কেমন আছেন সবাই আশা করি ভাল আছেন আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আজ আমি আপনাদের সাথে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক একটি দিন নিয়ে আলোচনা করব। আমার এই আলোচনাটি সংক্ষিপ্ত আকারে আপনাদের সাথে লিখবো। |
---|
প্রথমেই বলে নেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা করা মনে রাজনৈতিক আলোচননা না । আমি কোন রাজনৈতিক আলোচনা করছিনা । আমি কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে নিয়ে লিখছি না আমি ব্যক্তি মুজিবকে নিয়ে লেখছি। বাংলা জাতির আশার আলো , এক স্বপ্নদ্রষ্টার কথা বলছি। যিনি জন্ম না নিলে হয়তো বাংলার স্বাধীনতা আরো দীর্ঘায়িত হত। যাকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে মনে করা হয়। যার সংগ্রামী নেতৃত্ব বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন অভ্যুদয় দেশ হিসাবে পৃথিবীর সামনে উদয় করেছে। যার এক ভাষণে বাংলার মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছে ,মুক্তির স্বপ্ন দেখেছে। সেই মানুষটির আজ জন্মদিন। এই মহান নেতার জন্মদিন উপলক্ষে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তবে চলুন শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার গল্প জেনে নেই ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ শেখ লুৎফর রহমান ও সাহেরা বেগমের কোল উজাড় করে জন্ম নেন টুংগীপাড়ায় । তখন কে জানত এই ছোট্ট শিশুটি একদিন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হবে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হবে। তখন কে ভাবত যে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলার মানুষ মুক্তির পথ খুঁজবে।৭ কোটি মানুষকে স্বপ্নের পথ দেখাবে, এক স্বাধীন রাষ্ট্রে বসবাস করতে পারবে ।তার জন্মের পর থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তিনি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত সাহসী। যেন রাজনীতি তার রক্তে মিশে ছিল। রাজনৈতিক জীবনে তার অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যেতে হয়েছে। সে গল্প আমরা সবাই জানি। আসলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমি যত লিখি না কেন আমার দিন শেষ হবে ,রাত পোহাবে , ভোর হবে, নতুন সূর্য উদয় হবে কিন্তু তার সম্পর্কে লেখা শেষ হবে না। তিনি নিজেকে তার নেতৃত্বের মাধ্যমে এত উঁচুতে নিয়ে গেছেন যা তাকে মহান করেছে।
এই পর্যায়ে আমি আপনাদের সামনে বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরব অর্থাৎ শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার গল্প বলব। । প্রথমেই বলে নেই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আমি বেশ কয়েকটি বই পড়েছি যার মধ্যে তার নিজের লেখা দুটি বই-
- অসমাপ্ত আত্মজীবনী
- কারাগারের রোজনামচা
বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৪০ সালে। তিনি তার ছাত্র জীবনে প্রথম সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন এর সাথে যুক্ত ছিলেন এবং এই সংগঠনের মধ্য দিয়েই তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ যার বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন ১৯৪৬ সালে । ভারতবর্ষে যখন স্বাধীনতার আন্দোলন চলছিল তখন তিনি কলকাতাতেই অবস্থান করছিলেন এবং হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা সম্যক সাক্ষী ছিলেন তিনি। দেশভাগের সময় যখন হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা চলছিল তখন তিনি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করেছেন। দেশভাগের করুণ পরিণতি সম্পর্কে তিনি তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে দারুনভাবে তুলে ধরেছেন।
পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে তিনি তত্কালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তানের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি ১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকিটে তিনি একজন পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তার যুক্তফ্রন্ট গঠনে অসামান্য ভূমিকার কথা জানা যায়। অন্যায়ের পক্ষে প্রতিবাদ করার জন্য তিনি ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে বহুবার কারাবরণ করেছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি তার নিজ জেলায় জেলে বন্দী ছিলেন। জেলে তার সঙ্গী হিসেবে ছিল মহিউদ্দিন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বাতিল হয়। ইতিহাস হতে জানা যায় তিনি তা রাজনৈতিক জীবনে প্রায় ৪হাজার ৬৬২ দিন যা বছরের হিসাবে প্রায় ১৩ বছর জেলে কাটিয়েছেন। এই থেকেই বোঝা যায় তিনি কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য বাংলার এই অবিসংবাদিত নেতা আজীবন সোচ্চার ছিলেন। তিনি কখনো অন্যায় সাথে আপোষ করেননি।
বাংলার বিভিন্ন স্বাধিকার আন্দোলনে তার অবস্থান ছিল সম্মুখভাগ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ সালে সামরিক শাসন আইন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন , ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফার কথা আমরা সবাই জানি। তার ছয় দফাকে বলা হয় বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ বা ম্যাগনাকার্টা। ১৯৫২ সালে বাংলাদেশের মানুষ প্রথমবার উপলব্ধি করতে পারে যে তাদের একটি স্বাধীন দেশের প্রয়োজন আর তাঁর বাস্তবিক প্রয়োগ শুরু হতে থাকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার মধ্যে। তার ছয় দফা পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলনে রূপ নেয় । এরপর চলে আসে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানে পিছনে ছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা আসামি করে তাকে জেলে প্রেরণ করা হয় এবং বাংলার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। অবশেষে পাকিস্তানী জান্তা সরকার তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলা জাতির স্বাধীনতার স্বপ্ন আরো বেগবান হতে থাকে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তার মুক্তি হলে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া হয়। তার সাহসী- অসীম দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতার পথে বেগবান হয় সেই সাথে গোপনে গোপনে স্বাধীনতার প্রস্তুতি নিতে থাকে।
১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন হলেও পাকিস্তান জান্তা সরকার তখন তার হাতে ক্ষমতা না দেয়ার তালবাহানা শুরু করে। তখন তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তার এই ভাষণকে অলিখিত স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবে ধরা হয়। ২০১৭ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক এই ঐতিহাসিক ভাষণ কে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেন। আর এই ভাবেই জন্ম নেয় বঙ্গবন্ধু। |
---|
ধন্যবাদ
আপনি খুবই চমৎকার একটা গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লাগলো। আপনি খুবই সুন্দর ভাবে এটা উপস্থাপন করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই ধরনের পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
খুব চমৎকার লিখেছেন। আর অনেক কিছু জানা ছিলো না।আপনার এই লেখার মাধ্যমে জানতে পারলাম।ভালো ছিলো।আসলেই মহান নেতা ছিলেন।ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit