার পরিবারের সাথে দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে অন্যদিকে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। কর্মক্ষেত্রে যদি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না থাকে আনন্দ না থাকে আপনি যতই আনুষঙ্গিক সুবিধা পান না কেন তা কখনও একটি অরগানাইজেশনের জন্য বড় কোনো ভূমিকা রাখবে না।
বর্তমান সরকারের নানামুখী উদ্যোগ এর কারণে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে কিছুটা হলেও ঢাকা শহরবাসী জ্যাম থেকে মুক্ত হতে পারবে যার বড় উদ্যোগ হচ্ছে মেট্রো রেল । রাজধানীবাসীর অনেক স্বপ্ন এই মেট্রোরেল নিয়ে। তারা জ্যাম থেকে কিছুটা হলে মুক্তি পাবে সেই আশায় বুক বেঁধে আছে। আমরা আশা করছি ঢাকা শহর কিছুটা হলেও জ্যাম থেকে মুক্ত হবে। তবে অবশ্যই এই ক্ষেত্রে শৃংখলার চরম পরীক্ষা দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। শুধুমাত্র এত এত সময় অপচয়ের কারণে আমি বলব বাংলাদেশ মিনিমাম ২০ বছর পিছিয়ে গেছে। আমরা যদি সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে পারি আমাদের যদি আর সময়ের অপচয় না হয় তাহলে বাংলাদেশ অতি দ্রুত পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। একটি দেশের জনগণ কতটা উৎপাদনমুখী বা কর্মমুখী কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত তার ওপর ভিত্তি করেই সে দেশের অর্থনীতি গড়ে ওঠে কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে সেই কাজটুকু করতে গিয়ে আমরা বিশাল একটি কর্মঘন্টা প্রতিনিয়ত হারায় ফেলছি যা দেশের অগ্রগতির জন্য সবথেকে বড় বাধা। তবে আমি বলব টাকা শহরের জ্যামের পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে তা নিচে আপনাদের সাথে তুলে ধরছি অবশ্যই এগুলো আমার ব্যক্তিগত মতামত।
- বাংলাদেশের সব কিছুকেই ঢাকামুখী করা জ্যামের মূল কারণ বলে আমি মনে করি। ঢাকা শহরে এমন কিছু সরকারি অফিস আছে যেগুলোর কোন প্রয়োজনই ছিল না ঢাকা শহরে। ধরুন ঢাকার খামারবাড়ি, মৎস্য অফিস এগুলো কি কোন প্রয়োজন ছিল ঢাকা শহরে। একটি শহরকে কেন্দ্রীয়করণ করা হয় তাহলে সেই শহরে অবশ্যই জ্যাম থাকবেই এটাই স্বাভাবিক। আমাদের এখনই সময় ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে বিভাগীয় শহরের কর্মকাণ্ড যাতে বিভাগীয় শহরে সম্পাদন হয় সে বিষয়ে আমাদের অতিসত্বর নজর দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমাদের প্রশাসনিক কাজগুলোকে ঢাকার বাহিরে নিয়ে যাওয়া উচিত। অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ ছাড়া যেমন সচিবালয়, মন্ত্রণালয় এগুলো থাকতে পারে কিন্তু এছাড়াও কিছু অপ্রয়োজনীয় অফিস-আদালত ঢাকাতে আছে যার কারণে রাজধানীতে প্রচন্ড জ্যাম। আমরা যখন বড় বড় কোম্পানি কে বা অরগানাইজেশন গুলোকে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে বা জেলেতে নিয়ে যেতে পারবো সে অঞ্চল গুলো যেমন উন্নত হবে মানুষের কর্মক্ষেত্র বাড়বে এবং মানুষ উন্নত জীবনযাপন লাভ করার একটি সুযোগ পাবে। এই ক্ষেত্রে অবশ্য সরকার হাতে কিছু পলিসি আছে ধীরে ধীরে এগোতে হবে। কেননা আমাদের গোড়ায় গলদ ছিল।
- বিশ্বের অন্যান্য শহরের মত বাংলাদেশ ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা অত্যাধিক ঢাকা শহরের জ্যাম সৃষ্টির জন্য যা অন্যতম দায়ী। আমরা যদি ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারি তাহলে অনেকাংশেই জ্যাম কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের গণপরিবহনের মান সর্বোচ্চ উন্নতি সাধন করতে হবে। ঢাকা শহরের যে বাস চলাচল করে সেইসব দেখলে মনে হয় আগামী ৫০ বছরেও উন্নতির সম্ভাবনা নেই। একটি দেশকে উন্নতি করতে গেলে এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন সবার আগে। যাতায়াত ব্যবস্থা যদি ভাল থাকে তাহলে অবশ্যই সে দেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাবে। আমরা যখন গণপরিবহন স্বাস্থ্যসম্মত ও উন্নত সেবা প্রদানে বাধ্য করবো তখন সমাজে ব্যাপক একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। আমি যে বিষয়গুলো বলছি আশা করি সবকিছুই সরকারের মাথায় আছে কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা থাকে এটাই স্বাভাবিক। ঢাকা শহরের গঠনগত কারণেই চাইলেও আসলে অনেক কিছু করা যায় না। এইজন্য বিশ্বের অনেক দেশের মতো যদি সম্ভব হয় ঢাকাকে স্থানান্তর করা অবশ্য সেই উদ্যোগ হিসেবে সরকার পূর্বাচল কে বেছে নিয়েছে। আশা করছি পূর্বাচল প্রজেক্ট আশার আলো দেখবে।
আমার পোস্ট টি অনেক বড় হয়ে গেল তাই আজ এই পর্যন্তই এই সম্পর্কে বিস্তারিত আরও লেখা যাবে।
- এছাড়াও জনসাধারণকে অবশ্যই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আমরা জনগণ সব সময় আমাদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার কিন্তু আমরা কখনই আমাদের যে কর্তব্যগুলো আছে দেশের প্রতি, সমাজের প্রতি সেগুলো নিয়ে সোচ্চার না এটাই বড় লজ্জার বিষয়। একজন নাগরিকের যে কর্রব্য আছে দায়িত্ব গুলো আছে সেগুলো যদি সঠিকভাবে পালন করা যায় তাহলে সমাজের জন্য রাষ্ট্রের জন্য খুব উপকার হয়। অনেক সময় সময় বাচানোর জন্য ট্রাফিক আ0পইন না মেনে রাস্তা পারাপার হই আমরা। রাস্তায় ফুট অভার ব্রিজ থাকলেও কষ্ট করে ওটার থেকে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে যাওয়াটাকে স্বাচ্ছন্দ বোধ মনে করি ।একটা মিনিট বা দুইটা মিনিট অপেক্ষা করার সময় আমাদের থাকেনা।সেইসাথে দক্ষ ড্রাইভার দ নিয়োগ দিতে হবে । আমাদের ঢাকা শহরের ম্যাক্সিমাম ড্রাইভার হেলপার কন্টাক্ট থেকে চালক হয়। তাদের সঠিক কোন দিক নির্দেশনা নেই কোন ট্রেনিং এর ব্যবস্থাপনা নেই যার কারণে মাঝে মাঝে বিভিন্ন দুর্ঘটনার কথা শোনা যায়। সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সচেতনতার মাধ্যমে আমাদের জ্যামের মতো জনদুর্ভোগ কমানো সম্ভব।
আপনারা উপরের যে জ্যাম এর ছবি গুলো দেখছেন এটিপ্প ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভেতরের। একটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভেতরে যখন দীর্ঘ জ্যাম পড়ে যায় তখন একে দেশের চিত্র কেমন হতে পারে তা আপনাদের ওখানে ছেড়ে দিলাম। এই ছবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্র মুক্তি তরল থাকে ভিসি চত্বর পর্যন্ত দীর্ঘ একটি। আমার বিশ্ববিদ্যালয় ভিতর রাস্তা পার হওয়ার জন্য আমাকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছিল। আসলে করার কিছু নেই ঢাকা শহরে নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের । তবে আশায় বুক বেঁধে আছে একদিন হয়তো দেশটা অনেক সুন্দর হবে কাউকে আর কখনই জ্যামে বসে থাকতে হবে না।
ধন্যবাদ
ঢাকা শহরের সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা হচ্ছে জ্যামে পড়া। আর বিশেষ করে যদি গরমের দিনে লম্বা জ্যামে পড়া যায় তাহলে যেন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যায়। আর আপনার সাথে আমি একমত যে ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে জ্যাম একটু বেশি হয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলেই আপু। এই জ্যাম মারাত্বক আঁকার ধারন করেছে এখন। আমাদের অনেক সময় খেয়ে ফেলে এই জ্যাম। খুব বিরক্ত লাগে। কোনো যায়গায় যেতে হলে জ্যাম এ পরেই আধা মরা হয়ে যেতে হয়। একটুও ভালো লাগেনা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঢাকা শহর জ্যামের শহর। এ শহর এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জ্যামে বসে থাকতে-থাকতে জীবন যেন অর্ধেক শেষ হয়ে যায় । এ শহরে আর থাকতে ইচ্ছে করে না । কবে যে এই জ্যাম থেকে পরিত্রাণ পাব আল্লাহ ভালো জানে । আপনার আর্টিকেলটি সুন্দর ছিল । ধন্যবাদ আপনাকে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আপনার সঙ্গে আমি সহমত পোষণ করছি। আগে বিভিন্ন প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ঢাকায় যেতে হতো কিন্তু ইদানিং শুধুমাত্র যানজটের ভয়ে ঢাকা শহরে যাওয়া একদম কমিয়ে দিয়েছি। সবকিছু ম্যানেজ করা গেলেও এই যানজট কোনোভাবেই ম্যানেজ করা সম্ভব নয়। প্রতিদিন ভয়াবহ হচ্ছে পরিস্থিতি। ধন্যবাদ এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে পোষ্ট করার জন্য
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি একদম ঠিক বলেছেন ।এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আজকে আপনি আমাদের মাঝে খুবই সঠিক কিছু কথা শেয়ার করেছেন আপু। ঢাকা শহরে চলতে গেলে মনে হয় যেন পুরো দিনটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে রাস্তা চলাচল করতে অল্প সময়ের প্রয়োজন হয় সে রাস্তা গুলোতেও দেখা যায় কয়েক ঘন্টা লেগে যায়। তাই আমি চেষ্টা করি সব সময় ঢাকা শহরে প্রয়োজন ব্যতীত রাস্তায় না বের হতে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit