কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভাল আছেন। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আশা করছি আপনারা ভালো আছেন তবে এই গরমে ভালো থাকাটা বেশ কঠিন। দিনদিন তাপমাত্রা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সামনে আরো গরম বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে যারা শহরে বসবাস করে, আর রোদে কাজ করে তাদের জন্য জীবন প্রায় অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে এই কারণে। যাই হোক আজ আমি আপনাদের সাথে প্রত্যাহিক কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলবো।
আমাদের সবার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে ছোটবেলা থেকে। সেই লক্ষ্যকে পুঁজি করে আমাদের বেড়ে উঠা, সেই লক্ষ্য পূরণ করতে আমরা হয়ে যাই ঘর ছাড়া, বাবা মায়ের আদর ভালবাসা থেকে অনেক দূরে থাকি। শুধু নিজের স্বপ্নকে পূরণ করার জন্য, এত দূরে থেকে পরিবারের চিন্তার কারণ আমরা। আমাদের মাঝে অনেকেই পরিবার আছে যারা সন্তানদের পড়ার খরচ চালানোর জন্য, নিজেদের চাহিদাটুকু পূরণ না করে সন্তানকে দেন। সন্তানকে প্রতিমাসে টাকা দিতে হবে সে টাকা ম্যানেজ করতে গিয়ে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। অনেক পরিবার তিন বেলার মাঝে একবেলা খেয়ে বাকি দুই বেলা না খেয়ে সন্তানের পড়ার খরচ চালায়। বাবা-মার একটাই স্বপ্ন থাকে তার সন্তান একদিন অনেক বড় অফিসার হবে। তাদের এই দুঃখ কষ্ট দূর করবে সেই আশাতেই তারা দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে। ভবিষ্যতের জন্য তাদের মস্তিষ্কে একটি স্বপ্ন গড়ে তোলে। সন্তান আমার মস্ত বড় অফিসার হবে! বাড়ি করবে !গাড়ি করবে ?তখন আর আমাদের কষ্ট করতে হবে না। এই কথাগুলো ভাবে আর অনেক উৎসাহ নিয়ে সন্তানের জন্য কষ্ট করে, টাকা যোগাড় করে। এর মাঝে সন্তান আরো কত আবদার করে বসে তার স্মার্টফোন লাগবে, ল্যাপটপ লাগবে আর এইসব কিছু কেনার জন্য দেখা যায় অনেক সময় বাবা মা তাদের বাসার বিভিন্ন কিছু বিক্রি করে যেমন মায়ের গহনা,হাস,মুরগি, ছাগল, গরু বা জমি জমা বন্ধক রেখে দেয় শুধু একটি আশায় তাদের সন্তানের পড়াশুনায় যেন কোন ব্যাঘাত না ঘটে। আশায় বুক বেঁধে থাকে গর্ব করে পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে, বলে সন্তানকে ল্যাপটপ কিনে দিলাম মোবাইল কিনে দিলাম।
কিন্তু আমাদের বাবা-মা আমাদের জন্য এত কিছু করতেছে আমরা তাদের জন্য কি করতেছি? তারা কি জানে আমরা এখানে কিভাবে সময় নষ্ট করতেছি? তারা ভাবছে আমরা অনেক পড়াশোনা করছি কিন্তু আসলে আমরা কাজের কিছুই করছি না। সারাদিন শুয়ে, আড্ডা দিয়ে, প্রেমিক-প্রেমিকার সাথে সময় কাটাচ্ছি, বাবা মায়ের সাথে প্রতারণা করছি,নিজের সাথে প্রতারণা করতেছি । আমরা একবারও ভাবি না আমাদের জন্য বাবা-মা কত কষ্ট করছে তাদের জীবনের সবটুকু সঞ্চয় আমাদেরকে ঢেলে দিচ্ছে। সেই আমরা তাদের সাথে প্রতারণা করছি তাদের আশাকে নষ্ট করছি । সেই ছোটবেলা থেকে দীর্ঘ সময় ধরে বাবা মা আমাদের পড়াশুনার খরচ চালায় ।একটা বার আমরা উপলব্ধি করিনা আর যখন করি তখন বেশ দেরি হয়ে যায় ।তখন আফসোস করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই থাকে না। কারণ আমরা এমন একটি পর্যায়ে আসি যখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। সামনে আগাতে পারি না আবার পেছন ফিরতে পারি না। শেষ হয়ে যায় বাবা মার স্বপ্ন আর পূরণ করা হয় না। প্রতিনিয়ত বাবা-মাকে মিথ্যার ফুলছড়ি দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখি আমরা। বাবা মা তবুও আমাদের সরল ভাবে বিশ্বাস করে। তখন আমাদের অতীতের কথা মনে হয়, বিগত সময়ে গুলো কিভাবে আমরা নষ্ট করেছি ।কিভাবে হেলায় কাটিয়ে দিয়েছি ।পড়াশুনা শেষ ,চাকুরীর প্রস্তুতি , সহ বিভিন্ন পরীক্ষার পড়া পড়তে না দোস্ত কিন্তু মনের এক কোণে হতাশা কাজ করে, এই মুখ নিয়ে কিভাবে বাসা থেকে টাকা চাবো অন্য দিকে আবার বাবা মা বসে আছে কখন তাদের সুখবর দিব। জীবনের বয়স দিনদিন কমতে শুরু করেছে, চুল গুলো পেকে যাচ্ছে, মুখে বয়সের ছাপ ফুটে উঠছে তবুও বাবা মার স্বপ্ন পূরণ করতে পারছি না। বাসায় গেলে মানুষের সামনে, আত্বীয়দের সামনে পড়তে হবে যে বাবা/মা জব হলো?,আর কত দিন? এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার ভয়ে লজ্জায় বাসায় যাইতে ইচ্ছা করেনা। অথচ আপনার পাশের বন্ধু বান্ধবী যখন ভালো একটি চাকরির নিয়োগ পায় বাসায় আনন্দ-উল্লাস করবে তখন আপনার আমার বাবা-মা ফোন করে বলবে বাবা/মা পাশের উমুকের ছেলে চাকরি হলো ,উমুখের মেয়ে চাকরি পেল তোর কি খবর বল তো? বাবা মার মনে তখন একটু করে সন্দেহের তীর ঢুকে যাই ,তখন বলেই গেলে সত্যি কি তুই পড়াশুনা করেছিস নাকি শুধু আড্ডা দিয়েছিস। সবার চাকরি হয় তোর চাকরি হয় না কেন। এসব কথা শুনতে শুনতে চোখের কোনা দিয়ে লোনাজল কখন বের হয়ে যায় আমরা জানি না। শুধু একটাই আফসোস থেকে যায় আগে কেন বুঝলাম না !কেন সময় গুলো নষ্ট করলাম! নিজের সাথে, বাবা মায়ের সাথে প্রতারণা করলাম!
