কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভাল আছেন। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। বর্তমান পৃথিবীতে খুব উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। আজ মানবিকতার বিপর্যয় চারপাশে লক্ষ্য করা যায়। আজ মানুষ মানুষের শত্রু যেখানে নিমিষে একজনের প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছে তার দেশের জন্য চোখের সামনে সন্তানের মৃত্যু। এমন পরিস্থিতি পৃথিবীতে ইতিপূর্বে হয়েছিল তবে বর্তমান সভ্য সমাজে এটা কখনোই কাম্য নয়। পৃথিবীতে অত্যাচারিত, নিপীড়িত মানুষের জয় হয়েছে তবে তা ধীরে হলেও তারা জয়ী হয়েছে। একদিন যারা ভাই ছিল আজ তারা শত্রুতে পরিণত হয়েছে। তাদের মনে যে দাগ কেটে গেছে সেই দাগ আর কখনোই মুছবে না । প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তাদের এই ক্ষত বয়ে বেড়াতে হবে। সেইসব প্রসঙ্গ থাক আজ আমি আপনাদের একটি শিক্ষনীয় বিষয় আলোচনা করব।
আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা কথায় কথায় মানুষই খোটা দিয়ে কথা বলেন। আপনার হয়তো অনেক সম্পদ আছে কিন্তু আপনার পাশে মানুষের কিছুই নেই তাই বলে আপনার কোন অধিকার নেই তাকে খোটা দিয়ে কথা বলবেন। সে গরীব হতে পারে কিন্তু আপনার থেকে সে কখনো ভিক্ষা চাইনি, আপনি কোন অধিকারই তাকে ছোট বলতে পারেন। কিছু মানুষের স্বভাব এরকম কথায় কথায় মানুষকে কষ্ট দেবে, অপমান করবে তার গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়বে। নিজে দোষ করলে গলাবাজি করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করবে। তাদের মনে কখনো অপরাধবোধ কাজ করেনা ।
আমি একদিন ক্যাম্পাস থেকে হলে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম একজন শিক্ষার্থী রিক্সাওয়ালার সাথে খুব বাজে ভাবে কথা বলছে ।যেহেতু আমিও একই হলের শিক্ষার্থী হলের সামনে গিয়ে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে সেই কাহিনী দেখছি। শিক্ষার্থী মাত্র ৫ টাকার জন্য রিক্সাওয়ালার সাথে এত নিষ্ঠুর গলায় বলছেন যে আপনি ভাবতে পারবেন না অথচ রিক্সাওয়ালা তার বাবার বয়সী। গরিব বলে তাকে আপনি যা তা না বলতে পারেন না। আপনার থেকে 5 টাকা ভিক্ষা চায় নাই সে তার উপার্জিত টাকা আপনার থেকে চেয়েছে । আপনার কাছে ভাড়া বেশি হতে পারে তবে আপনার উচিত ছিল অবশ্যই রিক্সায় উঠার সময় ভাড়া ঠিক করে নেওয়া ।আমাদের মাঝে অনেক মানুষ আছে যারা ইচ্ছা করে রিক্সায় ভাড়া ঠিক করে উঠেনা কারণ তখন ভাড়া কম দিতে পারবে । ভাবুন তাদের মন-মানসিকতা কত নিচু লেভেলের যে জেনেশুনে ইচ্ছাকৃতভাবে একজন গরীব কে ঠকায় ,তার রুচিতে হাত দেয় ।
আপনি যদি ভেবে থাকেন দেশের সব চেয়ে বড় বিদ্যাপীঠে পড়ে উন্নত প্রজাতির মানুষ হয়েছেন ,অহংকারে আপনার পা মাটিতে পড়বে না তাহলে শুনে রাখুন আপনার পতন অনিবার্য ।বিষয়টি আমাকে এতই খারাপ লেগেছে সেদিন যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।ওই শিক্ষার্থীর সাথে আমার মাঝে মাঝেই দেখা হয় ,অনেক সময় দেখি মানবিকতার বুলি ছাড়তে ,বিভিন্ন আন্দোলনের সময় নিজেকে মানবতার ফেরিওয়ালা হিসাবে সবার অগ্রভাগে থাকে ।এই যে আপনাকে বলছি মনের অন্ধকার যতই লুকায়িত করে রাখ না কেন একদিন সবার সামনে প্রকাশ পাবে। আপনার ভনিতা আর কতদিন লুকিয়ে রাখবেন । শুধু মোটা মোটা বই পড়লে আর এসিতে ক্লাস করলে নিজেকে সভ্য ভাবার কোন মানে নেই। সভ্যতা আপনার অন্তরের আপনার ব্যবহারে। যেহেতু আপনি মানুষকে ভালবাসতে জানেন না মানুষের কষ্ট কে বুঝতে পারে না গরিবের চোখের ভাষা বোঝে না আপনি আর যাই হোন না কেন শিক্ষিত না।
অনেক আগে একটা গল্প পড়েছিলাম আমার মনে পড়ছে না তো একটা ছেলে সব সময় মানুষকে কষ্ট দিত এমন এমন কথা বলতো যে তার কথায় অনেকে কেঁদে দিত । এই বিষয়টি তারা বাবা অনেকদিন ধরে খেয়াল করছে। তখন তার বাবা ছেলেটিকে বলল তুমি যে এত মানুষকে কষ্ট দাও তা কি ঠিক? তখন সে বলে আমিতো অনেক আনন্দ পাই।আবার বলে ছেলেটি বলে আমিতো ইচ্ছা করে কষ্ট দেই না। আমার কেন জানি হয়ে যায়। তখন তার বাবা কষ্ট দেওয়ার ফলে মানুষ কতটা কষ্ট পায় তাকে বোঝালেন তখন ওই ছেলের মাঝে অনুতাপ কাজ করলো। সে চায় আর কখনো কাউকে কষ্ট না দিতে। তখন তার বাবা একটা কাজ দিলেন। ছেলেটার বাবা তাকে অনেকগুলো পেরেক দিয়ে বলল প্রতিদিন তুমি যে কয়জন কে কষ্ট দিবে সেই কয়টা পেরেক কাঠের ভেতর মারবে। সে তার বাবার কথামতো যতজন মানুষকে কষ্ট দেয় সে প্রতিদিন ততগুলো পেরেক কাটে হাতুড়ি দিয়ে মারে। এইভাবে প্রতিদিন মারতে মারতে এমন একটা সময় আসে যখন সে আর কাউকে কষ্ট দেয় না এবং পেরেক মারতে হয় না। তখন সে তার বাবাকে গিয়ে বলল আমি আর কাউকে কষ্ট দেই না আমার পেরেক মারা শেষ। তখন তার বাবা বললো এখন তুমি পেরেকগুলো তোলো। আবারও সে তার বাবার কথামতো সবগুলো পেরেক কাঠ থেকে তুলল তখন তার বাবা বলল দেখো তুমি মানুষকে কষ্ট দাও তখন তার বুকে তুমি এইভাবে পেরেক মেরেছ। কাঠ থেকে পেরেক তোলার পরও যেমন ক্ষতটা রয়ে গেল ঠিক তুমি যখন মানুষকে কষ্ট দাও তাদের অন্তরে সেই ক্ষতটা সারাজীবন রয়ে যায়। চাইলেও এই ক্ষতটি কখনোই পূরণ করতে পারবে না। তারপর থেকে সে এতটাই অনুশোচনায় ভুগতে লাগল যে যতজনকে সে কষ্ট দিয়েছে তার বাড়িতে গিয়ে গিয়েছে ক্ষমা চেয়েছে।
এই গল্প থেকে আমরা একটা জিনিস শিখতে পারলাম আমাদের কখনোই কাউকে কষ্ট দেওয়া ঠিক না কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করা উচিত না। হয়তো আপনার কিছুই মনে হবে না কিন্তু বিপরীত পাশেরজনের কথা অবশ্যই আপনাকে ভাবতে হবে অকারণে যেন কষ্ট না পায় ।। সচেতন ভাবেই হোক বা অসচেতনভাবে হোক আমাদের সব সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা উচিত । |
---|
ধন্যবাদ
আপু আপনি সমাজের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। আমাদের সকলের উচিত বিনয়ী হওয়া। অন্যরা আঘাত পায় এমন কথা কিংবা কাজ না করা। কারন মানুষ হিসেবে আমরা সবাই সমান। ধন্যবাদ আপু আপনাকে, সুন্দর একটি বিষয় ফুটিয়ে তোলার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
যে মুসলমান ব্যক্তি বিনা কারণে কাউকে কষ্ট দেয় সে প্রকৃত মুসলমান নয়। পেরেক মারার এ গল্পটি আমিও শুনেছি। সত্যি বলতে কি ছাত্রদের হওয়া উচিত আদর্শ মানুষ অথচ বর্তমান সময়ে ছাত্র নামের কিছু মানুষের মধ্যে বিবেক বোধ বলে কিছু নেই। সামান্য রিকশাভাড়ার জন্য যারা এমন আচরণ করে তারা কোনমতেই সভ্য মানুষের মধ্যে পড়ে না। যাইহোক সুন্দর এই টপিকটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে এখন মানুষ হাসির ছলে মানুষকে অপমান করতে বেশি ভালোবাসি।আসলে একটা মানুষ চাই আর একটা মানুষকে কিভাবে নিচে নামানো যায়। আসলে খোঁটা মানুষের স্বভাব। এরা কিছু পারেনা তারাই খোটা দিয়ে থাকে। আসলে একটা মানুষ গরীব হয়ে জন্ম নিতে পারে সৃষ্টিকর্তার সম্মতিতে। সে গরীব হয়েছে তাই বলে তাকে আমরা ছোট চোখে দেখি। আসলে এটা আমাদের নিজের মন মানসিকতার সমস্যা আছে। আসলে আপনি ঠিক বলেছেন কখনো কাউকে কষ্ট দেওয়া ঠিক না। কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করা উচিত না আপু।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদম ঠিক বলেছেন মানুষ এখন হাসির ছলে বা কোন সুযোগ পেলেই একে অপরকে অপমান করতে ছাড়ে না অত্যন্ত যা নিন্দনীয় কাজ। আপনি অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit