"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২৩ || শেয়ার করো তোমার স্কুল জীবনের কোন তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

বিসমিল্লাহি রহমানের রাহিম

আসসালামু আলাইকুম

শ্রদ্ধেয় প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন ? সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আশা করি ভাল আছেন । আমিও সৃষ্টিকর্তার রহমতে ভালো আছি ।

প্রিয় , আমার বাংলা ব্লগ কমিটির সদস্যরা
আপনাদের মাঝে আবার এসে হাজির হলাম।

আজ আমি আপনাদের "আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২৩ স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি সম্পর্কে বলতে চাই। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আপনারা আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে পুরো পোস্টটি দেখবেন আশা করি।

IMG_20220929_112513.jpg

প্রথমে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই প্রিয় হাফিজুল্লাহ ভাইকে এত সুন্দর প্রতিযোগিতা আয়োজন করে স্কুল জীবন ঘটে যাওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি শেয়ার করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। কিছু অনুভূতি থাকে আনন্দের মনে পড়লে এখনো মুখে হাসি থাকে। কিছু অনুভূতি থাকে হৃদয়বিদারক মনে পড়লে হৃদয় কেঁপে উঠে চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়। আসলে জীবনটা এমনি।

এই সুন্দর প্রতিযোগিতা আয়োজন করায় শ্রদ্ধেয় দাদা @rme প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং তাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। তার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি তার সাথে সাথে তাদের পরিবারের বিশেষ করে শ্রদ্ধেয় ছোট দাদা, প্রিয় বৌদি, স্নেহের টিনটিন বাবু সহ সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে তাদের জন্য প্রার্থনা করছি তারা যেন সব সময় সুখে-শান্তিতে সমৃদ্ধির সাথে জীবন অতিবাহিত করতে পারে।
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল এডমিন মডারেটরসহ সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। যার যার অবস্থান থেকে সবাই যেন ভালো থাকে সেই প্রত্যাশা করছি। সকলের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে অফুরন্ত ভালোবাসা রইল।

তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি

  • কিভাবে যে শুরু করি ভেবে পাচ্ছিনা ? জীবনে অনেক কিছু ফিরে পাওয়া যায়, তবে ফেলে আসা স্কুল জীবনের সোনালি দিনগুলো আর ফিরে পাওয়া যায় না। ফিরে পাওয়া যায় না পড়ার টেবিলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সে মধুর মুহূর্তগুলো। বর্তমানে যেকোনো সময় হুট করে মনে পড়ে ফেলে আসা স্কুল জীবনের অতীতের সময় গুলো কত না সুন্দর ছিল। যদি আবার ফিরে যাওয়া যেতো অতীতের দিনগুলোর মাঝে কত আনন্দ হতো। এই ভাবতে ভাবতে চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। কত না হাসিমুখে দুষ্টামির মাঝে করেছি পার জীবনের কিছুটা সময়। জীবনের ডাইরিতে সোনালী অক্ষরে লেখা থাকে স্কুল জীবনের স্মৃতি গুলো। যা কখনো ভুলে যাওয়ার মতো নয়। আসলে জীবনে শ্রেষ্ঠ সময় হলো ছাত্র জীবন কত আনন্দ বেদনার মুহূর্ত পার করতে হয় এই ছাত্র জীবনে। স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে বন্ধুদের সাথে হাজারো রকমের দুষ্টামি এখনো হৃদয়কে নাড়িয়ে তোলে। ক্লাসে কি পড়েছি মন নেই তবে এখনো অনেকগুলো স্মৃতি কথা মনে পড়ে বুকের বাম পাশে চিনচিন করে। স্কুল জীবনের অনুভূতিগুলো বলে শেষ করা যাবে না।

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WGBHdJvSPqofr2EQVWMiGDyPnxdkg3P2Zc5mcjfZ547nxq8W8kXxq1Rbkqmd8XbF5PMjx4jijcV1F5aTP3Zp.png

স্কুল জীবন মানে ফেলে আসা সোনালী অতীত
স্কুল জীবন মানে বন্ধুদের সাথে হাসি আনন্দে
কাটানো মধুর মুহূর্ত।

স্কুল জীবন মানে দুষ্টামির সেরা সময়
পেছনের টেবিলে বসে কলম দিয়ে শার্টে আঁকা।

স্কুল জীবন মানে বন্ধুর নামের সাথে ব্যঙ্গ নাম যুক্ত করা।

স্কুল জীবন মানে হুট হাট ঝগড়া করা
অল্পতে রাগ অভিমানে হারিয়ে যাওয়ার।

স্কুল জীবন মানে কয়েকটি কথা বিনিময় করে অন্যকে ভালো বন্ধু ভাবা।

স্কুল জীবন মানে পড়া না পারলে সামনের টেবিল খালি রেখে পেছনের টেবিলে বসা।

স্কুল জীবন মানে শিক্ষকের সামনে নমনীয়তা
শিক্ষকের পেছনে ফাজিলের সেরা।

স্কুল জীবনের মানে সুযোগ পেলে ক্লাস রুমকে মাছ বাজার তৈরি করা।

স্কুল জীবন মানে নিজে দোষ করে বন্ধুর নাম বলা।

স্কুল জীবন মানে পড়া পারলে বীরের মতন থাকা
না পারলে মাথা নত করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা।

স্কুল জীবন মানে সহপাটিদের মধ্যে পড়া শেখার প্রতিযোগিতা।

স্কুল জীবনের মানে নিজের হাতের লেখা অন্যকে দিয়ে লেখানো।

স্কুল জীবন মানে পরীক্ষার হলে বন্ধু একটু দেখা
পরীক্ষা শেষ পাস করবি তো দোস্ত বলে কাঁধে হাত দেওয়া।

স্কুল জীবন মানে পরীক্ষার খাতায় সকল উত্তর দিয়েছি হাসিমুখে বলা।
তবে পরীক্ষার ফলাফলে নাম্বার কম পাওয়া

স্কুল জীবন মানে ভালো লাগে প্রেমের খুনসুটি
স্কুল জীবন মানে বন্ধুর জন্য জীবন ভাজি রাখা।

স্কুল জীবন মানে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় স্মৃতির পাতায় সোনালী অক্ষরে লেখা।

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WGBHdJvSPqofr2EQVWMiGDyPnxdkg3P2Zc5mcjfZ547nxq8W8kXxq1Rbkqmd8XbF5PMjx4jijcV1F5aTP3Zp.png

মায়ের মুখে শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি । সালটা ২০০৫ মায়ের হাত ধরে গুটিগুটি পায়ে ভয়ে ভয়ে চলতে লাগলাম কোন এক অচেনা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। গন্তব্য শেষ হলো দক্ষিণ জগতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের অবস্থান আমাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে। আম্মু আর আমি বিদ্যালয় গিয়ে পৌঁছলাম । প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির যাবতীয় কার্যক্রম সম্পূর্ণ হলো। একজন শিক্ষক আমার নাম, আমি কি, আরো কি কি যেন জিজ্ঞেস করলো এখন তা স্পষ্টভাবে মনে নেই। বুকের ভেতর এক ধরনের ভয় কাজ করছে। ভয়ে ভয়ে নিজের নামটা ঠিক মতো বলেছি। অন্য প্রশ্ন গুলো জানা থাকা সত্ত্বেও মুখ দিয়ে বের হলো না। এক এক করে বিদ্যালয় সকল শিক্ষকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। তারপর আমাকে আরো কয়েকজন সহপাঠি সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো। প্রথম কয়েকদিন আমি আম্মুর হাত ধরে স্কুলে যেতাম। আমি খুবই শান্তশিষ্ট এবং ভীতু ছিলাম। প্রথম প্রথম সহপাঠীদের সাথে তেমন কোন কথা বলতাম না। পরবর্তীতে সবার সাথে মিশে গেলাম। স্বাভাবিকভাবে যেকোনো বিষয় নিয়ে সহপাঠের সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। বিদ্যালয় একেবারে ভালো ছাত্র ছিলাম না তবে যে কোন বিষয় পড়া পারতাম। প্রথম যখন স্কুলে ভর্তি হলাম তখন স্কুলে যেতে চাইতাম না।

পরবর্তীতে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার জন্য মনের মধ্যে আগ্রহ জাগ্রত হলো। কেন যেন বন্ধুদের সাথে কথা বলা না হলে বিদ্যালয়ে না গেলে ভালো লাগতো না । এভাবে সুন্দরভাবে কয়েকটি মাস কেটে গেলো। প্রথম সাময়িক এবং দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা শেষ হলো। মোটামুটি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করেছি। বার্ষিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ হলো। পরীক্ষায় ফিস দেওয়ার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হলো। বাড়িতে এসে আম্মুকে বললাম ফিস দেওয়ার জন্য। কিন্তু আম্মু পরীক্ষার ফিস দিলো না নির্ধারিত সময়ের মধ্যে। এদিকে ক্লাসের সবাই ফ্রী জমা দিয়েছে শুধুমাত্র আমি ছাড়া। এজন্য স্কুল থেকে আমাকে বকাঝকা করা হলো। আমার মন ভীষণ খারাপ হলো। পরীক্ষা দিন চলে এলো তবু ফ্রি জমা দিতে পারলাম না। পরীক্ষার দিন আম্মু আমাকে নিয়ে স্কুলে গেলো। আম্মু শিক্ষকদের সাথে কথা বললো এর মধ্যেই পরীক্ষার অনেক সময় পার হয়ে গেলো। পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলাম হলে গিয়ে দেখি আমার সহপাঠীরা অনেক প্রশ্নের উত্তর লিখে ফেলেছে। আমি তাড়াহুড়া করে কোন রকমে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলাম এর মধ্যে পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। পরীক্ষার দিন সবাই তাদের পছন্দ জায়গায় মতে বসতে পেরেছে যেহেতু আমি সবার শেষে গিয়েছি আমি কোন রকমে ক্লাসের পেছনের একটি বেঞ্চে বসেছি। যাহোক আমি পরীক্ষায় মোটামুটি ভালো ফলাফল অর্জন করে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছি। এখন আবার দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হতে হবে ভর্তির জন্য ফ্রি নির্ধারণ করা হলো। বাড়িতে এসে আম্মুকে বললাম । আম্মু ভর্তির ফ্রী দিতে পারছে না।

সবাই ভর্তি হয়ে গিয়েছে, টাকার জন্য আমি ভর্তি হতে পারে নি। কয়েকদিন পর আম্মু ফ্রি দিলো দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হলাম । তখন আমার মোটামুটি জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে। আম্মু কেন ফ্রি দিচ্ছে না আমি বুঝতে পারলাম। আমি, আমার আব্বু আম্মু, আমার দুই বোন নিয়ে আমাদের পরিবার। আমি যখন খুব ছোট ছিলাম তখন আমার আব্বু একটি দুর্ঘটনায় তার একটি পা হারিয়েছে। সে থেকে আব্বু কোন কাজ করতে পারে না। ঐ দুর্ঘটনা জন্য আব্বুকে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। সেই থেকে আমাদের ফ্যামিলিতে দুরবস্থা নেমে এসেছে। দুই মুঠো ভাত খেয়ে না খেয়ে কোনরকম আমরা জীবন যাপন করছি। আমাদের ফ্যামিলিতে তখন কোন আয়ের উৎস ছিল না। আম্মু ছিলো গৃহিণী। বাড়িতে কিছু হাঁস মুরগি পালন করতো সেই গুলো বিক্রি করে আমাদের পরিবার কোন রকম চলতো। তখন আমাদের আর্থিক অবস্থা একেবারে খারাপ ছিলো। সে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে জীবন যুদ্ধে আমাকে নামতে হয়েছে। তখন থেকে আমি জীবনকে উপলব্ধি করতে পেরেছি। বিদ্যালয় সহপাঠীরা টিফিনের জন্য টাকা নিয়ে আসতো। তারা দোকান থেকে অনেক কিছু কিনে খেতো কিন্তু আমি টাকার জন্য কখনো কোন কিছু কিনে খেতে পারতাম না।

2gAV5LDUkkjfmb3LFUyzdx2MoHhosBFqbkpdbFdaFSMjmz5ZvYwogU1Gs7mhvUJGr4xndQjz3wmeiFwcaVggnSYT56hZZJADA3oVQg91HqBRWTNDactUKhmsRr5mXk68Lugo5zdhhcHsFrRCEKkD5BvstHhnoW3Q8nES.png

আমি বাড়িতে আম্মুকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতাম এজন্য প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারতাম না। এ কারণে বিদ্যালয় শিক্ষকেরা আমার প্রতি বিরক্ত। আম্মু আমাকে পড়াতেন। আমি নিজে কোন রকমে পড়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পাশ করেছি। যত দিন যাচ্ছে ততো আমাদের পরিবার আর্থিক অবস্থা আরো খারাপ হতে যাচ্ছে। খাতা কলম কেনার জন্য টাকা পর্যন্ত ছিলো না ‌। আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে খাতা ডালে পর্যন্ত লিখেছি। একটি খাতায় শেষ হলে অন্য একটি খাতা কিনতে পারতাম না । সবাই বাংলা, ইংরেজি, অংকের জন্য আলাদা আলাদা খাতা ব্যবহার করতো আমি মাত্র একটি খাতা ব্যবহার করতাম। তা হল সাদা খাতা। তারমধ্যে সকল বিষয় লিখতাম।

অষ্টম শ্রেণীতে উঠা পর্যন্ত আমার কোন স্কুল ব্যাগ ছিল না। আমি একটি স্কুল ডেস দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ বছর কাটিয়েছি। ক্লাসের মধ্যে সবচেয়ে গরিব ছাত্র ছিলাম আমি। আসলে সব জায়গাতে যাদের টাকা পয়সা আছে। যাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো তাদেরকে সবাই অন্যরকম চোখে দেখে। আর যাদের পরিবারের অবস্থা খারাপ তাদেরকে সবাই কোন না কোন ভাবে অবহেলা করে। আমার সাথেও প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এমন হয়েছে। অনেক ভাবে আমি অবহেলিত হয়েছি। আসলে যত দিন যাচ্ছে ততো আমার সহপাঠীরা আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আমি গরিব বলে।

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iQRwpoRTSu9q3KtkUwzntCaoZQW7wbt6GpezTZR7x4WEc6rm1eC57Wk6mxrhBjtoN3JBiztPWNJ.png

আসলে এই বিষয়গুলো যখন মনে পড়ে তখন হৃদয় ভেঙ্গে চোখ দিয়ে অশ্রু পড়ে। এভাবে করতে করতে আমি চতুর্থ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছি।
লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছে না পরিবার। আমার লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। টাকার জন্য মানুষের বিভিন্ন কাজ করতাম। অন্যের গাছের নারিকেল সুপারি পেড়ে দিতাম । মানুষের ধান কেটে দিতাম গরুর জন্য ঘাস কেটে দিতাম । আসলে এমন কোন কাজ নাই যে আমি করেনি। যা কয় টাকা পেতাম তা আম্মুকে দিয়ে দিতাম। আমি এসএসসি পর্যন্ত কোন ধরনের প্রাইভেট পড়তে পারেনি। স্কুলে যা লেখাপড়া শিখতাম তা দিয়ে কোনরকম পরীক্ষার পাশ করার চেষ্ট করেছি। আমাদের সময় ক্লাস ফাইভে সমাপনী পরীক্ষা হতো। এজন্য ইংরেজি এবং গণিতের উপর স্কুলে সকাল বেলা কোচিং করানো হতো। টাকার জন্য আমি কোচিং করতে রাজি হইনি। তারপরও শিক্ষকেরা আমাকে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিলো কোচিং করতে। তাই আমি কোচ যেতে লাগলাম।

2bP4pJr4wVimqCWjYimXJe2cnCgn5Ee1vjtXvRasnuk.png

সময়টা ২০০৯ সাল ঐ সময় কোচিংয়ের জন্য সবার থেকে মাসে ৩০০ টাকা করে নিতো। আর আমার যেহেতু পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ এই জন্য আমার থেকে অর্ধেক অর্থাৎ ১৫০ টাকা ধার্য করেছে। ক্লাস ফাইভে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা দিয়েছি শুধু পরীক্ষার ফিস দিয়ে। কিন্তু কোচিং এর টাকা দিইনি। তারপর দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার সময় হলো। এখন আমার দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ফিস এবং কোচিং এর কয়েক মাসের ফিসসহ অনেক টাকা ফিস আসলো। আমি যখন বাড়িতে গিয়ে আম্মুকে বললাম আম্মু তো পরীক্ষার ফিস এর কথা শুনে হতভাগ। খুবই বিস্মিত হলেন। এতো টাকা তিনি জোগাড় করবেন কিভাবে?
ঐ সময় আমাদের আশেপাশের লোকজন এবং কিছু আত্মীয়-স্বজন আমাদের কাছে অনেক টাকা পেতো। আব্বুর চিকিৎসার এবং পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য টাকা ধার করেছে। টাকার জন্য আম্মুর মানসিক অবস্থা একেবারে খারাপ। প্রতিদিনই কোন না কোন লোক এসে টাকার জন্য আম্মুর সাথে ঝগড়া করতো। টাকার চিন্তায় আম্মুর প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। ভালো কথা বললেও আম্মু খুব বিরক্ত বোধ করে । বিদ্যালয়ে অনেক টাকা দেওয়া লাগবে। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার আর কয়েকদিন বাকি। সবাই ফিস জমা দিচ্ছে। আম্মু বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ধার নিয়ে টাকা জমিয়েছে। আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে আম্মুকে বলছি পরীক্ষার ফিস দেওয়ার জন্য তিনি আমাকে টাকা দিতে লাগলেন। আমি টাকাগুলো দেখে বলছি এখন রাখেন‌। স্কুলে যেতে দিবেন। কিন্তু স্কুলে যেতে টাকা নিতে আমার মনে নেই। এর পরের দিন পরীক্ষা । আমি স্কুল থেকে এসে পরের দিন সকালে আম্মুকে বললাম আম্মু টাকা দেন। তখন আম্মু বলেন টাকা কালকে তোকে দিয়েছি আজকে কিসের টাকা? পরে যে আমি আম্মুকে টাকা রাখতে দিয়েছি এটা আম্মু ভুলে গেছে।

আমি আম্মুকে নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে টাকা যখন দিয়েছেন তখন টাকা আবার রাখতে দিয়েছি। কিন্তু আম্মু কিছুতে আমার কথা শুনতে নারাজ। তিনি কিছুতে আমার কথা বুঝিনি। আসলে আমার আম্মু যে কথা বলে তার থেকে নড়াচড় হয় না। আম্মু শুধু বারবার বলছে আমি তোকে টাকা দিয়েছি কোন জায়গায় টাকা হারিয়েছোত বা কাকে দিয়েছোত এটা আমি জানি না। এখন সব দোষ আমার উপরে পড়লো। এদিকে পরীক্ষার সময় চলে যাচ্ছে। এমনিতে আম্মু টাকার জন্য মানসিকভাবে অশান্তিতে আছে এরপরে আমি টাকা চাওয়াতে আম্মু আমার উপরে খুবই বিরক্ত হলো। সব দোষ এখন আমার উপরে দিলো। সে আমাকে মারতে মারতে স্কুলে নিয়ে গেল। স্কুলে শিক্ষকদের কাছে আম্মা বললো কালকে স্কুলে আসার সময় আমাকে টাকা দিয়েছে আমি টাকা হারিয়ে ফেলেছি বা কাউকে দিয়ে দিয়েছি স্কুলে টাকা জমা দেয় নি।

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WSFayCtwhzR8p5ww6cvzC5qt9UM85FqFkUemheHo4oevgjKFfiSW2uSKEFLufMsHGtBtAjeidYyWo5fEh69L.png

আম্মুর কথা শুনে শিক্ষকেরা আমার উপর খুবই চড়াও হলো । আমাকে বলল টাকা কি করছি। আমি এখন এমন পর্যায়ে পড়েছি কোন উত্তর দিতে পারছি না। এখন আমি যদি বলি আম্মু আমাকে টাকা দেইনি তাহলে এদিকে আম্মুর মিথ্যাবাদী হয়ে যাবে। আম্মুর মান-সম্মানের আঘাত আসবে। আম্মু সবাই নিকট ছোট হয়ে যাবে। আর আমি যদি বলি টাকা হারিয়ে গেছে বা কাউকে দিয়েছি তাহলে শিক্ষকেরা আমাকে প্রচন্ড ভাবে মারবে। তখন স্কুলের অনেক বেত ছিলো। বর্তমানে তো স্কুলে বেত রাখা নিষেধ। প্রধান শিক্ষক মহোদয় একটি বড় বেত নিয়ে হাজির হলো আমাকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখাতে লাগলো। প্রধান শিক্ষক মহোদয় বারবার বলছে টাকা কি করছি তা বলতে। এখন আমি কি বলবো আমি এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি একদিকে আম্মুর মান সম্মান অন্যদিকে বেতের আঘাত। ভয়ে আমার মুখে কথা বন্ধ হয়ে গেল। আমি এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি যা আসলে বলে বুঝানো সম্ভব নয়। কে বুঝবে, কে শুনবে আমার কথা? আমার আম্মু আমার কথা বিশ্বাস করলো না সেই জায়গায় শিক্ষকরা তো করবেই না। এদিকে প্রধান শিক্ষক আমাকে উচ্চস্বরে ধমক দিচ্ছে। আমি আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে তখন বলেছি টাকা হারিয়ে গেছে। আসলে বাস্তব সত্য হলো আম্মু আমাকে টাকা দেয়নি যা একমাত্র আমি মনে মনে বলছি, আর মুখ দিয়ে বলছি টাকা হারিয়ে গেছে। আমার কথা শুনে প্রধান শিক্ষক বললো সত্যি করে বলতো টাকা হারিয়ে গেছে না নিজের কাছে রেখে দিয়েছোত । আমি আবারো বলছি টাকা হারিয়ে গেছে। তখন প্রধান শিক্ষক অধিক রাগান্বিত হয়ে আমাকে প্রচন্ড ভাবে মারধর করলো।

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjnztxNkWZNBCTxqF3xwXUTQenK21xtRxARWS4hidigrrHE6jjq1gq94KEHMLQ2riCuWNkFCb8gNA1HabmLA.png

আমার শরীরের প্রত্যেক জায়গায় বেতের আঘাত পড়েছে। বিশেষ করে আমার হাত এবং পিঠে অংশে অনেক মেরেছে। আমাকে বেত দিয়ে পিটানোর পর কোচিং এবং পরীক্ষার ফিস মওকুফ করে দিলো। ঐ দিন আর পরীক্ষা দিতে পারে নি । পরের দিন থেকে পরীক্ষা দিয়েছি। এখনো আমার ঐ বেতের আঘাতের কথা মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে। আমার হাতে এবং পিঠে বেতের বাড়ির দাগ অনেকদিন পর্যন্ত ছিলো। কয়দিন পর আম্মুর মনে পড়লো এক মহিলাকে টাকা দিয়েছে তার থেকে আগে টাকা ধার নিয়েছিল। তখন আম্মা আমাকে জড়িয়ে ধরিয়ে অনেক কান্না করলো। আম্মা নিজের ভুল বুঝতে পারলো। আমি যে সত্য কথা বলছি তা প্রমাণ হলো । তাই আম্মু আমার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করলো আমি যেন ঠিকমতে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারি। আম্মু সেই দোয়া হয়তো সৃষ্টিকর্তা গ্ৰহন করেছে‌ । আমি অনেক বাধা-বিপত্তি, পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার সত্ত্বেও ডিগ্রী পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পেরেছি। আমার সাথে আমার অনেক সহপাঠী লেখাপড়া এবং আর্থিক অবস্থা ভালো থাকার পরেও উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স ও ডিগ্রী পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারেনি। আমার এখনো মনে আছে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আইসিটি বিষয়ের জন্য একজন বড় ভাইয়ের কাছে দুই মাস প্রাইভেট পড়েছি। কিন্তু তার টাকা দিতে পারেনি।

32FTXiZsHoAW6noHJDhrg3W8ZKHVFSsLYM859aTDCF8iErFtbLND8yeRSwDYc3yi8MX79pUxf1uRoQ8EGaB9uStP6Px3tnwxFBVtwFY63s1VZKM66U4QSsRbPstjhR2aWeYZjtiptpcq6Sge.png

আসলে আজ এই অনুভূতিগুলো মনে পড়লে খুবই কষ্ট লাগে। স্কুল জীবনে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত আমার একটি স্কুল ব্যাগও ছিল না। আজ কিন্তু আমার চার পাঁচটি স্কুল ব্যাগ পড়ে রয়েছে। স্কুল জীবনে আমি খাতার জন্য লিখতে পারি নি আজ আমার বাসায় অনেক গুলো দামী দামী খাতা, ডায়েরি এবং ফ্রেড পড়ে রয়েছে। আমি একটি শার্ট দিয়ে পাঁচ বছর কাটিয়েছি আজ তিন থেকে চার মাস হলে আমি শার্ট পরিবর্তন করি। টাকার জন্য যে মা খুবই অস্থির এবং মানসিক ক্ষতিগ্রস্ত মধ্যে থাকতেন। আজ মায়ের হাতে টাকা দিলে তার দুচোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়ে। যে আম্মু টাকার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে সে আম্মু আজ আমাকে বলে টাকা দিয়ে আমি কি করবো।

স্কুল জীবনে টাকার জন্য যে তিক্ত অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে তা আমার মত্যু পর্যন্ত মনে থাকবে। এই ঘটনা আমি কখনো বুঝতে পারবো না।

আজকে আপনাদের সাথে স্কুল জীবনে ঘটে যাওয়া আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম আসলে আপনাদের কেমন লেগেছে জানি না । তবে আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে পেরে আমার অনেক অনেক ভালো লেগেছে। হৃদয়ের জমানো ব্যথা গুলো হালকা হলো। আমি আবারও সকল এডমিন মডারেটরদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এত সুন্দর প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য। যার মাধ্যমে স্কুল জীবনে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পেরেছি।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnKUyaGevyKytijM2kNK9sWZGoqNrRj4v89mQqnJ8uXtmaNEUs1eXPC2rQJx6m9v5Trdr8CYL5vRaTzf79aKrCDbLi3qn9su6bgdMdX1nZdaAvHTiAxeh2sgcSmNGZQUizp8uJYWwnn8YdoXdvRtAVpWDzN.png

পোস্টটির কোথায় ভুল ত্রুটি হলে সুন্দর ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

  • অন্য সময়ে আবার অন্য কোন বিষয় নিয়ে কথা হবে।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিবেন ।এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।

সবাইকে শুভ রাত্রি
আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।
আপনাদের সকলকে আমার পক্ষ থেকে ভালোবাসা 💜💙 এবং অভিনন্দন রইলো ।

আমার পরিচিতি

G0mIPwfurEJVlbirXIKFAUZVIuK.jpg

আমি আওলাদ হোসেন আজিম ।আর আমার ইউজার নাম @ah-agim আমি একজন বাংলাদেশী। মাতৃভাষা বাংলায় বলে - আমি খুব গর্বিত। আমার মনে ভাষা বাংলা এর প্রকাশ করতে খুব ভালো লাগে। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকে ভালোবাসি। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সন্মানীত এডমিন মডারেটর সহ সকল সদস্যদের প্রতি আমার অফুরন্ত ভালোবাসা বিরাজমান। আমি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে ভালোবাসি। সৃষ্টিকর্তার দেওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আমার কাছে খুব বেশি ভালো লাগে। তাছাড়া আমি বিভিন্ন ধরনের কাগজের ( কারুকাজ ) এবং বিভিন্ন রকমের রান্না ( রেসিপি ) করতে পছন্দ করি। আমি ফটোগ্রাফি করে থাকি। ফটোগ্রাফি করতে আমার কাছে অনেক অনেক বেশি ভালো লাগে।বিশেষ করে সৃষ্টিকর্তার দেওয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্য সমূহ ফটোগ্রাফি করতে আমার কাছে ভালো লাগে।

♥️ আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ 🖤

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

খুব কষ্ট পেলাম ভাই। ছোট থেকেই আপনি অনেক কষ্ট করেছেন।আর কষ্ট করেছেন দেখেই উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছেন।আপনার জন্য অনেক শুভ কামনা রইল।

সুন্দর মুহূর্তের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

অন্যান্য বন্ধুদের ন্যায় আপনার এই ঘটনাটি পড়তে বেশ ভালো লাগলো তবে যথেষ্ট কষ্ট অনুভূত হলো আমার মনের মধ্যে। হয়তো এই কনটেস্টের আয়োজন না করলে এত বিস্তারিত সকলের সম্পর্কে জানতে পারতাম না।

পোস্টটি পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

আপনার স্কুল জীবনের ঘটনাটি পড়ে প্রথমে খুব কষ্ট লাগলো। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত আপনার একটি ব্যাগ ছিল না এখন অনেকগুলো আছে। এক কাপড় এ আপনি অনেক দিন স্কুলে গিয়েছেন। আসলে এরকম ঘটনা গুলো মানুষের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে থাকে। ধন্যবাদ আপনাকে খুব সুন্দর করে শেয়ার করার জন্য।

পোস্টটি পড়ে সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।