যা দাবী করা হচ্ছে
"দ্যা স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনালের জরিপে শেখ হাসিনাকে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে।"
সারসংক্ষেপ:খবরটি বানোয়াট। এমন কোনো জরিপ কোনো সংস্থা প্রকাশ করেনি।
দ্যা স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনাল নামে কোনো গবেষণা সংস্থার অস্তিত্ব নেই।
মূলত পূর্বের ঐ বানোয়াট সংবাদকে ব্যঙ্গ করেই একই সংস্থার নাম ব্যবহার করে এই বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
গুজবের উৎপত্তি
মে ৩০, ২০১৮ তারিখে rpolitician.com নামক একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট “শেখ হাসিনা কে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক হিসাবে চিহ্নিত করেছে ‘দ্যা স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনাল’” — শিরোনামে একটি পোস্ট প্রকাশ করে। প্রায় একই সাথে nationalistview.com নামক আরেকটি ওয়েবসাইটে “দ্য স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনালে’র রিপোর্ট : শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে। নিউজ দুটি হুবহু একই রকম। এগুলোতে বলা হয়—
“বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক হিসেবে প্রথম হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘দ্যা স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনাল’ এর জরিপে শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক বিবেচিত হয়েছেন। নিকৃষ্ট শাসক হিসেবে দ্বিতীয় হয়েছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ এবং তৃতীয় নর্থ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন।”
এ লেখা দুটি প্রায় চার বছর আগে প্রকাশিত হলেও, এই বছর 2022 সালের মার্চ মাসের আগে পর্যন্ত এই বিষয়টি তেমন আলোচিত হয়নি। এই বছর মার্চ মাসের শেষের দিকে ফেসবুকে একাধিক পোস্টে দাবী করা হয়, “পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী কে” লিখে গুগলে সার্চ করলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম প্রদর্শন ক
বিগত কয়েক মাসে গড়ে ১০ হাজার বারেরও বেশী “পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী কে” লিখে গুগলে সার্চ করা হয়েছে। যার প্রথম রেজাল্ট হিসেবে rpolitician.com এ প্রকাশিত লেখাটি প্রদর্শিত হচ্ছে।
লেখাটিতে আরও উল্লেখ করা হয়—
‘দ্যা স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনাল’ এর জরিপে নির্বাচন পদ্ধতি, নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিষয় বিশ্লেষণের পর বিশ্বের নিকৃষ্ট শাসক হিসেবে সরকার প্রধানদের নিয়ে এই মূল্যায়নধর্মী রিপোর্টটি করা হয়।
সত্যতা যাচাইঃ-
দ্যা স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনাল নামক কথিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি একটি অস্তিত্বহীন কাল্পনিক সংস্থা। আলোচিত লেখাটিতে এটিকে সিঙ্গাপুরভিত্তিক আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষণা সংস্থা বলে দাবি করা হলেও, ইন্টারনেটে এই প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ওয়েবসাইট কিংবা অন্য কোনো গবেষণায় প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও উল্লেখিত লেখা অনুযায়ী, এ জরিপে দ্বিতীয় হয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ এবং তৃতীয় নর্থ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। কিন্তু এই ব্যাপারেও কোনো উল্লেখ নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
আলোচ্য কাল্পনিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির নাম ব্যবহার করে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে কিছু নিউজপোর্টাল “শেখ হাসিনা বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত” শিরোনামে একটি বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে।
সেই বছর মন্ত্রীপরিষদ সচিব শফিউল আলম সাংবাদিক ব্রিফিংয়ে সংবাদটির উল্লেখ করে মন্ত্রীসভার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। ব্রিফিংয়ে এ সম্পর্কে তার পুরো বক্তব্যই ছিলো একটি বেনামী নিউজপোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের হুবহু নকল।
এরপরপরই প্রায় সব জাতীয় সংবাদ মাধ্যম মন্ত্রীপরিষদ সচিবের বক্তব্য অনুযায়ী সংবাদ প্রকাশ করে এবং শেখ হাসিনা বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খবরটি ভাইরাল হয়ে যায়। সরকার দলীয় বিভিন্ন সংস্থা সেই বছর আনন্দ মিছিলও বের করে।
শেখ হাসিনা বিশ্বের ‘দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী’ মনোনীত হওয়ায় খবর প্রকাশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আনন্দ মিছিল বের করে। সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক
ছাড়াও সেই বছর এই ধরণের অসংখ্য বেনামী সংস্থা ও ব্যক্তির নাম দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনার সম্পর্কে বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী কে?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের অন্যান্য প্রধানমন্ত্রীর নাম সম্বলিত এমন কোনো তালিকা কখনো কোনো প্রতিষ্ঠিত গবেষণা সংস্থা বের করেনি। rpolitician.com ও nationalistview.com এই দুইটি ওয়েবসাইটের অন্যান্য লেখাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায় সেসব মূলত আওয়ামী লীগ বিরোধী চিন্তাধারা পক্ষীয়। এর থেকে ধারণা করা যায়, “দ্য স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনালে’র রিপোর্ট : শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক” মূলত ব্যঙ্গরসাত্মক (Satirical) প্রবন্ধ। এতে মূলত ২০১৮ সালে বিভিন্ন বেনামী প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে ভাইরাল বানোয়াট সংবাদগুলোর কটাক্ষ করা হয়েছে।
তাদের লেখাতে উল্লেখ করা হয়—
দ্যা স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনাল’ এর এই রিপোর্ট সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী ডক্টর আবুল মাল আবুল মুহিতকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আই হ্যাভ সিন দ্যা রিপোর্ট, ইট ইজ টোট্যালি বোগাস এন্ড রাবিশ’, ‘আই উইল রেইজ দ্যা ইস্যু ইন নেক্সট ক্যাবিনেট মিটিং’ । আদৌ এ ধরণের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা এ নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেন।
এটিও সাবেক অর্থমন্ত্রী ডক্টর আবুল মাল আবুল মুহিতকে নিয়ে করা কাল্পনিক উল্লেখ। যা ভাষাগত বিবেচনায় ব্যঙ্গাত্মক ধর্মী।
গুগলে অনুসন্ধান করলে কেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে?
“পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী কে” লিখে গুগলে অনুসন্ধান করলে শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শনের ব্যাখ্যা জানা যাবে Quora ওয়েবসাইটে ‘যাচাই’ এর উত্তর থেকে।
এই ধরনের পোস্ট আমার বাংলা ব্লগে শেয়ার করবেন না। যদি পারেন নিজের দক্ষতা আর নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু উপস্থাপন করুন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিক আছে আপা
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit