মহাস্থানগড়ের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ

in hive-129948 •  3 years ago 

received_980888366056389.jpeg

মহাস্থানগড় এর অবস্থান:

বগুড়া জেলার একটি বিখ্যাত স্থানের নাম হল মহাস্থানগড়। এটি বগুড়া শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে বিখ্যাত করতোয়া নদীর তীরে শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি এতটাই বিখ্যাত যে, এখানে প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থীরা ঘুরতে আসেন।এর প্রাচীন নাম ছিল পুন্ড্রনগর বা পুন্ড্রবর্ধন। এটি প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল।

মহাস্থানগড়ের ইতিহাস:

সেন বংশের সর্বশেষ রাজা লক্ষণ সেন এর অধীনে মহাস্থানগড় অনেকদিন দখলে ছিল। পরবর্তীতে লক্ষণ সেনের নিকট থেকে এই গড়ের দায়িত্ব পান পরশুরাম। তিনি দীর্ঘদিন এই গড়ে রাজত্ব করেন। ফলে তখন ওই অঞ্চলে হিন্দু ধর্মের লোকজন দের আবাসন গড়ে উঠেছিল। পরবর্তীতে আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সম্পন্ন পীর হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এই অঞ্চলে আসেন।তিনি এই অঞ্চলে আসার পর তার সঙ্গে পরশুরাম এর বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয় এ বিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে পরশুরাম এর সঙ্গে তার যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধে তিনি বিজয়ী হন। সেই থেকে মহাস্থান গড়ে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

received_1483327438687878.jpeg

মহাস্থানগড়ের ঐতিহ্য:

মহাস্থানগড়ে মৌর্য, গুপ্ত,পাল এবং সেন বংশের বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া গেছে। এছাড়াও ধারণা করা হয় মহাস্থানগড়ে যিশুখ্রিস্টের জন্মের পূর্বের সময়কারও অনেক নিদর্শন পাওয়া গেছে।এসব নিদর্শন থেকে অনুমান করা যায় বাংলার সবচেয়ে পুরাতন নগরী হলো মহাস্থানগড়।মহাস্থানগড়ে অনেক পুরাতন যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে। সার্ক এর গুরুত্ব বিবেচনায় এটিকে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণা করেন ২০১৬ সালে। মহাস্থানগড়ের বিভিন্ন স্থান সমূহ খনন করলে এখনো অনেক পুরনো আমলের মূল্যবান দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। এজন্য জনসাধারণের এই অঞ্চল খনন করায় বিধিনিষেধ রয়েছে।

মহাস্থানগড়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ:

মহাস্থানগড় একসময় প্রাচীন বাংলার রাজধানী থাকায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে এর বিস্তার রয়েছে। নির্দিষ্ট কতকগুলো আলাদা আলাদা ভূখণ্ডের সম্মিলিত স্থান হল মহাস্থানগড়। মহাস্থানগড়ের বিখ্যাত স্থানসমূহ হল মাজার শরীফ, গোবিন্দ ভিটা, বেহুলার বাসর ঘর, জাদুঘর, পরশুরামের প্রাসাদ, খোদার পাথর ভিটা, জিওতকুন্ড, শীলাদেবীর ঘাট,মানকালীর ঢিবি,ভাসু বিহার সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থান সমূহ নিয়ে বিস্তীর্ণ মহাস্থানগড় বিস্তৃতি রয়েছে। এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঐতিহাসিক স্থান মিলে গঠিত হয়েছে বিখ্যাত মহাস্থানগড়।

received_1170467556792235.jpeg

received_345373826992107.jpeg

মহাস্থানগড়ের বর্তমান প্রেক্ষাপট:

বর্তমানে মহাস্থানগড় এর অবস্থা খুবই শোচনীয়। এটি এক সময়কার বিখ্যাত ধর্মীয় স্থান হিসেবে দেশব্যাপী প্রচলন ছিল। কারণ এখানে শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এর মাজার শরীফ অবস্থিত।দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ এখানে ধর্মীয় কাজে বিভিন্ন কিছু মানত রাখত। কিন্তু এটিকে কেন্দ্র করে বর্তমানে ধর্মের নামে ব্যবসা চলছে। এছাড়াও এই মাজার কে কেন্দ্র করে প্রতিবছর উপার্জিত হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিবর্গ এসব অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ তাদের উচিত ছিল এই অর্থ ব্যয় করে মহাস্থানগড়ের বিভিন্ন স্থান সমূহ সংরক্ষণ করা। এছাড়াও মহাস্থানগড়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমূহ এখন ক্ষয় হতে হতে বিলুপ্তির দিকে চলে যাচ্ছে।

উপসংহার:

মহাস্থানগড়ের এসব ঐতিহাসিক স্থানসমূহ আজ বিলুপ্তির দিকে যেতে থাকলেও এগুলো সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। বর্তমান পেক্ষাপটে এর অবস্থান আগের মত না থাকলেও এখনও প্রতিবছর এখানে ভিড় জমে যায় বিভিন্ন দর্শনার্থী এবং বনভোজন এর জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষার্থীদের।

received_791007238278238.jpeg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

এক সময় এই জায়গা যার জন্য অনেক স্বপ্ন ছিল এবং আপনার পোষ্টের মাধ্যমে অনেক তথ্য জানতে পারলাম। যাওয়ার জন্য আরো আগ্রহ বেড়ে উঠলো আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর জায়গা আমাদের মাঝে পরিবেশন করার জন্য।

এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

খুবই সুন্দর ফটোগ্রাফি করেছেন ও বেশ ভালো আলোচনা করেছেন। আমাদের সবারই মহাস্থান গড়ের ইতিহাস জানা দরকার। শুভকামনা রইল

ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।

আপনি খুব ভালোভাবে মহাস্থানগড় সম্পর্কে উপস্থাপনা করেছেন এবং ফটোগ্রাফি বিষয়ে সুন্দর ছিল তাই আপনাকে সব মিলিয়ে অনেক ধন্যবাদ।

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন আপনি।মহাস্থান ঘরের কথা আমাদের পাঠ্য বইতে পড়েছিলাম।

কিন্তু এটিকে কেন্দ্র করে বর্তমানে ধর্মের নামে ব্যবসা চলছে।

এটা খুবই খারাপ দিক বলে মনে করি আমি। ধর্মে কোনদিন ব্যাবসা চলে না।

Note:ছবির নিচে লোকেশন কোড যুক্ত করলে পোস্ট পোস্ট এর সৌন্দর্য বাড়ে।

লোকেশন কোড কিভাবে যুক্ত করতে হয়??

আমি অনেক দিন আগে গেছিলাম। তখন সবুজ ঘাসে ঢাকা ছিল। এখনতো ঠকঠকা দেখছি। সুন্দর ফটোগ্রাফি ও উপাস্থাপন। ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন।

মহাস্থানগড়ে আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম একটি স্থান। এটি আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবং এটি আমাদের গর্বের একটি জায়গা। মহাস্থানগড় কে নিয়ে খুব সুন্দর একটি ব্লগ লিখেছেন। ফটোগ্রাফি গুলো অসাধারণ ছিল।

ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।

মহাস্থান গড় নিয়ে খুব ভালো লিখেছেন।আসলেই সেখানে অনেক ভালো স্থান বিলিন হতে চলেছে।আমি ২০১৯ সালে সেখানে গিয়েছিলাম এবং দেখেছিলাম অনেক কিছুই বিলুপ্ত। আমাদের ঐতিহাসিক স্থান এটি, অনেক ট্রাভেলার সেখানে ঘুরতে আসেন।আমাদের এই সুন্দর স্থান টির প্রতি দায়িত্ব বৃদ্ধি করতে হবে।

গঠণমূলক মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার পোস্টের মাধ্যমে মহাস্থানগড়ের ইতিহাস সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আপনার ছবিগুলো খুবই সুন্দর হয়েছে। ইচ্ছা আছে একসময় মহাস্থানগড় ঘুরতে যাওয়ার। ধন্যবাদ আপনাকে।

এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।

যখন কলেজে পড়তাম। তখন আমার কলেজ থেকে এটা খুব কাছেই ছিল এবং বহু বার গিয়েছি এই জায়গায় ।আপনি যে কথাগুলো লিখেছেন সেগুলো তো অনেকগুলো মিল আছে এবং সে কথাগুলো তো অনেকগুলো যুক্তি আছে ।একদম ভালো বলেছেন ।যাইহোক শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

গঠণমূলক মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের মধ্যে ভালো একটি পর্যটক কেন্দ্র। এখানে পুরাতন স্থাপনা রয়েছে। আমি এখন পর্যন্ত এখানে যায়নি। তবে আমি খুব দ্রুতই যেতে পারব আশাকরি। এইসময়ে এইরকম একটি পোস্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।