আমাদের গোড়ায় গলদ (পর্ব ৩) ১০ ভাগ 🦊🦊🦊🦊

in hive-129948 •  3 years ago 
কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভাল আছেন। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার লেখা গোড়ায় গলদ এর তৃতীয় পর্ব শেয়ার করব। আমার এই পর্ব ছিল মূলত আমাদের জীবনধর্মী কিছু লেখা নিয়ে অর্থাৎ লক্ষ্য অর্জনের পেছনে আমাদের যে বিষয়গুলো কাজ করে সেগুলো নিয়ে। আমাদের কাছে লক্ষ্য সোনার হরিণের মতো। আমরা সব সময় লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের পথ অবলম্বন করি। কিন্তু শত চেষ্টা করেও দেখা যায় আমরা তা অর্জন করতে পারিনা। তবে অনেকেই পারে তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে। এক্ষেত্রে আপনাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যারা খুব সহজেই তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে তারা আপনার আমার মত এলোমেলোভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে না। নিজের লক্ষ্যকে আমাদের মতো ঠিক করে না। তারা যখন লক্ষ্য ঠিক করে সেই লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত তাদের মনযোগ তখন অন্যদিকে যায়না। তারা সফল হওয়ার জন্য সব সময় ত্যাগ করতে প্রস্তুত কিন্তু আপনি আমি কি ত্যাগে বিশ্বাসী? আমরা সবাই বলি কথাই কথাই কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। বা ভাল কিছু পেতে হলে ভালো কিছু ছেড়ে দিতে হয়। এই ছেড়ে দেওয়ার মন মানসিকতা কি আমাদের আছে? আমরা কি আমাদের ওপর যে বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে তাদের ওপর কি আমরা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি? আপনি আপনার আশেপাশে সফল ব্যক্তিদের দেখবেন যে তারা সব সময় একই কাজ করতো যেটা তাদের ধ্যানে ছিল। অর্থাৎ তার লক্ষ্য পূরণের জন্য দিন রাত মেহনত করে গেছেন।

arrows-2889040__340.webp

Image Source

তাই আমার আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে আমাদের অবশ্যই কাজের সময় বাকি সবকিছু থেকে দূরে থাকতে হবে। অর্থাৎ আমি যখন পড়াশোনা করব শুধু পড়াশোনা করব ঐটুকু সময় অন্য কোনোদিকে আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত হবে না। কিন্তু আমাদের মাঝে অনেকেই এবং আমি নিজেও পরতে পরতে পাঁচ মিনিট পরে ফেসবুকে ঢুকি ইউটিউবে ঢুকে আর একবার যখন এইসব সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢুকে পড়ি ঘন্টার পর ঘন্টা চলে যায় বুঝতেই পারিনা।।এই জন্য এইসব গুলোকে বলা হয় টাইম কিলিং মেশিন। আপনি যদি ভুলেও একবার ফেসবুক ইউটিউবে ঢুকে পড়েন কখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে গেছে আপনি বুঝতে পারবেন না তাহলে কি আমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পারব? আপনি পড়ছেন হুট করে আপনার আশেপাশে কিছু হয়েছে আপনার সে বিষয়গুলো না জানা পর্যন্ত না দেখা পর্যন্ত আপনি স্থির থাকতে পারছেনা। তাই আমাদের পড়াশোনার সময় এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে অন্য কোনো দিকে মনোযোগ সরে না যায়। আমরা যতই চাই না কেন আশেপাশে পরিবেশের দিকে নজর আমাদের যাবে কিন্তু সেই নজর যারা নিবৃত্ত করতে পারে তারাই কিন্তু একদিন সফল হয়ে আলো ছড়ায়।তাই আমাদের চিহ্নিত করতে হবে যেসব বিষয় আমাদের পড়াশোনায় আমাদের কাজের ক্ষেত্রে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন কটায় সেসব বিষয় গুলো কাজের সময় দূরে রাখতে হবে। আমরা যত সঠিকভাবে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারব ঠিক ততটাই আমাদের মনোযোগ বেড়ে যাবে।

destination-1285851__480.webp

Image Source

একটা জিনিস দেখান আমি যখন রুমে বসে পড়াশোনা করি তখন তেমন পড়ায় মনোযোগ বসে না কিছুক্ষণ পরপরই discord এ যাই , অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে চাই। একটু ক্লান্ত হলেই মনে হয় একটু ঘুমিয়ে নেই। কিন্তু আমি যখন লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করি এসব বিষয় নিজেকে জড়াতে পারি না অর্থাৎ আমি যে পড়াটা নিজের রুমে 5 ঘণ্টায় করি ঠিক একই পড়াই রিডিং রুমে গিয়ে আমি দুই ঘন্টায় করতে পারি এটাই হচ্ছে আমাদের পরিবেশ। আপনি যদি সঠিক পরিবেশে থাকেন আপনি সব কিছু থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। সেই সাথে আমরা যত গভীর মনোযোগের সহিত কাজ করব কাজের সফলতা হার তত বৃদ্ধি পাবে। এই জন্য আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে যে আমি এই কাজ করার সময় এই কাজ কখনোই করব না। নিজের জন্য ওই সময়ে ঐ কাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করবেন। দরকার হলে সকল প্রকার ডিভাইস ,মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করে এমন সব বিষয় গুলো কে দূরে রাখবেন। আমাদের মাঝে কমন যে সমস্যাগুলো আছে তা হচ্ছে -আপনি পড়তেছেন আপনার মেসেঞ্জারে কি মেসেজ এসেছে না দেখলে হবে না, আপনার ফেসবুকের নোটিফিকেশন চেক চেক না করলে হবে না, খেলা দেখছেন খেলার স্কোর বারবার চেক করতে যাচ্ছেন, কারো সাথে কথা বলার কোন প্রয়োজন নেই আপনার তবুও দেখা যাচ্ছে অপ্রয়োজনীয় যে কাউকে আপনি ফোন করছেন। এই ভাবেই আমরা খুব সহজেই আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি হয়ে যাই।

business-3189797__480.webp

Image Source

বিভিন্ন বিশিষ্টজনরা বলে কাজের সময় ফোন দূরে রাখা উচিত এবং যথাসম্ভব বন্ধ থাকাটাই শ্রেয়। অনেক মনোবিজ্ঞানীরা বলেন আমরা যখন কাজের পরে কিছু সময় ব্রেক নেই তখন আমাদের এমন কোন কাজ করা উচিত নয় যে কাজে আমাদের গভীর মনোযোগ দিতে হয়। অর্থাৎ তাদের ভাষ্যমতে আপনি যখন বিশ্রাম নেবেন তখন শুধুমাত্র বিশ্রাম নেবেন অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দেবেন না তাহলে দেখা যাবে আপনি যে কাজটি করেছেন তার আপনার দীর্ঘস্থায়ী হবে। কিন্তু আমরা কিতা করি? আমরা একটি কাছ থেকে আরেকটি কাজে গেলে সেই দিকে এতই মনোযোগ দেই যে পূর্বের কাজের কথা একদম ভুলে যাই। আমাদের শতভাগ প্রফেশনাল হতে হবে অর্থাৎ আপনি যখন কাজ করছেন পড়াশোনা করছেন তখন এই পড়াশোনার বাইরে অন্য কোন বিষয়ে কারো সাথে কোন আলাপে জড়ানো উচিত নয়। তবে আরেকটি বিষয় মনোবিজ্ঞানীরা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন সেটি হচ্ছে কাজের জায়গা বা পড়াশুনার জায়গায় সম্পূর্ণ আলাদা হওয়া উচিত অর্থাৎ আমরা যেখানে আরাম করি বিশ্রাম করি ঘুমাই সেটা কখনো কাজে বের হতে পারে না। কাজের জায়গা হতে হবে সম্পূর্ণ আলাদা যেখানে শুধু কাজই হবে। কাজের রুমকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে অন্য কোন দিকে মনোযোগ না চলে যায়। আমরা যদি দীর্ঘ সময় এই অভ্যাসটা চালু করতে পারি আমরা নিজেদের পরিবর্তন নিজেরাই দেখতে পাবো। আমরা যখন নিজের পরিবর্তন দেখতে পাব নিজের ভেতরে এক আত্মবিশ্বাস কাজ করবে। এই আত্মবিশ্বাস টায় সফলতার পেছনে চাবিকাঠি। আপনার আত্মবিশ্বাস না থাকলে আপনি কখনই সফল হবেন না আপনি যতই মেধাবী হোন না কেন। মেধা সব সময় পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাসীর কাছে মাথা নত করে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আমাদের যখন যেটা প্রয়োজন তখন যদি আমরা সেটা ঠিকভাবে করতে পারি তাহলে কিন্তু আমরা ভালোভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারি। যদি আমরা কাজের সময় শুধু কাজ করতে পারি অন্য কোথাও খেয়াল না দেই তাহলে কিন্তু সে কাজটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়। আপনি আজকে খুব ভালো একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা টি পড়ে।

আপনি অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

আমাদের কাছে লক্ষ্য সোনার হরিণের মতো। আমরা সব সময় লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের পথ অবলম্বন করি।

আপু,একদম ঠিক লিখেছেন তবে।আপু,আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করার জন্য কতটা সময় ব্যয় করছি সেটাও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিটা সফলতার পেছনে রয়েছে নিজের মনোযোগ এছাড়াও মনোবল। আপু, আপনি খুবই সুন্দর একটি পোষ্ট লিখেছেন আমি খুব মনোযোগ সহকারে পড়েছি। আপনার লেখার মধ্যে অনেক কিছু শিখার আছে।একটা সত্যি কথা বলতে কি আপু, ইউটিউব অথবা ফেসবুকে যদি ঢুকি তাহলে ঘন্টার পর ঘন্টা চলে যায় সেটা আমরা টেরই পাই না কিন্তু আমাদের যে কাজগুলো করার দরকার সেই কাজগুলোর কথা একদমই ভুলে যায়।খুব ভালো লেগেছে আপু আপনার লেখা পড়ে। ধন্যবাদ আপু 🥰

আমার পোস্ট আপনি অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো। আমাদের উচিত টাইম কিলিং যে এপসগুলো সেখান থেকে দূরে থাকা।