তাই আমাদের অবশ্যই সময় থাকতে সাধন করা উচিত। সময়ের মূল্য সম্পর্কে আপনাদের নতুন করে কিছু বলার নেই। যেভাবে সময় কে আপন মূল্যায়ন করছি নষ্ট করছি তা আমাদের জীবন থেকে অনেক কিছু কেরে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের হাতে যখন সময় আছে তখন আমরা কাজে না লাগিয়ে শুয়ে থেকে ও কাজে ব্যয় করছি যা পরবর্তীতে আমাদের জন্য অভিশাপ বয়ে নিয়ে আসছে। সময়ের উপলব্ধি আমাদের যত দ্রুত আসবে জীবনের উন্নতি তত দ্রুত হবে।
ধন্যবাদ সবাইকে



আপনি অনেক গভীর থেকে একটা গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। এই গল্পের উত্তর দেওয়া অথবা বিশ্লেষণ করা খুবই কঠিন। তবে আপনি ঠিকই বলেছেন আমাদের মা-বাবা খেয়ে না খেয়ে হাজার স্বপ্ন দেখে সন্তানকে নিয়ে। আর সেই সন্তান যদি বিপথে যায় তখনই দুঃখ কষ্টগুলো কাকেই বা বলবে। তবে এরকম আমাদের সমাজে হাজারে-হাজার হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত একটা সময় দাঁড়ায় যে তার নিজের ক্ষতি নিজে করেছে। আর তখন আফসোস করা ছাড়া কিছুই থাকেন। আপনি অনেক কিছু অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। যদিও সব কথার উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এটুকুই বলব আমাদের সবারই উচিত মা-বাবার সাথে প্রতারণা না করে নিজের সাথে প্রতারণা না করে সময়ের মূল্য দেওয়া। এবং মা-বাবাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা। এবং মা-বাবার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা। আমাদেরকে এত সুন্দর একটি গল্প উপহার দেওয়ার জন্য শুভেচ্ছা রইল আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
পোস্ট সুন্দর করে পড়ে রিভিউ দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এই সমস্যা টা বতর্মান সময়ে বেশি দেখা যায়। আমিও নিজের চোখে এমন একটা ঘটনা দেখিছি। ছেলেটা গ্রাম থেকে শহরে আসে লেখাপড়ার জন্য। এসেই খারাপ ছেলেদের পাল্লায় পড়ে। এরপর সে তার বাবা মায়ের কাছে শুধু মিথ্যা বলে টাকা চাইত। বাবা মাও না বুঝে দিত। ছেলেটা ফাইনালে করল ফেল ও বাবা মা যখন কলেজে এসে সব শুনে যে ও প্রতিটা বিষয়ে ফেল করে ড্রপ আউট হয়ে গেছে। তখন ঐ ছেলেটার থেকে তার বাবা মা যেন বেশি কান্নাকাটি করছিল। এইরকম অনেক সন্তান আছে যারা তাদের বাবা মায়ের পরিশ্রমের টাকায় এইসব করে বেড়াই।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে ভাইয়া। পরে আর হতাশা ছাড়া কিছুই থাকেনা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি আপু একদম ঠিক কথা বলেছেন। অনেকেই আছি আমরা বাবা মা বাড়ি থেকে টাকা পাঠিয়ে দেয়। আর সেই কষ্টের টাকা গুলো কিছু কুলাঙ্গার সন্তান অযথা খরচ করে ফলে।আপনি সুন্দর একটা পোস্ট করেছেন আপু চমৎকার ভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু লেখা গুলো বড্ড বেশী বাস্তব। একদম মনের কথাগুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। সত্যিই তো মা বাবার স্বপ্ন গুলোকে আমরা কিভাবে প্রতিনিয়ত প্রতারিত করে যাচ্ছি। তার সাথে সাথে নিজেদের ধ্বংস নিজেরাই করে যাচ্ছি। এমন না যে আমাদের ভেতরে অনুশোচনাবোধ আসেনা, সব উপলব্ধি একসময় চলে আসে কিন্তু তখন বড্ড দেরী হয়ে যায়। আসলে আমি নিজেই গুছিয়ে বলতে পারছিনা, কারন আমিও এই একই পথের পথিক। শুধু এটুকু বলব আপনার লেখাগুলো ভেতরে আরেকটা বার নাড়া দিয়ে গেল। ভালো থাকবেন আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার লেখাগুলো আপনার ভালো লাগে শুনে খুশি হলাম ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit